তারাবির নামাজের নিয়ত, নিয়ম এবং ফজিলত

 

তারাবির নামাজের নিয়ত

রমজান মাসের রাতের বিশেষ ইবাদত তারাবিহ নামাজ। তারাবিহ (تَرَاوِيْح) শব্দটি আরবি। এর অর্থ হলো বিশ্রাম করা। অর্থাৎ দীর্ঘ কেরাতে এ নামাজ পড়ার কারণে চার রাকাআত পরপর বিশ্রাম নিয়ে এ নামাজ পড়া হয় বিধায় এটিকে তারাবিহ নামকরণ করা হয়। তারাবিহ নামাজ রমজানেই আদায় করা হয়। দুই রাকাত করে ১০ বার তাশাহুদ তথা ১০ বার সালাম ফিরানোর মাধ্যমে ২০ রাকাআ’ত তারাবিহ নামাজ আদায় করতে হয়।

তারাবিহ পড়ার নিয়ম

দুই রাকাআত নামাজ আদায় করে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করা। আবার দুই রাকাআত নামাজ পড়া। এভাবে ৪ রাকাআত আদায় করার পর একটু বিশ্রাম নেয়া। বিশ্রামের সময় তাসবিহ তাহলিল পড়া, দোয়া-দরূদ ও জিকির আজকার করা। তারপর আবার দুই দুই রাকাআত করে আলাদা আলাদা নিয়তে তারাবিহ আদায় করা।

তারাবিহ নামাজের নিয়ত 

উচ্চারণ: নাওয়াইতুআন উসালি­য়া লিল্লাহি তাআ’লা, রাকাআ’তাই সালাতিত তারাবিহ সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি তাআ’লা * মুতাওয়াযজ্জিহান ইলা যিহাতিল কা’বাতিশ শারিফাতি, আল্লাহু আকবার। * (যদি জামাআ’তের সহিত নামাজ হয় তবে- ইক্বতাদাইতু বি হাজাল ইমাম বলতে হবে)।

অর্থ: আমি কিবলামুখী হয়ে দুই রাকাআ’ত তারাবিহ সুন্নাত নামাজ আল্লাহর জন্য আদায়ের নিয়্যত করছি, আল্লাহু আকবার। (যদি জামাআ’তের সহিত নামাজ হয় তবে- এই ইমামের ইমামতিতে জামাআ’তের সহিত)।

যাদের আরবী উচ্ছারণ করতে সমস্যা হয় অথবা পড়তে পারেন না। তারা বাংলায় বলবেন ‘আমি কিবলামুখী হয়ে দুই রাকাআ’ত তারাবিহ সুন্নাত নামাজ আল্লাহর জন্য আদায়ের নিয়্যত করছি, আল্লাহু আকবার’। এটা বলেই নিয়্যত করতে পারবেন।

তারাবিহ নামাজের চার রাকাআ’ত পরপর দোয়া

প্রত্যেক দুই রাকাআ’ত পর সালাম ফিরানোর পর ইসতেগফার পড়তে হয়, দুরুদ পড়তে হয়, আল্লাহর স্মরণে জিকির করতে হয়। তারপর চার রাকাআ’ত হলেও কুরআন হাদিসের দুআ’গুলো পড়া হয়; যে দুআ’গুলো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে পড়া হয়। কিন্তু তারাবির যে দুআ’টি বর্তমানে জারি আছে, এই দুআ’টি কোরআন-হাদিস সম্বলিত নয়; এটিও কোনো এক বুজুর্গ ব্যক্তি লিখে এর প্রচলন করেছেন, যার অর্থও ভালো বিধায় আমরা পড়ে থাকি-

দুআ’টি হলো

উচ্চারণ: সুব্হানাযিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি, সুব্হানাযিল ইয্যাতি, ওয়াল আয্মাতি, ওয়াল হাইবাতি, ওয়াল কুদরাতি, ওয়াল কিবরিয়াই, ওয়াল যাবারুত। সুব্হানাল মালিকিল হাইয়্যিল্লাজি লা-ইয়াানামু ওয়ালা ইয়ামুতু আবাদান আবাদা। সুব্বুহুন কুদ্দুছুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালাইকাতি ওয়ার রূহ।

তারাবিহ নামাজের চার রাকাত পরপর মোনাজাত

চার রাকাআ’ত পর পর মোনাজাত করা যায়, আবার একেবারে নামাজ শেষ করেও একবারেই মোনাজাত করা যায়। তারাবিহ নামাজের জন্য নির্দিষ্ট কোনো দুআ নেই। আমরা সব সময় নামাজের ক্ষেত্রে যে সব দুআ পড়ে থাকি এগুলো পড়লেই হয়। তারপরও বহু পূর্বে কোনো বুজুর্গ বর্তমানে তারাবিহতে পঠিত দুআ’র প্রচলন করেছেন; যার অর্থ ভাল এবং উত্তম বিধায় আমরা তারাবিহ নামাজে এই দুআটি পড়ে থাকি।

দুআ’টি এই

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকা জান্নাতা ওয়া নাউ’জুবিকা মিনান্নারী, ইয়া খালিকাল জান্নাতা ওয়ান্নারী, বিরহতিকা ইয়া আজিজু, ইয়া গাফ্ফারু, ইয়া কারীমু, ইয়া সাত্তারু, ইয়া রাহীমু, ইয়া জাব্বারু, ইয়া খালিকু, ইয়া বার্র। আল্লাহুম্মা আযিরনা মিনান্নার; ইয়া মুযিরু, ইয়া মুযিরু, ইয়া মুযির। বিরহমাতিকা ইয়া আর হামার রাহিমিন।

অতঃপর- আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুওউন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’ফু আন্নি।

তারাবি নামাজের ফজিলত

রমজান মাসে তারাবি নামাজের ফজিলত ও মর্যাদা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইমান ও আত্মবিশ্লেষণের সঙ্গে পুণ্য লাভের আশায় রোজা রাখেন, তারাবি নামাজ পড়েন এবং কদরের রাতে জাগ্রত থেকে আল্লাহর ইবাদত করেন, তাঁর জীবনের পূর্বের সব গুনাহ মাফ করা হবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)

Next Post Previous Post