নারিকেল তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা

নারিকেল তেলের উপকারিতা

নারকেল তেলের গুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না। নারিকেল তেল খাবারেও অনেক গুরুত্ব পায়। এটি খাবারের স্বাদ বাড়ানোর পাশাপাশি শরীরের জন্যও বেশ উপকারী। এতে রয়েছে অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল, অ্যান্টিভাইরাল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল গুণাবলি। এই তেল মেদ কমাতে, বিপাক প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে, ক্ষুধা কমাতে, কোলেস্টেরল কমাতে এবং আমাদের অন্ত্রকেও ভালো রাখতে সহায়তা করে। নারিকেল তেলের অনেক ব্যবহার রয়েছে। এটি আপনার স্বাস্থ্যের উন্নতি করার পাশাপাশি সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে এবং বাড়ির বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করতে পারেন। 

নারিকেল তেলের উপকারিতা 

শক্তি বৃদ্ধি করতে

নারিকেল তেল মাঝারি চেইন ট্রাইগ্লিসারাইডস (এমসিটি) নামের ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি সহজেই শরীরে শোষিত হয়। তাই এটি আপনার দেহে, মস্তিষ্কে এবং কোষের শক্তি বৃদ্দি করতে পারে।

কফির ক্রিমার খাওয়ার অভ্যাসের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন নারিকেল তেল। আপনার কফিতে পছন্দমতো প্রাকৃতিক মিষ্টির সঙ্গে এক চামচ নারিকেল তেল বা কাঁচা নারিকেল মিশিয়ে বা ব্লেন্ড করে খেতে পারেন। এটি আপনার শক্তি বুস্ট করতে হতে পারে অনেক কার্যকরী।

বয়সের ছাপ কমায়

নারকেল তেল ত্বককে বুড়িয়ে যেতে দেয় না। ফাইন লাইনস ও রিঙ্কেলসের মতো লক্ষণ, যা বয়সের ছাপ বাড়ায়, তা থেকে রক্ষা করে নারকেল তেল। নারকেল তেলে থাকা প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি থেকে ত্বককে সুরক্ষা দেয় এবং ত্বকের এজিং প্রক্রিয়া বিলম্বিত করে তারুণ্য ধরে রাখে। এক টেবিল চামচ নারকেল তেলের সঙ্গে আধা টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে ত্বকে লাগান। দেখবেন ত্বকের ফাইন লাইনস ও রিঙ্কেলস দূর হবে।

শক্ত ও মসৃণ নখ

দুর্বল ও ফাটা নখ সৌন্দর্য নষ্ট করে। কিন্তু চিন্তা করবেন না। হাতের কাছেই রয়েছে নারকেল তেল। শুকনো নখ দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়। তাই এর জন্য হাইড্রেশন জরুরি। নখ ও এর বহিরাঙ্গ নারকেল তেল দিয়ে কয়েক মিনিট ম্যাসাজ করুন। সপ্তাহে দুই বা তিন বার এটা করলে দারুণ ফল মিলবে। আপনার নখ হবে আরও সুন্দর ও শক্ত।

ঘন ও সিল্কি চুল

চুলের যত্নে নারকেল তেলের গুণের শেষ নেই। চুল পড়া, খুশকি, চুলের আগা ফাটা দূর করে নারকেল তেল চুলকে শক্তিশালী করে। নারকেল তেল প্রোটিনের জোগান দেয় এবং একেবারে গোড়া থেকে শক্তিশালী করে। সেইসঙ্গে চুলকে উজ্জ্বল করতে সহায়তা করে। ফলে চুল হয় ঘন ও সিল্কি।

নরম ও সুন্দর ঠোঁট

শুকনো ও ফাটা ঠোঁটের প্রাকৃতিক সুরক্ষাকারী হলো নারকেল তেল। এটি ত্বককে আর্দ্র রাখে এবং ঠোঁটকে নরম ও মসৃণ করে। সামান্য পরিমাণ নারকেল তেল দিয়ে ঠোঁট ম্যাসাজ করুন, এতে ঠোঁট আর্দ্র থাকবে এবং ঠোঁট সুন্দর হবে।

ত্বকের দাগ কমায়

ত্বকের ক্ষতজনিত দাগ কমাতে সাহায্য করে নারকেল তেল। এটি ত্বককে আর্দ্র রাখে এবং ক্ষতস্থান শুকাতে সাহায্য করে। নিয়মিত নারকেল তেল ত্বকে মাখলে ক্ষতজনিত দাগ দূর হবে এবং ত্বক হবে আরও কমনীয় ও সুন্দর।

রান্নার কাজে ব্যবহার

রান্নার কাজেও ব্যবহার করা যায় নারিকেল তেল। বিশেষ করে ফ্রাইস করার ক্ষেত্রে এটি অনেক ভালো তেল হিসেবে ব্যবহার করা যায়। ডিম, স্ট্রে-ফ্রাই, তরকারী বা ফ্রেঞ্চ টোস্টের মতো খাবার তৈরি করার সময় এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ছাড়া কিছু বেকড সামগ্রীর রেসিপিতে যেমন— রুটি, মাফিনস, ব্রাউনিজ এবং কেকের জন্য মাখন বা অন্য তেলের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন নারিকেল তেল।

দাঁত ও মুখের যত্নে

নারিকেল তেল আপনার দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এতে একটি অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যেটি স্ট্রেপ্টোকোকাস নামের মুখের ব্যাক্টেরিয়াকে মেরে ফেলে। ফলে ফলক, গহ্বর ও মাড়ির রোগ হওয়ার ঝুঁকি কমে আসে। এর জন্য সকালে খালি পেটে এক টেবিল চামচ নারিকেল তেল দিয়ে ব্রাশ করে মাউথওয়াশ বা হালকা লবণযুক্ত পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিলেই মিরবে উপকার।

মেকআপ রিমুভার হিসাবে ব্যবহার

মুখে দেওয়া মেকআপ শক্ত হয়ে গেলে সেটি সহজেই তুলে ফেলতে পারে নারিকেল তেল। এর পাশাপাশি এটি ত্বককে মসৃণ করতেও কাজ করবে এটি।

শেভিং ক্রিমের বিকল্প হিসেবে

শেভিং ক্রিম শেষ হয়ে গেছে? নারিকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন শেভিং ক্রিমের বিকল্প হিসেবে। ক্ষতিকারক রাসায়নিক ব্যবহার করার পরিবর্তে নারিকেল তেল ব্যবহারে ত্বক ময়শ্চারাইজড এবং ক্লিন শেভের জন্য ত্বককে নরম ও মসৃণ করবে।

ঠোঁট ফাটা রোধ করে

নারিকেল তেলে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে এটি খুব ভালো ত্বকের ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। এটি ঠোঁটে ব্যবহারের ফলে ঠোঁট অনেক মসৃণ হয় এবং এটিতে প্রাকৃতিকভাবে এসপিএফ-৭ থাকায় এটি সূর্যের থেকে ত্বককেও কিছুটা সুরক্ষা প্রদান করে।

কাঠের আসবাবপত্র চকচকে করে

কাঠের আসবাবপত্র পরিষ্কার করে চকচকে করে তুলতে কাজে দিতে পারে নারিকেল তেল। বিভিন্ন রাসায়নিক পরিষ্কারকারক পদার্থগুলোতে প্রচুর বিষাক্ত উপাদান এবং গাড় সিন্থেটিক গন্ধ থাকায় এটি ঘরের বাতাসকে দূষিত করতে পারে। তাই এর পরিতর্তে আপনি নারিকেল তেল ব্যবহার করে পেতে পারেন চকচকে আসবাবপত্র।

নারিকেল তেলের অপকারিতা

উচ্চ রক্তচাপ

প্রচুর পরিমাণ স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকার দরুণ নারকেল তেল নিয়মিত খেলে রক্তনালীর ভিতরের দিকের দেওয়ালে ফ্যাটি অ্যাসিডের চেন তৈরি হয়। ধমনীতে ফ্যাট জমে উচ্চ রক্তচাপ ও হাইপার টেনসনের সমস্যা হতে পারে।

ওজন

ফ্যাটের পরিমাণ বেশি থাকার কারণে প্রতি দিন নারকেল তেল খেলে স্বাভাবিক ভাবেই শরীরে মেদ জমে। ওজন বাড়ে।

ডায়রিয়া

নারকেল তেলের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও জীবানুনাশক গুণের জন্য অতিরিক্ত নারকেল তেল খেলে ডায়রিয়া হতে পারে।

অ্যালার্জি

নারকেল তেল ত্বক ভাল রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু বেশি মাত্রায় নারকেল তেল ব্যবহার করলে অ্যালার্জি হতে পারে।

মুখে নারকেল তেল লাগানোর অপকারিতা

নারিকেল তেল মুখে লাগালে মুখের অয়েল সিক্রিয়েশন বাড়ে এবং মুখ সবসময় তৈলাক্ত দেখায়। এতে মুখ আঠালো থাকে, যার কারণে মুখে লেগে থাকে ধুলোবালি।

মুখ তেলতেলে থাকার কারণে ও তাতে ধুলোবালি জমার কারণে মুখে ব্রণ বেড়ে যায়। 

কোল্ড প্রেসড কোকোনাট অয়েল কিনে উঠতে পারেন না অনেকেই দাম ও চট করে সব দোকানে না পাওয়া যাওয়ার কারণে। বাজার চলতি বেশিরভাগ নারকেল তেলেই কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সেগুলি মুখে লাগালে ত্বকের সমস্যা বাড়তে পারে।

কারা মুখে নারকেল তেল লাগাবেন না একেবারেই

আপনার ত্বকে যদি খুব ব্রণ হয়, তাহলে আপনি মুখে নারকেল তেল লাগানো এড়িয়ে চলুন। এটি আপনার মুখে আরও ব্রণ বের করে দিতে পারে। অন্য দিকে, যাদের ত্বক তৈলাক্ত তারা নারকেল তেল লাগানো এড়িয়ে চলুন। এক্সট্রা ভার্জিন কোল্ড কমপ্রেসড নারকেল তেলই গায়ে লাগান। ম্যাসাজ করে নিয়ে ২০-২৫ মিনিট রেখে মুখ গরম জলে কাপড় ভিজিয়ো তা দিয়ে মুছে নিন। তারপর হালকা কোনও জেলবেস ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে শুয়ে পড়ুন।

Next Post Previous Post