নুডুলস এর উপকারিতা এবং এর ক্ষতিকারক প্রভাব

 

নুডুলস এর উপকারিতা
সব বয়সের মানুষেরই নুডুলস কমবেশি পছন্দের একটি খাবার। সকাল-বিকেলের নাস্তায়, স্কুলের টিফিনে বা আপ্যায়নে কিংবা মাঝরাতে খুদা লাগলে নুডুলস প্রথম পছন্দ। নুডলসের সবচেয়ে বড় সুবিধা এটা খুবই কম সময়ে রান্না করা যায়। খুব বেশি আয়োজনও করতে হয় না। আবার চাইলে রান্নায় দেখানো যায় নানা কারিকুরি। যোগ করা যায় নানা উপকরণ।

নুডুলস এর উপকারিতা

নুডলসের গুণাগুণ অনেকটাই নির্ভর করে সেটা কী দিয়ে বানানো তার ওপর। সেগুলোর ভিত্তিতেই নুডলস নানা রকম হয়ে থাকে—ময়দার নুডলস, সুজির নুডলস, চালের নুডলস ইত্যাদি। বলা হয়, চালের নুডলসে ক্যালরির পরিমাণ সবচেয়ে কম থাকে। সাধারণত এক কাপ নুডলসে ২০০-২৫০ ক্যালরি থাকে। যেখানে সাধারণত নাশতার জন্য বরাদ্দ রাখা হয় ৩০০-৪০০ ক্যালরি।

তবে নুডলসে কোন খাদ্যোপাদান কী পরিমাণে আছে সেটা কেবল নুডলসের ওপরই নির্ভর করে না। তাতে কী কী ব্যবহার করা হয়েছে তার ওপরও নির্ভর করে। যেমন—ডিম ব্যবহার করলে তাতে যুক্ত হয় ডিমের সাধারণ উপকারিতা। তবে তাতে কোলেস্টেরলের পরিমাণও বেড়ে যায়। আবার যদি মাংস কিংবা সবজি ব্যবহার করা হয়, তাহলে পুষ্টিগুণ হবে ভিন্ন ধরনের।

সাধারণত নুডলসের সঙ্গে তাতে ব্যবহারের জন্য বিশেষ মসলা দেওয়া হয়। সেটা নুডলসের স্বাদ আরো বাড়িয়ে দেয়। তবে ছোটদের জন্য বানানোর ক্ষেত্রে এই মসলা ব্যবহার না করাই ভালো। পাশাপাশি যাদের উচ্চ রক্তচাপ বা হূদেরাগের সমস্যা আছে, তাদেরও এই মসলা এড়িয়ে যাওয়া উচিত।

নুডুলস এর ক্ষতিকারক প্রভাব 

ফাইবার ও প্রোটিন কম

নুডুলস প্রক্রিয়াজাত খাবার, যা ওজন বাড়ায়। ফাইবার ও প্রোটিন কম থাকায় এটি পূর্ণ খাবার নয়।

বিপাকে ত্রুটি

গবেষণায় দেখানো হয়েছে মহিলারা সপ্তাহে দুই বা তার বেশিবার নুডুলস খেলে তাদের মেটাবোলিক সিনড্রম দেখা দেয়। এটি ফাস্টফুড ক্যাটাগরির খাবার তাই ডায়েট লিস্টে নুডুলস রাখার কোনো মানে নেই।

ময়দায় তৈরি

নুডুলস ময়দা দিয়ে তৈরি যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ময়দা উচ্চমাত্রায় প্রক্রিয়াজাত, খেতে সুস্বাদু হলেও পুষ্টিহীন। নুডুলসে প্রচুর পরিমাণে প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করা হয়।

খারাপ চর্বি

নুডুলস অত্যন্ত খারাপভাবে প্রক্রিয়াজাত করা হয়, যা ফ্যাটি অ্যাসিড বা ট্রান্স-ফ্যাট যুক্ত। এছাড়া ভোজ্য উদ্ভিজ তেল, চিনি, চিনির সিরাপ, গন্ধবর্ধনকারী ও অন্য উপাদান ব্যবহার করা হয় যা স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও ভালো নয়।

নুডুলসে থাকে এমএসজি 

নুডুলসে মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট (MSG) থাকে, যা প্রক্রিয়াজাত খাবারে সুগন্ধ যোগ করতে ব্যবহার করা হয়। এমএসজি খেলে ওজন বাড়ে, রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়, মাথা ব্যথা ও নাক বন্ধ হয়।

অতিমাত্রার সোডিয়াম

নুডুলসের উচ্চমাত্রার সোডিয়াম স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে। সাধারণভাবেই এটি উচ্চরক্তচাপ, কার্ডিওভাস্কুলার রোগের আশঙ্কা বাড়ায়।

পুষ্টি গ্রহণের ক্ষমতা কমায়

যেসব বাচ্চারা ইন্সট্যান্ট নুডুলস খায়, তাদের শরীরে অন্য খাবার থেকে পুষ্টি গ্রহণের ক্ষমতা থাকে না। নুডুলস খাওয়ার পর অনেক বাচ্চার সঠিক খাবার গ্রহণের পরেও অপুষ্টি দেখা দেয়।

সন্তান নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি

গর্ভবতী মহিলাদের প্রক্রিয়াজাত খাবার খেতে নিষেধ করা হয়। গর্ভাবস্থায় নুডুলস খেলে অকাল গর্ভপাত ঘটতে পারে। কারণ  নুডুলস ভ্রুণের স্বাভাবিক বৃদ্ধি প্রতিহত করে।

স্থূলতা বাড়ায়

ইনস্ট্যান্ট নুডুলস মেদবহুল করে তোলে। এর চর্বি ও অতিরিক্ত সোডিয়াম শরীরে পানি ধরে রাখে। প্রতিদিন নুডুলস খেলে দ্রুত ওজন বাড়ে।

মেটাবলিক সিনডরম

পরিসংখ্যান থেকে দেখা গেছে যারা সপ্তাহে অন্তত একবার ইনস্ট্যান্ট নুডলস খান, তারা এই সমস্যায় ভোগেন মারাত্মকভাবে। ফাস্ট ফুড-এর গোত্রের মধ্যে যারা অন্য খাবার খান, তাদের ক্ষেত্রেও এই সমস্যা ততটা নয়, যতটা ইনস্ট্যান্ট নুডলস-এর ক্ষেত্রে হয়। পুরুষদের থেকে নারীদের এই সমস্যা অনেকটাই বেশি ইনস্ট্যান্ট নুডলস-এর কারণে।

ক্যানসারের আশঙ্কা

ইনস্ট্যান্ট নুডলস হজম হতে অনেকটা সময় নেয়। যদি তাড়াতাড়ি হজম হয়ে যায়, তাহলেও বিপদ আছে। সে ক্ষেত্রে ব্লাড সুগারের পরিমাণ এবং ইনসুলিনের পরিমাণও গণ্ডগোল করে দিতে পারে এটি। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই নুডলস হজম হতে দীর্ঘ সময় নেয়। এবং তাতে বিপদ বাড়ে। কারণ সে ক্ষেত্রে শরীরের মধ্যে টক্সিক পদার্থ অনেক বেশিক্ষণ ধরে এর থেকে নির্গত হয়। বিজ্ঞানের ভাষায় যাদের বলে বিউটিলেটেড হাইড্রক্সিঅ্যানিসোল এবং টি-বিউটিলহাইড্রোকুইনন সেই মারাত্মক ক্ষতিকারক দু’টি যৌগ শরীরে দীর্ঘক্ষণ উপস্থিত থাকে। এই দু’টিই ক্যানসারের মতো অসুখ ঘটাতে পারে শরীরে।

হৃদরোগের আশঙ্কা

ইনস্ট্যান্ট নুডলস-এর মধ্যে লবণের পরিমাণ অনেকটাই বেশি। এবং এই লবণের বেশির ভাগটাই সোডিয়াম। ফলে যারা বেশি মাত্রায় এই জাতীয় নুডলস খান, তাদের শরীরে লবণের মাত্রা বেড়ে যায়, এবং সেই কারণে বাড়তে থাকে রক্তচাপ। তাই ইনস্ট্যান্ট নুডলস সরাসরি ক্ষতি করে হৃদযন্ত্র বা হার্টের।

ভ্রুণের ক্ষতির আশঙ্কা

যদিও অন্তঃসত্ত্বা নারীদের এই জাতীয় ইনসট্যান্ট ফুড বা ফাস্ট ফুড খাওয়া একেবারে নিষিদ্ধ। কিন্তু যারা না জেনে গর্ভাবস্থায় এই জাতীয় নুডলস খান, তাদের ভবিষ্যৎ সন্তানের ক্ষতি হতে পারে। এমনকি ভ্রুণ নষ্টও হয়ে যেতে পারে ইনস্ট্যান্ট নুডলস-এ থাকা টক্সিক বা বিষাক্ত পদার্থের কারণে।

Next Post Previous Post