ব্রণ দূর করার উপায় - (স্থায়ী এবং ঘরোয়া পরিবেশে)

 

ব্রণ দূর করার উপায়

মুখের ব্রণ নিয়ে অনেকেই দুশ্চিন্তায় থাকেন। যে কোনো উৎসব বা অনুষ্ঠানের আগে ত্বকে ব্রণ হলে সৌন্দর্য অনেকখানি ফিঁকে হয়ে যায়! তবে এমন ক্ষেত্রে কীভাবে রাতারাতি ব্রণ দূর করা যায়, তা নিয়ে অনেকেই গবেষণা করতে বসে পড়েন ইন্টারনেটে। আবার কেউ কেউ ধৈর্য না ধরে ফাটিয়ে ফেলেন ব্রণ। এতে আক্রান্ত স্থান আরও ফুলে যায়। ব্রণ ফাটানোর পরে রক্ত বেরিয়ে কিছুদিন পর ফোলাভাব ঠিকই কমে যায়; তবে দাগ বসে যায় মুখে। ব্রণ বেরলে অনেকেই দৌড়ান চিকিৎসকের কাছে। আবার অনেকেই দামি ক্রিম বা ওষুধ ব্যবহার করতে শুরু করেন। কিন্তু বাড়িতে হাতের কাছেই রয়েছে এমন অনেক উপাদান, যা দিয়ে অতি সহজে সমাধান করা যায় এই সমস্যার।

ব্রণ দূর করার উপায়

শসা

কেবল খাদ্যগুণই নয়, শসার নানা গুণ রয়েছে। তার মধ্যে একটা অবশ্যই ত্বকের কাজে লাগা। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, ডি এবং ই। এর প্রতিটিই ত্বকের জন্য মারাত্মক ভালো। শসা থেঁতো করে মুখে লাগিয়ে রাখতে পারেন। ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখার পর ঠাণ্ডা পানিতে ধুয়ে নিন মুখ। এছাড়াও শসাকে অন্যভাবে ব্যবহার করতে পারেন। শসা গোল গোল করে কেটে অন্তত একঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। তারপর সেই পানি খেয়েও নিতে পারেন, বা ওই পানি দিয়ে মুখও ধুয়ে নিতে পারেন।

টুথপেস্ট

ফেসপ্যাকের মতো করে ব্যবহার করতে পারেন টুথপেস্ট। মুখের অতিরিক্ত তেল টেনে নেওয়ায়র ক্ষমতা আছে এই পেস্টের। ফলে তৈলাক্ত ত্বকের কারণে যাদের মুখে ব্রণ বা গোটা বেরয়, তারা টুথপেস্ট ব্যবহার করে উপকার পেতে পারেন। তবে বেশি নয়, খুব অল্প পরিমাণে ব্যবহার করুন ব্রণের জায়গায়। সমস্যা না হলে পরিমাণ বাড়ান।

গ্রিন টি


গ্রিন টি গোটা বা ব্রণের বিরুদ্ধে খুবই কার্যকরী। গরম পানি গ্রিন টি বানান। তারপর সেই গ্রিন টি একদম ঠাণ্ডা করে ব্রণ বা গোটার জায়গায় ব্যবহার করুন। তুলায় ভিজিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ভালো করে ত্বকের ওপর মিশতে পারবে চায়ের মিশ্রণটি। যদি টি ব্য়াগ থেকে গ্রিন টি বানান, তাহলে ঠাণ্ডা গ্রিন টি ব্যাগটিও রাখতে পারেন ত্বকের ওপর। মিনিট ২০ রাখার পর ধুয়ে নিন।

অ্যাসপিরিন

খাওয়ার ওষুধ হিসেবেই নয়, ব্রণ বা গোটা সারাতেও এই ওষুধের জুড়ি নেই। এতে থাকা স্যালিসাইলিক অ্যাসিড ব্রণ তাড়াতাড়ি শুকিয়ে দেয়। চার-পাঁচটা ট্যাবলেট প্রথমে গুঁড়িয়ে নিন। তারপর সেগুলো অল্প পানির সঙ্গে মেশান। এমনভাবে মেশাবেন, যাতে একটা পেস্ট তৈরি হয়। রাতে শুতে যাওয়ার আগে পেস্ট আক্রান্ত জায়গায় লাগান। সকালে উঠে ধুয়ে ফেলুন। ত্বক খুব স্পর্শকাতর হলে, কয়েক মিনিট লাগিয়ে রেখে ধুয়ে নিতে পারেন।

রসুন

রসুন ব্রণের বড় শত্রু। এটি ব্যবহার করাও খুব সহজ। এক-দুই কোয়া রসুন দুই টুকরা করে কেটে নিন। তারপর ব্রণের জায়গায় রসটা লাগান। মিনট পাঁচেক পরে ধুয়ে ফেলুন। রাতে শুতে যাওয়ার আগে এটা করলে পরদিন সকালে ত্বকের উন্নতি টের পাবেন।

লেবুর রস

তুলায় করে লেবুর রস ব্রণের জায়গায় লাগিয়ে নিতে পারেন। লেবুর রসের সঙ্গে দারুচিনির মিশ্রণ তৈরি করে, রাতে শুতে যাওয়ার আগে সেটা ব্রণের ওপর লাগিয়ে রাখতে পারেন। সকালে হালকা উষ্ণ পানিতে ধুয়ে নেবেন।

নিম-তুলসির পেস্ট

নিমের অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য আর তুলসির অ্যান্টিব্যাকোটেরিয়াল প্রপার্টি। দুই পাতার পেস্ট ব্যবহার করুন ব্রণ দূর করতে।

মধু-দারচিনি

দুই টেবিল চামচ মধুর সঙ্গে এক চা চামচ দারুচিনির গুঁড়া মিশিয়ে রাখুন। ব্রণের ঠিক উপরে লাগান। সারারাত রেখে দিতে পারেন।

ডিমের সাদা অংশ

ডিমের সাদা অংশ ব্রণের ওপর লাগিয়ে সারারাত শুকাতে দিন এবং পরের দিন গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

অ্যালোভেরা

এক চামচ অ্যালোভেরার সঙ্গে চার-পাঁচটি করে তুলসী ও নিমপাতা পেস্ট করে নিয়মিত খেলে ব্রণের সমস্যায় উপকার পাওয়া যেতে পারে।

ওটস

ত্বকের তেলাভাব দূর করতে ওটস দারুণ উপকারী। ওটস অতিরিক্ত তেল শুষে নেয়। ব্রণ বা ফুসকুড়ির নিরাময়ে সাহায্য করে। ব্রণ-ফুসকুড়িতে মধুর সঙ্গে ওটস লাগান।

এক রাতে ব্রণ দূর করার উপায়

এক রাতে ব্রণ দূর করতে হলে আপনাকে ভরসা রাখতে হবে ঘরোয়া পদ্ধতির উপর। প্রাচীন ভারতীয় আয়ুর্বেদে ব্রণ সারানোর একাধিক উপায় বলা আছে। এসব আয়ুর্বেদিক উপাদান ব্যবহারেই রাতারাতি দূর হবে ব্রণ।

তুলসি ও হলুদের প্যাক

তুলসির জাদুকরি উপকারিতা সম্পর্কে সবারই কমবেশি জানা আছে। অন্যদিকে হলুদের আছে অ্যান্টি-সেপটিক গুণ। এই দুটি উপাদান দিয়েই তৈরি করে নেওয়া যায় ব্রণের ওষুধ! এজন্য কাঁচা হলুদ ২ চামচ পরিমাণ বেটে নিন।

একইভাবে ২০-২৫টি তুলসি পাতা ভালো করে ধুয়ে বেটে নিন। এবার ২ উপাদান একসঙ্গে মিশিয়ে ব্রণের অন্ত ১০-১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন, শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলবেন। প্রতিদিন অন্তত ৩ বার এই প্যাক মুখে ব্যবহার করুন।

নিম ও গোলাপজরের মিশ্রণ

নিমপাতা ত্বকে অ্যান্টি-সেপটিক হিসেবে কাজ করে। অন্যদিকে গোলাপজল ত্বক স্নিগ্ধ আর সতেজ রাখে। এজন্য পাতাসহ গোটা পাঁচেক নিমের ডাল ভেঙে নিন। পাতাগুলো ধুয়ে পানিতে ২ মিনিট ফুটিয়ে নিন।

তারপর পানি থেকে পাতা তুলে ব্লেন্ড করে নিন। এবার পাতার মিশ্রণে ২ চা চামচ পরিমাণ গোলাপজল মিশিয়ে ব্রণের উপরে ব্যবহার করে শুকিয়ে গেলে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ব্রণ দ্রুত শুকোবে, ব্যথাও কমবে।

মধুর জাদু

আয়ুর্বেদিক বিভিন্ন ওষুধে মধুর ব্যবহারের বিষয়ে উল্লেখ আছে। নানারকম ব্যাকটেরিয়া নষ্ট করতে পারে মধু।

এক চা চামচ খাঁটি মধুতে অল্প তুলো ভিজিয়ে ব্রণর উপরে লাগিয়ে রাখুন। আধা ঘণ্টা পরে ধুয়ে ফেলুন। দিনে কয়েক বার ব্যবহারেই ব্রণ কমতে শুরু করে।

চন্দনের প্যাক

বিভিন্ন প্রদাহ, ব্যথা, ক্ষত সারাতে চন্দন ব্যবহারের কার্যকারিতা সম্পর্কে বলা আছে আয়ুর্বেদে। বাড়িতে চন্দনপাটা থাকলে তাতে চন্দনকাঠ ঘষে চন্দন বের করে নিন। না থাকলে চন্দন গুঁড়োও ব্যবহার করতে পারেন, তবে সেটা যেন খাঁটি হয়। গোলাপজলে বা সাধারণ জলে চন্দন গুঁড়ো মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করে ব্রণের উপরে লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে টান ধরলে জলে ধুয়ে ফেলুন।

লেবুর পানি

ভিটামিন সি ব্রণ কমাতে কাজ করে। এজন্য ২টি পাতিলেবু চিপে রস বের করে পানি মিশিয়ে নিন ২ চা চামচ। এই মিশ্রণে তুলো ভিজিয়ে ব্রণের উপরে লাগিয়ে দিন। খুব দ্রুত ব্রণ শুকিয়ে যাবে। তবে সেনসিটিভ ত্বকে লেবুর রস এড়িয়ে চলাই ভালো।

তৈলাক্ত ত্বকের ব্রণ দূর করার উপায়

তৈলাক্ত ত্বকে খুব সহজে ধুলোবালি আটকে যায় এবং অতিরিক্ত তেল মুখের লোমকূপগুলোকে বন্ধ করে দেয়। এতে করে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হয়ে ব্রণ হওয়ার প্রকোপ বাড়ে। কিছু ক্ষেত্রে ত্বক পরিষ্কার না রাখায় ব্রণ দেখা দিতে পারে। তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ হলে তা সারিয়ে তোলা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই চলুন জেনে নেই তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ হলে করণীয় কিঃ

লেবুর রস ও মধুর প্যাক

লেবুতে সাইট্রিক এসিড নামে এমন একটি উপাদান আছে, যা ত্বকের অতিরিক্ত তেল দূর করে ব্রণের সমস্যা অনেকাংশে কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। এ ছাড়া লেবুর রস ত্বকের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে এবং ত্বকের বিভিন্ন দাগ দূর করতে বেশ কার্যকর। আর মধু হলো একটি প্রাকৃতিক উপাদান, যা ত্বকের ভেতর থেকে আর্দ্রতা ধরে রাখে। ব্রণ সমস্যা দূর করার পাশাপাশি ত্বকের প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতাও বৃদ্ধি করে।

যেভাবে ব্যবহার করবেন

একটি পরিষ্কার পাত্রে এক চামচ লেবুর রস ও সমপরিমাণ মধু নিন। একসঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করুন। প্রথমে পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন এবং তার পর মুখ ও ঘাড়ের অংশে পেস্টটি লাগিয়ে নিন। কটন বল ব্যবহার করতে পারেন মিশ্রণটি লাগাতে। ১৫ থেকে ২০ ঘণ্টা রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ও ঘাড় ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন ব্যবহারে দ্রুত ও কার্যকর ফল পাবেন।

বেসন ও টক দইয়ের প্যাক

বেসন ও টক দই, দুটি উপাদানই আপনি খুব সহজে হাতের কাছে পাবেন। বেসনে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন ও ভিটামিন আছে, যা তৈলাক্ত ত্বকের অতিরিক্ত তেল শোষণ করে ত্বককে আরো উজ্জ্বল ও দ্যুতিময় করে। টক দইয়ে আছে ভিটামিন এ ও সি, যা ব্রণ দূর করার পাশাপাশি ত্বককে প্রাকৃতিকভাবে নরম ও মসৃণ করতে সাহায্য করে।

যেভাবে ব্যবহার করবেন

একটি পাত্রে দুই চা চামচ বেসন ও এক চা চামচ টক দই নিন এবং ভালো করে নাড়ুন। মিশ্রণটিতে দুই ফোঁটা লেবুর রস ও এক চিমটি হলুদ গুঁড়া দিন। তার পর তৈরি করা মিশ্রণটি মুখ ও ঘাড়ে লাগিয়ে শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। ২০-৩০ মিনিট পর হালকা উষ্ণ পানির ঝাপটা দিয়ে শুকিয়ে যাওয়া প্যাকটি ভিজিয়ে নিন। আলতোভাবে ঘষে ধীরে ধীরে প্যাকটি উঠিয়ে নিন, যাতে আপনার ত্বকে জমে থাকা মৃত কোষগুলো দূর হয়ে যায়। সবশেষে ঠান্ডা পানি দিয়ে পুরো মুখ ও ঘাড় ধুয়ে নিন। সপ্তাহে অন্তত দুবার ব্যবহার করুন। তবে ব্রণ কমে এলে ১৫ দিন পরপর ব্যবহার করতে পারেন।

মুখের ব্রণ দূর করার উপায় ছেলেদের
মুখের ব্রণ দূর করার উপায় ছেলেদের
ব্রণ কেবল নারী নয়, পুরুষদের ক্ষেত্রেও একটি প্রচলিত সমস্যা। তৈলাক্ত ত্বক, ত্বকের অযত্ন ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে ব্রণের সমস্যা হয়। ব্রণের সমস্যা বেশি হলে সমাধানের জন্য ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ অবশ্যই নিতে হবে। তবে এর আগে ব্রণ দূর করতে কিছু ঘরোয়া উপায় মেনে দেখতে পারেন।
বরফ
বরফ দিয়ে ব্রণের চিকিৎসা শুরু করতে পারেন। বরফের ঠান্ডাভাব ব্রণ কমাতে সাহায্য করবে।
  • প্রথমে ত্বককে ভালোভাবে পরিষ্কার করুন।
  • একটি বরফের টুকরোকে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে কয়েক মিনিট ব্রণের ওপর রাখুন। বরফ সরাসরি ত্বকে লাগাবেন না।
  • পাঁচ মিনিট বিরতি দিয়ে আবার ব্যবহার করুন।
ডিমের সাদা অংশ
ডিমের ভিটামিন, এমাইনো এসিড, প্রোটিন ব্রণের ওপর কাজ করে। তবে এ ক্ষেত্রে কেবল ডিমের সাদা অংশটুকু ব্যবহার করবেন।
  • মুখ ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করুন।
  • দুটি ডিমের সাদা অংশ বের করে নিন।
  • নরম ব্রাশ বা হাত দিয়ে ব্রণের মধ্যে সাদা অংশ লাগান।
  • পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করে আবার ডিমের সাদা অংশ দিন।
  • কিছুক্ষণ রাখার পর মুখ ধুয়ে হালকা ধাঁচের কোনো ক্রিম ব্যবহার করুন।  
পেঁপে
পেঁপে ব্রণ দূর করার উপাদান হিসেবে চমৎকার। এটি ত্বক থেকে বাড়তি তেল দূর করে এবং মুখের মৃত কোষ দূর করতে সাহায্য করে।
  • পাঁচটি ছোট পেঁপের টুকরো ব্ল্যান্ড করুন।
  • পেঁপের এই পেস্ট ব্রণের মধ্যে লাগান।
  • ৩০ মিনিট এভাবে রাখার পর ধুয়ে ফেলুন।
  • ব্রণ না কমা পর্যন্ত প্রতিদিন এটি ব্যবহার করুন।
Next Post Previous Post