চুল পড়া বন্ধ করার উপায় এবং যা করলে চুল গজাবে

 

চুল পড়া বন্ধ করার উপায়

নারী-পুরুষ সবাই চুলপড়া সমস্যায় ভোগেন। অতিরিক্ত চুল পড়া সত্যিই চিন্তার বিষয়। চুল পড়তে পড়তে অনেকের মাথায় টাক পড়ে যায়। ঘরোয়া উপায়েই চুল পড়া বন্ধ করা যায়। চুল কেরাটিন নামে একরকম প্রোটিন দিয়ে তৈরি ও ৯৭ শতাংশ প্রোটিন ও ৩ শতাংশ পানি রয়েছে। চুলের যেটুকু আমরা দেখি, সেটি মৃত কোষ। নানা কারণেই চুলে সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়ার আগে চুল পড়ার কারণ জানতে হবে। চুলের সাধারণ সমস্যায় ব্যবহার করতে পারেন আলুর রসের হেয়ার প্যাক। এতে চুল কমবে, চুল দ্রুত বাড়বে, পাশাপাশি ঝলমলে ও মজবুত হবে। আর চুল পড়া বন্ধ করতেও আলুর রস ভালো কাজ করে।

চুল পড়া বন্ধ করার উপায়

আলুর রসের ব্যবহার
  • আলুর রস চুলের গোড়ায় লাগিয়ে কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করে অপেক্ষা করুন। আধা ঘণ্টা পর কুসুম গরম পানি ও শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
  • অর্ধেকটি আলু রস করে ২ টেবিল চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করুন। ৩০ মিনিট পর মাইল্ড শ্যাম্পু ব্যবহার করে ধুয়ে ফেলুন।
  • একটি আলু ও একটি পেঁয়াজ রস করে একসঙ্গে মেশান। মিশ্রণটি চুলের গোড়ায় লাগিয়ে রাখুন। ২০ মিনিট পর ভেষজ শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
  • ৩টি আলু রস করে একটি ডিমের কুসুম ও ১ চা চামচ মধু দিয়ে মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি চুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত লাগিয়ে রাখুন। ৪০ মিনিট পর ভেষজ শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিন।
নারিকেল দুধের ব্যবহার

চুলের যত্নে নারিকেল তেল তো ব্যবহার করেনই, নারিকেল দুধও কিন্তু উপকারী। চুল পড়া বন্ধ করার পাশাপাশি ‍চুল দ্রুত লম্বা করতেও কাজ করে এটি। এতে কোনো ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান নেই, সুতরাং নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারবেন। চুল ও স্ক্যাল্পের ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় নারিকেল দুধ।

চুলের যত্নে নারিকেল দুধ ব্যবহারের জন্য লাগবে একটি নারিকেল ও একটি শাওয়ার ক্যাপ। নারিকেল কুরিয়ে নিন। এরপর একটি পরিষ্কাল সুতির কাপড়ে রেখে চেপে নারিকেল দুধ বের করে নিন। এবার সেই দুধটুকু হালকা গরম করে নিন। মাথার ত্বক ও চুলে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন এই দুধ। এরপর একটি শাওয়ার ক্যাপ লাগিয়ে রাখুন। এভাবে অপেক্ষা করুন ঘণ্টাখানেক। এরপর আপনার চুলের জন্য মানানসই শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার এভাবে ব্যবহার করলে চুল যেমন সুন্দর হবে, তেমনই হবে মজবুত। চুল পড়াও হবে বন্ধ।

নিমপাতার ব্যবহার

ত্বক ও চুলের যত্নে নিমপাতার ব্যবহার অনেক পুরোনো। নিমে থাকে উচ্চমাত্রায় ফ্যাটি অ্যাসিড, যা মাথার ত্বকের জন্য ‍উপযুক্ত। আর মাথার ত্বক ভালো থাকলেই চুলের বৃদ্ধি ভালো হবে। যারা চুল পড়ার সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য এটি একটি উপকারী উপাদান। নিয়মিত নিমপাতা ব্যবহার করলে তা স্ক্যাল্প থেকে অতিরিক্ত তেল উৎপাদন বন্ধ করে। ফলে চুলের গোড়া শক্ত হবে। নারিকেল তেলের সঙ্গে নিমপাতার রস মিশিয়ে তা স্ক্যাল্প ও চুলে ব্যবহার করলে চুল লম্বা হবে দ্রুত। সেইসঙ্গে মাথার ত্বকের যেকোনো সমস্যাও হবে দূর।

১০-১২টি নিমপাতা ও পরিমাণমতো নারিকেল তেল নিন। এবার নিমপাতা বেটে রস বের করে নিন। সেই রসটুকু নারিকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে মাথার ত্বক ও চুলে মাখুন। এভাবে অপেক্ষা করুন আধা ঘণ্টার মতো। এরপর ধুয়ে নেবেন। নিমপাতা মাথার ত্বকে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান হিসেবে কাজ করবে। নারিকেল তেল ছাড়াও অলিভ অয়েল বা আমন্ড অয়েল মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারবেন। নিয়মিত ব্যবহারে ‍চুল পড়া বন্ধ হবে, আপনি পাবেন কাঙ্ক্ষিত চুল।

মেথির ব্যবহার


চুল পড়া বন্ধ করতে আরেকটি কার্যকরী উপাদান হলো মেথি। এটি চুল দ্রুত লম্বা করতেও কাজ করে। আপনি যদি চান যে চুল পড়া বন্ধ হোক এবং নতুন চুল গজাক, তাহলে মেথির ব্যবহার শুরু করুন। মেথিতে থাকে পর্যাপ্ত প্রোটিন, যা মাথার ত্বকে রক্ত চলাচল বাড়াতে কাজ করে। এছাড়াও এতে ভিটামিন সি, আয়রন এবং পটাশিয়াম থাকে। এসব উপাদান চুলের অকালপক্কতা রোধেও কাজ করে। সেইসঙ্গে চুল করে ঘন ও মসৃণ।

২ চামচ মেথি পানিতে ভিজিয়ে রাখুন সারারাত। এরপর সকালে মেথি বেটে তার সঙ্গে ২-৩ ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি মাথায় মেখে অপেক্ষা করুন আধাঘণ্টার মতো। এরপর শ্যাম্পু করে নিন। এতে চুলের গোড়া শক্ত হয়ে চুল পড়া বন্ধ হবে। সপ্তাহে একদিন ব্যবহার করলেই উপকার পাবেন।

অ্যালোভেরা জেল

সপ্তাহে দুইদিন অ্যালোভেরা জেল লাগান চুলে। অ্যালোভেরার পাতা থেকে জেল সংগ্রহ করে লাগান চুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত। ২০ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন ভেষজ শ্যাম্পু দিয়ে। চুল পড়া বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি ঝলমলে হবে চুল।

মেহেদি ও সরিষার তেল

২৫০ মিলি সরিষার তেলে ২০টি মেহেদি পাতা দিয়ে ফুটিয়ে নিন। ঠাণ্ডা হলে ম্যাসাজ করুন চুলের গোড়ায়। ২০ মিনিট অপেক্ষা করে ভেষজ শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিন। সপ্তাহে একদিন ব্যবহার করুন এই তেল।

পেঁয়াজের রস


চুল পড়া বন্ধ করতে পেঁয়াজের রস ভীষণ কার্যকর। পেঁয়াজের রস সরাসরি চুলের গোড়ায় ঘষে ঘষে লাগান। ঝাঁঝালো গন্ধ দূর করতে চাইলে কয়েক ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে নিন। ২০ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন শ্যাম্পু দিয়ে।

ডিমের কুসুম ও মধু


ডিমের কুসুম ফেটিয়ে মধু মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি চুলে লাগিয়ে অপেক্ষা করুন। আধা ঘণ্টা পর ভেষজ শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

তেল

কয়েক ধরনের তেল একসঙ্গে মিশিয়ে সপ্তাহে একদিন ম্যাসাজ করুন চুলে। আগে গরম করে নেবেন সামান্য। ম্যাসাজ শেষে গরম তোয়ালে দিয়ে জড়িয়ে নিন চুল। ১৫ মিনিট পর তোয়ালে খুলে অপেক্ষা করুন আরও ১০ মিনিট। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

অলিভ অয়েল, জিরা ও মধু


১/৪ কাপ অলিভ অয়েলে ১ চা চামচ জিরা ভিজিয়ে রাখুন ৫ ঘণ্টা। এরপর মিশ্রণটি ছেঁকে তেল আলাদা করে নিন। তেলে খানিকটা মধু মিশিয়ে চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করুন। ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একদিন ব্যবহার করলে কাজ হবে দ্রুত।

যা করলে চুল আবার গজাবে
  • প্রচুর পরিমাণে প্রোটিনসমৃদ্ধ ও আঁশজাতীয় খাবার খেতে হবে। শাকসবজি ও তাজা ফল খান প্রতিদিন। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত খাবার রাখুন। অ্যাভোকাডো, ডিম, গাজর এগুলো থেকে পাবেন এই উপাদান।
  • প্রতিদিন চুলে পানি লাগাবেন না। দুই দিন পর একদিন চুল ধুয়ে ফেলুন শ্যাম্পু দিয়ে।
  • ভিটামিন ই চুলের গোড়ায় ব্যবহার করুন। ভিটামিন ই মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দেয়। ফলে চুলের ফলিকল উত্পাদনশীল থাকে। এছাড়াও ভিটামিন ই চুলের স্বাস্থ্যকর রং বজায় রাখে।
  • কখনও ভেজা চুল আঁচড়াবেন না।
  • দৈনিক অন্তত ২-৩ লিটার পানি অবশ্যই পান করুন।
  • ধূমপান ও মদ্যপানের কারণেও চুল পড়তে পারে। ধূমপান করলে মাথার ত্বকে প্রবাহিত রক্তের পরিমাণ কমে যায়। ফলে চুলের বৃদ্ধি বাঁধাগ্রস্ত হয়। তাই ধূমপান এড়িয়ে চলুন।
  • দৈনিক শরীরচর্চা করুন। দিনে অন্তত ৪০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করুন। পাশাপাশি সাঁতার কাটা বা সাইকেলও চালাতে পারেন। এতে হরমোনের ভারসাম্য বজায় থাকবে ও স্ট্রেসের মাত্রা কমবে।

Next Post Previous Post