পাট শাকের উপকারিতা, পুষ্টিগুণ, এবং অপকারিতা

 

পাট শাকের উপকারিতা

পাট শাকের উপকারিতা অনেক। পাটশাক খাওয়ার রুচি বাড়ায় বহুগুণ। মুখের স্বাদ ফিরিয়ে আনে। এতে থাকা ভিটামিন সি ও ক্যারোটিন থাকায় মুখের ঘা দূর করতে সাহায্য করে। রাতকানা রোগের বিরুদ্ধে লড়ারও ক্ষমতা আছে। কোষ্ঠকাঠিন্যতে যাঁরা ভুগছেন, তাঁরা নিয়মিত পাটশাক খেতে পারেন। যাঁদের বাতের ব্যথা আছে, তাঁদের জন্য উপকারী। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় যাঁরা দীর্ঘদিন ভুগছেন, পাটশাকে সমাধান খুঁজতে পারেন। রক্ত পরিষ্কারক হিসেবেও পাটশাক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। পাটপাতায় টিউমার ও ক্যানসার রোধক পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। হাড় ভালো রাখার জন্যও খেতে পারেন। দাঁত ও মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও সাহায্য করে।

পাট শাকের উপকারিতা

শরীরে প্রদাহ থেকে রক্ষা করে

পাট শাকে থাকে প্রচুর ওমেগা-৩ ফ্যাট। যে কারণে পাট শাক খেলে তা শরীরে সৃষ্ট প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও এই শাকে আছে লাইকোপিন। এটি একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি আমাদের শরীরের কোষগুলোকে রক্ষা করে অক্সিডেটিভ ক্ষতি থেকে। 

সুগঠিত করে হাড়

বর্তমানে হাড়ের সমস্যা যেন ঘরে ঘরে। এর বড় কারণ হলো ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের অভাব। তাই এই দুই উপাদান আছে এমন খাবার রাখতে হবে খাবারের তালিকায়। পাট শাকে কিন্তু ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যাবে পর্যাপ্ত। নিয়মিত পাট শাক খেলে হাড় ভালো থাকে। কারণ ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম হাড় সুগঠিত করতে কার্যকরী।

বাড়ায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা

পাট শাকে থাকে প্রচুর ভিটামিন সি। এই ভিটামিন একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা স্ট্রেস, দূষণ এবং জীবনযাত্রার বদ অভ্যাসের কারণে কোষের যে অক্সিডেটিভ ক্ষতি হয় তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পাট শাক খেলে বাড়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। এটি সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে।

মুখের রুচি বাড়ায়

তেতো স্বাদে পাটশাক খাওয়ার রুচি বাড়ায়। মুখের স্বাদ ফিরিয়ে আনে ও মেদ বৃদ্ধির আশঙ্কা কমায়। পাট শাকের তেতো স্বাদ মুখের লালক্ষরণ করে শ্বেতসারকে ভাঙতে সাহায্য করে। এতে হজমের সুবিধা হয় ফলে খাবারের রুচি বাড়ে।

হজম শক্তি বাড়ায় 

পাটশাকে থাকা খাদ্য আঁশ হজম প্রক্রিয়াকে দারুনভাবে ত্বরান্বিত করে আমাদের হজম শক্তি বাড়িয়ে দেয়।এর ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

বাতের ব্যাথা দূর করে 

পাটশাকে প্রচুর ভিটামিন ই থাকে। ভিটামিন ই বাতের ব্যাথা, আর্থরাইটস এবং প্রদহজনিত অন্যান্য রোগ প্রতিরোধে কার্যকারী ভূমিকা পালন করে থাকে। তাছাড়া পাটশাকে থাকা উচ্চ মাত্রায় অ্যান্টি অক্সিডেন্ট শরীরে যেকোনো ধরণের ক্যান্সার রোধ করতে সাহায্য করে।এতে বিদ্যমান ফলিক অ্যাসিড ত্বক ও চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া এটি ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও মানসিক চাপ দূর করে শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

পাট শাকের পুষ্টিগুণ 

পাটশাকে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, অ্যালকালয়েড, সোডিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, প্রোটিন, লিপিড, কার্বহাইড্রেট এবং ফলিক অ্যাসিড আছে। দেশীয় অন্যান্য শাকের তুলনায় পাটশাকে ক্যারোটিনের পরিমাণও থাকে অনেক বেশি। বারডেম জেনারেল হাসপাতালের প্রধান পুষ্টি ও পথ্যবিদ আখতারুন নাহার জানান, পাটশাক তুলনামূলক সস্তা ও সহজলভ্য। ১০০ গ্রাম পাটশাকে ক্যালরি থাকে ৭৩। এতে আমিষ থাকে ৩ দশমিক ৬ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৯৮ মিলিগ্রাম, লোহা ১১ মিলিগ্রাম ও ক্যারোটিন ৬৪০০ (আইইউ)।

পাট শাকের অপকারিতা 

আপনার যদি আগে থেকে পাট শাক খাওয়ার অভ্যাস না থাকে তবে সম্ভব হলে অ্যালার্জি টেস্ট করিয়ে নেবেন। কারণ অনেকের অনেক শাক-সবজিতে অ্যালার্জি থাকতে পারে। পাট শাকে অ্যালার্জি থাকে এটি খাওয়ার পর চুলকানি বা র‍্যাশ হতে পারে। এরকমটা হলে এই শাক খাওয়া বন্ধ করতে হবে।

পাট শাক কীভাবে খাবেন

পাট শাক ভাজি তো জনপ্রিয়, সেইসঙ্গে স্যুপ ও স্ট্যুতে মিশিয়ে খাওয়াও খাওয়া যেতে পারে। নাইজিরিয়াতে পাট পাতা ও শুকনো মাছ দিয়ে ইয়েডু নামক একটি স্যুপ খাওয়া হয়। মিশরে পাট পাতা কুচিয়ে তার মধ্যে লেবুর রস ও অলিভ অয়েল দিয়ে খাওয়ার প্রচলন আছে মিশরে। এর নাম হলো মুলুখিয়া। পাট শাকের চা খাওয়া হয় জাপানে। আমাদের দেশে পাট শাকের বড়া বা পাকোড়া খাওয়ারও প্রচলন রয়েছে।

Next Post Previous Post