কুলি মজুর কবিতা এবং জ্ঞান ও অনুধাবনমূলক প্রশ্ন
কুলি-মজুর
কাজী নজরুল ইসলাম
দেখিনু সেদিন রেলে,
কুলি বলে এক বাবু সা’ব তারে ঠেলে দিলে নীচে ফেলে!
চোখ ফেটে এল জল,
এমনি করে কি জগৎ জুড়িয়া মার খাবে দুর্বল?
যে দধীচিদের হাড় দিয়ে ঐ বাষ্প-শকট চলে,
বাবু সা’ব এসে চড়িল তাহাতে, কুলিরা পড়িল তলে।
বেতন দিয়াছ?-চুপ রও যত মিথ্যাবাদীর দল!
কত পাই দিয়ে কুলিদের তুই কত ক্রোর পেলি বল্?
রাজপথে তব চলিছে মোটর, সাগরে জাহাজ চলে,
রেলপথে চলে বাষ্প-শকট, দেশ ছেয়ে গেল কলে,
বল ত এ-সব কাহাদের দান! তোমার অট্টালিকা
কার খুনে রাঙা? -ঠুলি খুলে দেখ, প্রতি ইটে আছে লিখা।
তুমি জান নাকো, কিন্তু পথের প্রতি ধূলিকণা জানে,
ঐ পথ, ঐ জাহাজ, শকট, অট্টালিকার মানে!
আসিতেছে শুভদিন,
দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা, শুধিতে হইবে ঋণ!
হাতুড়ি শাবল গাঁইতি চালায়ে ভাঙিল যারা পাহাড়,
পাহাড়-কাটা সে পথের দু’পাশে পড়িয়া যাদের হাড়,
তোমারে সেবিতে হইল যাহারা মজুর, মুটে ও কুলি,
তোমারে বহিতে যারা পবিত্র অঙ্গে লাগাল ধূলি;
তারাই মানুষ, তারাই দেবতা, গাহি তাহাদেরি গান,
তাদেরি ব্যথিত বক্ষে পা ফেলে আসে নব উত্থান!
তুমি শুয়ে রবে তেতালার পরে, আমরা রহিব নিচে,
অথচ তোমারে দেবতা বলিব, সে-ভরসা আজ মিছে!
সিক্ত যাদের সারা দেহ-মন মাটির মমতা-রসে
এই ধরণীর তরণীর হাল রবে তাহাদেরি বশে!
তারি পদরজ অঞ্জলি করি মাথায় লইব তুলি,
সকলের সাথে পথে চলি যার পায়ে লাগিয়াছে ধূলি!
আজ নিখিলের বেদনা -আর্ত পীড়িতের মাখি খুন,
লালে লাল হয়ে উদিছে নবীন প্রভাতের নবারুণ!
আজ হৃদয়ের জমা-ধরা যত কবাট ভাঙিয়া দাও,
রং-করা ঐ চামড়ার যত আবরণ খুলে নাও!
আকাশের আজ যত বায়ু আছে হইয়া জমাট নীল,
মাতামাতি ক’রে ঢুকুক এ বুকে, খুলে দাও যত খিল!
সকল আকাশ ভাঙিয়া পড়ুক আমাদের এই ঘরে,
মোদের মাথায় চন্দ্র-সূর্য তারারা পড়ুক ঝরে।
সকল কালের সকল দেশের সকল মানুষ আসি
এক মোহনায় দাঁড়াইয়া শোনো এক মিলনের বাঁশী।
একজনে দিলে ব্যথা-
সমান হইয়া বাজে সে বেদনা সকলের বুকে হেথা।
একের অসম্মান
নিখিল মানব-জাতির লজ্জা-সকলের অপমান!
মহা-মানবের মহা-বেদনার আজি মহা-উত্থান,
উর্ধ্বে হাসিছে ভগবান, নীচে কাঁপিতেছে শয়তান!
জ্ঞান মূলক প্রশ্ন
প্রশ্ন ১। কাজী নজরুল ইসলাম কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে।
প্রশ্ন ২। ‘অগ্নিবীণা’ কী ধরনের গ্রন্থ?
উত্তর: ‘অগ্নিবীণা’ কাব্যগ্রন্থ।
প্রশ্ন ৩। ‘কুলি-মজুর’ কবিতার রচয়িতার নাম কী?
উত্তর: কাজী নজরুল ইসলাম।
প্রশ্ন ৪। ‘ঠুলি’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: ঠুলি’ শব্দের অর্থ চোখের উপর চাকনি।
প্রশ্ন ৫। বাম্প শকটে কারা চড়ে?
উত্তর: বাম্প শকটে বাবু সাহেবেরা চড়ে।
প্রশ্ন ৬। কাজী নজরুল ইসলাম বাংলার কত তারিখে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ।
প্রশ্ন ৭। ‘কুলি-মজুর’ কবিতাটি পাঠের উদ্দেশ্য কী?
উত্তর: বিভিন্ন পেশার শ্রমজীবী মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাবােধ জাগ্রত করা।
প্রশ্ন ৮। ‘কুলি-মজুর’ কবিতায় কাদের মিথ্যাবাদীর দল বলা হয়েছে?
উত্তর: একশ্রেণির হৃদয়হীন স্বার্থান্ধ ব্যক্তিকে।
প্রশ্ন ৯। বর্তমান সভ্যতা কাদের দান?
অথবা, মানবসভ্যতা কাদের হাতে গড়ে উঠেছে?
উত্তর: শ্রমজীবী মানুষদের।
প্রশ্ন ১০। ‘কুলি-মজুর’ কবিতায় কবি কাদের মানুষ বলেছেন?
উত্তর: মজুর, মুটে ও কুলিদের।
প্রশ্ন ১১। কুলিরা পড়িল তলে’ কথাটির অর্থ কী?
উত্তর: শ্রমজীবীদের নিচে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
প্রশ্ন ১২। ‘কুলি-মজুর’ কবিতায় কী প্রাধান্য পেয়েছে?
উত্তর: শ্রমজীবী মানুষের অধিকারের কথা।
প্রশ্ন ১৩। শ্রমজীবী মানুষদের শােষণ করে কারা?
উত্তর: ধনিকশ্রেণি।
প্রশ্ন ১৪। বিত্ত-সম্পদের মালিক কারা হয়েছে?
উত্তর: ধনিকশ্রেণি।
প্রশ্ন ১৫। কারা শ্রমজীবী মানুষদের ঘৃণা করে?
উত্তর: স্বার্থপর মানুষ।
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন
প্রশ্ন ১। ‘তাদেরই ব্যথিত বক্ষে পা ফেলি আসে নব উত্থান’- চরণটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ‘তাদেরই ব্যথিত বক্ষে পা ফেলি আসে নব উত্থান’- চরণটির মধ্য দিয়ে শ্রমজীবী মানুষের অবদানের কথা বলা হয়েছে।
যুগ যুগ ধরে কুলি-মজুরের মতাে মানুষের হাতে গড়ে উঠেছে মানবসভ্যতা। তাদের অক্লান্ত শ্রমে-ঘামে পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে একটু একটু করে। চলছে মােটর, রেল, জাহাজ। গড়ে উঠছে দালানকোঠা, কলকারখানা। তাদের শ্রমেই তৈরি হচ্ছে নতুন সভ্যতা ও সম্ভাবনা। যার জন্য তাদের চরম কষ্ট স্বীকার করতে হয়। তাই কবি সেসব শ্রমজীবী মানুষের অবদানের কথা বলতে আলােচ্য উক্তিটি করেছেন।
প্রশ্ন ২। ‘কুলি-মজুর’ কবিতায় কাদের দুর্বল বলা হয়েছে?
উত্তর: ‘কুলি-মজুর’ কবিতায় এ সমাজের খেটে খাওয়া মানুষদের দুর্বল বলা হয়েছে।
যাদের শ্রমের বিনিময়ে এ সৃষ্টি টিকে আছে, দুবেলা দু’মুঠো খাবারের জন্য যারা সারাদিন পরিশ্রম করে তারাই সমাজে অবহেলিত, নিষ্পেষিত। কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাই কুলি-মজুর’ কবিতায় এই কুলি-মজুর-চাষিদের দুর্বল বলেছেন।
প্রশ্ন ৩। কবি শ্রমজীবী মানুষের গান গেয়েছেন কেন?
উত্তর: কালে কালে শ্রমজীবী মানুষের হাতে গড়ে ওঠা মানবসভ্যতার কথা স্মরণ করেই কবি শ্রমজীবী মানুষের গান গেয়েছেন।
মানবসভ্যতার রূপকার লক্ষ-কোটি শ্রমজীবী মানুষ। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমেই গড়ে উঠেছে দালানকোঠা, কলকারখানা। তাদের শ্রমেই চলে মােটর, জাহাজ, রেলগাড়ি। সমাজের ধনীরা আজ বিত্ত-সম্পদের মালিক হয়েছে কিন্তু এই শ্রমজীবী মানুষেরা সবসময়ই উপেক্ষিত ও বঞ্চিত হয়ে আসছে। তাদের কষ্টে ভর করেই আসে নব উত্থান। আর এ কারণেই কবি শ্রমজীবী মানুষের গান গেয়েছেন।
প্রশ্ন ৪। ‘আসিতেছে শুভদিন’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: আলােচ্য-চরণ দ্বারা কবি শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য দাবি আদায় এবং যােগ্য মর্যাদা পাওয়ার দিকটি তুলে ধরেছেন।
মানবতাবাদী কবির দৃঢ়বিশ্বাস, শ্রমজীবী মানুষের ওপর যে অবিচার চলছে তা আর চলবে না। বদলের পালা শুরু হয়েছে। লাঞ্ছিত-বঞ্জিত দল জাগতে শুরু করেছে। তাদের সংঘবদ্ধ উত্থানের দিন এসেছে। অত্যাচারীকে অচিরেই হিসাব-নিকাশের পালা চুকিয়ে দিতে হবে। এই শ্রমজীবী মানুষের ত্যাগের মাধ্যমে আসবে মানবমুক্তির নতুন দিন।
প্রশ্ন ৫। কবি কুলি-মজুর’ কবিতায় কুলি-মজুরদের পক্ষে কলম ধরেছেন কেন?
উত্তর: কুলি-মজুরদের ন্যায্য অধিকারের দাবিতে কবি তাদের পক্ষে কলম ধরেছেন।
যুগ যুগ ধরে কুলি-মজুরদের অর্থাৎ লক্ষ-কোটি শ্রমজীবী মানুষের হাতে গড়ে উঠেছে মানবসভ্যতা। এদেরই শ্রমে ও ঘামে চলছে কল কারখানা। অথচ এরাই এ জগতে সবচেয়ে বতি। তাই কবি কুলি মজুর’ কবিতায় মানবসভ্যতার যথার্থ রূপকার শ্রমজীবী মানুষের অধিকারের পক্ষে কলম ধরেছেন।
প্রশ্ন ৬। শ্রমজীবী মানুষের প্রতি ধনিকশ্রেণির আচরণ কেমন?
উত্তর: শ্রমজীবী মানুষের প্রতি ধনিকশ্রেণির আচরণ অত্যন্ত নিষ্ঠুর।
শ্রমজীবী মানুষের প্রতি ধনিকশ্রেণির আচরণ অত্যন্ত নেতিবাচক। ধনিকশ্রেণি শ্রমজীবী মানুষেরই সম্পদ শােষণ করে সম্পদের মালিক হয়। অথচ তারা শ্রমজীবী মানুষদের ঘৃণা করে, এমনকি মানুষ হিসেবে গণ্য করতেও নারাজ।
প্রশ্ন ৭। কবি মানুষরূপী দেবতা বলেছেন কাকে? কেন?
উত্তর: কবি মানুষরূপী দেবতা বলেছেন শ্রমজীবী মানুষকে।
দেবতার কাজ হচ্ছে গড়া। দেবতা মানুষকে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য পৃথিবীর নানা কিছু গড়ে দিয়েছেন তেমনি শ্রমজীবী মানুষের হাতে মানুষের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য দালান-কোঠা, কল-কারখানা, যানবাহন ইত্যাদি গড়ে উঠেছে। তাই কবি শ্রমজীবী মানুষকে বলেছেন মানুষরূপী দেবতা।
কুলি মজুর কবিতার মূলভাব ও ব্যাখা
কবিতার উদ্দেশ্য
বিভিন্ন পেশার শ্রমজীবী মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাবােধ জাগ্রত করা।
কুলি মজুর কবিতার মূলভাব
কবিতাটি কাজী নজরুল ইসলামের সাম্যবাদী’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত। কুলি-মজুর’ কবিতায় কবি মানবসভ্যতার যথার্থ রূপকার শ্রমজীবী মানুষের অধিকারের পক্ষে কলম ধরেছেন।
যুগ যুগ ধরে কুলি-মজুরের মতাে লক্ষ-কোটি শ্রমজীবী মানুষের হাতে গড়ে উঠেছে মানবসভ্যতা। এদেরই অক্লান্ত শ্রমে ও ঘামে মােটর, জাহাজ, রেলগাড়ি চলছে। গড়ে উঠেছে দালানকোঠা, কলকারখানা। এই শ্রমজীবীদের শােষণ করেই ধনিকশ্রেণি বিত্ত-সম্পদের মালিক হয়ে উঠেছে। যুগ যুগ ধরে এই সমাজব্যবস্থায় কুলি-মজুররাই সবচেয়ে বঞ্ছিত ও উপেক্ষিত। একশ্রেণির হৃদয়হীন স্বার্থান্ধ মানুষ এদের শ্রমের বিনিময়ে পাওয়া বিত্ত-সম্পদের সবটুকুই ভােগ করছে, অথচ এদের তারা মানুষ হিসেবে গণ্য করতেও নারাজ।
কাজঃ তােমার দেখা একজন শ্রমজীবী মানুষের জীবন-যাপনের উপর একটি বিবরণী লেখ (একক কাজ) – বাের্ড বইয়ের পৃষ্ঠা-৬৯
উত্তর: একজন শ্রমজীবী মানুষের জীবনযাপন পরিশ্রমের এবং একই সাথে আনন্দের। এরা প্রতিদিন কাজ চায়, শ্রম দিতে ভালােবাসে এবং কাজের মধ্যেই আনন্দে থাকে। এমনই একজন শ্রমজীবী মানুষের জীবনযাপন আমি ছােটবেলা থেকেই দেখে আসছি। আমাদের বাসার পাশেই বেশ বড় একটি বস্তি। সেখানে টিনের ছাপরা ঘরে বিভিন্ন পেশার শ্রমজীবী মানুষ বাস করে। দক্ষিণ কোণের প্রথম ঘরটাতেই থাকেন জমির ভাই। তিনি মাটি কেটে বহন করতে পারেন, রাজমিস্ত্রির জোগালির কাজ করতে পারেন, সুপারি-নারিকেল কাদিসহ কেটে নিয়ে নামতে পারেন, শিল-পাটা ধার করতে পারেন, কুলিগিরিও করতে পারেন। কোনাে কাজে তার আলসেমি নেই। কখনাে শরীর খারাপও হতে দেখিনি। আমাদের বাসায় প্রতি সপ্তাহেই একদিন তিনি আসেন। যা কিছু কাজ জমে থাকে, তা সারাদিন করেন। সকালে পান্তাভাত খেয়ে বের হন। দুপুরে কেউ খেতে দিলে খান, না হলে না খেয়েই থাকেন। কাজ শেষে বাড়ি গিয়ে খান। শ্রী আর এক ছেলেকে নিয়ে জমির ভাইয়ের সংসার। ছেলে স্কুলে পড়ে। তার স্ত্রীও ঘরের কাজ সেরে আমাদের বাসায় কাজ করেন। আমার মা ওদের খুব পছন্দ করেন আর নানাভাবে সাহায্যও করেন। রাতে ঘুমানাের আগে জমির ভাই যী-ছেলের সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প করেন। তারা সবাই খুব হাসি-খুশি থাকেন। শ্রমজীবী মানুষরা সবাই এরকম বলেই আমার ধারণা। আমি তাদের ভালােবাসি।
কুলি মজুর কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন
চেয়ারম্যান আজমল সাহেবের এলাকায় একজন ভালাে মানুষ হিসেবে যথেষ্ট সুনাম রয়েছে, কিন্তু তার ছেলে কারণে-অকারণে বাড়ির কাজের লােক, আশপাশের খেটে খাওয়া মানুষের সাথে খারাপ আচরণ করে, তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে। চেয়ারম্যান ছেলেকে ডেকে বুঝিয়ে বলেন, তুমি যাদের আজ তুচ্ছ জ্ঞান করছ- সত্যিকার অর্থে তারাই আধুনিক সভ্যতার নির্মাতা, তাদের কারণেই আমরা সুন্দর জীবন যাপন করছি।
ক. কুলি-মজুর’ কবিতায় রেলপথে কোনটি চলে?
খ. ‘শুধিতে হইবে ঋণ’- কথাটি দ্বারা কী বােঝানাে হয়েছে?
গ. চেয়ারম্যান সাহেবের ছেলের আচরণে কুলি-মজুর কবিতার কোন দিকটি প্রকাশ পেয়েছে ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “চেয়ারম্যান সাহেবের মনােভাব কুলি-মজুর’ কবিতার মূলভাবেরই প্রতিফলন।”- বিশ্লেষণ কর।
প্রশ্নের উত্তর
ক। ‘কুলি-মজুর’ কবিতার রেলপথে বাম্প-শকট চলে।
খ। শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য পাওনা বুঝিয়ে দিতে কবি ঋণ শােধ করার কথা বলেছেন।
শ্রমজীবীর অক্লান্ত শ্রমে রাজপথে মােটর চলছে। সাগরে জাহাজ চলছে। দালানকোঠা গড়ে উঠছে। মূলত লক্ষ-কোটি শ্রমিকের হাতে মানবসভ্যতা গড়ে উঠেছে। আর সেই সভ্যতার ফল ধনিকশ্রেণি ভােগ করছে। তাদের শােষণ আর শাসনে শ্রমজীবী মানুষ তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বতি। কবি মনে করেন, সামনে শুভ দিন আসছে। শ্রমিকরা সচেতন হয়ে উঠছে। দীর্ঘকাল ধরে শােষণের ফলে শ্রমজীবী মানুষের যে দাবি বা অধিকার জমা হয়েছে ধনিকশ্রেণিকে তা শােধ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে কবি উক্তিটি করেন।
গ। উদ্দীপকের চেয়ারম্যান সাহেবের ছেলের আচরণে ‘কুলি-মজুর’ কবিতার ধনিকশ্রেণির হৃদয়হীনতার দিকটি প্রকাশ পেয়েছে।
যুগ যুগ ধরে কুলি-মজুরদের মতাে লক্ষ-কোটি শ্রমজীবী মানুষের হাতে গড়ে উঠেছে মানবসভ্যতা। কিন্তু একশ্রেণির হৃদয়হীন মানুষ এদের মানুষ হিসেবে গণ্য করতেও নারাজ।
উদ্দীপকের চেয়ারম্যানের ছেলের আচরণে সমাজের বিত্তবান স্বার্থান্বেষী মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ফুটে উঠেছে। সে সমাজের শ্রমজীবী দরিদ্র মানুষের সাথে খারাপ আচরণ করে। তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে। কুলিমজুর’ কবিতায় এই শ্রেণির মানুষের কথা বলা হয়েছে। তারা শ্রমজীবীদের শ্রমের বিনিময়ে পাওয়া বিত্ত-সম্পদের সবটুকু ভােগ করে। অথচ তাদের সবখানেই বঞ্চিত করে রেখেছে। মানুষ হিসেবে তাদের গণ্য করতেও চায় না।
ঘ। “চেয়ারম্যান সাহেবের মনােব ‘কুলি-মজুর’ কবিতার
মূলভাবেরই প্রতিফলন:”- মন্তব্যটি যথার্থ
শ্রমজীবীরাই মানবসভ্যতার যথার্থ রূপকার। এদেরই অক্লান্ত শ্রমে পৃথিবী আজ এত সুন্দর। অথচ এদের শােষণ করেই ধনিকশ্রেণি বিত্তসম্পদের মালিক হয়েছে। তবে এর মাঝেও ব্যতিক্রম কিছু মানুষ রয়েছেন যারা মানুষকে মানুষের মর্যাদা দেন।
উদ্দীপকের চেয়ারম্যান সাহেব বিত্তবান এবং একজন ভালাে মানুষ। তার মতে শ্রমজীবীরাই আধুনিক সভ্যতার নির্মাতা। তাদের কারণেই আমরা সুন্দরভাবে বাঁচতে পারছি। চেয়ারম্যান সাহেবের এ মনােভাব কুলি-মজুর’ কবিতার মূলভাবকে ধারণ করে। ‘কুলি-মজুর’ কবিতায় কবি মানবসভ্যতার যথার্থ রূপকার শ্রমজীবী মানুষের অধিকারের পক্ষে কলম ধরেছেন। সমাজ-সভ্যতা নির্মাণে তাদের অবদানের কথা স্মরণ করে তাদের ন্যায্য পাওনা ও দাবি আদায়ের পক্ষে কথা বলেছেন।
উদ্দীপক ও ‘কুলি-মজুর’ কবিতা উভয় জায়গায় শ্রমজীবী মানুষের অবদানের কথা প্রকাশ পেয়েছে। প্রকাশ পেয়েছে তাদের প্রতি মমত্ববােধ। উদ্দীপকের চেয়ারম্যান সাহেব শ্রমজীবী মানুষের ওপর শ্রদ্ধাশীল। তিনি মনে করেন তারাই সভ্যতার নির্মাতা এবং সত্যিকার মানুষ। আলােচ্য কবিতার মূলভাবেও এই বিষয়টির প্রকাশ ঘটেছে। তাই বলা যায়, মন্তব্যটি যথার্থ।