দুধের সর দিয়ে ত্বকের যত্ন এবং এর উপকারিতা

দুধের সর দিয়ে ত্বকের যত্ন

নিয়মিত দুধ খেলে যেমন শরীর চাঙা থাকে, তেমনই দুধ ফোটানোর সময় যে সর পাওয়া যায়, সেটা ত্বকের যত্নে নানাভাবে কাজে আসে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সরে উপস্থিত স্যাচুরেটেড ফ্যাট এক নয়, একাধিক ভাবে ত্বকের জেল্লা বাড়ায়। এই গরমে ত্বকের যাতে কোনও ক্ষতি হতে দেয় না। এমন প্যাচপ্যাচে গরমেও যদি ত্বকের জেল্লা ধরে রাখতে হয়, তাহলে প্রায় দিনই দুধের সর মুখে লাগিয়ে মালিশ করতে হবে। 

দুধের সর দিয়ে ত্বকের যত্ন

রাতে ত্বকের যত্নে

প্রতিদিন শোওয়ার আগে দুধের সর মুখে ব্যবহার করুন। দুধের সর মুখে ভালো করে লাগিয়ে নিন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর, ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সতেজ ত্বক ও উজ্জ্বলতা ফিরে পাবেনই।

ত্বকের প্রদাহ কমাতে

শুষ্ক ত্বক ভালো রাখতে চাইলে সামান্য যত্ন তো করতেই হবে। এমনিতেই শুষ্ক ত্বকে জ্বালা ভাব, চুলকানি লেগেই থাকে। ত্বকের নানা সমস্যা দেখা দিতেই পারে। সরাসরি কাঁচা দুধ ব্যবহার করতে পারেন ত্বকে। প্রাকৃতিক ময়শ্চারাইজার হিসেবে দারুণ কাজে দেয়। একটি কটন বল দুধে চুবিয়ে নিন। সারা মুখে কাঁচা দুধ লাগিয়ে নিন। মিনিট ২০ অপেক্ষা করুন। এরপর ঠান্ডা জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। প্রতিদিন মেনে চললেই পার্থক্য চোখে পড়বেই।

ত্বকের যেসব উপকার করে দুধের সর

ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি 

দুধের সর ত্বক উজ্জ্বল করতে কার্যকর। এর ল্যাক্টিক অ্যাসিড ত্বকের রোদে পোড়াভাব কমায় ও প্রাকৃতিকভাবেই উজ্জ্বল করে। এছাড়াও ত্বকের সার্বিক সুস্থতা রক্ষায় দুধের সর উপকারী।

কালো দাগ দূর করে 

ত্বকের কালো দাগ সহজে দূর হতে চায় না। এই সমস্যা কমাতে দাগের ওপরে দুধের সর মেখে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। আরও ভালো ফলাফল পেতে এর সঙ্গে এক টেবিল-চামচ লেবুর রস মিশিয়ে নিতে পারেন। মিশ্রণটি ত্বকের ওপর শুকিয়ে আসলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সরে থাকা প্রোটিন ত্বকের দাগ সৃষ্টিকারী মৃত কোষ দূর করার পাশাপাশি নতুন কোষ গঠনে সহায়তা করে।

বয়সের ছাপ ধীর করে

ভাবলে অবাক লাগে কি করে নানী দাদীরা তাদের ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতেন। তখনতো বিভিন্ন রকমের প্রসাধনী পাওয়া যেত না। সেই সময়ের নারীরা ত্বক স্ক্রাব করতে ও প্যাক হিসেবে দুধের সর ব্যবহার করতেন। এতে থাকা প্রোটিন ও ভিটামিন ত্বকের ‘কোলাজেন’ তৈরি ও বয়সের ছাপ ধীর করতে সহায়তা করে।

ট্যান দূর করবে

গরমে বাড়ির বাইরে বের হওয়া মাত্র ত্বক পুড়ে কালো হয়ে যায়। সঙ্গে মুখে দেখা যায় কালো ছোপ ছোপ দাগ। ফলে ত্বকের জেল্লা কমে যায়। সৌন্দর্যও কমতে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে ত্বকের হারিয়ে যাওয়া সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে নিয়মিত মুখে লাগাতে শুরু করুন দুধের সর। ফল মিলবে হাতে-নাতে। এক্ষেত্রে, দুই চামচ দুধের সরের সঙ্গে এক চামচ বেসন মিশিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। তারপর তা সারা মুখে লাগিয়ে সার্কুলার মোশনে অন্তত পাঁচ মিনিট মাসাজ করতে হবে। এরপরে দশ মিনিট অপেক্ষা। সময় হলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। সপ্তাহে কমপক্ষে তিনবার এই পেস্ট মুখে লাগালে দাগ- ছোপ তো কমবেই, সঙ্গে ট্যানও দূর হবে।

ত্বক আর্দ্র থাকবে

যাদের সারা বছরই ত্বক শুষ্ক থাকে তারা দুধের সর মুখে লাগাতে ভুলবেন না। কারণ, দুধের সর হল প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার, যা ত্বকের হারিয়ে যাওয়া আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। পাশাপাশি স্কিন সেলের নানা ক্ষতও দূর করে। ফলে ত্বক সুন্দর হয়ে ওঠে। উপকার পেতে এক চামচ দুধের সরের সঙে সম পরিমাণ মধু মিশিয়ে সেই মিশ্রণ মুখে লাগিয়ে বিশ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। সময় হলে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে অন্তত দুইবার এই ভাবে ত্বকের যত্ন নিতে হবে।

ত্বক নরম এবং তুলতুলে রাখবে

এক চামচ দুধের সরের সঙে সম পরিমাণে হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে তৈরি পেস্ট মুখে লাগিয়ে কমপক্ষে বিশ মিনিট অপেক্ষা করুন। সময় হয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ভাল করে মুখ ধুয়ে নিন। একদিন পরপর যদি এইভাবে ত্বকের যত্ন নেওয়া যায়, তাহলে ত্বকের ভিতরে অ্যান্টিঅক্সিডান্ট এবং উপকারী ফ্যাট সহ একাধিক উপকারী উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যে কারণে অল্প সময়ই ত্বক নরম এবং তুলতুলে হয়ে ওঠে। সঙ্গে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে। একইসাথে ত্বকে কোনো দাগ ছোপ থাকলে তারাও মিলিয়ে যায়।

স্ক্রাব হিসেবেও ব্যবহার করা যায়

প্রতিনিয়ত আমাদের ত্বকের উপরে মৃত কোষ জমা হয়, যে কারণ ত্বকের জেল্লা বা উজ্জ্বলতা কমে। তাই সৌন্দর্য ধরে রাখতে মৃত কোষ তুলে ফেলতে হয়। আর সেই কাজটা করতে অনায়াসেই কাজে লাগানো যেতে পারে দুধের সরকে। এক্ষেত্রে প্রথমেই এক চামচ ওটস নিয়ে মিহি করে গুঁড়ো করে নিতে হবে। তারপর তাতে সম পরিমাণে দুধের সর মিশিয়ে তৈরি পেস্ট মুখে লাগিয়ে পাঁচ মিনিট ভালো করে ঘষতে হবে। এবার দশ মিনিট অপেক্ষা করে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। সপ্তাহে দুইবার এভাবে মুখ পরিষ্কার করতে হবে।

ত্বকের বয়স কমবে

ত্বকে বয়সের ছাপ কমাতে মুখে লাগাতে শুরু করতে পারেন দুধের সর। এতে উপস্থিত প্রোটিন, ভিটামিন এবং উপকারী ফ্যাট ত্বকের ভিতরে যাওয়া মাত্র কোলাজেনের উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। ফলে নিমেষে উধাও হয়ে যায় ত্বকে উপস্থিত বলিরেখা। সঙ্গে ত্বকের ইলাস্টিসিটিরও উন্নতি ঘটে, যে কারণে ত্বকের বয়স কম মনে হয়। পাশাপাশি বাড়ে উজ্জ্বলতা।

Next Post Previous Post