অপেক্ষা নিয়ে চমৎকার কিছু কবিতা

অপেক্ষা নিয়ে কবিতা


অপেক্ষা

কবি: শাহারিয়ার আরাফাত বৃত্ত

কোথায় তুমি সুহাসিনী?

আসবে কি এ তীরে?

ভাটা পরেছে নদীর জলে

স্রোতের নেই ধারা!

সর্বহারা এই আমি

ছোট্ট ডিঙি নাওয়ে

অপেক্ষায় বসে আছি

সুদিনের জোয়ারের।

পুষ্পমুকুল ফুটেছে আজ,

বসন্তের নতুন ডালে

তোমার ঘ্রাণে মোহিত মন,

মাতাল আমি ওই এলো চুলে।

তুমি কোথায় বলো?

আমি খুঁজে দিশেহারা।

আমার এই অশান্ত মন,

অজান্তেই দেয় তোমায় পাহারা।

কোথায় তুমি সুহাসিনী?

আসবেভ কি এ তীরে?

ভেঙে দেবে অভিমান

আমার অপেক্ষার অবসান।

ডিঙি নাওয়ে পাড়ি দেবো

প্রবল স্রোতধারা,

স্রোতস্বিনীর বুকে বাইবো তরি

পাটাতনে লাগবে তোমার ছোঁয়া।


অপেক্ষায়

কবি: শিমুল হোসাইন

বিলাসীতা ভেবে তোমাকে কখনো আমি চাইনি,

চেয়েছি নিজের প্রয়োজনে ।

যে নীল রঙ তুমি একে দিয়েছিলে

আমার মনের ক্যানভাসে

তা আজ ধীরে ধীরে লাল রঙে পরিনত হয়েছে ।

কালো মেঘের ঘনঘটা আমার পুরো আকাশ জুড়ে

ভয়ানক কালবৈশাখী ঝড়ের বার্তা পাঠায়,

বাতাসের সুরে ।

তবুও অপেক্ষায় আছি আসবে কি ?

তুমি নেমে এক ফোঁটা বৃষ্টির জলে ।


কবির অপেক্ষায়

কবি: রাকিবুল হায়দার

আমরা যখন একসাথে হাঁটতাম, প্রাণখুলে গাইতাম,

তখন আমাদের মধ্যে কোনো বিভেদ ছিলো না,

তারপর তারা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে গেলো, আর-

আমাকে পাঠালো সাংগঠনিক প্রস্তাব, তারা জানালো-

যদি ভালো থাকতে চাও তবে পক্ষ নাও, এটাই নিয়ম!

আমি জিজ্ঞেস করলাম, কার পক্ষ নিতে বলো আমাকে?

তারা কেউ রাজনৈতিক সংঘের প্রস্তাব নিয়ে এলো,

কেউ এলো ধর্ম নিয়ে, কেউ বললো, আমাদের দলে এসো-

আমরা ধর্ম, রাজনীতি কিংবা বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর নই!

আমি হেসে উঠলাম, তারপর তাদের দিকে তাকিয়ে বললাম-

‘যদি তাই হয়, তবে জেনে রাখো আমি তোমাদের কেউ নই,

আমি কবিতার, স্পষ্টত কবিতার লোক, এবং আদিম সেই মানুষ-

যার শরীরে কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর শিকার করা মানুষের পোষাক নেই,

আমি দৃশ্যমান নগ্ন অথচ তোমাদের চেয়ে স্পষ্ট!’

তারা একে একে সবাই আমাকে ছেড়ে চলে গেলো, ভাবলো-

আমি বুঝি একা রয়ে গেলাম এখানে!

অথচ আমি পরিস্কার শুনতে পাচ্ছি-

একদল যুবক কবিতার কথা বলতে বলতে হেঁটে আসছে!

গাইছে প্রাণ খুলে, হাসছে!

আমি চাই ওদের মধ্য থেকে অন্তত-

একজন আবার ঐ প্রস্তাবনার ব্যারিকেড পেরিয়ে-

নিজেকে স্রেফ কবিতার বেদীতে উৎসর্গ করুক!


অপেক্ষা

কবি: নূর ই মোবারক

এক একটি করে বসন্ত কেটে গেছে তোমার অপেক্ষায়।

তোমার ছবি আঁকবো বলে ক্যানভাস সাজিয়ে রেখেছিলাম,

অপেক্ষায় থাকতে থাকতে রংগুলি সব শুকিয়ে গেছে।

তোমার খোপায় ফুল বাঁধবো বলে ফুলের গাছ লাগিয়েছিলাম,

অপেক্ষার প্রহর গুণতে গুণতে সে গাছের পাতা ঝরে গেছে।

তোমায় বাসন্তী রং এর শাড়ী পড়াবো বলে

টিফিনের টাকা জমিয়ে রেখেছিলাম বইয়ের ভাঁজে,

সে বইয়ে আজ ধূলো জমে মাকড়শা বাসা বেঁধেছে।

তোমার পায়ে নূপুর পড়াবো বলে

বাসভাড়া বাঁচিয়ে হেঁটে গেছি মাইলের পর মাইল,

হাঁটতে হাঁটতে আজ আমার জুতো ছিড়ে গেছে।

তোমার সাথে ঘুড়ি উড়াবো বলে একটা ঘুড়ি বানিয়েছিলাম নিজহাতে,

তার সুঁতো বাঁধতে বাঁধতে কখন যে ঘুড়িটাই বাতাসে হারিয়ে গেছে খেয়াল করিনি আমি।

আমার সব ভালোবাসা উজাড় করে

হতে চেয়েছি নিঃস্ব

তোমায় করতে চেয়েছি রমণী

কিন্তু তবু তুমি আসোনি।

আমি অপেক্ষা করেছি আরো কিছুক্ষণ।

আবার বসন্ত এলো

তবু তুমি আসোনি।

অপেক্ষার প্রহর গুণে আমি আজ ক্লান্ত।

আমি এখন আর অপেক্ষা করিনা

তোমার জন্য

কারো জন্য।


অপেক্ষা

কবি: নাহিদ হাসান

অপেক্ষা, নামটা ছোট্ট

একটা সুতোয় গাঁথা

মনের এক কোণে কিছু

কষ্ট লেগে থাকা!

অপেক্ষা, তোমার কোলে

মাথা রেখে শেষ হাসিটা,

তোমার জন্য রাতের পর রাত

পত্র লিখে, না দেওয়া বেদনা

অপেক্ষা, চাঁদের আলোয়

তোমায় মুখ খানি না দেখার,

কবে শেষ হবে এই হাহাকার?

অপেক্ষা, নেই কোন শেষ

সেই আদিকাল থেকে শুরু-

যার নাই আছে কোনও রেশ!

Next Post Previous Post