সরিষার তেলের উপকারিতা, পুষ্টিগুণ ও অপকারিতা
সরিষার তেল আলফা-লিনোলেনিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ, যা আমাদের কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যকে রক্ষা করে। সরিষার তেলের অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং এটি ক্ষতিকারক সংক্রমণ থেকে হজমশক্তিকে রক্ষা করে। সরিষার তেলে থাকা ওমেগা ৩, ওমেগা ৫ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন ই শরীরকে প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর মান সরবরাহ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
সরিষার তেলের উপকারিতা
শরীরের ব্যথা কমাতে
বেশিরভাগ মানুষই সরিষার তেল ব্যবহার করেন শরীরের ব্যথা কমাতে। এর মধ্যে থাকা Anti-inflammatory Properties ব্যথা কমাতে সাহায্য করে ও রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। হাঁটু ব্যথা , বাতের ব্যথা ইত্যাদি কমাতে এটি দারুন কাজ করে।
অ্যাজমা রোগে
অ্যাজমা রোগীদের জন্য সরিষার তেল খুবই উপকারী। রোগীর যদি হঠাৎ অ্যাজমা অ্যাটাক হয় তাহলে সরিষার তেল বুকে ঘষলে এর থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়াও নিয়মিত সরিষার তেল মালিশ করলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
হৃদপিন্ড ঠিক রাখতে
সরিষার তেলে রয়েছে মনোস্যাচুরেটেড ও পলিস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড যা ৫০% হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এটি দেহে ভালো কোলেস্টেরল (HDL) সৃষ্টি করে যা উচ্চ রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়াও সরিষার তেল হচ্ছে ওলেইক এসিড সমৃদ্ধ এবং এর মধ্যে আছে লিনোলোনিক ও লিনোলেইক এসিডের মাত্রার ভারসাম্য যেগুলো হার্টের পক্ষে অনেক ভালো।
ক্যান্সার প্রতিরোধে
ক্যান্সার নিঃসন্দেহে একটি মরণব্যাধি। এর থেকে সবাই বেঁচে থাকতে চায়। আর এই ক্যান্সার প্রতিরোধে একটু হলেও সহায়তা করে সরিষার তেল। অবাক হচ্ছেন? কিন্তু এটা সত্যি। গবেষণায় দেখা গেছে, সরিষার তেলে অ্যালিল আইসোথিওসায়ানেট নামক উপাদান থাকে যা ক্যান্সার কোষ বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে দেহকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
ইমিউনিটি বুস্টার হিসাবে কাজ করে
সরিষার তেলের ঝাঁঝালো উপাদান শ্লেষ্মা এবং অবরুদ্ধ সাইনাস পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। রসুন ও লবঙ্গ দিয়ে সরিষার তেল গরম করে পা এবং বুকে মালিশ করলে সর্দি-কাশি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
লোহিত রক্তকণিকা শক্তিশালী করে
প্লাজমা, কোষের লিপিডস এবং কোষের ঝিল্লির উপাদান হিসাবে বিভিন্ন জৈবিক ক্রিয়াকলাপ সম্পাদনের জন্য আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় চর্বিগুলোর একটি প্রধান উৎস সরিষার তেল। এই তেল কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে এবং লোহিত রক্তকণিকার ঝিল্লি গঠনের উন্নতি করে।
কার্ডিওপ্রোটেক্টিভ প্রভাব
গবেষণায় দেখা গেছে যে, সরিষার তেল খেলে অ্যারিথমিয়াস, হার্ট ফেইলিও এবং এনজাইনা হ্রাস পেয়েছে। কার্ডিওভাসকুলার ডিজঅর্ডারে আক্রান্তদের জন্য সরিষার তেল স্বাস্থ্যকর হিসাবে বিবেচিত হয়। এটি ট্রাইগ্লিসারাইড, রক্তচাপ এবং প্রদাহ কমাতেও সহায়তা করে।
কাশি এবং সর্দি হ্রাস করতে সহায়তা করে
প্রাচীনকাল থেকেই সরিষার তেল কাশি, সর্দি এবং অন্যান্য শ্বাস প্রশ্বাসের অ্যালার্জি প্রশমিত করতে ব্যবহৃত হয়। সরিষার তেল দিয়ে স্টিম নিলে তা শ্লেষ্মা পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। সরিষার তেল সাইনোসাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের উপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
জয়েন্টে ব্যথা এবং বাত থেকে মুক্তি দেয়
সরিষার তেল নিয়মিত মালিশ করলে তা পেশী এবং জয়েন্টের ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে। সরিষার তেলে থাকা ওমেগা ৩ আর্থ্রাইটিসের কারণে সৃষ্ট কঠোরতা এবং ব্যথা কমাতে সহায়তা করে।
হজমশক্তি বৃদ্ধিতে
সরিষার তেল হজমশক্তি বৃদ্ধি করে ও দেহের মেটাবলিক রেট বৃদ্ধি করে।এটি পাকস্থলীর পাচক রস উদ্দীপিত করে ক্ষুধা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে সরিষার তেল। তাই যাদের হজমে সমস্যা আছে তারা নিয়মিত সরিষার তেল দিয়ে রান্না করা খাবার খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
সর্দি-কাশি কমাতে
প্রাচীনকাল থেকেই সর্দি কাশির মহৌষধ হিসেবে বহুল ব্যবহৃত উপাদানটি হলো সরিষার তেল। সরিষার তেলে থাকা ঝাঁঝালো উপাদান শেষ্মা ও সাইনাস পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। রসুন , লবঙ্গ ও সরিষার তেল গরম করে পা ও বুকে মালিশ করলে সর্দি কাশি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
সরিষা তেলের পুষ্টিগুণ
সরিষার তেলে রয়েছে ১৯২৭ ক্যালরি। এক কাপ তেলে চর্বি থাকে ২১৮ গ্রাম। এর গুণ যেমন রান্নার ক্ষেত্রে রয়েছে, তেমনি প্রতিদিনের অনেক ছোটখাটো সমস্যায় এর প্রয়োগ আছে। জেনে নিন সরিষার তেলের অপরিহার্য গুণ।
সরিষার তেলে আছে প্রয়োজনীয় অনেক উপাদান, যা আমাদের ত্বকের জন্য খুব উপকারী। এর মধ্যে আছে প্রোটিন, ভিটামিন ই, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ওমেগা, ফ্যাটি অ্যাসিড এবং পরিমাণমতো ভিটামিন এ। ফলে বুঝতেই পারছেন, সরিষার তেল ত্বক ভালো রাখার জন্য কতটা দরকারি। ত্বকের ব্রণ হোক বা ট্যান পড়া, সব ক্ষেত্রেই সরিষার তেল কাজে দেবে। অল্প পরিমাণে সরিষার তেল হাতে নিয়ে ভালো করে মালিশ করুন আপনার ট্যান পড়া জায়গায়। তারপর তুলা পানিতে ভিজিয়ে আস্তে আস্তে মুছে নিন। কিছুদিনের মধ্যেই চোখে পড়ার মতো উপকার দেখতে পাবেন।
সরিষা তেলের পুষ্টি উপাদান, ভিটামিন ও মিনারেল চুলের অকালপক্বতা রোধ করে। প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে সরিষার তেল মালিশ করুন চুল এবং মাথার তালুতে। এটি আপনার চুল পাকা রোধ করবে।
সরিষা তেলে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন আছে। এটি নিয়মিত মাথার তালুতে মালিশ করার ফলে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া এই তেল আয়রন, ফ্যাটি অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের উৎস, যা চুল পড়া রোধ করে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
সরিষার তেলের অপকারিতা
ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা বাড়ে
পরপর বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে সরষের তেলে ৪২ থেকে ৪৭ শতাংশ ইউরিক অ্যাসিড থাকে। সেই সঙ্গে থাকে ওমেগা ৯ ফ্যাটি অ্যাসিড। আর এই ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরের পক্ষে বিষ। যে কারণে বেশি পরিমাণ সরষের তেল খেলে ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা বাড়ে।
হার্টের জন্য ক্ষতিকর
সরষের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণ ইরেটিক অ্যাসিড। যা হার্টের জন্য মোটেই ভালো নয়। বেশি সরষের তেল কিংবা ঝাল মশলাদার খাবার খেলে হতে পারে মায়োকার্ডিয়াল লিপিডোসিস। যা শরীরে বেশি পরিমাণ ট্রাইগ্লিসারাইড তৈরি করে হার্টের ক্ষতি করে। যেখান থেকে হার্ট ফেলের সম্ভাবনা থাকে প্রবল।
ফুসফুসের ক্যানসারের সম্ভাবনা বাড়ে
ইরেটিক অ্যাসিড ফুসফুসের জন্যেও খুব ক্ষতিকর। বেশি পরিমাণ সরষের তেল খেলে প্রথমে ফুসফুসের উপরের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই ক্ষতি না আটকালে ধীরে ধীরে ফুসফুস আরও ড্যামেজ হয়। যেখান থেকে ক্যানসার হতে পারে।
জ্বালা ভাব
সরষের তেল পরিশোধন করলেই তাতে উপস্থিত হয় ক্ষতিকর যৌগ অ্যালাইল আইসোথিয়োকানেট। যার ফলে মুখে জ্বালা করে। সেই সঙ্গে ফুসফুস, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্ট প্রভৃতিতে প্রদাহ সৃষ্টি করে।
ত্বকের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর
ত্বকের উপর সরষের তেলের বেশ কিছু ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। সরষের তেল এপিডার্মিসের ক্ষতি করে ত্বকের জলীয় অংশের পরিমাণ কমিয়ে দেয়য়। সেই সঙ্গে এপিডার্মাল কেরাটিনোসাঅটগুলির গঠনগত পরিবর্তনও ঘটে। যার ফলে ত্বকে ফোসকা পড়ে। যে কারণে বাচ্চাদের সরষের তেলে মালিশ এড়ানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।
গর্ভাবস্থায়
হবু মায়েদের এমনিই বেশি মশলাদার খাবার খেতে বারণ করা হয়। সেই সঙ্গে সরষের তেলও। কারণ এর মধ্যে থাকে বেশ কিছু ক্ষতিকর রাসায়নিক যৌগ। যা ভ্রূণের গঠনে বাধা দেয়। সেই সঙ্গে রাসায়নিক যৌগের প্রভাবে গর্ভপাতও হতে পারে।