তাহাজ্জুদ নামাজের তাসবিহ

তাহাজ্জুদ নামাজের তাসবিহ

প্রতিদিনের নামাজে পবিত্র কোরআন ছাড়াও একাধিক তাসবিহ ও দোয়া পাঠ করা হয়। যার কোনো কোনোটি আবশ্যক আর কোনো কোনোটি নফল হিসেবে প্রমাণিত। কোনোটি মহানবী (সা.) নিয়মিত পাঠ করতেন আবার কোনোটি কখনো কখনো পাঠ করতেন এবং শুধু নফল নামাজে পড়তেন।

যদিও এসব তাসবিহ ও দোয়ার অর্থ জেনে পাঠ করার বাধ্যবাধকতা নেই, তবু অভিজ্ঞ আলেমদের মত হলো, নামাজের তিলাওয়াত, তাসবিহ ও দোয়া অর্থ বুঝে পাঠ করা উত্তম এবং তা মনোযোগ ধরে রাখতে সহায়ক। নামাজে পঠিত তাসবিহ-দোয়া, তার অর্থ ও সূত্র তুলে ধরেছেন মো. আবদুল মজিদ মোল্লা

নামাজের শুরুতে পড়ার দোয়া

উচ্চারণ : আলহামদু লিল্লাহি হামদান কাসিরান তৈয়্যিবান মুবারাকান ফিহি

অর্থ : সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য, তাঁর জন্য অগণিত প্রশংসা, পবিত্রতা তাঁরই জন্য। পরম বরকতময় তিনি।

সূত্র : আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নামাজের কাতারে দাঁড়িয়ে এই দোয়া পড়লে নামাজান্তে মহানবী (সা.) তার প্রশংসা করে বলেন, ‘বারোজন ফেরেশতা এই বাক্যগুলো আল্লাহর কাছে নিয়ে যেতে হাজির হয়েছে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১২৪৭)

তাকবিরে তাহরিমা

উচ্চারণ : আল্লাহু আকবার

অর্থ : আল্লাহ সবচেয়ে বড় ও মহান।

সূত্র : আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজে দাঁড়িয়ে তাকবির (আল্লাহু আকবার) বলতেন। অতঃপর ...। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৭৭৫)

তাকবিরে তাহরিমার পর যে দোয়া পড়তে হয়

১. উচ্চারণ : সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়াবিহামদিকা ওয়া তাবারা কাসমুকা ওয়া তাআলা যাদ্দুকা ওয়ালা ইলাহা গাইরুকা।

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি মহাপবিত্র, আপনার জন্যই প্রশংসা, আপনার নাম বরকতপূর্ণ, আপনার মর্যাদা সর্বোচ্চ এবং আপনি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নাই।

সূত্র : আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজ শুরু করার সময় এই দোয়া পড়তেন। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৪২)

২. উচ্চারণ : ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাজি ফাতারাস্ সামাওয়াতি ওয়াল-আরদা হানিফাও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকিন। ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন, লা শারিকা লাহু ওয়া-বিজালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমিন। আল্লাহুম্মা আনতাল মালিকু লা ইলাহা ইল্লা আনতা, আনতা রাব্বি ওয়া আনা আবদুকা, জলামতু নাফসি ওয়া-তারাফতু  বিজামবি, ফাগফিরলি জুনুবি জামিয়া; ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা, ওয়াহদিনি লি-আহসানিল আখলাকি লা ইয়াহদি লি-আহসানিহা ইল্লা আনতা, ওয়াসরিফ আননি সাইয়িয়াহা লা ইয়াসরিফু আননি  সাইয়িয়াহা ইল্লা আনতা, লাব্বাইকা ওয়া সাদাইকা ওয়াল খাইরু কুল্লুহু ফি ইয়াদাইকা, ওয়াশ শাররু লাইসা ইলাইকা, আনা বিকা ওয়া ইলাইকা, তাবারাকতা ওয়া তালাইতা, আসতাগফিরুকা ওয়া আতুবু ইলাইকা।

অর্থ : আমি একনিষ্ঠ হয়ে আল্লাহর অভিমুখী হলাম—যিনি আসমান ও জমিনগুলো সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। আমার সালাত, কুরবানি, জীবন ও মৃত্যু বিশ্বপ্রতিপালক আল্লাহর জন্য, যার কোনো শরিক নেই। আর আমি এ বিষয়ে আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি মুসলমানদের একজন। হে আল্লাহ! আপনিই বাদশাহ, আপনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। আপনি আমার প্রতিপালক এবং আমি আপনার বান্দা। আমি নিজের ওপর অবিচার করেছি এবং আমি আমার অপরাধ স্বীকার করছি। অতএব আমার গুনাহ মাফ করে দেন। আপনি ছাড়া কেউই গুনাহ ক্ষমাকারী নেই। আমাকে উত্তম চরিত্রের দিকে পরিচালিত করেন। আপনি ছাড়া কেউ উত্তম চরিত্রের দিশা দিতে পারে না। আমার থেকে চরিত্রের মন্দ দিকগুলো দূরে রাখুন। আপনি ছাড়া কেউ আমার থেকে চরিত্রের মন্দ দিকগুলো দূরে রাখতে পারে না। আমি আপনার কাছে হাজির। আনুগত্য আপনারই জন্য নিবেদিত। সব কল্যাণ আপনার হাতে, অকল্যাণ আপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। আমি আপনার সাহায্যে প্রতিষ্ঠিত আছি এবং তোমারই দিকে প্রত্যাবর্তন করছি। আপনি মঙ্গলময়, আপনি সুমহান। আপনার কাছে ক্ষমা চাইছি এবং আপনার কাছে তওবা করছি।

সূত্র : আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজে দাঁড়িয়ে তাকবির বলার পর এই দোয়া পাঠ করতেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৯০০)

উল্লেখ্য, দোয়াটি জায়নামাজের দোয়া হিসেবে পরিচিত থাকলে হাদিসে দোয়াটি সানার পরিবর্তে পড়ার কথা পাওয়া যায়।

Next Post Previous Post