তিলের তেলের উপকারিতা

তিলের তেল খাদ্য তেল হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং এটি আমাদের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর উপাদান। শরীরের নানা রোগব্যাধি দূর করতে তিল তেল বেশ উপকারী। তিলের তেল যেমন স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, তেমনই রান্নায় এই তেলের ব্যবহার করলে তার স্বাদও বেড়ে যায় কয়েক গুণ। সুস্বাস্থ্য পেতে স্যালাডের ড্রেসিং হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন এই তেল।

তিলের তেলের উপকারিতা

ডায়বিটিস নিয়ন্ত্রণ 

ছোট থেকে বড়, সব বয়সীদের মধ্যেই ডায়াবিটিসের ঝুঁকি এখন অনেক বেশি। ডায়াবেটিক রোগীদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী সাদা তিল।

রক্তচাপ বাগে আনতে 

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাদা তিলের জুড়ি মেলা ভার। এই তিলে রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম, যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। তাই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতেও এই তেলে রান্না করা ভালো?

ক্যানসারের ঝুঁকি কমায় 

সাদা তিলের তেলে একাধিক প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে। তাই প্রতিদিনের খাবারে এই তেল ব্যবহার করলে শরীরে ক্যানসারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। যাদের কেমোথেরাপি নিতে হয়, তাদের খাদ্যতালিকায় এই তেল রাখার কথা বলেন পুষ্টিবিদরা।

গাঁটের ব্যথা উপশম করে  

এই তেল হাড়কে মজবুত করে। তিলের তেলে রয়েছে তামা, যা গাঁটের ব্যথা, পা ফুলে যাওয়া, পেশিতে ব্যথা কিংবা বাতের ব্যথার উপশমে খুবই কার্যকর। যাদের আর্থারাইটিসের সমস্যা আছে তারাও তিলের তেল দিয়ে রান্না করতে পারেন, উপকার পাবেন।

শিশুদের জন্য উপকারী

ছোটো শিশুদের তেল মালিশ অত্যন্ত জরুরি। তিলের তেল যদি ছোট শিশুদের দেহের মালিশের জন্য ব্যবহার করা হয় তাহলে তা অত্যন্ত উপকারী। এই তেল আপনার ছোটো শিশুর হাড় শক্ত করে এবং আপনার শিশুর তাড়াতাড়ি বেড়ে ওঠাতে সাহায্য করে। এছাড়া এই তেল আপনার শিশুর ত্বক নরম ও মসৃন করে এছাড়া ঠান্ডা লেগে যাওয়ার হাত থেকেও রক্ষা করে।

বয়সের ছাপ পরা থেকে রক্ষা

আজকাল কার ব্যাস্ত জীবন যাত্রা কিন্তু অনেকে সময়ই আমাদের চেহারায় অকালেই বয়সের ছাপ ফেলে দিছে। যারা এই সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য কিন্তু তিলের তেলের মালিশ বেশ উপকারী। এতে বর্তমান আন্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন ই ও সেসামল আমাদের ত্বকের বয়স বাড়ার স্বাভাবিক পদ্ধতিকে বা গতি কে কমিয়ে দেয় ফলত আপনার চেহারায় বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না।

আন্টি ট্রেস হিসেবে কাজ করে

সারা দিনের কাজ, নানা ধরনের চিন্তা, অকারণ স্ট্রেস আপনার শরীর খারাপের কারণ হয়ে দাড়ায়। নিয়মিত তিলের তেলের মালিশ আপনার শরীরে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করে, মাংসপেশী গুলি কে শিথীল করে এছাড়া এর স্বাভাবিক কুলিং এফেক্ট আপনার দেহকে ঠান্ডা করে সমস্ত কাল্ন্তি দূর করে দেয়। অল্প তিলের তেল সার্কুলার মোশনে দেহে মালিশ করুন এই মালিশ আপনার দেহে আন্টি ট্রেস হিসেবে কাজ করে।

আন্টি ট্যান হিসেবে কাজ করে

নিয়মিত তিলের তেলের মালিশ আপনার শরীরের সান এক্সপোসড অংশ গুলিকে সূর্যের ট্যান হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। নিয়মিত আপনার দেহে তিলের তেলের মালিশ একটি  প্রাকৃতিক সানস্ক্রিনের কাজ করে।

কনস্টিপেষণের উপশম

আপনি যদি কনস্টিপেষণের রুগী হন তাহলে এই তেলের মালিশ আপনার জন্য উপকারী হতে পারে। প্রতিদিন একবার করে তিলের তেল ও ঠান্ডা জল আপনার তলপেটে মালিশ করুন। এর ফলে আপনার হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ফলে আপনি কনস্টিপেষণের হাত থেকে রক্ষা পাবেন। এছাড়া এই তেলের মালিশ গ্যাসের সমস্যা থাকলে তা দূর করতে সাহায্য করে।

সুগঠিত স্তন পেতে

আপনার স্তনের আকার ছোটো বা স্তনের গঠন ঠিক না হলে তা অনেক সময় আপনার অশান্তির কারণ হয়ে উঠতে পারে। এক্ষেত্রে আপনার স্তনে নিয়মত তিলের তেলের মালিশ করলে আপনার স্তনের আকার বৃদ্ধি পায় ও স্তন সুগঠিত হয়।

চুলের নানা সমস্যার সমাধান

চুল পড়ে যাওয়া, খুশকি, চুল রুক্ষ হয়ে যাওয়া, অকালে চুল পেকে যাওয়া, ড্রাই স্কাল্প ইত্যাদি নানা সমস্যার কোনো না কোনোটি নিশ্চই আপনার অশান্তির কারণ হয়ে উঠেছে। এর হাত থেকে রক্ষা পেতে তিলের তেলের মালিশ অত্যন্ত কার্যকরী। তিলের তেল চুলে কন্ডিশনারের কাজ করে। মাথায় নিয়মিত তিলের তেলের মালিশ স্কাল্পের রক্ত চলাচল বাড়িয়ে তোলে। ফলত আপনার চুল পড়া  কম করে, খুশকির প্রকোপ কম করে, অকালে চুল পেকে যাওয়া কম করে আপনার চুল জেল্লাদার, মজবুত ঘন ও কালো করে তোলে।

ত্বকের সুরক্ষা

তিলের তেলে প্রচুর পরিমানে ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। যা আমাদের ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। শীত কালে গোড়ালি ফেটে যাওয়া প্রায় সকলের ক্ষেত্রে একটি সাধারণ সমস্যা। শীতকালে রাতে শুতে যাবার আগে গোড়ালি তে এই তেলের মালিশ করলে শীত কালেও আপনার গোড়ালি সুন্দর এবং মসৃন থাকে। এছাড়া রুক্ষ ত্বক, কনুই, হাটু ইত্যাদি রুক্ষ হয়ে গেলে তিলের তেলের মালিশ করলে খুব তাড়াতাড়ি আপনার ত্বক সুন্দর, নরম ও মসৃন হয়ে যায়।

হাড়ের সন্ধির ব্যাথার উপশম

হাড়ের সন্ধি স্থানে ব্যাথা সাধারনত বয়স জনিত রোগ। আজকাল একটু বয়স হলেই সকলেই এই কষ্টের শিকার। বয়সের সাথে সাথেগোড়ালি হয়ে পড়ে ফলত হাড়ের সন্ধিস্থল ক্ষয়ে যেতে থাকে। যার ফলে অত্যন্ত ব্যাথা হয় এবং চলাফেরা করা দুস্কর হয়ে পরে। এক্ষেত্রে এই তেল নিয়মিত মালিশ হাড় শক্ত করে। হাড়ের ক্ষয় রোধ করে।

তিলের তেলের পুষ্টিগুণ

তিলের তেল একটি খাদ্য তেল হিসাবে ব্যবহৃত হয় এবং এটি কিছু পুষ্টিগুণ ধারণ করে যা নিম্নলিখিতঃ

বিটিন: তিলের তেলে বিটিন রয়েছে যা হৃদয়ের স্বাস্থ্যকে উন্নয়ন করে।

ক্যালসিয়াম: তিলের তেলে ক্যালসিয়াম রয়েছে যা হাড় ও দাঁতের জন্য খুব ভাল।

ম্যাগনিসিয়াম: তিলের তেলে ম্যাগনিসিয়াম রয়েছে যা হৃদয়ের স্বাস্থ্যকে উন্নয়ন করে এবং প্রতিরক্ষা ক্ষমতাকে বৃদ্ধি দেয়।

ওমেগা ৩ ফ্যাট: তিলের তেলে ওমেগা ৩ ফ্যাট রয়েছে যা হৃদয় রক্ষা করে এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

স্কুলিয়াস: তিলের তেলে স্কুলিয়াস রয়েছে যা হাড় ও দাঁতের উপকার করে। 

ফোসফরাস: তিলের তেলে ফোসফরাস রয়েছে যা হাড় ও দাঁতের জন্য উপকারী। 

তিলের তেলের অপকারিতা

তিলের তেল খাদ্য তেল হিসাবে ব্যবহৃত হয় এবং প্রয়োজন মাত্রাতির বাইরে ব্যবহারে কিছু অপকারিতা থাকতে পারে। নিম্নলিখিত অপকারিতা হতে পারেঃ

উচ্চ ক্যালরি

তিলের তেলে উচ্চ পরিমাণে ক্যালরি রয়েছে যা যদি অতিরিক্ত সেবন করা হয় তবে এটি বাড়তি ওজনের কারণ হতে পারে।

উচ্চ ফ্যাট

তিলের তেলে উচ্চ পরিমাণে ফ্যাট রয়েছে এবং এটি অতিরিক্ত সেবন করলে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়তে পারে এবং হৃদয়ের সমস্যার কারণ হতে পারে।

এলার্জি

কয়েকজন মানুষ তিলের তেলের এলার্জি হতে পারে এবং তাদের জন্য এটি কিছু দিক থেকে জনপ্রিয় নয়।

তবে, সামান্য পরিমাণে তিলের তেল ব্যবহার করা অত্যান্ত স্বাস্থকর।

নবীনতর পূর্বতন