কাজু বাদামের উপকারিতা অনেক। কারণ কাজু বাদামে এত পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া যায়, যা প্রায় রান্না করা মাংশে পাওয়া প্রোটিনের সমান। এ ছাড়া এতে অনেক বেশি পরিমাণে ফাইবার থাকে এবং শর্করার পরিমাণ কম থাকে। সুস্বাদু কাজু বাদাম প্রচুর পরিমাণে প্রোটিনসহ পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ একটি বীজ। এতসব পুষ্টি উপাদানের কারণে এটির স্বাস্থ্য উপকারিতাও অনেক। হাড়ের জন্য অনেক উপকারী হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি ওজন কমাতে, হার্টকে ভালো রাখতে এবং ডায়বেটিস রোগের উপকারেও সহায়তা করে কাজু বাদাম। আজকের এই আলোচনায় আমরা কাজু বাদামের উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করবো এবং এর পুষ্টিগুণ ও অপকারিতা নিয়েও আলোচনা করবো।
কাজু বাদামের উপকারিতা
পুষ্টিগুণ এবং শরীরিক উপকারিতার দিক থেকে কাজু বাদামের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। এতে উপস্থিত প্রোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, কপার, ক্য়ালসিয়াম, ম্য়াগনেশিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, জিঙ্ক এবং আরও নানাবিধ খনিজ এবং ভিটামিন নানাভাবে শরীরের উপকারে লেগে থাকে। শুধু তাই নয়, কাজু বাদামে ভিটামিনের মাত্রা এত বেশি থাকে যে চিকিৎসকেরা একে প্রাকৃতিক ভিটামিন ট্যাবলেট নামেও ডেকে থাকেন। তবে একথাও ঠিক যে মাত্রা ছাড়া এই বাদামটি যদি কেউ খায়, তাহলে কিন্তু শরীরের উপকারের থেকে অপকার হয় বেশি। কারণ উপকারি উপাদান বেশি মাত্রায় শরীরে প্রবেশ করলে উল্টো ফল হতে শুরু করে। তাই পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে কাজু বাদাম, তাহলেই দেখবেন কেল্লা ফতে! একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত যদি ৩-৪ টি করে কাজু বাদাম খাওয়া যায়, তাহলে শরীরে নানা পুষ্টিকর উপাদানের ঘাটতি দূর হয়, সেই সঙ্গে আরও কিছু উপকার পাওয়া যায়।
কাজু বাদাম ওজন কমাতে সাহায্য করে
অন্যান্য বাদামে বেশি পরিমাণে ক্যালোরি এবং ফ্যাট থাকে বলে সেগুলো ওজন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তবে গবেষণায় দেখা গেছে যে, কাজু বাদামে যে পরিমাণ ক্যালোরি থাকে, তার ৮৪ শতাংশই হজম করতে এবং শুষে নিতে পারে মানব দেহ। এ ছাড়া এটি প্রোটিন ও ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় ক্ষুধা কমাতে এবং পেটভরা রাখতে সহায়তা করে বলে ওজন কমার সম্ভাবনা থাকে অনেক।
কাজু বাদাম মুখ গহ্বরে উপস্থিত নানা রোগের প্রকোপ কমায়
কাজুতে উপস্থিত ফসফরাস, দাঁতের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটানোর মধ্যে দিয়ে নানাবিধ মুখগহ্বর সম্পর্কিত রোগকে দূরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই দাঁতকে শক্তপোক্ত এবং সুন্দর রাখার ইচ্ছা যদি থাকে, তাহলে প্রতিদিন কাজু খেতে ভুলবেন না যেন!
কাজু বাদাম অ্যানিমিয়ার মতো রোগের প্রকোপ কমাতে সাহায্য করে
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, কাজু খাওয়া মাত্র দেহের ভেতরে আয়রনের ঘাটতি দূর হতে শুরু করে। ফলে লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদন এত মাত্রায় বেড়ে যায় যে অ্যানিমিয়ার মতো রোগ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না। সেই সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটতেও সময় লাগে না।
কাজু বাদাম চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে পারে
কপার হল সেই খনিজ, যা চুলের ঔজ্জ্বল্য বাড়ানোর পাশাপাশি চুলের গোড়াকে শক্তপোক্ত করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর এই উপাদানটি প্রচুর পরিমাণে রয়েছে কাজুতে। এবার নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন কিভাবে কাজু চুলের সৌন্দর্য বাড়িয়ে থাকে। তবে এখানেই শেষ নয়, কাজু বাদামে থাকা কপার শরীরের ভেতরে এমন কিছু এনজাইমের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়, যা চুলের কালো রংকে ধরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা নেয়।
কাজু বাদাম ক্যান্সারের মতো মারণ রোগ দূর করতে সাহায্য করে
এই মারণ রোগটি যদি সাপ হয়,তাহলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হল বেজি। তাই তো যেখানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, সেখানে ক্যান্সার সেলের খোঁজ পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তাই তো প্রতিদিন এক মুঠো করে কাজু বাদাম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। আসলে এই বাদমটির শরীরে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ক্যান্সার সেলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার পাশাপাশি টিউমার যাতে দেখা না দেয় সেদিকেও খেয়াল রাখে। প্রসঙ্গত, কাজু বাদামে থাকা প্রম্যান্থোসায়ানিডিন নামে একটি উপাদান এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
কাজু বাদাম ব্রেন পাওয়ার বৃদ্ধি করতে পারে
বাদামে শরীরের থারা ম্যাগনেসিয়াম নার্ভের ক্ষমতা বাড়িয়ে সার্বিকভাবে মস্তিষ্কের শক্তি বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর একবার ব্রেন পাওয়ার বাড়তে থাকলে ধীরে ধীরে ব্রেনের কগনিটিভ ফাংশনেরও উন্নতি ঘটে। ফলে বুদ্ধি, স্মৃতিশক্তি এবং মনোযোগও বাড়তে শুরু করে।
কাজু বাদাম সংক্রমণের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমায়
এই প্রাকৃতিক উপাদানটিতে থাকা জিঙ্ক, ভাইরাসের আক্রমণের হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করে। তাই আপনি যদি এই ধরনের ইনফেকশনের শিকার প্রায়শই হয়ে থাকেন, তাহলে রোজের ডায়েটে কাজু বাদামের অন্তর্ভুক্তি ঘটাতেই পারেন।
কাজু বাদাম ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে
মাঝে মধ্যেই কি রক্তচাপ গ্রাফের কাঁটার মতো ওঠা-নামা করে? তাহলে তো চটজলদি কাজু খাওয়া শুরু করতে হবে। কারণ এই বাদামে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, যা ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
কাজু বাদাম খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দিতে সাহায্য করে
কাজুতে রয়েছে ওলিসিক নামে এক ধরনের মোনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড, যা দেহে বাজে কোলেস্টরলের মাত্রা কমাতে দারুন কাজে আসে। তাই তো নিয়মিত এই বাদমটি খেলে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ফলে হার্টের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়।
কাজু বাদাম খেলে হাড় শক্তপোক্ত হয়
কাজু বাদামে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং ম্যাগনেসিয়াম থাকার কারণে এই বাদামটি নিয়মিত খেলে হাড়ের শক্তি বাড়তে শুরু করে। সেই সঙ্গে বুড়ো বয়সে গিয়ে অস্টিওআর্থারাইটিসের মতো হাড়ের রোগ হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।
কাজু বাদাম হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়
কাজু বাদামে উপস্থিত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট একদিকে যেমন ক্যান্সার রোগকে দূরে রাখে, তেমনি নানাবিধ হার্টের রোগ থেকে বাঁচাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই যাদের পরিবারে হার্ট ডিজিজের ইতিহাস রয়েছে, তারা প্রয়োজন মনে করলে এই প্রাকৃতিক উপাদানটির সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতাতেই পারেন।
কাজু বাদামের পুষ্টিগুণ
28 গ্রাম কাজুবাদামে পুষ্টির পরিমাণ রয়েছে:
- ক্যালোরি 157
- প্রোটিন 5 গ্রাম
- চর্বি 12 গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট 9 গ্রাম
- ফাইবার 1 গ্রাম
- তামা দৈনিক মূল্যের 67% (DV)
- ম্যাগনেসিয়াম DV এর 20%
- ম্যাঙ্গানিজ DV এর 20%
- দস্তা DV এর 15%
- ফসফরাস DV এর 13%
- আয়রন DV এর 11%
- সেলেনিয়াম DV এর 10%
- থায়ামিন DV এর 10%
- ভিটামিন কে DV এর 8%
- ভিটামিন বি৬ DV এর 7%
কাজু বাদামের অপকারিতা
বাদামের উপকারিতা ও অপকারিতা নিবন্ধে বাদামের উপকারিতায় আমরা আগেই জেনেছি, এতে উচ্চ প্রোটিন ও ফ্যাট থাকে। তাই মাত্রাতিরিক্ত বাদাম খেলে আপনি কিন্তু মোটা হয়ে যেতে পারেন। কাঠ বাদাম ওজন কমায় পাশাপাশি বেশি খেলে ওজন বাড়াতেও পারে। এছাড়াও অন্যান্য বাদাম রয়েছে যা সঠিক মাত্রায় না খেলে ওজন বৃদ্ধি করতে পারে। তাই নিয়মিত খাবারের তালিকায় বাদাম যোগ করলে চার ভাগের এক ভাগ রাখুন।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা
আপনার কাজু বাদাম পছন্দ আর আপনি রোজ প্রয়োজনের থেকে (২০০ গ্রাম বা তার বেশি) খেয়ে ফেলেন। তাহলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারেন। কারণ এটি বাদামে একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
অ্যালার্জির সমস্যা
বাদামে প্রচুর পরিমাণে উপকারিতা বিদ্যমান রয়েছে তবু বাদাম খাওয়ার সময় সঠিক পদ্ধতিতে না ব্যবহার করলে কিছু সাইড এফেক্ট দেখা যায়। তার মধ্যে একটি অ্যালার্জির সমস্যা। কারণ বাদামে অ্যালার্জি হওয়ার প্রবণতা বেশি। তাই বাদাম খাওয়ার আগে সচেতন হন কোন বাদামে আপনার অ্যালার্জি রয়েছে।