অর্থ ও বাংলা উচ্চারণ
قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ
কুল হুয়াল্লাহু আহাদ
(হে রাসুল! আপনি) বলুন, তিনিই আল্লাহ, একক।
اللَّهُ الصَّمَدُ
আল্লাহুচ্চামাদ
আল্লাহ অমুখাপেক্ষী।
لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ
লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদ
তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি।
وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ
ওয়া লাম ইয়াকুল্লাহু কুফুয়ান আহাদ
আর তার সমতুল্য কেউ নেই।
সুরা ইখলাসের ফজিলত
সুরা ইখলাস-এর ভাব ও মর্মার্থ বুঝে পড়লে তাতে বান্দার অন্তরে আল্লাহর গুণাবলী গেঁথে যাবে। মনে প্রাণে ওই ব্যক্তি হয়ে উঠবে শিরকমুক্ত ঈমানের অধিকারী হবে। আর তার বিনিময়ে সে লাভ করবে দুনিয়া ও পরকালের অনেক উপকারিতা ও ফজিলত।
একবার এক সাহাবা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি সুরা ইখলাসকে ভালোবাসি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বলেন, এ ভালোবাসা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। ’ (বুখারি, তিরমিজি)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন ২০০ বার সুরা ইখলাস পড়বে, তার ৫০ বছরের গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। তবে ঋণগ্রস্ত হলে তা ক্ষমা হবে না। ’ (তিরমিজি)
হজরত সাহল ইবন সাদ সায়েদি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে দারিদ্র্যতার অভিযোগ করল তিনি বললেন, ‘যখন তুমি ঘরে যাও তখন সালাম দেবে এবং একবার সুরা ইখলাস পড়বে। এ আমল করার ফলে কিছু দিনের মধ্যে তার দারিদ্র্যতা দূর হয়ে যায়। ’ (তাফসিরে কুরতুবি)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পাঠ করে তা তাকে বালা-মসিবত থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য যথেষ্ট হয়। ’ (ইবনে কাসির)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তিকে সুরা ইখলাস তেলাওয়াত করতে শুনলেন। তিনি বললেন, ‘এটা তার অধিকার। ’ সাহাবারা জিজ্ঞাসা করলেন, তার অধিকার কী? তিনি উত্তরে বললেন- ‘তার অধিকার হচ্ছে জান্নাত। ’ (মুসনাদে আহমাদ)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুরা ইখলাসের ভাব ও মর্মার্থ নিজেদের মধ্যে ধীর বিশ্বাস স্থাপন করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহর একত্ত্ববাদ ও ক্ষমতায় পরিপূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করার তাওফিক দান করুন। হাদিসে ঘোষিত মর্যাদা ও ফজিলত লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
অবতরণের পটভূমি
মুশরিকরা হযরত মুহাম্মদ (স:) - কে আল্লাহ্ তা'আলার বংশ পরিচয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিল , যার জওয়াবে এই সূরা নাযিল হয়। অন্য এক বিবরণে আছে যে , মদীনার ইহুদিরা এ প্রশ্ন করেছিল। আবার কোনো কোনো বর্ণনায় রয়েছে যে , তারা আরও প্রশ্ন করেছিল- "আল্লাহ্ তা'আলা কিসের তৈরি ? স্বর্ণ-রৌপ্য নাকি অন্য কিছুর?" এর জওয়াবে সূরাটি অবতীর্ণ হয়েছে ৷
হাদিস
আবু সাইদ আল খুদরি বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি অন্য একজনকে (নামাযে) আবৃত্তি করতে শুনল: ‘বলুন (হে মুহাম্মাদ): তিনিই আল্লাহ, তিনিই এক।’ (১১২.১) এবং তিনি এটি বারবার আবৃত্তি করলেন। যখন সকাল হয়ে গেল, তখন তিনি নবীজির নিকটে গেলেন এবং তাকে সে সম্পর্কে অবহিত করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "তাঁর কসম যাঁর হাতে আমার জীবন, এটি কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান।
ইয়াহিয়া, ইবনে শিহাব থেকে বর্ণনা করেছেন যে হুমায়দ ইবনে আবদ-রহমান ইবনে আওফ তাকে বলেছিলেন, সূরাতুল ইখলাস (সূরা ১১২) কোরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান এবং সূরাতুল মুলক, (সূরা ৬৭) এর পাঠকারীর পক্ষে সুপারিশ করে।
‘আয়েশা কর্তৃক বর্ণিত: নবী এক ব্যক্তির অধীনে একদল সেনাবাহিনী প্রেরণ করেছিলেন, যিনি তাঁর সাহাবীদের সাথে নামাযে ইমামতি করতেন এবং (সূরা ১১২) দিয়ে তাঁর তেলাওয়াত শেষ করতেন: 'বলুন (ও মুহাম্মদ): "তিনিই আল্লাহ, তিনিই এক। " ' (১১২.১) তারা যখন (যুদ্ধ থেকে) ফিরেছিলেন, সাহাবিরা রাসূলের কাছে তাঁর কুরআন পাঠের কথা উল্লেখ করেছিল। তিনি (তাদের) বললেন, "তাকে জিজ্ঞাসা করুন তিনি কেন এমনটি করেন?" তারা তাকে জিজ্ঞাসা করেছিল এবং তিনি বলেছিলেন, "আমি এটি করি কারণ এতে করুণাময়ের গুণাবলীর উল্লেখ রয়েছে এবং আমি এটি (আমার প্রার্থনায়) আবৃত্তি করতে ভালবাসি।" নবী (তাদের) বললেন, "তাকে বলুন যে আল্লাহ তাকে ভালবাসেন"।
ইমাম মালিক ইবনে আনাস, উবাইদ ইবনে হুনায়েন থেকে লিপিবদ্ধ করেছেন যে তিনি আবু হুরায়রাহকে বলতে শুনেছেন যে, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে বাইরে গিয়েছিলাম এবং তিনি একজন লোককে আবৃত্তি করতে শুনেছিলেন - বলুন: তিনিই একমাত্র আল্লাহ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘এটা ফরজ’ আমি জিজ্ঞাসা করলাম, 'ফরজ কী?' তিনি জবাব দিলেন, "জান্নাত"।
আবু সাইদ বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদের বললেন, তোমাদের মধ্যে কারও পক্ষে একরাতের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ কোরআন তিলাওয়াত করা কি কঠিন? তারা বলেছিলেন, হে আল্লাহর রসূল, আমাদের মধ্যে এমন কাজ করার ক্ষমতা কার? আল্লাহ প্রেরিত রাসূল জবাব দিয়েছিলেন: "আল্লাহ এক। তিনি অমুখাপেক্ষী... ' (সূরা আল-ইখলাস ১১২.১ .. শেষ অবধি) কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান।
আল বুখারী, আমরাহ বিনতে আবদুর রহমান (যিনি নবীজীর স্ত্রী আয়েশার নিকটেই থাকতেন) থেকে বর্ণনা করেন, আয়েশা বলেছিলেন, "নবী একজন লোককে যুদ্ধ অভিযানের নেতা হিসাবে প্রেরণ করেছিলেন এবং তিনি (ঐ নেতা) সৈনিকদের নামাযে নেতৃত্ব দিতেন (ইমামতি করতেন)। নামাযে সাহাবীগণ এবং তিনি (কিরাতে) বলতেন: 'তিনিই আল্লাহ এক...' (১১২:১)। অতঃপর তারা ফিরে এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট তা (এ ঘটনা) উল্লেখ করেন এবং রাসূল বলেন, "তাকে (নেতা) জিজ্ঞাসা করুন কেন তিনি তা করেন"। তারা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন এবং তিনি বললেন, কারণ এটি দয়াময়ের (আল্লাহর) বর্ণনা এবং আমি তা আবৃত্তি করতে ভালবাসি। নবীজী (উত্তর শুনে) বললেন, তাকে জানিয়ে দাও যে, মহান আল্লাহ তাকে ভালবাসেন। ইমাম বুখারি হাদিসটি তার গ্রন্থে স্থান দিয়েছেন। নাসাঈ এবং মুসলিম শরীফেও হাদিসটি রয়েছে।
একটি বিশুদ্ধ হাদীসে বলা হয়েছে 'সকাল-সন্ধ্যায় সূরা আল-ইখলাস এবং আল-মু‘আওয়িদ্বাতান (সূরা আল-ফালাক ও সূরা আন-নাস) তিনবার আবৃত্তি করুন; তারা আপনাকে সবকিছু থেকে রক্ষা করবে। ' [আত-তিরমিযী] মুহাম্মদ নাসিরুদ্দিন আল-আলবানী হাদিসটির সত্যতা আঠাশ-ঊনত্রিশ বলে মন্তব্য করেছেন।
আয়েশা থেকে বর্ণিত, "নবী যখনই প্রতি রাতে বিছানায় যেতেন, তখন তিনি একসাথে তার হাত দুটো রাখতেন এবং সূরা ইখলাস, সূরা আল-ফালাক ও সূরা নাস পড়ার পর তার গায়ে বুলিয়ে দিতেন এবং মাথা থেকে শুরু করে তার শরীরের ওপর ঘষতেন। যা তিনি তিনবার করতেন।
ইমাম আহমাদ বর্ণনা করেছেন যে, ইবনে উমর বলেছেন, আমি নবীকে সকালে ও সূর্যাস্তের পরে তেলাওয়াত করতে দেখেছি, বলুন: "হে কাফেরগণ! "'(সূরা কাফেরুন) এবং বলুন: "তিনিই আল্লাহ এক।"