সূরা আল ওয়াক্বিয়াহ্ কুরআনের ৫৬ তম সূরা, এর আয়াত অর্থাৎ বাক্য সংখ্যা ৯৬ এবং রূকু তথা অনুচ্ছেদ সংখ্যা ৩। সূরা আল ওয়াক্বিয়াহ্ মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে।
নামকরণ
এই সূরাটির প্রথম আয়াতের الواقعة বাক্যাংশে থেকে এই সূরার নামটি গৃহীত হয়েছে; অর্থাৎ, যে সূরার মধ্যে واقعة (‘ওয়াক্বিয়াহ্’) শব্দটি আছে এটি সেই সূরা। ওয়াকিয়াহ শব্দটির অর্থ "ঘটনা" বা বলা যেতে পারে "কিয়ামত দিবসের ঘটনা"
অর্থ ও বাংলা উচ্চারণ
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
إِذَا وَقَعَتِ الْوَاقِعَةُ
ইযা-অক্বা‘আতিল্ ওয়া-ক্বি‘আতু।
যখন কিয়ামত সংঘটিত হবে।
لَيْسَ لِوَقْعَتِهَا كَاذِبَةٌ
লাইসা লিঅক‘আতিহা-কা-যিবাহ্।
তার সংঘটনের কোনই অস্বীকারকারী থাকবে না।
خَافِضَةٌ رَافِعَةٌ
খ-ফি দ্বোয়ার্তু র-ফি‘আহ।
তা কাউকে ভূলুণ্ঠিত করবে এবং কাউকে করবে সমুন্নত।
إِذَا رُجَّتِ الْأَرْضُ رَجًّا
ইযা- রুজ্জ্বাতিল্ র্আদু রজ্জ্বান্।
যখন যমীন প্রকম্পিত হবে প্রবল প্রকম্পনে।
وَبُسَّتِ الْجِبَالُ بَسًّا
অবুস্সাতিল্ জ্বিবা-লু বাস্সা-।
আর পর্বতমালা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পড়বে।
فَكَانَتْ هَبَاءً مُنْبَثًّا
ফাকা-নাত্ হাবা-য়াম্ মুম্বাছ্ছাঁও।
অতঃপর তা বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত হবে।
وَكُنْتُمْ أَزْوَاجًا ثَلَاثَةً
অকুন্তুম্আয্ওয়া-জ্বান্ ছালা-ছাহ্।
আর তোমরা বিভক্ত হয়ে পড়বে তিন দলে।
فَأَصْحَابُ الْمَيْمَنَةِ مَا أَصْحَابُ الْمَيْمَنَةِ
ফাআছ্হা-বুল্ মাইমানাতি মা য় আছ্হা-বুল্ মাইমানাহ্।
সুতরাং ডান পার্শ্বের দল, ডান পার্শ্বের দলটি কত সৌভাগ্যবান!
وَأَصْحَابُ الْمَشْأَمَةِ مَا أَصْحَابُ الْمَشْأَمَةِ
অআছ্হা-বুল্ মাশ্য়ামাতি মা য় আছ্হা-বুল্ মাশ্য়ামাহ্।
আর বাম পার্শ্বের দল, বাম পার্শ্বের দলটি কত হতভাগ্য!
وَالسَّابِقُونَ السَّابِقُونَ
অস্সা-বিকু নাস্ সা-বিকুন।
আর অগ্রগামীরাই অগ্রগামী।
أُولَئِكَ الْمُقَرَّبُونَ
উলা-য়িকাল্ মুর্ক্বরাবূন্।
তারাই সান্নিধপ্রাপ্ত।
فِي جَنَّاتِ النَّعِيمِ
ফী জ্বান্না-তিন্ না‘ঈম্।
তারা থাকবে নিআমতপুর্ণ জান্নাতসমূহে ।
ثُلَّةٌ مِنَ الْأَوَّلِينَ
ছুল্লাতুম্ মিনাল্ আউয়্যালীন।
বহুসংখ্যক হবে পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে,
وَقَلِيلٌ مِنَ الْآخِرِينَ
অক্বালীলুম্ মিনাল্ আ-খিরীন্।
আর অল্পসংখ্যক হবে পরবর্তীদের মধ্য থেকে।
عَلَى سُرُرٍ مَوْضُونَةٍ
‘আলা- সুরুরিম্ মাওদ্বূনাতিম্।
স্বর্ণ ও দামী পাথরখচিত আসনে!
مُتَّكِئِينَ عَلَيْهَا مُتَقَابِلِينَ
মুত্তাকিয়ীনা ‘আলাইহা-মুতাক্ব-বিলীন্।
তারা সেখানে হেলান দিয়ে আসীন থাকবে মুখোমুখি অবস্থায়।
يَطُوفُ عَلَيْهِمْ وِلْدَانٌ مُخَلَّدُونَ
ইয়াতুফু ‘আলাইহিম্ ওয়িল্দা-নুম্ মুখাল্লাদূন।
তাদের আশ-পাশে ঘোরাফেরা করবে চির কিশোররা,
بِأَكْوَابٍ وَأَبَارِيقَ وَكَأْسٍ مِنْ مَعِينٍ
বিআক্ওয়া-বিঁও অআবা-রীক্বা অকাসিম্ মিম্ মা‘ঈনিল্।
পানপাত্র, জগ ও প্রবাহিত ঝর্ণার শরাবপুর্ণ পেয়ালা নিয়ে,
لَا يُصَدَّعُونَ عَنْهَا وَلَا يُنْزِفُونَ
লা-ইয়ুছোয়াদ্দা‘ঊনা ‘আন্হা-অলা- ইয়ুন্যিফূন।
তা পানে না তাদের মাথা ব্যথা করবে, আর না তারা মাতাল হবে।
وَفَاكِهَةٍ مِمَّا يَتَخَيَّرُونَ
অফা-কিহাতিম্ মিম্মা-ইয়াতাখাইয়্যারূন।
আর (ঘোরাফেরা করবে) তাদের পছন্দমত ফল নিয়ে।
وَلَحْمِ طَيْرٍ مِمَّا يَشْتَهُونَ
অলাহ্মি ত্বোয়াইরিম্ মিম্মা-ইয়াশ্তাহূন।
আর পাখির গোশ্ত নিয়ে, যা তারা কামনা করবে।
وَحُورٌ عِينٌ
অহূরুন্ ‘ঈনুন্।
আর থাকবে ডাগরচোখা হূর,
كَأَمْثَالِ اللُّؤْلُؤِ الْمَكْنُونِ
কাআম্ছা-লিল্ লুলুয়িল্ মাক্নূন্ ।
যেন তারা সুরক্ষিত মুক্তা,
جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
জ্বাযা-য়াম্ বিমা-কা-নূ ইয়া’মালূন্।
তারা যে আমল করত তার প্রতিদানস্বরূপ।
لَا يَسْمَعُونَ فِيهَا لَغْوًا وَلَا تَأْثِيمًا
লা-ইয়াস্মাঊ’না ফীহা-লাগ্ওয়াঁও অলা-তাছীমান্।
তারা সেখানে শুনতে পাবে না কোন বেহুদা কথা, এবং না পাপের কথা;
إِلَّا قِيلًا سَلَامًا سَلَامًا
ইল্লা-ক্বীলান্ সালা-মান্ সালা-মা-।
শুধু এই বাণী ছাড়া, ‘সালাম, সালাম’
وَأَصْحَابُ الْيَمِينِ مَا أَصْحَابُ الْيَمِينِ
অআছ্হা-বুল্ ইয়ামীনি মা য় আছ্হা-বুল্ ইয়ামীন্।
আর ডান দিকের দল; কত ভাগ্যবান ডান দিকের দল!
فِي سِدْرٍ مَخْضُودٍ
ফী সিদ্রিম্ মাখ্দ্বুদিঁও।
তারা থাকবে কাঁটাবিহীন কুলগাছের নিচে,
وَطَلْحٍ مَنْضُودٍ
অত্বোয়াল্হিম্ মান্দ্বুদিঁও।
আর কাঁদিপণূর্ কলাগাছের নিচে,
وَظِلٍّ مَمْدُودٍ
অজিল্লিম্ মামদূদিঁও।
আর বিস্তৃত ছায়ায়,
وَمَاءٍ مَسْكُوبٍ
অমা-য়িম্ মাস্কূবিঁও।
আর সদা প্রবাহিত পানির পাশে,
وَفَاكِهَةٍ كَثِيرَةٍ
অ ফা- কিহাতিন্ কাছীরাতিল্।
আর প্রচুর ফলমূলে,
لَا مَقْطُوعَةٍ وَلَا مَمْنُوعَةٍ
লা-মাকতুআতিঁও অলা-মাম্নূ‘আতিঁও ।
যা শেষ হবে না এবং নিষিদ্ধও হবে না।
وَفُرُشٍ مَرْفُوعَةٍ
অফুরুশিম্ মারফূ‘আহ্।
(তারা থাকবে) সুউচ্চ শয্যাসমূহে;
إِنَّا أَنْشَأْنَاهُنَّ إِنْشَاءً
ইন্না য় আন্শানা-হুন্না ইন্শা-য়ান্।
নিশ্চয় আমি হূরদেরকে বিশেষভাবে সৃষ্টি করব।
فَجَعَلْنَاهُنَّ أَبْكَارًا
ফাজ্বা‘আল্না-হুন্না আব্কা-রন্।
অতঃপর তাদেরকে বানাব কুমারী,
عُرُبًا أَتْرَابًا
উ’রুবান্ আত্র-বাল্
সোহাগিনী ও সমবয়সী।
لِأَصْحَابِ الْيَمِينِ
লিআছ্হা-বিল্ ইয়ামীন্।
ডানদিকের লোকদের জন্য।
ثُلَّةٌ مِنَ الْأَوَّلِينَ
ছুল্লাতুম্ মিনাল্ আউয়্যালীনা।
তাদের অনেকে হবে পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে।
وَثُلَّةٌ مِنَ الْآخِرِينَ
অছুল্লাতুম্ মিনাল্ আ-খিরীন্।
আর অনেকে হবে পরবর্তীদের মধ্য থেকে।
وَأَصْحَابُ الشِّمَالِ مَا أَصْحَابُ الشِّمَالِ
অআছ্হা-বুশ্ শিমা- লি মা য় আছ্হা-বুশ্ শিমা-ল্।
আর বাম দিকের দল, কত হতভাগ্য বাম দিকের দল!
فِي سَمُومٍ وَحَمِيمٍ
ফী সামূমিঁও অহামীমিঁও।
তারা থাকবে তীব্র গরম হাওয়া এবং প্রচণ্ড উত্তপ্ত পানিতে,
وَظِلٍّ مِنْ يَحْمُومٍ
অজিল্লিম্ মিঁ ইয়াহ্মূমিল্।
আর প্রচণ্ড কালো ধোঁয়ার ছায়ায়,
لَا بَارِدٍ وَلَا كَرِيمٍ
লা-বা-রিদিঁও অলা-কারীম্।
যা শীতলও নয়, সখু করও নয়।
إِنَّهُمْ كَانُوا قَبْلَ ذَلِكَ مُتْرَفِينَ
ইন্নাহুম্ ক্বা-নূ ক্বব্লা যা-লিকা মুত্রাফীন্।
নিশ্চয় তারা ইতঃপূবের্ বিলাসিতায় মগ্ন ছিল,
وَكَانُوا يُصِرُّونَ عَلَى الْحِنْثِ الْعَظِيمِ
অকা-নূ ইয়ুর্ছিরূ-না ‘আলাল্ হিন্ছিল্ ‘আজীম্।
আর তারা জঘন্য পাপে লেগে থাকত।
وَكَانُوا يَقُولُونَ أَئِذَا مِتْنَا وَكُنَّا تُرَابًا وَعِظَامًا أَئِنَّا لَمَبْعُوثُونَ
অ কা-নূ ইয়াকু লূনা আইযা-মিত্না-অকুন্না-তুরা-বাঁও অই’জোয়া-মান্ য়াইন্না-লামাব্ঊছূনা।
আর তারা বলত, ‘আমরা যখন মরে যাব এবং মাটি ও হাড়ে পরিণত হব তখনও কি আমরা পুনরুত্থিত হব?’
أَوَآبَاؤُنَا الْأَوَّلُونَ
আ ওয়া আ-বা-য়ু নাল্ আওয়ালূন্।
‘আমাদের পূর্ববর্তী পিতৃপুরুষরাও?’
قُلْ إِنَّ الْأَوَّلِينَ وَالْآخِرِينَ
কুল্ ইন্নাল্ আউয়্যালীনা অল্আ-খিরীনা
বল, ‘নিশ্চয় পূর্ববর্তীরা ও পরবর্তীরা,
لَمَجْمُوعُونَ إِلَى مِيقَاتِ يَوْمٍ مَعْلُومٍ
লামাজ্ব্ মূ‘ঊ না ইলা-মীক্ব-তি ইয়াওমিম্ মা’লূম্।
এক নির্ধারিত দিনের নির্দিষ্ট সময়ে অবশ্যই একত্র হবে’।
ثُمَّ إِنَّكُمْ أَيُّهَا الضَّالُّونَ الْمُكَذِّبُونَ
ছুম্মা ইন্নাকুম্ আইয়ুহাদ্দোয়া-ল্লূনাল্ মুকায্যিবূন।
তারপর হে পথভ্রষ্ট ও অস্বীকারকারীরা,
لَآكِلُونَ مِنْ شَجَرٍ مِنْ زَقُّومٍ
লাআ-কিলূনা মিন্ শাজ্বারিম্ মিন্ যাককুমিন্
তোমরা অবশ্যই যাক্কূম গাছ থেকে খাবে,
فَمَالِئُونَ مِنْهَا الْبُطُونَ
ফামা-লিয়ূনা মিন্হাল্ বুতুন্ ।
অতঃপর তা দিয়ে পেট ভর্তি করবে।
فَشَارِبُونَ عَلَيْهِ مِنَ الْحَمِيمِ
ফাশা-রিবূনা ‘আলাইহি মিনাল্ হামীম্।
তদুপরি পান করবে প্রচণ্ড উত্তপ্ত পানি।
فَشَارِبُونَ شُرْبَ الْهِيمِ
ফাশা-রিবূনা র্শুবাল্ হীম্।
অতঃপর তোমরা তা পান করবে তৃষ্ণাতুর উটের ন্যায়।
هَذَا نُزُلُهُمْ يَوْمَ الدِّينِ
হা-যা-নুযুলুহুম্ ইয়াওমাদ্দীন্।
প্রতিফল দিবসে এই হবে তাদের মেহমানদারী,
نَحْنُ خَلَقْنَاكُمْ فَلَوْلَا تُصَدِّقُونَ
নাহ্নু খলাকনা-কুম্ ফালাওলা তুছোয়াদ্দিক্বূন্।
আমিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি: তাহলে কেন তোমরা তা বিশ্বাস করছ না?
أَفَرَأَيْتُمْ مَا تُمْنُونَ
আফারায়াইতুম্ মা তুম্নূন্।
তোমরা কি ভেবে দেখেছ, তোমরা যে বীযর্পাত করছ সে সম্পর্কে?
أَأَنْتُمْ تَخْلُقُونَهُ أَمْ نَحْنُ الْخَالِقُونَ
আআন্তুম্ তাখ্লুকু নাহূ য় আম্ নাহ্নুল ‘খ-লিকুন্ ।
তা কি তোমরা সৃষ্টি কর, না আমিই তার স্রষ্টা?
نَحْنُ قَدَّرْنَا بَيْنَكُمُ الْمَوْتَ وَمَا نَحْنُ بِمَسْبُوقِينَ
নাহ্নু ক্বার্দ্দানা-বাইনাকুমুল্ মাওতা অমা-নাহ্নু বিমাস্বূক্বীন।
আমি তোমাদের মধ্যে মৃত্যু নির্ধারণ করেছি এবং আমাকে অক্ষম করা যাবে না,
عَلَى أَنْ نُبَدِّلَ أَمْثَالَكُمْ وَنُنْشِئَكُمْ فِي مَا لَا تَعْلَمُونَ
‘আলা য় আন্ নুবাদ্দিলা আম্ছা-লাকুম্ অনুন্শিয়াকুম্ আম্ছা-লাকুম্ অনুন্শিয়াকুম্ ফীমা-লা-তা’লামূন্।
তোমাদের স্থানে তোমাদের বিকল্প আনয়ন করতে এবং তোমাদেরকে এমনভাবে সৃষ্টি করতে যা তোমরা জান না।
وَلَقَدْ عَلِمْتُمُ النَّشْأَةَ الْأُولَى فَلَوْلَا تَذَكَّرُونَ
অলাক্বদ্ ‘আলিম্তুমুন্ নাশ্য়াতাল্ ঊলা-ফালাওলা- তাযাক্কারূন্।
আর তোমরা তো প্রথম সৃষ্টি সম্পর্কে জেনেছ, তবে কেন তোমরা উপদেশ গ্রহণ করছ না?
أَفَرَأَيْتُمْ مَا تَحْرُثُونَ
আফারায়াইতুম্ মা-তাহারুছূন্।
তোমরা আমাকে বল, তোমরা যমীনে যা বপন কর সে ব্যাপারে,
أَأَنْتُمْ تَزْرَعُونَهُ أَمْ نَحْنُ الزَّارِعُونَ
আআন্তুম্ তায্রঊ’নাহূ য় আম্ নাহ্নুয্ যা-রিঊ’ন্।
তোমরা তা অঙ্কুরিত কর, না আমি অঙ্কুরিত করি?
لَوْ نَشَاءُ لَجَعَلْنَاهُ حُطَامًا فَظَلْتُمْ تَفَكَّهُونَ
লাও নাশা-য়ু লাজ্বা‘আল্না-হু হুত্বোয়া-মান্ ফাজোয়াল্তুম্ তাফাক্কাহূন্।
আমি চাইলে তা খড়-কুটায় পরিণত করতে পারি, তখন তোমরা পরিতাপ করতে থাকবে-
إِنَّا لَمُغْرَمُونَ
ইন্না-লামুগ্রমূন্।
(এই বলে,) ‘নিশ্চয় আমরা দায়গ্রস্ত হয়ে গেলাম’।
بَلْ نَحْنُ مَحْرُومُونَ
বাল্ নাহ্নু মাহ্রূমূন্।
‘বরং আমরা মাহরূম হয়েছি’।
أَفَرَأَيْتُمُ الْمَاءَ الَّذِي تَشْرَبُونَ
আফারয়াইতুমুল্ মা-য়াল্ লাযী তাশ্রবূন্।
তোমরা যে পানি পান কর সে ব্যাপারে আমাকে বল।
أَأَنْتُمْ أَنْزَلْتُمُوهُ مِنَ الْمُزْنِ أَمْ نَحْنُ الْمُنْزِلُونَ
আআন্তুম্ আন্ যাল্তুমূহু মিনাল্ মুয্নি আম্ নাহ্নুল্ মুন্যিলূন্।
বৃষ্টিভরা মেঘ থেকে তোমরা কি তা বষর্ণ কর, না আমি বৃষ্টি বষর্ণ কারী?
لَوْ نَشَاءُ جَعَلْنَاهُ أُجَاجًا فَلَوْلَا تَشْكُرُونَ
লাও নাশা-য়ু জ্বা‘আল্না-হু উজ্বা-জ্বান্ ফালাওলা- তাশ্কুরূ ন্।
ইচ্ছা করলে আমি তা লবণাক্ত করে দিতে পারি: তবুও কেন তোমরা কৃতজ্ঞ হও না?
أَفَرَأَيْتُمُ النَّارَ الَّتِي تُورُونَ
আফারয়াইতুমু ন্না-র ল্লাতী তূরূন্।
তোমরা যে আগুন জ্বালাও সে ব্যাপারে আমাকে বল,
أَأَنْتُمْ أَنْشَأْتُمْ شَجَرَتَهَا أَمْ نَحْنُ الْمُنْشِئُونَ
আ-আন্তুম্ আন্শাতুম্ শাজ্বারতাহা য় আম্ নাহ্নুল্ মুন্শিয়ূন্।
তোমরাই কি এর (লাকড়ির গাছ) উৎপাদন কর, না আমি করি?
نَحْنُ جَعَلْنَاهَا تَذْكِرَةً وَمَتَاعًا لِلْمُقْوِينَ
নাহ্নু জ্বা‘আল্না-হা তায্কিরতাঁও অমাতা-‘আল্ লিল্মুকওয়ীন্।
একে আমি করেছি এক স্মারক ও মরুবাসীর প্রয়োজনীয় বস্তু
فَسَبِّحْ بِاسْمِ رَبِّكَ الْعَظِيمِ
ফাসাব্বিহ্ বিস্মি রব্বিকাল্ ‘আজীম্।
অতএব তোমার মহান রবের নামে তাসবীহ পাঠ কর।
فَلَا أُقْسِمُ بِمَوَاقِعِ النُّجُومِ
ফালা য় উক্বসিমু বিমাওয়া-ক্বি‘ইন্ নুজুমি।
সুতরাং আমি কসম করছি নক্ষত্ররাজির অস্তাচলের,
وَإِنَّهُ لَقَسَمٌ لَوْ تَعْلَمُونَ عَظِيمٌ
অইন্নাহূ লাক্বাসামু ল্লাও তা’লামূনা ‘আজীম।
আর নিশ্চয় এটি এক মহাকসম, যদি তোমরা জানতে,
إِنَّهُ لَقُرْآنٌ كَرِيمٌ
ইন্নাহূ লা কুর আ-নুন্ কারীমুন্।
নিশ্চয় এটি মহিমান্বিত কুরআন,
فِي كِتَابٍ مَكْنُونٍ
ফী কিতা-বিম্ মাক্নূনিল্।
যা আছে সুরক্ষিত কিতাবে,
لَا يَمَسُّهُ إِلَّا الْمُطَهَّرُونَ
লা ইয়া স্সুহূ য় ইল্লাল্ মুত্বোয়াহ্ হারূন্।
কেউ তা স্পর্শ করবে না পবিত্রগণ ছাড়া।
تَنْزِيلٌ مِنْ رَبِّ الْعَالَمِينَ
তান্যীলুম্ র্মি রব্বিল্ ‘আ-লামী ন্।
তা সৃষ্টিকুলের রবের কাছ থেকে নাযিলকৃত।
أَفَبِهَذَا الْحَدِيثِ أَنْتُمْ مُدْهِنُونَ
আফাবিহা-যাল্ হাদীছি আন্তুম্ মুদ্হিনূনা।
তবে কি তোমরা এই বাণী তুচ্ছ গণ্য করছ?
وَتَجْعَلُونَ رِزْقَكُمْ أَنَّكُمْ تُكَذِّبُونَ
অতাজ্ব ‘আলূনা রিয্ক্বকুম্ আন্নাকুম্ তুকায্যিবূন্।
আর তোমরা তোমাদের রিয্ক বানিয়ে নিয়েছ যে, তোমরা মিথ্যা আরোপ করবে।
فَلَوْلَا إِذَا بَلَغَتِ الْحُلْقُومَ
ফালাওলা য় ইযা-বালাগতিল্ হুল্ক্বুম্।
সুতরাং কেন নয়- যখন রূহ কণ্ঠদেশে পৌঁছে যায়?
وَأَنْتُمْ حِينَئِذٍ تَنْظُرُونَ
অআন্তুম্ হীনায়িযিন্ তান্জুরূনা।
আর তখন তোমরা কেবল চেয়ে থাক।
وَنَحْنُ أَقْرَبُ إِلَيْهِ مِنْكُمْ وَلَكِنْ لَا تُبْصِرُونَ
অনাহ্নু আকরাবু ইলাইহি মিন্কুম্ অলা-কিল্লা-তুব্ছিরূন্।
আর তোমাদের চাইতে আমি তার খুব কাছে; কিন্তু তোমরা দেখতে পাও না।
فَلَوْلَا إِنْ كُنْتُمْ غَيْرَ مَدِينِينَ
ফালাওলা য় ইন্ কুন্তুম্ গইর মাদীনীন।
তোমাদের যদি প্রতিফল দেয়া না হয়, তাহলে তোমরা কেন
تَرْجِعُونَهَا إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ
র্তাজ্বি‘ঊনাহা য় ইন্ কুন্তুম্ ছোয়া-দিক্বীন্।
ফিরিয়ে আনছ না রূহকে, যদি তোমরা সত্যবাদী হও?
فَأَمَّا إِنْ كَانَ مِنَ الْمُقَرَّبِينَ
ফা আম্মা য় ইন্ কা-না মিনাল্ মুর্ক্বারবীন।
অতঃপর সে যদি নৈকট্যপ্রাপ্তদের অন্যতম হয়,
فَرَوْحٌ وَرَيْحَانٌ وَجَنَّةُ نَعِيمٍ
ফারওহুঁও অরইহা-নুঁও অজ্বান্নাতু না‘ঈম্।
তবে তার জন্য থাকবে বিশ্রাম, উত্তম জীবনোপকরণ ও সুখময় জান্নাত।
وَأَمَّا إِنْ كَانَ مِنْ أَصْحَابِ الْيَمِينِ
অ আম্মা য় ইন্ কা-না মিন্ আছ্হা-বিল্ ইয়ামীন।
আর সে যদি হয় ডানদিকের একজন,
فَسَلَامٌ لَكَ مِنْ أَصْحَابِ الْيَمِينِ
ফাসালা-মুল্ লাকা মিন্ আছহা-বিল্ ইয়ামীন্।
তবে (তাকে বলা হবে), ‘তোমাকে সালাম, যেহেতু তুমি ডানদিকের একজন’।
وَأَمَّا إِنْ كَانَ مِنَ الْمُكَذِّبِينَ الضَّالِّينَ
অ আম্মা য় ইন্ কা-না মিনাল্ মুকায্যিবীনাদ্ব্ দ্বোয়া-ল্লীন।
আর সে যদি হয় অস্বীকারকারী ও পথভ্রষ্ট,
فَنُزُلٌ مِنْ حَمِيمٍ
ফা নুযুলুম্ মিন্ হামীমিঁও।
তবে তার মেহমানদারী হবে প্রচণ্ড উত্তপ্ত পানি দিয়ে,
وَتَصْلِيَةُ جَحِيمٍ
অ তাছ্লিয়াতু জ্বাহীম্।
আর জ্বলন্ত আগুনে প্রজ্জ্বলনে।
إِنَّ هَذَا لَهُوَ حَقُّ الْيَقِينِ
ইন্না হা-যা-লাহুওয়া হাককুল্ ইয়াক্বীন্।
নিশ্চয় এটি অবধারিত সত্য।
فَسَبِّحْ بِاسْمِ رَبِّكَ الْعَظِيمِ
ফাসাব্বিহ্ বিস্মি রব্বিকাল্ ‘আজীম্।
অতএব তোমার মহান রবের নামে তাসবীহ পাঠ কর।
সুরা ওয়াকিয়াহ এর ফজিলত
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ [রা.] বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন রাতে সুরা ওয়াক্বিয়াহ তেলাওয়াত করবে তাকে কখনো দরিদ্রতা স্পর্শ করবে না। হজরত ইবনে মাসউদ [রা.] তাঁর মেয়েদেরকে প্রত্যেক রাতে এ সুরা তেলাওয়াত করার আদেশ করতেন। [বাইহাকি:শুআবুল ঈমান-২৪৯৮]
সুরা আর রাহমান, সুরা হাদিদ ও সুরা ওয়াকিয়া’র তেলাওয়াতকারীকে কেয়ামতের দিন জান্নাতুল ফিরদাউসের অধিবাসী হিসেবে ডাকা হবে। অন্য এক হাদিসে আছে, সুরা ওয়াকিয়াহ হলো ধনাঢ্যতার সুরা, সুতরাং তোমরা নিজেরা তা পড় এবং তোমাদের সন্তানদেরকেও এ সুরার শিক্ষা দাও। অন্য এক বর্ণনায় আছে: তোমাদের নারীদেরকে এ সুরার শিক্ষা দাও। আম্মাজান হজরত আয়েশা [রা.] কে এ সুরা তেলাওয়াত করার জন্য আদেশ করা হয়েছিল। তাছাড়া এ সুরা শারিরিক সুস্থতা রক্ষা ও অসুস্থতা দূরীকরণেও উপকারী। ইমাম গাজালী রহ. বলেন: মাশায়েখদের কাউকে আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে, আমাদের আওলিয়ায়ে কিরামের মধ্যে যে অভাবের সময় সুরা ওয়াকিয়াহ তেলাওয়াতের আমল জারী আছে তার উদ্দেশ্য কি এটা নয় যে, এর উছিলায় আল্লাহ তায়ালা যেনো অভাব মোচন করে দেন এবং দুনিয়াবী প্রাচুর্য দান করেন, তাহলে আখেরাতের আমল দিয়ে দুনিয়াবী সম্পদ কামনা করা কি বৈধ হলো? তখন তিনি উত্তরে বলেছিলেন, এ আমলের দ্বারা তাদের উদ্দেশ্য ছিল, আল্লাহ তায়ালা যেনো তাদেরকে যে হালাতে রেখেছেন তার উপরই তুষ্ট থাকার তৌফিক দান করেন। অথবা এমন রিজিক দান করেন যার দ্বারা তারা ইবাদতের শক্তি যোগাবেন অথবা ইলম অর্জনের পাথেয় যোগাবেন। তাই এখানে দুনিয়া তলব করা উদ্দেশ্য হলো না বরং নেকীর কাজের উদ্দেশ্য করা হলো।
তাছাড়া অভাবের সময় এ সুরার আমলের কথাটা তো হাদিস দ্বারাই প্রমানিত। এমনকি বর্ণিত আছে যে হজরত ইবনে মাসউদ [রা.] কে যখন তার সন্তানদের জন্য একটি দিনারও রেখে না যাওয়ার কারণে তিরস্কার করা হলো তখন তিনি উত্তরে বলেছিলেন, তাদের জন্য আমি সুরা ওয়াকিয়াহ রেখে গেলাম। [ফয়জুল কাদির-৪/৪১]