এলার্জি দূর করার উপায় - (সকল তথ্য একসাথে)

এলার্জি দূর করার উপায়


এলার্জি হচ্ছে ইমিউন সিস্টেমের একটা দীর্ঘস্থায়ী অবস্থা যা পরিবেশের কোনো এলার্জেনের কারণে শরীরে হাইপারসেনসিটিভিটি দেখায় কিংবা অপ্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া দেখায়। এলার্জেন:যদি কোনো বস্তু বা উপাদান কোনো মানুষের শরীরে হাইপারসেনসিটিভ রিয়েক্ট দেখায় সেসব বস্ত বা উপাদন সমূহ সেসব মানুষের জন্য এলার্জেন। 

এলার্জি খুব কমন একটা সমস্যা। শিশুদের এলার্জি হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে লক্ষণগুলো কমে যেতে পারে। আবার অনেকের ছোটোবেলায় এলার্জির সমস্যা না থাকলেও, পরবর্তীতে নতুন করে এলার্জি দেখা দিতে পারে। কিছু বিধিনিষেধ মেনে চললে এলার্জি অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

এলার্জির কারণ

দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ক্ষতিকর জিনিস থেকে আমাদেরকে সুরক্ষা দেয়। তবে কখনো কখনো কিছু জিনিসকে এটি ভুলে ক্ষতিকর ভেবে বসে, যা আসলে ক্ষতিকর নয়। এসব জিনিসের বিরুদ্ধে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার প্রতিক্রিয়ায় এলার্জির লক্ষণ দেখা দেয়। যেমন: চামড়া লাল হয়ে যাওয়া ও চুলকানি।

সাধারণত যেসব জিনিসের সংস্পর্শে আসলে শরীরে এলার্জি দেখা দেয় তার মধ্যে রয়েছেঃ

  • নির্দিষ্ট কিছু খাবার
  • ধুলাবালি
  • গরম অথবা ঠান্ডা আবহাওয়া
  • ঘাম
  • গৃহপালিত পশু-পাখি
  • পরাগ রেণু ও ফুলের রেণু
  • সূর্যরশ্মি
  • ডাস্ট মাইট
  • মোল্ড বা ছত্রাক
  • বিভিন্ন ঔষধ
  • কীটনাশক
  • ডিটার্জেন্ট ও বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ
  • ল্যাটেক্স বা বিশেষ ধরনের রাবারের তৈরি গ্লাভস ও কনডম
  • স্ট্রেস বা মানসিক চাপ

এলার্জি জাতীয় খাবারের তালিকা

সচরাচর যেসব খাবারে এলার্জি হতে দেখা যায় তার মধ্যে রয়েছেঃ

  • চিংড়ি
  • বেগুন
  • ইলিশ মাছ
  • গরুর মাংস
  • বাদাম

এ ছাড়া শিশুদের ক্ষেত্রে ডিম ও দুধেও এলার্জি হতে পারে।

একেকজন মানুষের একেক ধরনের জিনিস অথবা খাবারে এলার্জি থাকতে পারে। তাই কোন ধরনের জিনিসের সংস্পর্শে আসলে অথবা খাবার খেলে এলার্জির লক্ষণ দেখা দিচ্ছে সেই বিষয়ে লক্ষ রাখা প্রয়োজন। এটি খুঁজে বের করতে পারলে এলার্জি নিয়ন্ত্রণে রাখা অনেক সহজ হয়ে যায়।

এলার্জির লক্ষণসমূহ

শরীর এলার্জিক উপাদানের সংস্পর্শে আসার পর খুব কম সময়ের মধ্যে এর প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এলার্জির লক্ষণগুলো হলোঃ

  • চামড়ায় চুলকানি, র‍্যাশ বা ফুসকুড়ি হওয়া
  • শরীরের কিছু অংশ চাকা চাকা হয়ে যাওয়া বা ফুলে যাওয়া, ফোস্কা পড়া ও চামড়া ঝরে যাওয়া
  • ঠোঁট, জিহ্বা, চোখ ও মুখ ফুলে যাওয়া
  • চোখে চুলকানি, চোখ থেকে পানি পড়া, লাল হওয়া ও ফুলে যাওয়া
  • শুকনো কাশি, হাঁচি, নাকে ও গলায় চুলকানি ও নাক বন্ধ হওয়া
  • শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপ চাপ লাগা ও শ্বাস নেওয়ার সময়ে শোঁ শোঁ শব্দ হওয়া
  • বমি বমি ভাব, বমি, পেট ব্যথা, পেট কামড়ানো ও ডায়রিয়া

এলার্জি চিরতরে দূর করার উপায়

১ কেজি নিম পাতা ভালো করে রোদে শুকিয়ে নিন। শুকনো নিম পাতা পাটায় পিষে গুঁড়ো করুন এবং তা ভালো করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন একটি কৌটায় ভরে রাখুন। এক চা চামচের ৩ ভাগের ১ ভাগ নিমপাতার গুঁড়া এবং ১ চা চামচ ইসবগুলের ভুষি ১ গ্লাস পানিতে আধা ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। আধা ঘণ্টা পর চামচ দিয়ে ভালো করে নাড়ুন।

প্রতিদিন সকালে খালি পেটে, দুপুরে ভরা পেটে এবং রাতে শোয়ার আগে খেয়ে ফেলুন। ২১ দিন একটানা খেতে হবে। কার্যকারিতা শুরু হতে ১ মাস লেগে যেতে পারে। এরপর থেকে এলার্জির জন্য যা যা খেতে পারতেন না, যেমন- হাঁসের ডিম, বেগুন, গরুর গোশত, চিংড়ি, কচু, কচুশাক, গরুর দুধ, পুঁইশাক, মিষ্টি কুমড়াসহ অন্যান্য খাবার খান। আর সমস্যা হবে না।

এলার্জির চিকিৎসা

খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রায় কিছু বিধিনিষেধ মেনে চললে এলার্জি অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

ঘরোয়া প্রতিকার ও জীবনযাত্রা

যেসব খাবার ও ঔষধে এলার্জি হয় সেগুলো এড়িয়ে চলবেন। হাঁপানি অথবা শ্বাসনালীর অন্য কোনো রোগ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলবেন। স্ট্রেস বা মানসিক চাপ মোকাবেলায় শারীরিক ব্যায়াম, যোগব্যায়াম ও শ্বাসের ব্যায়াম করা যেতে পারে।

ঔষধ

এলার্জির চিকিৎসায় প্রধানত অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করা হয়। এগুলো এলার্জির লক্ষণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে—এমনকি লক্ষণ দেখা দেওয়ার পূর্বেও সেবন করা যায়। যেমন, কারও যদি ধুলাবালিতে এলার্জি থাকে এবং বিশেষ প্রয়োজনে তার ধুলাবালি পরিষ্কার করতে হয়, সেক্ষেত্রে আগেই অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ঔষধ সেবন করা যায়।

এসব ঔষধ বিভিন্ন রূপে পাওয়া যায়। যেমন: ট্যাবলেট, সিরাপ ও ড্রপ। উল্লেখ্য, এলার্জির কিছু ঔষধ সেবনের পরে ঘুম ঘুম লাগা ও মাথা ঝিম ঝিম করার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। তাই ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে আপনার জন্য উপযুক্ত ঔষধটি বেছে নিন।

নাক বন্ধের সমস্যায় ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী নাক বন্ধের ড্রপ ও স্প্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এই ড্রপ ও স্প্রেগুলো এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ব্যবহার করবেন না। দীর্ঘ সময় ব্যবহারে এলার্জির লক্ষণ আবার ফিরে আসতে পারে।

ত্বকের এলার্জিতে বিভিন্ন ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম ও মলম ব্যবহার করা যেতে পারে। চুলকানির সমস্যায় ক্যালামাইন লোশন ও ১% মেন্থল ক্রিম খুব ভালো কাজ করে। এ ছাড়াও তোয়ালেতে বরফ পেঁচিয়ে চুলকানির স্থানে ঠান্ডা সেঁক দিলে আরাম পাওয়া যায়।

গুরুতর এলার্জিতে স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ ভালো কাজ করে। স্টেরয়েড খুবই শক্তিশালী ঔষধ, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও বেশি। তাই ইন্টারনেট দেখে কিংবা ফার্মেসি থেকে নিজে নিজে এসব ঔষধ কিনে খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। কেবল ডাক্তারের পরামর্শক্রমেই নিয়ম মেনে এই ধরনের ঔষধ সেবন করা উচিত।

ইমিউনোথেরাপি

গুরুত্বর এলার্জির জন্য ইমিউনোথেরাপি একটি কার্যকরী চিকিৎসা। এই চিকিৎসায় রোগীকে দীর্ঘদিন ধরে নির্দিষ্ট অ্যালার্জেনের উপস্থিতিতে অভ্যস্ত করে তোলা হয়। এর ফলে পরবর্তীতে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে সেই অ্যালার্জেনের প্রতি পূর্বের মতো তীব্র প্রতিক্রিয়া হয় না। ফলে লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখা অনেকটাই সহজ হয়ে আসে।

এলার্জি প্রতিরোধ

এলার্জি থেকে মুক্ত থাকার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো যেসব বস্তুতে এলার্জি রয়েছে সেগুলো এড়িয়ে চলা। এলার্জি প্রতিরোধে নিচের পরামর্শগুলো মেনে চলুনঃ

  • এলার্জি ঘটায় এমন খাবারগুলো এড়িয়ে চলুন। 
  • গৃহপালিত পশু-পাখির বাসস্থান বাড়ির বাইরে তৈরি করুন এবং তাদের নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন।
  • ডাস্ট মাইট নামক এক প্রকার অতিক্ষুদ্র পোকা থেকে এলার্জি প্রতিরোধ করতে বাড়ির যে জায়গাগুলোতে বেশি সময় কাটানো হয় সেগুলো ধুলামুক্ত ও পরিষ্কার রাখুন। বিছানার চাদর, কাঁথা, বালিশ ও লেপের কভার, জানালার পর্দা—এগুলো সপ্তাহে অন্তত একবার গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। যেসব জিনিস নিয়মিত ধোয়া যায় না সেগুলো বাসায় যত কম ব্যবহার করা যায়, ততই ভালো। যেমন: কার্পেট।

এ ছাড়া বিছানা গোছানো ও ঝাড়া-মোছা করার সময়ে ভালো একটা মাস্ক পড়ুন। যেসব জিনিস ভেজা কাপড় দিয়ে মোছা যায় সেগুলো ভেজা কাপড় দিয়ে মুছুন। এতে ধুলা ছড়াবে না।

  • ছত্রাক বা মোল্ড থেকে সুরক্ষার জন্য বাড়ির পরিবেশ শুষ্ক রাখুন। পাশাপাশি বাতাস চলাচলের ভালো ব্যবস্থা রাখুন। ঘরের ভেতর কাপড় শুকানো থেকে বিরত থাকুন এবং গাছ থাকলে সেটি সরিয়ে ফেলুন।
  • গরম বা ঘাম থেকে এলার্জি হতে পারে। তাই খুব পরিশ্রম করার পর শরীর গরম হলে বা ঘেমে গেলে বাতাস চলাচল করছে এমন স্থানে থাকুন এবং ঢিলেঢালা কাপড় পরুন।
  • ঠান্ডা থেকেও এলার্জির সমস্যা হতে পারে। এমন হলে বৃষ্টিতে ভেজা ও পুকুরে গোসল করা থেকে বিরত থাকুন। গোসলের সময়ে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • নির্দিষ্ট কিছু ধাতুতে কারোর এলার্জি থাকতে পারে। এসব ধাতুর তৈরি আংটি, গয়না ও ঘড়ি পরলে এলার্জি হতে পারে। নির্দিষ্ট কোনো ধাতুতে আপনার এলার্জি থাকলে দৈনন্দিন জীবনে সেই ধাতুর তৈরি জিনিস ব্যবহার এড়িয়ে চলুন।
  • ফুলের পরাগ রেণুতে এলার্জি প্রতিরোধের জন্য ঋতু পরিবর্তনের সময়ে যতটা সম্ভব ঘরের ভেতরে থাকুন। বাইরে গেলেও ঘরে ফিরে কাপড় পাল্টে গোসল করে ফেলুন, যেন পরাগ রেণু ধুয়ে চলে যায়। সম্ভব হলে ঘরের ভেতরে জামা-কাপড় শুকোতে দিন। তবে ছত্রাক যেন না জন্মে যায় সেই বিষয়েও খেয়াল রাখবেন। এ ছাড়া যে স্থানে ঘাসের পরিমাণ বেশি সেখানে হাঁটা-চলা করা থেকে বিরত থাকুন।
  • বিভিন্ন প্রসাধনীতে থাকা কেমিক্যালে এলার্জি থাকতে পারে। যেমন: সাবান, শ্যাম্পু, ফেইসওয়াশ ও সুগন্ধিতে থাকা কেমিক্যাল। যেসব পণ্যে এলার্জি হয় সেগুলো ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।

ঠান্ডা এলার্জি দূর করার উপায়

ঠান্ডা এলার্জি বা এলার্জিক রাইনাইটিস এর ঘরোয়া প্রতিকার অনেকটা এর কারণের উপর নির্ভর করে। মৌসুমী এলার্জি একটু সাবধানতা অবলম্বনে প্রতিরোধ করা যেতে পারে। ঘরের জানালা বন্ধ রাখার চেষ্টা করতে হবে। ধুলাবালি যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। 

চিকিৎসকরা এলার্জিক রাইনাইটিস ও যে কোন এলার্জি জনিত সমস্যায় এন্টিহিস্টামিন সেবনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ওভার দ্য কাউন্টার এই এন্টিহিস্টামিন যে কোন ওষুধের দোকানে পাওয়া যায়। তবে এন্টিহিস্টামিন ওষুধ সেবনে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাই এলার্জিক রাইনাইটিস সহ যেকোন অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া প্রতিরোধে ও উপশমে ভেষজ উদ্ভিদ এবং ন্যাচারাল এন্টিহিস্টামিন যুক্ত খাবার খেতে পারেন। 

এখানে ৫টি ন্যাচারাল এন্টিহিস্টামিন সম্পর্কে বলা হয়েছে যেগুলো ঠান্ডা এলার্জি সহ যেকোন এলার্জিক উপসর্গ কমাতে সাহায্য করবে। আসুন জেনে নেই এই ন্যাচারাল ৫ টি এন্টিহিস্টামিন সম্পর্কে। 

ভিটামিন সি

ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি এন্টিহিস্টামিন হিসেবেও কাজ করে। ভিটামিন-সি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও এতে রয়েছে  আন্টি ইনফ্লামেটরি গুন যা এলার্জিক রাইনাইটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে দেহে ভিটামিন সি এর অভাবে ঘন ঘন এলার্জিক রাইনাইটিস বা ঠান্ডা এলার্জি ও অন্যান্য অ্যালার্জিজনিত সমস্যা দেখা দেয়। তাই এ ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খেতে হবে। ব্রকলি, সাইট্রাস ফল, টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে।

বাটারবার বা পেটাসাইটস 

পেটাসাইটস বা বাটারবার সূর্যমুখী প্রজাতির একটি উদ্ভিদ। এশিয়া,ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন জায়গায় এই উদ্ভিদ জন্মে। এই উদ্ভিদের নির্যাস মাইগ্রেন ও এলার্জিক রাইনাইটিস এর চিকিৎসা কার্যকর বলে প্রমাণিত।

এই নির্যাস এন্টিহিস্টামিন এর মতই কার্যকর। তবে বাটারবার এর নির্যাস বেশকিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। যেমন: শ্বাসকষ্ট,ডায়রিয়া,তন্দ্রা, ক্লান্ত লাগা, মাথা ব্যথা, চোখ দিয়ে পানি পড়া। এই নির্যাসে পাইরোজিডিন অ্যালকালয়েড এক নামের ধরনের ক্ষতিকর পদার্থ থাকে। এই পদার্থটি লিভারের জন্য ক্ষতিকর এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। গর্ভবতী এবং যে সকল মায়েরা তার শিশুদের বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন তারা বাটারবার বা পেটাসাইটস এর নির্যাস ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।

ব্রোমেলেইন 

ব্রোমেলেইন একটি এনজাইম যা ন্যাচারাল এন্টিহিস্টামিন হিসেবে কাজ করে। এই এনজাইমটি আনারসের মূল ও রসে পাওয়া যায়। ব্রোমেলেইনে রয়েছে অ্যান্টিইনফ্লামেটরি ও অ্যান্টি এলার্জিক গুন যা হাঁপানি,এলার্জি, ঠান্ডা এলার্জি ও ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। তবে যাদের আনারস খেলে এলার্জি হয় তাদের আনারস না খাওয়াই ভালো।

প্রোবায়োটিক 

এলার্জিক রাইনাইটিস প্রতিরোধে ও উপশমে উন্নত রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা থাকতে হবে। দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রোবায়োটিক প্রয়োজন। প্রোবায়োটিক হলো আমাদের দেহের জন্য উপকারী অণুজীব। প্রোবায়োটিক অন্ত্রের কার্যক্রম ঠিক রাখতে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। প্রোবায়োটিক দেহের জন্য আরো নানা দিক থেকে উপকারী। তাই অ্যালার্জিক রাইনাইটিসের চিকিৎসায় প্রোবায়োটিক যুক্ত খাবার খেতে হবে। টক দই,পনির, সয়া দুধ, ডার্ক চকলেট আরো নানা প্রোবায়োটিক যুক্ত খাবার রয়েছে।

কোয়ারসেটিন

কোয়ারসেটিন হল একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্ল্যাভোনয়েড। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্ল্যাভোনয়েড বিভিন্ন খাবার ও গাছপালায় পাওয়া যায়। কোয়ারসেটিন এলার্জিক রাইনাইটিস কমাতে সাহায্য করে। আপেল,বেরি, ব্ল্যাক টি,ব্রকলি,আঙ্গুর,জিঙ্কগো বিলোবা, গ্রিন টি,মরিচ,লাল পেঁয়াজ ইত্যাদি খাবারে কোয়ারসেটিন রয়েছে।

মুখে এলার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায়

অলিভ অয়েল

অতিরিক্ত ভার্জিন জলপাই তেল ময়েশ্চারাইজার হিসেবে আশ্চর্যজনক ভাবে কাজ করে। ভিটামিন ই সমৃদ্ধ এ তেল চুলকানি হ্রাস করে।

নিম পাতা

নিম পাতা ত্বকের লালচেভাব, ফোলাভাব এবং চুলকানি দূর করতে দারুন কাজ করে। বেশ কয়েকটি নিম পাতা পেস্ট করে আক্রান্ত স্থানে প্রয়োগ করুন। ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।

কোল্ড শাওয়ার

ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল ত্বকের জ্বালা এবং এলার্জি হ্রাস করতে সহায়তা করে। একটি শীতল ঝরনা আপনার রক্তনালীগুলো সঙ্কুচিত করতে সহায়তা করে এবং হিস্টামিন বেরোতে দেয় না। এটি অ্যালার্জির তীব্রতা এবং ত্বকের জ্বালাও হ্রাস করে।

তুলসি

তুলসিতে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি রয়েছে যা ত্বকের চুলকানি হ্রাস করে। এক মুঠো তুলসি পাতা ভালো করে ধুয়ে নিন। পরে পাতাগুলো পেস্ট করে নিন। আক্রান্ত স্থানে পেস্টটি লাগিয়ে প্রায় ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। স্বস্তির জন্য দিনে কয়েকবার লাগাতে পারেন এই পেস্ট।

নারকেল তেল

শিশু এবং শিশুদের মধ্যে ত্বকের এলার্জির একটি নিরাপদ ঘরোয়া উপায় হলো নারকেল তেল। এক চা চামচ নারকেল তেল হালকা গরম করুন এবং এটি আক্রান্ত স্থানে লাগান। প্রায় ৩০ মিনিট রাখার পর হালকা গরম জলে ধুয়ে ত্বক শুকিয়ে নিন। নিরাময় না হওয়া পর্যন্ত এটি দিনে ৩ থেকে ৪ বার ব্যবহার করুন।

অ্যালোভেরা

অ্যালোভেরা জেল প্রাকৃতিক ওষুধি এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্যগুলোর কারণে অনেক প্রাকৃতিক নিরাময়ের প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়। এটি পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াটিকে গতি দেয় এবং প্রশস্ত স্বস্তি দেয়, এটি দেহের ত্বকের অ্যালার্জির অন্যতম সেরা প্রতিকার।

এজন্য পাতা থেকে এক চা চামচ জেল বের করুন বা কিনে নেয়া অ্যালোভেরা পণ্য থেকে এক চা চামচ জেল নিন। পরে আক্রান্ত স্থানে জেলটি সরাসরি ছড়িয়ে দিন। প্রায় ৩০ মিনিট ধরে রেখে এটি ধুয়ে ফেলুন। কয়েকদিন এক নাগারে দিনে তিনবার প্রয়োগ করুন, ভালো ফল পাবেন। 

স্কিন এলার্জি থেকে মুক্তির উপায়

চামড়ার কোথাও কোথাও শুকনো খসখসে ও ছোট ছোট দানা যদি বহিস্থ উপাদান বা এলাজেনের সংস্পর্শে ত্বকে প্রদাহ সৃষ্টি করে, তাকে সংস্পর্শ জনিত এলার্জিক স্কিন প্রদাহ বা এলার্জিক কনটাক্ট ডারমাটাইটিস বলে। এলার্জিতে আক্রান্ত হলে যদি কোন খাবার কিংবা ঔষধ এর সাথে সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায় তবে সেই খাবার পরিহার করতে হবে। স্কিন এলার্জি থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে নিম পাতা ভালো করে শুকিয়ে গুড়ো করে এয়ার টাইট কৌটায় ভরে রাখুন। এক চামচের ৩ ভাগের ১ ভাগ নিমপাতার গুড়ো ও ১ চামচ ইসবগুলের ভুষি ১ গ্লাস পানিতে নিয়ে সকালে খালি পেটে বা রাতে ঘুমানোর আগে খেয়ে ফেলুন। 

টানা ২১ দিন খেতে হবে তারপর কার্যকারিতা শুরু হবে। যেসব খাবারে আপনার এলার্জি হবে সেগুলো বাদ রাখতে হবে। প্রসাধনী সিলেকশন এর ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।ধুলাবালি এড়িয়ে চলতে হবে। ঘরে যথেষ্ট আলো বাতাসের ব্যাবস্থা থাকতে হবে। রোদের আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মিতে হাউজ ডাষ্ট মাইট মারা যায়।

স্কিন এলার্জি ঔষধের নাম

তাই যারা এলার্জি থেকে মুক্তি পেতে চান তারা স্কিনে পেভিসন মলম ব্যবহার করতে পারেন। এটি চুলকানি দূরীকরণে একটি গুরুত্বপূর্ণ মলম। এটি চুলকানির রোগের জন্য খুবই উপকারী। তাছাড়া ওরাডিন নামে একটি একটি ঔষধ আছে যা এলার্জির ওষুধ হিসেবে পরিচিত। ওরাডিন খেলে খুবই দ্রুত চুলকানি জনিত এলার্জি সেরে যায়। তাই যাদের চুলকানি ও এলার্জি রয়েছে তারা ওরাডিন ঔষধটি খেতে পারেন।

রক্তে এলার্জি দূর করার উপায় 

রক্তে এলার্জি কমাতে এলার্জি দ্রব্যাদি থেকে এড়িয়ে চলা ও ওষুধের পাশাপাশি ভ্যাকসিন ও এলার্জিজনিত রোগীদের সুস্থ থাকার অন্যতম চিকিৎসা পদ্ধতি। এ পদ্ধতি ব্যাবহারে কর্টিকোষ্টেরয়েডের ব্যাবহার অনেক কমে যায়। ফলে কর্টিকোষ্টেরয়েডের বহুল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে রেহায় পাওয়া যায়। বিশ্বের অধিকাংশ দেশে, বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোতে এ পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেয়া হয়।বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এই ভ্যাকসিন পদ্ধতির চিকিৎসাকে রক্তে এলার্জিজনিত রোগিদের দীর্ঘমেয়াদি সুস্থ থাকার একমাত্র চিকিৎসা পদ্ধতি বলে অভিহিত করে। 

পরীক্ষাসমূহ ও রোগনির্ণয়

এলার্জির কারণ খুঁজে বের করার জন্য আক্রান্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসক বিভিন্ন প্রশ্ন ও শারীরিক পরীক্ষা করেন। তা ছাড়া অন্য কোনো রোগের কারণে এলার্জির মতো লক্ষণ দেখা দিচ্ছে কি না সেটিও খতিয়ে দেখেন। এলার্জি শনাক্ত করার গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাগুলো হলোঃ

খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন

যেসব খাবারে সাধারণত এলার্জি হয় সেগুলো খাদ্যাভ্যাস থেকে বাদ দিয়ে দেখা হয় যে এলার্জি নিয়ন্ত্রণে আসে কি না। পরবর্তীতে আবার খাবারগুলো খেতে শুরু করলে এলার্জি ফিরে আসে কি না তাও দেখার চেষ্টা করা হয়। সাধারণত রোগী কোন ধরনের খাবার খাওয়ায় এলার্জির লক্ষণ দেখা দেয় সেটি একটি ডায়েরিতে লিখে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। এতে করে কোন কোন খাবারে রোগীর এলার্জি হয় তা নির্ণয় করা সম্ভব হয়।

ত্বকের পরীক্ষা

যেসব পদার্থে এলার্জি হয় সেসবকে অ্যালার্জেন বলে। ত্বকের পরীক্ষাতে অ্যালার্জেন যুক্ত অল্প একটু তরল বাহুর ওপরে দেওয়া হয়। এরপর সুঁই দিয়ে সেই জায়গায় সামান্য একটু ছিদ্র করা হয়। এলার্জি থাকলে ১৫ মিনিটের মধ্যে ঐ স্থানটি চুলকাতে শুরু করে এবং লাল হয়ে যায়।

উল্লেখ্য, পরীক্ষার আগে অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ঔষধ সেবন করলে সঠিক ফলাফল পাওয়া যায় না।

রক্তের পরীক্ষা

এই পরীক্ষাতে রক্তের নমুনা নিয়ে নির্দিষ্ট অ্যালার্জেন এর বিপক্ষে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে কি না সেটি পরীক্ষা করে দেখা হয়।

প্যাচ পরীক্ষা

এই পরীক্ষাতে শরীরে ‘কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিস’ নামক এক ধরনের একজিমা বা এলার্জিজনিত চর্মরোগের উপস্থিতি পরীক্ষা করে দেখা হয়।

চ্যালেঞ্জ পরীক্ষা

এই পরীক্ষাটি অল্প কিছু ক্ষেত্রে করা হয়ে থাকে। এমন জায়গায় পরীক্ষাটি করতে হয় যেখানে গুরুতর এলার্জিক প্রতিক্রিয়া দেখা গেলে জরুরি চিকিৎসা করানো সম্ভব। এই পরীক্ষায় নির্দিষ্ট কোনো খাবারে এলার্জি থাকলে সেই খাবারটি রোগীকে খাওয়ানোর মাধ্যমে এলার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা হয়। খাবারের পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়ানোর মাধ্যমে এলার্জিক প্রতিক্রিয়া বেড়ে যাচ্ছে কি না সেটিও দেখা হয়।

এলার্জি কি ছোঁয়াচে?

এলার্জি ছোঁয়াচে নয়। এটি শরীরের একটি বিশেষ প্রতিক্রিয়া। আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা যখন ক্ষতিকর নয় এমন জিনিসকেও ভুলে শত্রু ভেবে বসে তখন শরীরে এলার্জির লক্ষণ দেখা দেয়। ভিন্ন ভিন্ন মানুষের ভিন্ন ভিন্ন জিনিসে এলার্জি থাকতে পারে।

এলার্জির ঔষধ বেশি খেলে কী হয়?

এলার্জির চিকিৎসায় বিভিন্ন ধরনের ঔষধ ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে একটি হলো স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ। এগুলো সাদা রঙের গোল গোল ছোটো বড়ি হিসেবে কিনতে পাওয়া যায়। স্টেরয়েড শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দেওয়ার মাধ্যমে এলার্জির লক্ষণ কমিয়ে আনে। তবে দীর্ঘদিন ধরে এসব ঔষধ সেবন করলে ইনফেকশন, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা, বদহজম, হাড় ক্ষয়, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের মতো বিভিন্ন স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই ডাক্তারের সুনির্দিষ্ট পরামর্শ ছাড়া স্টেরয়েড ব্যবহার করা একেবারেই উচিত নয়।

আমার শরীরে ছোটো ছোটো গোটা গোটা এলার্জি, কী করণীয়?

খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রায় কিছু বিধিনিষেধ মেনে চললে এলার্জি অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ঔষধ সেবন করা যেতে পারে। তবে এলার্জির কারণেই এসব গোটা হচ্ছে কি না সেটি খুঁজে বের করা জরুরি।

এলার্জির কারণে কি শ্বাসকষ্ট হয়?

এলার্জির কারণে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। ইতোমধ্যে অ্যাজমার মতো শ্বাসতন্ত্রের রোগ থাকলে রোগের তীব্রতা বেড়ে যেতে পারে।

Next Post Previous Post