পেটের মেদ কমানোর উপায় এবং ব্যায়াম ছবি সহ

 

পেটের মেদ কমানোর উপায়

পেটের মেদ একটি বিব্রতকর বিষয়। উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার যে পেটের মেদ বাড়ায় তা নয়, বেশি ক্যালরিযুক্ত যেকোনো খাবারই পেটের মেদ বাড়াতে পারে। একবার পেটে মেদ জমলে সেটা কাটিয়ে ওঠা যাবে না, এ ধারণা ভুল। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে অভ্যস্থ হলে সহজে মেদ কমিয়ে ফেলা সম্ভব।

তার আগে জানা জরুরি কোন ধরনের খাবারের কারণে পেটে মেদ জমতে থাকে। সাধারণত মদ্যপান, মিষ্টিজাতীয় খাবার অতিরিক্ত গ্রহণ, ডুবো তেলে ভাজা খাবার, কোমল পানীয়, অস্বাস্থ্যকর বাইরের খাবার, নিয়মিত লাল মাংস (রেড মিট) খাওয়া, স্যাচুরেটেড চর্বি গ্রহণ ইত্যাদি পেটের মেদ বাড়িয়ে তোলার পেছনে ভূমিকা রাখে।

ওয়ের্ক ফোর্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বলেন, যখন একই তেল বারবার ব্যবহার করা হয়, তখন সেখানে ট্রান্সফ্যাট উৎপন্ন হয়। ট্রান্সফ্যাট পেটের মেদ বাড়িয়ে দেয়। পেটের মেদ অতিরিক্ত জমে যাওয়ার আগেই সেটিকে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ও সঠিক জীবনযাপনের মাধ্যমে আমরা শরীরের বাড়তি মেদ জমা বা ভুঁড়ি হওয়া থেকে রক্ষা পেতে পারি।

পেটের মেদ কমানোর উপায়

দ্রুত খাওয়ার অভ্যাস বাদ দিন


খাবার খাওয়া শুরু করার পর যখন সেই খাবার পেটে যায়, তখন পাকস্থলী থেকে মস্তিষ্কে সংকেত পৌঁছায়—সহজ ভাষায় পেটের সাথে ব্রেইনের কথাবার্তা হয়। পেট ভরেছে কি ভরেনি তা বুঝতে ব্রেইনের ২০ মিনিট পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। দ্রুত খাবার খেলে অতিরিক্ত খেয়ে ফেলার সম্ভাবনা থাকে, কারণ পেট ভরে যাওয়ার খবরটি পাকস্থলী থেকে হয়তো অত দ্রুত ব্রেইনে নাও পৌঁছাতে পারে।

পেটের মেদ কমাতে করণীয়

অতিরিক্ত না খেয়ে ফেলার জন্য ধীরে ধীরে খাবার খাওয়া এবং খাওয়ার সময় খাবারের প্রতি পূর্ণ মনোযোগ দিতে হবে। এই প্রক্রিয়াকে ‘মাইন্ডফুল ইটিং’ বা ‘মনোযোগ সহকারে খাওয়া’ বলা হয়। এভাবে অতিরিক্ত ক্যালরি খেয়ে ফেলা এড়ানো সম্ভব। তবে কোনো কারণে যদি খুব দ্রুত খেতেই হয়, তাহলে নির্দিষ্ট পরিমাণ খাবার প্লেটে নিয়ে সেটুকুই খেয়ে শেষ করুন। এতে বাড়তি খাবার খাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।

কোনো বেলার খাবার বাদ দিবেন না

অনেকে সকালের নাস্তা বাদ দিয়ে একবারে দুপুরে খাবার খাওয়ার পরিকল্পনা করেন। এক বেলা খাবার বাদ দিলে অপরবেলায় বেশি খাবার খাওয়া বা অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে। একারণে পেটের মেদ বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।

পেটের মেদ কমাতে করণীয়

আপনার যদি কোনো বেলার খাবার বাদ দেওয়ার অভ্যাস থাকে, তাহলে এখন থেকেই তা বদলে ফেলার চেষ্টা করুন। কোন বেলার খাবার বাদ দিবেন না। যদি কোনো কারণে খাবার বাদ পড়ে যায়, তাহলে পরের কোনো বেলায় যেন অতিরিক্ত ভোজন বা অস্বাস্থ্যকর খাবার না খাওয়া হয় সে ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।

বড় প্লেটের বদলে ছোট প্লেট বেছে নিন

এক্ষেত্রে মূল বিষয় প্লেটের আকার নয়, বরং কতটুকু খাবার শরীরে যাচ্ছে সেটি। সাধারণত প্লেটের আকারে বড় হলে প্লেটে বেশি খাবার আঁটানো যায়, ফলে অবচেতন মনেও সাধারণত খাবার একটু বেশী পরিমাণে নেয়া হয়। বেশিরভাগ মানুষের মাঝেই সাধারণত প্লেটে যতটুকু খাবার নেওয়া হয় তার পুরোটাই শেষ করার প্রবণতা থাকে। কিছু খাবার বাকি থাকা অবস্থায় পেট ভরা মনে হলেও প্লেটে খাবার রেখে উঠে যাওয়া হয় না। এভাবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাওয়া হয়ে যায়, ওজন বাড়ে এবং শরীরে মেদ জমে।

পেটের মেদ কমাতে করণীয়


অতিরিক্ত খাওয়া এড়াতে ছোট প্লেটে খাবার নিন। খাবার প্লেটে নেওয়ার সময় পরিমাণের দিকে খেয়াল রাখবেন। এতে খাবার নষ্ট হওয়ার এবং প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত খাওয়ার সম্ভাবনা কমবে।

সৌজন্যবোধ থেকে বেশি খাবেন না

দাওয়াত খেতে গেলে আমরা অনেক সময় সৌজন্যবোধ থেকে বেশি খেয়ে ফেলি। এক্ষেত্রে প্লেটে কেউ খাবার দিয়ে দিলে সেটা শেষ করে ওঠা কর্তব্য হিসেবে ধরে নেই। আবার বাইরে বন্ধুবান্ধব বা পরিচিতজনের সাথে দেখা হয়ে গেলে, পেট ভরা থাকার পরেও খাবার অর্ডার দেয়া হয়। এই অভ্যাসগুলো ওজন বাড়িয়ে মেদ-ভুঁড়ি জমানোর পেছনে ভূমিকা রাখে।

দাওয়াতে আরেকটি প্রচলন হলো সবশেষে মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়া। অতিভোজন বা ‘ওভারইটিং’ হলে একদিকে যেমন শারীরিক অস্বস্তিতে পড়তে হবে, অন্যদিকে শরীরে মেদ জমার সম্ভাবনা থাকে।

পেটের মেদ কমাতে করণীয়

এই চক্র থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সচেতনভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন। অতিরিক্ত খাবার শরীরে যেসব বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে সেগুলো মাথায় রেখে কী পরিমাণ খাবার খাবেন সেটি ঠিক করে নিন। 

যদি মিষ্টিজাতীয় খাবার খাবেন বলে ঠিক করেন তাহলে অন্যান্য খাবারগুলো পরিমিত পরিমাণে বা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে সামান্য কম খাবেন। মিষ্টিজাতীয় খাবার তেমন স্বাস্থ্যকর নয়, তাই যতটুকু না খেলেই নয় ততটুকুই খাবেন।

আনমনে খাওয়া পরিহার করুন

খাওয়ার সময়ে অন্য কাজে ব্যস্ত থাকলে আপনি কতটুকু খাচ্ছেন সেদিকে সাধারণত মনোযোগ রাখা সম্ভব হয়ে ওঠে না। টিভিতে বা ফোনে খেলা, নাটক বা অন্য কিছু দেখতে দেখতে খাওয়ার অভ্যাস থাকলে পেটের মেদ হওয়ার বড় সম্ভাবনা থাকে। কারণ তখন আনমনে প্রয়োজনের চেয়ে বেশী খাওয়া হয়ে যেতে পারে।

আবার অনেকের ক্ষুধা না লাগলেও টিভি দেখতে দেখতে কিছু একটা খেতে হবে এমন একটা অভ্যাস হয়ে যায়। এই খাবারগুলোও সাধারণত স্বাস্থ্যকর হয় না। দেখা যায়, ভাজাপোড়া, মুড়ি-চানাচুর এসব খাবার আমরা এক হাতে নিচ্ছি আর খাচ্ছি।

পেটের মেদ কমাতে করণীয়

এসব অতিরিক্ত, অস্বাস্থ্যকর খাবার থেকে আসে অতিরিক্ত ক্যালরি, যা থেকে শরীরে চর্বি জমার একটা ক্ষেত্র তৈরি হয়। তাই মেদ কমাতে কোন কোন সময়ে আপনি আনমনে খাবার খান সেটা খুঁজে বের করতে হবে। খাবারের দিকে পূর্ণ মনোযোগ, অর্থাৎ ‘মাইন্ডফুল ইটিং’ এর চর্চা করতে হবে।

মানসিক চাপ মোকাবেলা করুন

মানসিক চাপ বা স্ট্রেসের কারণেও শরীরে মেদ জমতে পারে। আমরা যখন দিনের পর দিন মানসিক চাপে ভুগি, তখন আমাদের শরীরে ‘কর্টিসল’ নামের একটি হরমোন নিঃসরণ হয়। এই হরমোন বৃদ্ধি পেলে অতিরিক্ত চিনি বা চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ার প্রবল আকাঙ্ক্ষা জাগতে পারে।

কর্টিসল হরমোন ওজন বাড়াতে, বিশেষ করে পেটের মেদ বাড়াতে আরও তিনটি কাজ করেঃ 

  • শরীরের অন্যান্য জায়গা, যেমন: পিঠ, উরু ও নিতম্বের চেয়ে পেটে চর্বি জমতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। একে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় ‘সেন্ট্রাল অ্যাডিপোসিটি’ বলা হয়।
  •  গ্রেলিন নামের একটি হরমোনকে বাড়িয়ে দেয়। এই হরমোন বেশি বেশি ক্ষুধা অনুভব করার পেছনে দায়ী।
  •  লেপটিন নামের আরেক হরমোন নিঃসরণ কমিয়ে দেয়। লেপটিন আমাদের পেট ভরে আছে এমন অনুভব করায়।

অর্থাৎ এই হরমোনের কারণে সহজে পেট ভরে না, বারবার ক্ষুধা লাগে, এবং বেশি খেয়ে ফেলার কারণে যে চর্বিটা তৈরি হয় সেটি শরীর মেদ হিসেবে জমিয়ে রাখে।

মেদ কমাতে তাই মানসিক চাপকে সময়মতো ও সঠিকভাবে মোকাবেলা করা গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম, পছন্দের কাজ করা, মেডিটেশন ও প্রয়োজনে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে মানসিক চাপকে মোকাবেলা করতে হবে।

অস্বাস্থ্যকর ঘুমের রুটিন বদলে ফেলুন

কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবের সাথে ওজন বেড়ে যাবার একটি সম্পর্ক রয়েছে। এর পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। রাত জাগলে কিছু একটা খেতে ইচ্ছা করতে পারে। এভাবে খাওয়া অতিরিক্ত খাবারের ক্যালরি শরীরে মেদ হিসেবে জমা হয়, ঘুমিয়ে থাকলে সেই অতিরিক্ত ক্যালরি খাওয়া হতো না।

রাত জেগে কাজ করার সময় খাবার হিসেবে সাধারণত ক্ষতিকর ফ্যাট বা চিনিযুক্ত খাবার, অথবা অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার বেছে নেওয়া হয়। খাবারটি স্বাস্থ্যকর কিনা তা নিয়ে তখন সাধারণত চিন্তা করা হয় না।

এছাড়া নিয়মিত যদি পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব হয়, তখন সেটা মানসিক চাপ বা স্ট্রেস তৈরি করতে পারে। এই স্ট্রেস আবার বিভিন্নভাবে বাড়তি ওজন এবং মেদ জমার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

পেটের মেদ কমাতে করণীয়

পর্যাপ্ত ঘুমের জন্য নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমের অভ্যাস করতে হবে। ঘুম না আসা নিয়ে আমাদের নিদ্রাহীনতার কারণ ও প্রতিকার আর্টিকেলটি পড়তে পারেন। এছাড়া আমাদের ভালো ঘুমের উপায় সংক্রান্ত ভিডিওটিতে কীভাবে স্বাস্থ্যকর ঘুমের অভ্যাস গড়ে তুলতে পারবেন সেই ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে।

সাদা চাল, সাদা আটার বিকল্প বেছে নিন

সাদা চাল, সাদা আটা তৈরি করার সময় ফাইবার বা আঁশসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান ফেলে দেয়া হয়। ফাইবার খাবারকে আস্তে আস্তে হজম করতে সহায়তা করে। ফাইবার ফেলে দেয়ার কারণে খাবার গুলো দ্রুত হজম হয়, রক্তে ব্লাড সুগারের মাত্রা দ্রুত বেড়ে যায়।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে সাদা চাল ও সাদা আটার মত প্রক্রিয়াজাত শস্যদানা বেশি খাওয়ার সাথে মেদ জমার সম্পর্ক রয়েছে। অন্যদিকে লাল চাল বা ঢেঁকীছাঁটা চাল (কুড়াকাটা চাল হিসেবেও পরিচিত) এবং লাল আটার মতো গোটা শস্যদানা বেশি খাওয়ার সাথে পেটের মেদ কমানোর সম্পর্ক থাকার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।

পেটের মেদ কমাতে করণীয়

লাল চাল বা লাল আটার স্বাদের সাথে অনেকেই অভ্যস্ত নয়, তাই প্রথমে এটি ভালো না-ই লাগতে পারে। কিন্তু এইটা পেটের মেদ কমাতে সাহায্য করবে এবং স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী হবে। তাই আস্তে আস্তে হলেও এগুলো খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। প্রয়োজনে শুরুর দিকে সাদা চাল বা সাদা আটার সাথে কিছুটা লাল চাল বা আটা মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।

‘লো-ফ্যাট বা ফ্যাট-ফ্রি খাবার’ খাওয়ার আগে মোড়ক যাচাই করে নিন

লো-ফ্যাট খাবার খেয়ে মেদ তৈরি হতে পারে—এ কথা শুনে খটকা লাগতেই পারে। এর কারণ হলো, লো-ফ্যাট বা ফ্যাটমুক্ত খাবারকে সাধারণত স্বাস্থ্যকর মনে করা হলেও, এসব খাবারও কখনো কখনো অস্বাস্থ্যকর হতে পারে।

একটি খাবারকে লো-ফ্যাট হিসেবে তৈরি করার সময় সেখান থেকে ফ্যাট সরিয়ে বা কমিয়ে ফেললে অনেকের কাছেই তা কম সুস্বাদু মনে হয়। তাই খাবার সুস্বাদু করে বিক্রি বাড়াতে খাবার প্রস্তুতকারীরা সাধারণত এসব খাবারে অতিরিক্ত চিনি যোগ করে বাজারজাত করে থাকে।

পেটের মেদ কমাতে করণীয়

অতিরিক্ত চিনি প্রচুর ক্যালরি যুক্ত করে, খাবারটিকে অস্বাস্থ্যকর বানায় এবং ওজন বাড়ায়। তাই এখন থেকে লো-ফ্যাট বা ফ্যাট-ফ্রি কোনো খাবার কেনার আগে, তাতে চিনি যোগ করা হয়েছে কি না তা মোড়কের লেখা থেকে দেখে নিন।

শুয়ে বসে না থেকে অ্যাকটিভ হোন

শুয়ে-বসে থাকলে যে শরীরে মেদ জমে তা প্রায় সবারই জানা। এর খুবই সহজ সমাধান হলো সপ্তাহে ৫ দিন মাত্র ৩০ মিনিট করে দ্রুত হাঁটা। সারা সপ্তাহে মাত্র আড়াই ঘণ্টা ব্যায়াম করেই আপনি অনেক উপকার পাবেন। এতে রোগব্যাধির সম্ভাবনা কমবে, শরীরের চর্বির পরিমাণও কমবে।

রাতারাতি চর্বি কমার আশা করবেন না। হাঁটা চালিয়ে যাবেন, সাথে কিছু ভারোত্তোলন ও অন্যান্য স্ট্রেংথ ট্রেনিং করতে পারলে আরও ভালো। অন্য কোনো ব্যায়াম আপনার জন্য উপযুক্ত হলে সেটিও করতে পারেন। অনেকদিন ধরে কোনো শারীরিক পরিশ্রম করেননি এমন ব্যক্তিও আমাদের শূন্য থেকে পাঁচ কিলোমিটার গাইডটি অনুসরণ করে দৌড়ানো শুরু করতে পারেন।

পেটের মেদ কমানোর ব্যায়াম ছবি সহ


ম্যাটের উপর সোজা হয়ে শুয়ে হাত দুটো দু’পাশে ছড়িয়ে দিন। এবার ধীরে ধীরে দুই পা একসঙ্গে জুড়ে উপরের দিকে তোলার চেষ্টা করুন। কোনোভাবেই হাঁটু ভাঁজ করবেন না। শরীরচর্চায় অভ্যাস না থাকলে প্রথমেই অনেকটা পা উঠবে না, তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই পদ্ধতি নিখুঁত করার চেষ্টা করুন।


সোজা হয়ে শুয়ে হাত দুটো মাথার পিছনে নিন। এবার ধীরে ধীরে ঘাড় ও মাথা তুলে সামনের দিকে ঝোঁকান। এর সঙ্গে পা দুটো ভাঁজ করে বুকের কাছে আনার চেষ্টা করুন। মনে মনে দশ গুনুন। ঘাড় তোলা অবস্থাতেই পা সোজা করুন। আবার ভাঁজ করে বুকের কাছে আনুন।


প্রতিবার পা ভাঁজ করা ও সোজা করার প্রক্রিয়াটি ধরলে ব্যায়ামটি সম্পূর্ণ একবার করা হয়। প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে এটিবার পাঁচেক করুন। এতে একটা সেট হয়। প্রতিদিন দুটো করে সেট অভ্যাস করুন প্রথম প্রথম। আয়ত্তে এসে গেলে তিনটি করে সেট করুন।


পেটের মেদ কমাতে খুব কার্যকর প্লাঙ্ক ও সাইড প্লাঙ্ক। প্লাঙ্কের জন্য উপুর হয়ে শুয়ে হাতের তালু ও পায়ের আঙুলের উপর ভর দিয়ে গোটা শরীরটাকে হাওয়ায় ভাসিয়ে দিন। এই অবস্থায় পেটকে টেন ধরে থাকুন ভিতরে। প্রথম দিকে দশ সেকেন্ড ধরে রাখুন। তার পর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরুন।


পেটের পেশিতে টান পড়ায় এই ব্যায়ামে ভুঁড়ি কমবেই, পেট ভিতরে টেনে রাখলে ফলাফল আরও ভালো পাবেন। প্রতি তিনটে প্লাঙ্কে একটা করে সেট হয়। চেষ্টা করুন তিনটে সেট অভ্যাস করতে।


প্লাঙ্কের চেয়ে আর একটু কঠিন সাইড প্লাঙ্ক। কোমর ও পেটের মেদ ঝরাতে খুবই কার্যকরী এটি। পাশ ফিরে শুয়ে পড়ুন প্রথমেই। এবার এক হাতের তালু ও এক পায়ের আঙুলগুলোর উপর ভর দিয়ে শরীরকে উপরের দিতে তোলার চেষ্টা করুন। মনে মনে দশ গুনে ফের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরুন।


কোমরকে টোনড রাখতে ও ভুঁড়ি কমাতে যেমন কাজে আসে, তেমনই হজমশক্তি বাড়াতেও এই সাইড প্লাঙ্ক খুবই কার্যকর। প্রতি তিনটায় এক সেট সম্পূর্ণ হবে। প্লাঙ্কের মতোই এটিও তিন সেট করার চেষ্টা করুন। তবে প্রথম দিকে দুটি সেটই যথেষ্ট।


পেটের মেদ কমাতে প্লাঙ্কের মতোই আর এক উপকারী ব্যায়াম লেগ কিক। উপুর হয়ে শুয়ে দুই পা ভাঁজ করে পিঠের কাছে আনুন। এবার দুই হাত দিয়ে পায়ের পাতা ছোঁওয়ার চেষ্টা করুন। এই সময় বুক থেকে মাথা ম্যাট ছেড়ে উপরের দিকে উঠবে। দশ সেকেন্ড ধরে রেখে শরীর স্বাভাবিক করুন।


প্রতি পাঁচবারে একটা করে সেট হয়। দিনে দু’টি সেটই যথেষ্ট। এ ছাড়া প্রতি দিনই নানা কাজের ফাঁকে পেটকে মাঝে মাঝেই ভিতরের দিকে টেনে ধরে থাকুন। শ্বাস স্বাভাবিক রেখে ধীরে ধীরে আগের অবস্থায় ফিরুন। পেটের পেশিতে চাপ দিয়ে মেদ কমাতে এই কৌশল কার্যকর। কাজের মধ্যে থেকেও নানা সময়ে করতে পারেন এমন।
Next Post Previous Post