চুল লম্বা করার তেলের নাম এবং যে তেলে চুল গজায়

 

চুল লম্বা করার তেলের নাম

নারী-পুরুষ সবার কাছেই চুল অনেক গরুত্বপূর্ণ। চুল ছাড়া সৌন্দর্য ম্লান হয়ে যায়! বিশেষ করে লম্বা ও ঘন চুল সব নারীরাই পছন্দ করেন। তবে চুলের সঠিক যত্ন নেওয়ার মাধ্যমেই তা লম্বা ও ঘন করে তোলা সম্ভব।

বাজারে অনেক ধরনের হেয়ার গ্রোথ অয়েল আছে, যেগুলো ব্যবহার করা চুলের স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও ভালো নয়। এজন্য ভরসা রাখুন বিভিন্ন প্রাকৃতিক তেলের উপর।

চুল লম্বা করার তেলের নাম
  • নারকেল তেল চুলের জন্য এক জাদুকরী উপাদান। চুলের গোড়া শক্ত করার পাশাপাশি মাথার ত্বকে পুষ্টি জোগায় এ তেল। এটি চুল ভাঙ্গাও কমায় এবং চুলকে কোমল এবং ঝলমলে করে।
  • ত্বক এবং চুলের যত্নে জলপাই তেল অনন্য। এতে একাধিক ভিটামিন আছে, যা চুলের প্রাকৃতিক কেরাটিন ধরে রাখতে সহায়তা করে। নিয়মিত চুলে অলিভ অয়েল ব্যবহারের ফলে আপনার চুল দ্রুত লম্বা ও ঘন হয়ে উঠবে।।
  • চুলের বৃদ্ধিতে ক্যাস্টর অয়েল ম্যাজিকের মতো কাজ করে। প্রাচীনকাল থেকেই চুলের যত্নে ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহৃত হয়ে আসছে। চুল বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রাকৃতিকভাবে মাথার ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে এবং খুশকিও দূর করে ক্যাস্টর অয়েল।
  • মেথি বীজে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং ক্ষত নিরাময়ের বৈশিষ্ট্য আছে। যা খুশকিসহ স্ক্যাল্পের যাবতীয় সমস্যা থেকে রক্ষা করে। মাথার ত্বকে চুলকানি রোধের সেরা দাওয়াই হলো মেথি।
  • কারি পাতায় থাকে বিটা ক্যারোটিন। চুলের ক্ষতি নিয়ন্ত্রণ করে এবং চুলের বৃদ্ধি বাড়ায়। এতে অ্যামিনো অ্যাসিড বেশি থাকায় চুলের ফলিকগুলো আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
  • খাঁটি নারকেল তেল, ক্যাস্টর অয়েল ও অলিভ অয়েল হলো চুলের জন্য সবচেয়ে ভালো উপাদান। সবগুলো তেল সমপরিমাণ মিশিয়ে তার মধ্যে মেথির গুঁড়ো ও কারি পাতা বাটা মিশিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে চুল লম্বা ও ঘন করার ম্যাজিক টোটকা।
  • এরপর চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত এ প্যাকটি ব্যবহার করে শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন তারপর ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২-৩ দিন এ উপায়ে চুলের যত্ন নিলেই ফলাফল দেখে চমকে উঠবেন!
চুল গজানোর তেলের নাম

কালোজিরার তেল

কালোজিরার তেল ব্যবহারে নতুন চুল গজায়। চুলের ফলিকগুলো শক্তিশালী করে। এই তেল প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবেও কাজ করে। এ ছাড়াও মাথার ত্বকের শুষ্কতা কমায়, যার ফলে দ্রুত চুল পড়া বন্ধ হয়।

ব্যবহারের জন্য কালোজিরা তেল এক হাতের তালুতে নিন। এবার আরেক হাতের আঙুলের সাহায্যে মাথার চুল কম আছে এমন অংশে অথবা টাক স্থানে ১৫ মিনিট রেখে ম্যাসেজ করুন। আধা ঘণ্টা পরে ধুয়ে ফেলুন।

আপেল সিডার ভিনেগার এবং কালোজিরার তেল 

চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে ও খুশকিমুক্ত করতে আপেল সিডার ভিনেগারের তুলনা নেই। যদি আপনি এটি কালোজিরা সঙ্গে ব্যবহার করেন; তাহলে এর পুষ্টিগুণ আরও বেড়ে যাবে। চুলের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে এ মিশ্রণটি।

এজন্য আস্ত কালোজিরা পানিতে মিশিয়ে ফুটিয়ে নিন। মিশ্রণটি ঠান্ডা হয়ে গেলে ছেঁকে নিন পানিটুকু। এরপর এতে ভিনেগার মিশিয়ে চুলে ও স্ক্যাল্পে ব্যবহার করুন। কয়েক ঘণ্টা রেখে বা পরের দিন শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফলাফলের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ দিন এ পদ্ধতি অনুসরণ করুন ২ মাস।

জলপাই এবং কালোজিরা তেল 

এ দুই তেলে পাওয়া অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল যৌগ। যা চুল পড়া রোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। ব্যবহারের জন্য একটি পাত্রে জলপাই এবং কালোজিরার তেল মিশিয়ে নিন।

এবার মাথার টাক বা কম চুল রয়েছে এমন স্থানে লাগিয়ে ম্যাসেজ করুন। এ তেলের মিশ্রণ নিয়মিত ব্যবহারের ফলে চুল পড়ার সমস্যা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

মেহেদি ও কালোজিরার প্যাক 

চুলের ক্ষেত্রে মেহেদির উপকারিতা সবারই কমবেশি জানা। কালোজিরা প্রদাহনাশক হিসেবে কাজ করে। এজন্য মাথার ত্বকের ব্যাধি এবং চুলের গোড়া শক্তিশালী করে এ প্যাক।

ব্যবহারের জন্য মেহেদি গুঁড়ো এবং কালোজিরার গুঁড়ো একসঙ্গে মিশিয়ে চুলের গোড়ায় ব্যবহার করুন। আধা ঘণ্টা রেখে দিন এবং পরে শাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেলুন।

নারকেল তেল এবং কালোজিরা 

নারকেল তেলে অ্যান্টি-ফাঙ্গাল এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে। যা মাথার ত্বকের বিভিন্ন ছত্রাকের বিরুদ্ধে লড়াই করে। যদি কোনো চর্মরোগের কারণে আপনার চুল পড়তে থাকে; তাহলে কালোজিরার সঙ্গে নারকেল তেল মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।

এজন্য ১ টেবিল চামচ কালোজিরার গুঁড়ো বা তেলের সঙ্গে ১ চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে নিন। আপনি চাইলে মধুও যোগ করতে পারেন। এ মিশ্রণটি টাকের স্থানে অথবা চুলের গোড়া থেকেআগা পর্যন্ত ব্যবহার করুন।

এরপর হালকা গরম তোয়ালে দিয়ে মাথা ঢেকে রাখুন প্রায় ২০ মিনিট। সপ্তাহে কমপক্ষে একবার এ প্যাকটি ব্যবহার করুন।

কালোজিরার তেল এবং লেবুর রস 

ভিটামিন সি সমৃদ্ধ লেবুর রস স্বাস্থ্য-ত্বক ও চুলের জন্য খুবই উপকারী। কালোজিরা তেলের সঙ্গে যদি আপনি লেবুর রস মিশিয়ে মাথার ত্বকে ব্যবহার করেন; তবে দ্রুত চুল পড়া বন্ধ হয়ে নতুন চুল গজাবে।

কালোজিরায় থাকা অক্সিডেন্ট চুল পড়া রোধ করে। চুলের বৃদ্ধি বাড়ায় এবং চুল পড়া নিরাময় করে। এজন্য মাথার যেসব অংশে চুল কম, সেখানে এ মিশ্রণটি ব্যবহার করুন। ১৫ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এরপর চুল শুকিয়ে গেলে স্ক্যাল্পে কালোজিরার তেল ব্যবহার করুন।

চুল পড়া রোধে কোন তেল ভালো

চুল পড়া রোধ করতে বেশ কার্যকর আমলকীর তেল। চুল পড়া প্রতিরোধে এই তেলটি ব্যবহার করতে পারেন।

যারা সময়ের অভাবে চুলের যত্ন নিতে পারছেন না, তারাও ব্যবহার করতে পারেন আমলকির তেল। খুব সহজে মাত্র দুটি উপাদান দিয়ে এই তেলটি তৈরি করা সম্ভব।

এক কাপ নারকেল তেল ৪-৫ মিনিট জ্বাল দিন। এর সাথে শুকনো আমলকী দিয়ে দিন। আমলকীসহ এই তেল জ্বাল দিতে থাকুন। বাদামী রং হয়ে আসলে চুলা থেকে এটি নামিয়ে ফেলুন। এরপর তেলটি ছেঁকে আমলকী থেকে আলাদা করে নিন।

তেলটি মাথায় কয়েক মিনিট ম্যাসাজ করে লাগান। সারা রাত রাখুন, পরের দিন শ্যাম্পু করে ফেলুন।

আমলকির তেল শুধু নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে না। মাথার তালুতে রক্ত চলাচলও বৃদ্ধি করে থাকে। আমলকী চুলের গোড়া মজবুত করতে সাহায্য করে। এটি সপ্তাহে দুই দিন ব্যবহার করুন।

Next Post Previous Post