অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা, পুষ্টিগুণ, এবং এর ব্যবহার

 

অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা
অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা অনেক। এই তেল যেমন শরীরে মাখা যায় তেমনি রান্নাতে ব্যবহার ও করা যায়। অলিভ অয়েল তেলে স্বাস্থ্যকর মনস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। প্রাকৃতিক এই তেলে ওমেগা ৬ এবং ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। অলিভ অয়েলে রয়েছে এলিক অ্যাসিড নামক মনস্যাচুরেটেড ফ্যাট। গবেষণায় দেখা গেছে, এলিক অ্যাসিড প্রদাহনাশক হিসেবে কাজ করে। সেইসঙ্গে ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিও আটকাতে পারে। আসুন জেনে নেই অলিভ অয়েল তেল সম্পর্কে বিস্তারিত।

অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা

প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে

অলিভ অয়েলে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। এতে উপকারী ফ্যাটি অ্যাসিড ছাড়াও রয়েছে ভিটামিন ই এবং কে। অলিভ অয়েলে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট দুরারোগ্য ব্যাধি থেকেও মুক্তি দেয়। এ ছাড়াও বিভিন্ন প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করে। রক্তের কোলেস্টেরলকে জারণ থেকে রক্ষা করে। এতে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।

প্রদাহনাশক হিসেবে কাজ করে

প্রদাহনাশক হিসেবে কাজ করে অলিভ অয়েলে থাকা উপাদানসমূহ। দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেমন- ক্যান্সার, হৃদরোগ, হজমে সমস্যা, টাইপ ২ ডায়াবেটিস, আলঝেইমার, আর্থ্রাইটিস এবং স্থূলতার সঙ্গে লাড়াই করে অলিভ অয়েলের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য। বিজ্ঞানীদের ধারণা, সাড়ে ৩ চামচ এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে প্রদাহনাশক হিসেবে ওলিওকান্থাল আইবুপ্রোফেন ওষুধের কাজ করে।

স্ট্রোক প্রতিরোধে সহায়তা করে

অলিভ অয়েল স্ট্রোক প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। রক্ত জমাট বাঁধা বা রক্তক্ষরণের কারণে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহে ব্যাঘাত ঘটে। আর এ কারণেই স্ট্রোক হয়। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে স্ট্রোকে মৃত্যুর হার অনেক বেশি। ৮ লাখ ৪১ হাজার মানুষের উপর গবেষণা করে দেখা গেছে, অলিভ অয়েলে থাকা মনস্যাচুরেটেড ফ্যাট স্ট্রোক ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী করা ১ লাখ ৪০ হাজার জনকে পর্যালোচনায় করে দেখা যায়, যারা জলপাই তেল নিয়মিত গ্রহণ করেছেন; তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় অনেক কম ছিল।

হৃদরোগ হওয়ার আশঙ্কা কমায়

অনিয়মিত জীবনযাপনের কারণে হৃদরোগে আক্রান্তের হার দিনকে দিন বাড়ছে। বিশেষ করে ফাস্টফুডজাতীয় খাবার এ রোগের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। আর ফাস্টফুডজাতীয় খাবারগুলো তৈরি করা হয় সয়াবিন তেল দিয়ে। এজন্য অলিভ অয়েল যারা নিয়মিত গ্রহণ করেন; তাদের ক্ষেত্রে হৃদরোগ হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশেই কম থাকে।

এলডিএল কোলেস্টেরলকে নিঃসরণ করে

শরীরের খারাপ এলডিএল কোলেস্টেরলকে জারণ থেকে রক্ষা করে অলিভ অয়েল। রক্তচাপ কমিয়ে হৃদরোগ থেকে বাঁচায় অলিভ অয়েলে থাকা পুষ্টি উপাদানগুলো। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, জলপাই তেল গ্রহণের ফলে রক্তচাপের ওষুধের প্রয়োজনীয়তা ৪৮ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।

ওজন কমাতে সাহায্য করে

যদিও অলিভ অয়েল ওজন বৃদ্ধি বা কমার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। তবে ৭ হাজার স্প্যানিশ কলেজ ছাত্র-ছাত্রীদের উপর ১ মাস গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, প্রচুর পরিমাণে জলপাই তেল খেয়েও তাদের ওজন বাড়েনি। অন্যদিকে ১৮৭ জনের উপর ৩ বছর মেয়াদী এক গবেষণায় দেখা গেছে, জলপাই তেল সমৃদ্ধ খাবার রক্তে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের পরিমাণ বাড়ায়, যা ওজন কমার সঙ্গে সম্পৃক্ত।

অলিভ অয়েল আলঝেইমার রোগের সঙ্গে লড়াই করে

৪০ বছরের পর থেকে অনেকেই আলঝেইমার রোগে ভুগে থাকেন। এক্ষত্রে এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি সবকিছু ভুলতে শুরু করেন। অলিভ অয়েল আলঝেইমার রোগের সঙ্গে লড়াই করে। আলঝেইমার রোগটি বিশ্বের সর্বাধিক নিউরোডিজেনারেটিভ ডিসঅর্ডার। এই রোগ হলে মস্তিষ্কের কোষের ভেতরে তথাকথিত অ্যামাইলয়েড বিটা নামক একধরনের প্রোটিনের উৎপাদন বাড়ে। ইঁদুরের উপর এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যে জলপাই তেলে থাকা উপাদানসমূহ ক্ষতিকর অ্যামাইলয়েড বিটা বৃদ্ধির হার কমায়।

টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়

জলপাই তেল টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়। বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, অলিভ অয়েল রক্তে শর্করা ও ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। ৪১৮ জন সুস্থ ব্যক্তির উপর ক্লিনিকাল ট্রায়ালে দেখা গেছে, নিয়মিত অলিভ অয়েল গ্রহণের ফলে তাদের মধ্যে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমেছে।

ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি ঠেকায়

অলিভ অয়েলের গ্রহণের ফলে ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিও ঠেকানো যায়। কারণ এই তেলে অ্যান্টি-ক্যান্সার বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। অলিভ অয়েলে থাকা অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট ফ্রি র‌্যাডিকেল ধ্বংস করে। যা ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি। টেস্ট-টিউব সমীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে, জলপাই তেলের যৌগগুলো ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস থেকে মুক্তি দেয়

রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের সমস্যায় অনেকেই ভুগে থাকেন। বিশেষ করে বয়স হলে শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টের ব্যথা বেড়ে যায়। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস হলো একটি অটোইমিউন রোগ। জলপাই তেলে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানসমূহ আর্থ্রাইটিস থেকে মুক্তি দেয়। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, অলিভ অয়েল ও ফিশ অয়েল জয়েন্ট এবং বাতজনিত রোগী থেকে মুক্তি দেয়।

ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে লড়াই করে


অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণসম্পন্ন অলিভ অয়েল শরীরের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়াগুলোকে ধ্বংস করে। এর মধ্যে একটি হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি। এই জীবাণু পেটে বাসা বাঁধায় আলসার এবং পাকস্থলীর ক্যান্সার সৃষ্টি করে। টেস্ট-টিউব সমীক্ষায় দেখা গেছে, এক্সট্রা ভার্জিন জলপাই তেল এই ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে লড়াই করে।

100 গ্রাম অলিভ অয়েল তেল এর পুষ্টিগুণ

  • ক্যালোরি 884
  • মোট ফ্যাট 100 গ্রাম
  • স্যাচুরেটেড ফ্যাট 14 গ্রাম
  • পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট 11 গ্রাম
  • মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট 73 গ্রাম
  • কোলেস্টেরল 0 মিলিগ্রাম
  • সোডিয়াম 2 মিলিগ্রাম
  • পটাসিয়াম 1 মিলিগ্রাম মিলিগ্রাম
  • মোট কার্বোহাইড্রেট 0 গ্রাম
  • খাদ্যতালিকাগত ফাইবার 0 গ্রাম
  • চিনি 0 গ্রাম
  • প্রোটিন 0 গ্রাম

অলিভ অয়েল তেল ব্যবহারের নিয়ম

অলিভ অয়েল ভিটামিন, মিনারেল এবং প্রাকৃতিক ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ একটি তেল। এই তেল ত্বক এবং চুলের জন্য অনেক উপকারী। এমনকি সেনসিটিভ ত্বকেও এটি ব্যবহার করা যায় সহজে। এর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। অলিভ অয়েলের অ্যান্টি অক্সিডেণ্ট উপাদান ত্বকের বলিরেখা, রিংকেল দূর করে ত্বক ময়েশ্চারাইজ করে থাকে। শুধু ত্বকের যত্নেই নয়। চুল নরম, শাইনি স্বাস্থ্যজ্বল করতে এর বিকল্প নেই।

গোসলে অলিভ অয়েল

আপনার গোসলের পানিতে ৫ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন। এবার এটি দিয়ে গোসল করুন। এক নিমিষে আপনার ত্বক নরম কোমল হয়ে উঠবে। এছাড়া গোসলের সময় অলিভ অয়েল  সারা শরীরে ম্যাসাজ করে নিতে পারেন। এই একটি কাজ নিয়মিত করার ফলে আপনার ত্বক হয়ে উঠবে অবিশ্বাস্য রকমের নরম এবং কোমল।

শুষ্ক ত্বকের জন্য

শুষ্ক ত্বকের অধিকারীদের ত্বকের রুক্ষতার কারণে ত্বকে নান সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। তাদের জন্য অলিভ অয়েল সবচেয়ে সহজ এবং কার্যকরী সমাধান। গোসলের পর আপনি কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল শরীরে ম্যাসাজ করুন। এরপর কয়েক মিনিট অপেক্ষা করুন শুকিয়ে যাওয়ার জন্য। এটি আপনার ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে থাকবে। অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে কোন লোশন ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়বে না।  

স্ট্রেচ মার্ক রিমুভার

অলিভ অয়েল ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখে এবং ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা ধরে রাখে। আপনার স্ট্রেচ মার্কের উপর অলিভ অয়েল ম্যাসাজ করুন। এটি শুধু দাগ নয় পুরাতন স্ট্রেচ মার্কও হালকা করে থাকবে। তবে এটি নিয়মিত করতে হবে।

সানস্ক্রিন

সমপরিমাণ অলিভ অয়েল এবং চায়ের লিকার পানি মিশিয়ে নিন। এটি আপনি মুখ এবং সারা শরীরে ম্যাসাজ করুন। এবার এক ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন না। এটি সানস্ক্রিনের বিকল্প হিসেবে কাজ করবে।

চুল শাইনি করতে

লেবুর রস, ডিমের কুসুম এবং দুই টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে নিন। এটি চুলে লাগিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এটি চুল নরম এবং সাইনি করে তুলবে। খুশকি দূর করার জন্য সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার অলিভ অয়েল ম্যাসাজ করুন।

ত্বক থেকে মেকআপ দূর করতে অলিভ অয়েল বেশ কার্যকরী। এক টুকরো তুলোয় অলিভ অয়েল লাগিয়ে ত্বকে ঘষুন। এটি সুন্দরভাবে ত্বক থেকে মেকআপ তুলে ফেলবে। 

Next Post Previous Post