এলোভেরা জেল এর উপকারিতা, তৈরির নিয়ম, এবং ব্যবহার

 

এলোভেরা জেল এর উপকারিতা

এলোভেরা জেল এর উপকারিতা অনেক। অ্যালোভেরা জেল ত্বক এর পুষ্টি সরবরাহ করে। এটি ত্বকের ক্ষত, কালো দাগ, পোড়া দাগ দুর করতে সাহায্য করে। আরও ত্বকের ব্রণ দুর করতে সাহায্য করে। ত্বকের যেকোনো ইনফেকশন দুর করে।

এলোভেরা জেল এর উপকারিতা 

হার্ট ভালো রাখে 

আপনার হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে অ্যালোভেরা জুস। অ্যালোভেরা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। এটি দূষিত রক্ত দেহ থেকে বের করে রক্ত কণিকা বৃদ্ধি করে থাকে। এটি দীঘির্দন আপনার হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে থাকে।

জয়েন্টের ব্যথা প্রতিরোধ ও হাড় এবং মাংসপেশিকে শক্তিশালী করে অ্যালোভেরা মাংসপেশির ব্যথা কমাতে সাহায্য করে থাকে। এমনকি ব্যথার স্থানে অ্যালোভেরা জেলের ক্রিম লাগালে ব্যথা কমে যায়। অ্যালোভেরায় মিনারেল, অ্যামিনো এসিডসহ নানা ধরনের পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে। যা হাড় ও মাংসপেশিকে শক্তিশালী করে।

দাঁত ভালো রাখে 

অ্যালোভেরা জুস দাঁত এবং মাড়ির ব্যথা উপশম করে থাকে। এতে কোনো ইনফেকশন থাকলে তাও দূর করে দেয়। নিয়মিত অ্যালোভেরা জুস খাওয়ার ফলে দাঁত ক্ষয় প্রতিরোধ করা সম্ভব।

ওজন হ্রাস করতে

ওজন কমাতে অ্যালোভেরা জুস বেশ কাযর্কর। ক্রনিক প্রদাহের কারণে শরীরে মেদ জমে। অ্যালোভেরা জুসের অ্যান্টি ইনফ্লামেনটরি উপাদান এই প্রদাহ রোধ করে ওজন হ্রাস করে থাকে। পুষ্টিবিদরা এসব কারণে ডায়েট লিস্টে অ্যালোভেরা জুস রাখার পরামশর্ দিয়ে থাকেন।

হজমশক্তি বাড়াতে

হজমশক্তি বৃদ্ধিতে অ্যালোভেরা জুসের জুড়ি নেই। এটি অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে অন্ত্রে প্রদাহ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া রোধ করে। যা হজমশক্তি বাড়িয়ে থাকে।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে

অ্যালোভেরা জুস রক্তে সুগারের পরিমাণ ঠিক রাখে এবং দেহে রক্ত সঞ্চালন বজায় রাখে। ডায়াবেটিসের শুরুর দিকে নিয়মিত এর জুস খাওয়া গেলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব। খাওয়ার আগে বা খাওয়ার পরে নিয়মিত অ্যালোভেরা জুস পান করুন।

ত্বকের যত্ননে কাজ করে 

ত্বকের যত্ননে অ্যালোভেরার ব্যবহার সম্পকের্ আমরা সবাই জানি। এর অ্যান্টি ইনফ্লামেনটরি উপাদান ত্বকের ইনফেকশন দূর করে ব্রণ হওয়ার প্রবণতা কমিয়ে দেয়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি

অ্যালোভেরা হলো অ্যান্টি ফাঙ্গাল এবং অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল উপাদান সমৃদ্ধ একটি উদ্ভিদ। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং দেহের টক্সিন উপাদান দূর করে থাকে। অ্যালোভেরা জেলের জুস নিয়মিত পান করতে পারেন। এটি দেহে সাদা ব্লাড সেল গঠন করে যা ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে।

মুখের দুগর্ন্ধ দূর করতে

২০১৪ সালে এক গবেষণায় দেখা গেছে অ্যালোভেরা জেল মাউথ ওয়াশের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এতে ভিটামিন সি আছে যা মুখের জীবাণু দূর করে মাড়ি ফোলা, মাড়ি থেকে রক্তপাত বন্ধ করে দিয়ে থাকে। এ ছাড়া মুখের দুগর্ন্ধ দূর করতে সাহায্য করে।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধে

অ্যালোভেরা রক্তে সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। থাইল্যান্ডে এক গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রতিদিন দুই টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জুস রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এবং ডায়াবেটিস রোগ হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস করে থাকে।

মুখের ঘা প্রতিরোধে

মুখের ঘা এবং দাঁতের পোকা রোধ করতেও অ্যালোভেরা জেল কাযর্কর। মুখের ঘায়ের স্থানে অ্যালোভেরা জেল লাগিয়ে নিতে পারেন, এটি ঘা ভালো করতে সাহায্য করে।

ক্যান্সার প্রতিরোধে

নতুন গবেষণা অনুসারে অ্যালো- ইমোডিন নামক উপাদান অ্যালোভেরা জেলে রয়েছে যা স্তন ক্যান্সার ছড়ানো রোধ করে থাকে। অন্যান্য ক্যান্সার প্রতিরোধেও অ্যালোভেরা জেল বেশ কাযর্কর।

ওজন কমাতে

অ্যালোভেরা জেলে ম্যাগনেশিয়াম, কপার, পটাশিয়াম, আয়রন, সোডিয়াম, জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম আরও অনেক মিনারেল রয়েছে যা ওজন হ্রাস করতে সাহায্য করে থাকে।

রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে

অ্যালোভেরার ঔষধি গুণ রক্তচাপ কমায় এবং রক্তে কোলেস্টেরল ও চিনির মাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় আনতে সাহায্য করে।

ক্ষতিকারক পদার্থের অপসারণ করতে

দেহে ক্ষতিকর পদার্থের প্রবেশ করলে তা অপসারণ করতে সাহায্য করে অ্যালোভেরা।

চমের্রাগ ও ক্ষত সারায়

অ্যালোভেরা প্রাকৃতিক ঔষধির কাজ করে। বিভিন্ন চমের্রাগ ও ক্ষত সারায় এটি। অনেক সময় প্রাথমিক চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয় এটি।

ক্লান্তি দূর করতে

অ্যালোভেরার জুস ক্লান্তি দূর করে দেহকে সতেজ করে।

হজমশক্তি বাড়াতে

নিয়মিত অ্যালোভেরার রস পান করলে হজমশক্তি বাড়ে। পরিপাকতন্ত্রের নানা জটিলতা সারাতেও সাহায্য করে অ্যালোভেরা।

কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর করতে

সুষম খাদ্যের পাশাপাশি নিয়মিত অ্যালোভেরার রস পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। এ ছাড়া অ্যালোভেরা জেলে প্রায় ২০ রকম অ্যামিনো এসিড আছে যা ইনফ্লামেশন এবং ব্যাকটেরিয়া রোধ করে হজম, বুক জ্বালাপোড়া রোধ করে থাকে।

এলোভেরা জেল তৈরির নিয়ম

  • প্রথমে আমরা এলোভেরা ঢাল থেকে সবুজ অংশ আলাদা করে সাদা অংশ গুলো নিয়ে নিব।

  • এরপরে একটি পাতিলে কিছু পরিমাণ পানি চুলায় সিদ্ধ করতে দিবো, যখন পানি সিদ্ধ হয়ে আসবে তখন আমরা এলোভেরা জেল গুলো পানিতে ঢেলে দিব।
  • এরপর সিদ্ধ হতে হতে পাতিলের উপরে ফেনার মতো হয়ে যাবে। খুব সাবধানতার সাথে এগুলো আমাদের সরিয়ে ফেলতে হবে। কারণ এগুলো আমাদের ত্বকের জন্য ক্ষতিকারক।

  • এরপরে আরো সিদ্ধ করতে করতে যখন মিশ্রণ টি একটু আঠালো হয়ে যাবে তখন আমরা চুলা বন্ধ করে দিব।

  • যখন মিশ্রণটি ঠান্ডা হয়ে যাবে তখন এই মিশ্রণটি আমরা একটি কাচের বোতলে বা বাটিতে সংরক্ষন করে রেখে দিব।

  • এই ধরনের সংরক্ষণ খুব সহজে করে রাখা যায় এবং ফ্রিজে ও রেখে দেওয়া যায়। সেখান থেকে নিয়ে ও আমরা ব্যবহার করতে পারি।

ত্বকের যত্নে এলভেরার ব্যবহার

  • এলোভেরা জেল চুলের জন্য ও ত্বকের জন্য অনেক উপকারী।

  • বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপকরণ এর সাথে আমরা এলোভেরা জেল মিশ্রন করে আমাদের ত্বকে লাগাতে পারি।

  • এলোভেরা জেল আমাদের ত্বকের বিভিন্ন ধরনের দাগ দূর করতে সাহায্য করে।

  • এলোভেরার সাথে যদি আমরা সামান্য পরিমাণ মুলতানি মাটি ও মধু মিক্স করে ত্বকে ব্যবহার করি তাহলে আমাদের ত্বক থেকে বিভিন্ন ধরনের রোদে পোড়া দাগ সহ বলিরেখা দাগ দূর হয়ে যায়।

  • তাছাড়াও এলোভেরা জেল এর সাথে ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে আমরা ফেইসপ্যাক হিসেবে ব্যবহার করতে পারি।

  • এলোভেরা জেল এর সাথে টমেটো ও আলু, একটু মধু, কাঁচা হলুদ দিলে সেটা গোল্ড ফেসিয়ালের মতো আমাদের কাজ দেয়। 
চুলের যত্নে এলোভেরার ব্যবহার

  • এছাড়াও এলোভেরা জেল চুলের যত্নে খুব বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখে।

  • নতুন চুল গজাতে এলোভেরা ও পেঁয়াজের রস দারুন কাজ করে।

  • তাছাড়াও চুল লম্বা করার জন্য আমরা এলোভেরা সাথে কালিজিরা ব্যবহার করতে পারি।

  • কালিজিরার তেলের সাথে সামান্য পরিমাণে এলোভেরা মিশিয়ে মাথায় লাগালে চুল ছেড়া ভাব দূর হয়ে যায়। এবং চুল অনেক লম্বা হয়।

  • এলোভেরার সাথে যদি আমরা চা পাতা ও কেস্টর অয়েল মিক্স করে আমাদের মাথায় দিতে পারি তাহলে মাথা থেকে খুশকি দূর হয়ে যায়। সাথে সাথে চুলের গোড়া অনেক বেশি শক্ত হয়ে চুল পড়া রোধ করে।

Next Post Previous Post