এলাচের উপকারিতা, খাওয়ার নিয়ম, পুষ্টিগুণ, এবং অপকারিতা

 

এলাচের উপকারিতা

এলাচ স্বাদ ও সুগন্ধের জন্য দারুণ এক উপকরণ। মশলা চা হোক বা সাধারণ দুধ-চা, স্বাদ বাড়াতে অনেকেই এলাচ ব্যবহার করেন। পায়েসে এলাচ খাবারের স্বাদটাই বাড়িয়ে দেয় কয়েক গুণ। শুধু তাই নয়, খাওয়ার পর আবার অনেকেই মুখশুদ্ধি হিসাবেও এলাচ খান।

এলাচের উপকারিতা

পরিপাকের উন্নতি ঘটায়

এলাচির বায়ুনাশকারী গুণ আছে বলে পরিপাক প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। এটি পেটফাঁপা কমায় এবং শূলবেদনা নিরাময়ে সাহায্য করে। এটি পিত্তরসের প্রবাহ বৃদ্ধি করে চর্বি ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের পরিপাকে সাহায্য করে। এজন্যই এলাচি পরিপাক তন্ত্রের সমস্যা যেমন- কোষ্ঠকাঠিন্য, আমাশয়, এসিডিটি, বদহজম এবং বিভিন্ন ধরণের পাকস্থলীর সংক্রমণ এর আদর্শ সমাধান হিসেবে কাজ করে।

পরিপাকের সমস্যা সমাধানে শুধু এলাচি খেতে পারেন, এলাচি গুঁড়া খাবারে ছিটিয়ে দিতে পারেন অথবা এলাচির চা পান করতে পারেন। এলাচির তীব্র মিষ্টি গন্ধ থাকে বলে বেশিরভাগ মানুষ এমনকি শিশুরাও পছন্দ করে এলাচি।

নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ দূর করে

যদি আপনার নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ থাকে এলাচি ব্যবহার করে দেখুন। এটি ব্যাকটেরিয়া নাশক উপাদানে ভরপুর থাকে বলে দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী জীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারে। এছাড়াও এর শক্তিশালী গন্ধ নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ দূর করতে পারে। এলাচি বীজের তেল ও নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে পারে।

প্রতিবার খাওয়ার পর এলাচি মুখে নিয়ে চাবাতে পারেন। এলাচ চা পান করতে পারেন অথবা দিনে দুই বার উষ্ণ এলাচ চা দিয়ে কুলকুঁচি করে নিতে পারেন। এটি কার্যকরী মুখ পরিষ্কারক হিসেবে কাজ করবে।

ক্ষুধার উন্নতি ঘটায়

এলাচ উষ্ণ পরিপাক টনিক হিসেবে কাজ করে বলে বদহজম, পেটফাঁপা এবং এসিডিটির সমস্যা মোকাবেলায় সাহায্য করে ক্ষুধামন্দা দূর করতে পারে। এছাড়াও এটি পরিপাক রসের নিঃসরণের উন্নতি ঘটায়। যদি আপনার ক্ষুধা কমে যায় তাহলে স্যুপে এলাচের গুঁড়া মিশিয়ে নিতে পারেন অথবা কয়েকটি এলাচি চিবিয়ে খেতে পারেন।

ডিটক্সিফাই হতে সাহায্য করে

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় এলাচি ডিটক্সিফিকেশনের মাধমে শরীরকে বিষমুক্ত হতে সাহায্য করে। এটি ম্যাংগানিজের ও চমত্‍কার উত্‍স বলে এনজাইম উত্‍পাদনে সাহায্য করে এবং ময়লা সাফ করতে ও ফ্রি র্যা ডিকেল ধ্বংস করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন এককাপ এলাচ চা পান করলে আপনার শরীর সুস্থ ও পরিষ্কার থাকবে।

কিডনির স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করে

এলাচ কিডনির জন্য ভালো, কারণ এটি মূত্র ত্যাগকে উদ্দীপিত করে এবং ব্লাড প্রেশার কমতে সাহায্য করে। এছাড়াও কিডনিতে জমা হওয়া ক্যালসিয়াম ও ইউরিয়া দূর করতেও সাহায্য করে। নিয়মিত এলাচ গ্রহণ করলে বিভিন্ন ধরণের কিডনির সমস্যা, মূত্র থলির সমস্যা, কিডনি পাথর, নেফ্রাইটিস, মূত্র ত্যাগের সময় জ্বালাপোড়া বা ব্যথা করা ও ঘন ঘন মূত্র ত্যাগের সমস্যা নিরাময়ে কাজ করে। এটি প্রায়ই মূত্র নালীর সংক্রমণের চিকিত্‍সায় ও ব্যবহার করা হয়।

এছাড়াও এলাচি পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামে পরিপূর্ণ থাকে। পটাসিয়াম রক্ত, দেহের তরল ও কোষের প্রধান উপাদান যা হৃদস্পন্দন নিয়মিত রাখতে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এলাচি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ বলে অ্যানেমিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সাহায্য করে, অ্যাজমা বা ব্রংকাইটিসের মত শ্বসনতন্ত্রের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে, ক্যান্সার বিশেষ করে কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে, হেঁচকি দূর করতে সাহায্য করে।

এলাচের পুষ্টিগুণ 

১০০ গ্রাম এলাচের মধ্যে রয়েছে:

  • প্রোটিন: ১১ গ্রাম
  • কোলেস্টেরল: ০ মিলিগ্রাম
  • কার্বোহাইড্রেট: ৬৮ গ্রাম
  • মোট ফ্যাট: ৭ গ্রাম
  • ক্যালোরিফিক মান: ৩১১ কিলোক্যালরি

এলাচ খাওয়ার নিয়ম

  • শরীরের ক্ষতিকর টক্সিনও দূর করতে পারে এলাচ। যাদের ত্বকে এরই মধ্যে বয়সের ছাপ পড়তে শুরু করেছে, তারা নিয়মিত সকালে খালি পেটে এলাচ ভেজানো পানি বলিরেখা কমতে শুরু করবে। 

  • শ্বাসকষ্টের সমস্যায় যারা ভোগেন তারা মধু, লেবুর রস ও গরম পানিতে একটি এলাচ মিশিয়ে পান করলেই উপকার পাবেন।

এলাচের অপকারিতা

এটি গ্রহণের ফলে শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যাও হতে পারে। এছাড়া অনেকের এলাচের থেকেই অ্যালার্জির সমস্যা হতে পারে, তাই আগে জেনে নিয়ে তবেই এলাচ সেবন করুন। এই সমস্যাগুলি ছাড়া অতিরিক্ত এলাচ খাওয়ার ফলে কাশি ও বমি বমি ভাব হতে পারে। এলাচের স্বাদ ঠান্ডা, তাই এটি অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে কাশিও হতে পারে।

Next Post Previous Post