তেজপাতার উপকারিতা, পুষ্টিগুণ, এবং অপকারিতা
তেজপাতার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। কারণ হজমশক্তি বাড়াতে তেজপাতার জুড়ি মেলা ভার। এটি শরীর থেকে অতিরিক্ত টক্সিন বের করে দেয় এবং শরীরকে আরও ভালোভাবে কাজ করতে সহায়তা করে। তেজপাতায় রয়েছে এমন জৈব যৌগ, যা পেটের অসুখ সারাতে সাহায্য করে। ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (আইবিএস) বা অন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যকারিতার ত্রুটিজনিত সমস্যায় তেজপাতা খুব কার্যকর।
তেজপাতার উপকারিতা
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, টানা ৩০ দিন ১ থেকে ৩ গ্রাম তেজপাতা গ্রহণ করলে রক্তে গ্লুকোজ ও কোলেস্টরেলের পরিমাণ কমে। তেজপাতায় থাকা উপাদান ইনসুলিনের মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে নিয়ন্ত্রণে রাখে।
মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে
তেজপাতার মধ্যে রয়েছে লিনালুল নামক উপাদান। এটি উৎকণ্ঠা কাটাতে, শান্ত থাকতে ও হতাশা দূর করতে সহায়তা করে।
সর্দিকাশি বা ফ্লু এড়াতে কার্যকর
তেজপাতায় থাকা বিভিন্ন অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল শ্বাসযন্ত্রের বিভিন্ন প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে। সর্দিকাশি বা ফ্লু এড়াতে তেজপাতা সেদ্ধ করে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
ব্যথা উপশমে কার্যকর
তেজপাতার অন্যতম গুণ হলো এটি প্রদাহের বিরুদ্ধে কাজ করে। এটি যেকোনো ধরনের মাথাব্যথা উপশমে কার্যকর। তেজপাতায় রয়েছে ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট উপাদান, যা প্রদাহ দূর করে। ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে তেজপাতার এসেনশিয়াল ওয়েল উপকারী।
চুলের বৃদ্ধি ও খুশকি তাড়ায়
খুশকি ও চুল পড়ে যাওয়া নিয়ে বিপাকে আছেন? চুলের যত্নে তেজপাতায় রয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কয়েকটি তেজপাতা গরম পানিতে সিদ্ধ করুন।
কিছুক্ষণ ঠাণ্ডা হতে দিন। এবার এ পানি দিয়ে চুল ও স্কাল্প ধুয়ে ফেলুন। অবশ্যই শ্যাম্পু করার পর এটি করবেন। মাথার ত্বক চুলকাচ্ছে? তেজপাতা বেটে নারিকেল তেলের সঙ্গে মেশান। স্কাল্পে লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।
হজমে সাহায্য করে
কোষ্ঠকাঠিন্য? তেজপাতা আপনার স্বাভাবিক হজমশক্তি ফিরিয়ে আনবে। এটি শরীর থেকে অতিরিক্ত টক্সিন বের করে দেয়। অতিরিক্ত প্রস্রাবের সমস্যা কমায় ও হজম রস তৈরিতে এটি উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে। তেজপাতায় থাকা এনজাইম দ্রুত খাবার ভাঙতে পারে ফলে যারা অন্ত্রের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য তেজপাতা অনেক উপকারী।
হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
তেজপাতায় রয়েছে রুটিন ও ক্যাফেক অ্যাসিড। এ উপাদানগুলো হার্টের দেয়ালকে মজবুত করে ও কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
ব্যথা উপশম করে
তেজপাতা প্রদাহের বিরুদ্ধে কাজ করে। এটি যেকোনো ধরনের মাথা ব্যথা, জয়েন্টের ব্যথা এমনকি বাতের ব্যথা উপশমে কার্যকরী। তেজপাতা ও রেড়ির পাতার (ক্যাস্টর) পেস্ট আক্রান্ত স্থানে ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখলেই ব্যথা কমে যাবে। এছাড়া পাতার তেল কপালে ম্যাসাজ করলে মাথা ব্যথা থাকবে না।
ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করে
কিছু গবেষণায় দেখা যায় তেজপাতা ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করে। এতে ফাইটোনিউট্রিয়ান্স ও ক্যাটচীন উপাদান থাকায় এটি ক্যান্সার কোষকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। একটি গবেষণা অনুযায়ী তেজপাতা ব্রেস্ট ক্যান্সারের বিরুদ্ধেও কাজ করে।
ক্ষত নিরাময় করে
তেজপাতায় অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও মাইক্রোব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকায় এটি ক্ষত সারাতে দারুণভাবে কাজ করে। এটি ক্যান্ডিডার মত ছত্রাক সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে।
গলা খুশখুশ ও কাঁশি
আপনি যদি ঠাণ্ডায় আক্রান্ত হন ও কাঁশির সমস্যায় ভোগেন তাহলে ব্যাকটেরিয়া তাড়াতে এটি আপনাকে চমৎকারভাবে সাহায্য করবে। ৪-৫টি তেজপাতা গরম পানিতে সিদ্ধ করুন। পানি কুসুম ঠাণ্ডা করে নিন। একটি পরিষ্কার কাপড় পানিতে ভিজিয়ে বুক মুছুন। কয়েকবার এটি করুন। আর খেয়াল রাখবেন পানি যেনো খুব বেশি গরম না হয়।
কিডনির পাথরের চিকিৎসায়
একটি গবেষণা অনুযায়ী তেজপাতা শরীরে ইউরিয়ার পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। শরীরে ইউরিয়ার পরিমাণ বেড়ে গেলে এটি কিডনির সমস্যা করে ও অন্যান্য গ্যাসের সমস্যা তৈরি করে।
উদ্বিগ্নতা ও চাপ কমায়
যদি দিনের শেষে আপনার মনমেজাজ ভালো না লাগে তাহলে এক কাপ তেজপাতার চা খেয়ে দেখতে পারেন। এটি আপনার স্নায়ু শান্ত করে ও উদ্বিগ্নতা কমায় এমনকি ভালো ঘুমের জন্যেও উপকারী।
তেজপাতার পুষ্টিগুণ
সাধারণত, লোকেরা স্বাদ দেওয়ার জন্য তেজপাতা ব্যবহার করে খাবার রান্না করে কিন্তু আসলে পাতা খায় না। যাইহোক, তেজপাতা একটি শুকনো, চূর্ণ আকারে বিক্রি করা হয় যা খাওয়া যেতে পারে। তেজপাতা থেকে পুষ্টিগুণ শোষিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে যখন চূর্ণ আকারে রান্নায় ব্যবহার করা হয়।
এক টেবিল চামচ চূর্ণ তেজপাতার মধ্যে রয়েছে:
- ক্যালোরি: ৫.৬
- প্রোটিন: ১ গ্রামের কম
- চর্বি: ১ গ্রামের কম
- কার্বোহাইড্রেট: ১ গ্রাম
- ফাইবার: ১ গ্রামের কম
- চিনি: ১ গ্রামের কম
- ক্যালসিয়াম
- তামা
- আয়রন
- ম্যাগনেসিয়াম
- ম্যাঙ্গানিজ
- ভিটামিন এ
- ভিটামিন বি৬
- ভিটামিন সি
- রিবোফ্লাভিন
- দস্তা
তেজপাতার অপকারিতা
তেজপাতা শরীরকে উষ্ণ করে দেয়। যা মা ও শিশুর জন্য স্বাস্থ্যহানিকর হতে পারে। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় ঘাম, ডায়রিয়া, বেশি প্রস্রাব হওয়ার মতো সমস্যা থাকায় এটি আরও সমস্যা করতে পারে। এছাড়াও, অতিরিক্ত তেজপাতা খাওয়া এড়িয়ে চলুন।