লিভার সিরোসিস থেকে মুক্তির উপায় এবং আদর্শ খাবার

 

লিভার সিরোসিস থেকে মুক্তির উপায়

শরীরের সমস্ত দূষিত বর্জ্য পদার্থ বের করে তাকে সুস্থ রাখাই যকৃৎ বা লিভারের কাজ। আর আমাদের শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই অঙ্গটির মারাত্মক একটি অসুখের নাম হল লিভার সিরোসিস। এই রোগে লিভার পুরোপুরি অকেজো হয়ে পড়ে। অর্থাৎ, লিভার তার স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারায়, যার ফলে বাড়ে মৃত্যুঝুঁকি। প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারান। কিন্তু খুব সহজেই আমরা এই মারাত্মক রোগের হাত থেকে নিজেদের দূরে রাখতে পারি। সামান্য সতর্কতায় লিভার সিরোসিসের ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব।

সিরোসিস মানেই কি মৃত্যু?

লিভার সিরোসিস হলেই যে রোগীর মৃত্যু হবে, তা কিন্তু হয়। এ রোগের আধুনিক চিকিৎসা রয়েছে এবং এর সব কটি বাংলাদেশেই সম্ভব। হেপাটাইটিস বি প্রতিরোধে রয়েছে কার্যকর ভ্যাকসিন। জন্মের পরপর কিংবা ইপিআই শিডিউলে বাচ্চাদের হেপাটাইটিস বির টিকা দেওয়া হয়। হেপাটাইটিস বির টিকা সারা জীবন ধরে সুরক্ষা দিয়ে থাকে। হেপাটাইটিস সি প্রতিরোধে কোনো টিকা নেই। তবে অরক্ষিত যৌন সম্পর্ক পরিহার, একই ক্ষুর বা রেজরে একাধিক ব্যক্তির শেভ না করা, যেকোনো প্রকার মাদকাসক্তি পরিহার, রক্ত পরিসঞ্চালনের আগে যথাযথ পরীক্ষা, চিকিৎসার যন্ত্রপাতি সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত করে অস্ত্রোপচার, দাঁতের চিকিৎসায় জীবাণুমুক্ত সরঞ্জাম ব্যবহারের মাধ্যমে হেপাটাইটিস বি এবং সি থেকে নিরাপদ থাকা সম্ভব।

লিভার সিরোসিস হলে সঠিক চিকিৎসা ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এর জটিলতা রোধ করা যায় এবং একে নিয়েই দীর্ঘদিন বেঁচে থাকা সম্ভব। রাস্তাঘাটে বিক্রি হওয়া দূষিত পানীয়, মাড়াই আখের রস, ব্যবহার হওয়া বরফ, শরবত, কেটে রাখা ফলফলারির মাধ্যমে হেপাটাইটিস এ এবং ই-এর সংক্রমণ হয়। এভাবে জন্ডিসে আক্রান্ত হলে লিভার সিরোসিস আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। এই সমস্যায় আক্রান্ত হলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ সেবন করা যাবে না।

লিভার সিরোসিস থেকে মুক্তির উপায়

চিকিৎসকদের মতে, লিভার এমনই এক অঙ্গ, যার অনেকটা নষ্ট হলেও একটু নিয়ম মানলেই আবার লিভারের স্বাস্থ্য ফেরে । সামান্য সতর্কতায় লিভার সিরোসিসের ঝুঁকিও এড়ানো সম্ভব।

মদ্যপান

লিভার সিরোসিসের অন্যতম কারণ অতিরিক্ত পরিমাণে মদ্যপান। তাই লিভারকে সুস্থ রাখতে অনিয়ন্ত্রিত মদ্যপানে রাশ টানুন আজই।

সহজপাচ্য খাবার

হজমশক্তিকে বাধা দেবে না এমন খাবার খাওয়ার অভ্যাস আছে কি? অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের কবলে পড়ে প্রায় রোজই তৈলাক্ত খাবার, অতিরিক্ত ঝাল-মশলাযুক্ত খাবার গ্রহণ করেন অনেকেই। এতে সিরোসিস অব লিভারের সম্ভাবনা বেড়ে যায় অনেকখানি।   মশলাদার খাবার, জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে বরং আস্থা রাখুন সবুজ শাক-সব্জি ও কম তেল-মশলার খাবারে।

পিঁয়াজ-রসুন

কাঁচা পিঁয়াজ ও রসুন শরীরের টক্সিনকে বার করে দিতে সাহায্য করে। তাই প্রতি দিন মেনুতে কিছুটা কাঁচা পিঁয়াজ ও রসুন রাখুন।

প্রক্রিয়াজাত খাবার

দীর্ঘ দিন সংরক্ষণ করে রাখা যায় এমন খাবারে অভ্যস্ত? তা হলে এই স্বভাব আজই ত্যাগ করুন। বোতল ও টিনজাত খাবারের রমরমা লিভার সিরোসিসের অন্যতম কারণ। প্রিজারভেটিভ বা সংরক্ষণক্ষম খাবার অর্থাৎ সস, বোতলজাত ফলের রস, কোল্ড ড্রিঙ্ক, বেকারিজাত স্ন্যাক্স- এ সব যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন।

ব্যথানাশক

শরীরের কোথাও ব্যথা বাড়লেই তা সহ্য না করে যখন তখন ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়ার অভ্যাস থাকলে তা কিন্তু লিভারের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক।   ব্যথানাশক ওষুধে ব্যবহৃত নানা যৌগ লিভারের কার্যক্ষমতা নষ্ট করে লিভারের ক্ষতিসাধন করে। কখনওই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যথানাশক ওষুধ খাবেন না।

কায়িক শ্রম

সারা দিন কত ক্ষণ হাঁটেন? বা কী কী কায়িক পরিশ্রম করেন? শারীরিক শ্রম শরীরে মেদ জমতে দেয় না। ফলে লিভারে ফ্যাট জমে না ও লিভার সুস্থ থাকে।

সঠিক পরিমাণে পানি

শরীরের চাহিদা অনুযায়ী পানি পানের অভ্যাস করুন। পানি টক্সিন সরিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সঠিক পরিমাণে পানি খান।

লিভার সিরোসিস কি ভাল হয়?

লিভার সিরোসিস একটি মারাত্মক ও অনিরাময়যোগ্য রোগ। লিভারের নানারকম রোগের মধ্যে এটিকে চূড়ান্ত পর্যায়ের একটি রোগ বলে গণ্য করা হয়। এই রোগে আক্রান্ত হলে যকৃতের ট্রান্সপ্লান্ট বা প্রতিস্থাপন ছাড়া পুরোপুরি আরোগ্য হয় না। এই কারণে রোগের চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধের প্রতি গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।

লিভার সিরোসিস রোগীর খাবার

স্যাচুরেটেড ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার বেশি পরিমাণে খেলে লিভারের পক্ষে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে। সময়ের আবর্তনে প্রদাহ সৃষ্টি হয়ে লিভারে সিরোসিস নামক স্কার তৈরি হতে পারে। তাই লিভারে সমস্যা থাকুক কিংবা না থাকুক, চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।

লিভার সিরোসিসের ঔষধ

লিভার সিরোসিস রোগ সম্পর্কে অনেকেরই অল্পবিস্তর জানা আছে। এটা যকৃতের জটিল একটি রোগ। এ রোগ একবার হয়ে গেলে নিরাময় করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। সে ক্ষেত্রে একমাত্র স্থায়ী সমাধান হতে পারে লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট বা যকৃৎ প্রতিস্থাপন।

Next Post Previous Post