পান্তা ভাতের উপকারিতা

পান্তা ভাত হলো ভাত সংরক্ষণের একটি পদ্ধতি। রাতের খাবারের জন্য রান্না করা ভাত বেঁচে গেলে সংরক্ষণের জন্য এই ভাতকে নির্দিষ্ট পরিমাণ পানিতে প্রায় এক রাত ডুবিয়ে রাখলেই তা পান্তায় পরিণত হয়। ভাত পুরোটাই শর্করা। ভাতে পানি দিয়ে রাখলে বিভিন্ন গাজনকারী ব্যাক্টেরিয়া বা ইস্ট এই শর্করা ভেঙ্গে ইথানল ও ল্যাকটিক অ্যাসিড তৈরি করে। ল্যাকটিক অ্যাসিড তৈরির ফলে পান্তা ভাতের অম্লত্ব বেড়ে যায় (pH কমে) তখন পচনকারী ও অন্যান্য ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক ভাত নষ্ট করতে পারে না। 

পান্তাভাত শর্করাসমৃদ্ধ জলীয় খাবার। গরমের দিনে শরীর ঠান্ডা ও সতেজ রাখে। জলীয় খাবার বলে শরীরের পানির অভাব মেটায় এবং শরীরে তাপের ভারসাম্য বজায় রাখে। পান্তা ভাত খেলে শরীর হালকা এবং কাজে বেশি শক্তি পাওয়া যায়, কারণ এটি ফারমেন্টেড বা গাঁজানো খাবার। মানবদেহের জন্য উপকারী বহু ব্যাকটেরিয়া পান্তা ভাতের মধ্যে বেড়ে উঠে।

পেটের পীড়া ভালো হয়, কোষ্ঠবদ্ধতা দূর হয় এবং শরীরে সজীবতা বিরাজ করে এবং শরীরে তাপের ভারসাম্য বজায় থাকে। এ ভাতে পেটের পীড়া ভালো হয়, কোষ্ঠবদ্ধতা দূর হয় এবং শরীরে সজীবতা বিরাজ করে। পাশাপাশি শরীরে তাপের ভারসাম্য বজায় থাকে।

পান্তা ভাতের পুষ্টিগুণ 

পান্তা ভাতে আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়ামের পরিমাণ রান্না করা ভাতের তুলনায় বেশি থাকে। অন্যদিকে সোডিয়ামের পরিমান কম থাকে, যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এছাড়া ভিটামিন -বি ২ , ভিটামিন -বি ১২ অপেক্ষাকৃত বেশি থাকে। পান্তা ভাত শরীরে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ করে শরীরকে পানিশূন্যতা দূর করে। পান্তা গ্যাস্টিক রোগীর জন্যও উপকারী। তীব্র গরমে হিট-স্ট্রোক থেকে রক্ষা করে পান্তা ভাত।

আমেরিকা নিউট্রিশন অ্যাসোসিয়েশন-এর গবেষণা বলছে, ভাত পানিতে ভিজিয়ে রাখলে পাকস্থলী প্যানক্রিয়াটিক অ্যামাইলেজসহ আরও কিছু এনজাইমের কার্যকারিতা বহুগুণ বেড়ে যায়। ফলে পান্তা ভাতের জটিল শর্করাগুলো খুব সহজেই হজম হয়ে যায়। এছাড়া পান্তার আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে।

পান্তা ভাতের উপকারিতা 

  • পান্তা ভাতে আয়রনের পরিমাণ বাড়ে ২১ গুণ যা আয়রন ডিফিশিয়েন্সি কিংবা এনিমিয়া বা রক্তশূন্যতা কমায়।  
  • মাত্র একশগ্রাম পান্তা ভাতে প্রায় তিন ট্রিলিয়ন ভালো ব্যাকটেরিয়া থাকে যাদের প্রোবায়োটিকস বলে। যার কাজ হলো শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে উন্নত করা। 
  •  এতে পটাসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালশিয়ামের পরিমাণ এমনভাবে বাড়ে যা একজন স্বাভাবিক মানুষের দৈনিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য পর্যাপ্ত। 
  •  গরম ভাতে যে পরিমাণ ফ্যাট থাকে পান্তাভাতে তা প্রায় ৬ গুণ কমে যায়। স্লিম থাকার জন্যও পান্তা হেল্প করে। 
  • পান্তা ভাতকে বলা হয় ন্যাচারাল কুলার। শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। 
  • নিয়মিত পান্তা খেলে সবরকম আলসার সেরে যায়। 
  • ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। 
  •  সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- এখন প্রায় অনেকেই নিদ্রাহীনতায় ভোগেন। পান্তা নিদ্রাহীনতা দূর করে। 
  •  নিয়মিত পান্তা খেলে কোলাজেনের পরিমাণ বাড়ে, যা ত্বক টানটান রাখতে অর্থাৎ তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। রূপচর্চার জন্য বাইরের অনেককিছু না মেখে নিয়মিত পান্তা খেলেও চলবে।
  •  সকালে পান্তা সারাদিনের জন্য কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করে।

পান্তা ভাতের অপকারিতা

আসাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় পান্তা ভাতের কোনো খারাপ দিক পাওয়া যায় নি। তবে ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য এই খাবার ক্ষতিকর কীনা সেটা জানতে তারা এখনও কাজ করছেন।

১২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ভাতের ফারমেন্টেশন হলে সেখানে অ্যালকোহলের উপাদান তৈরি হয় এবং সেই পান্তা ভাত খাওয়ার পর শরীর ম্যাজ ম্যাজ করে ও ঘুম পেতে পারে।

এছাড়াও পান্তা ভাত যদি পরিষ্কার পাত্রে বিশুদ্ধ পানি দিয়ে তৈরি করা না হয়, তাহলে সেখানে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া তৈরি হতে পারে। তিনি জানান, সেই ভাত খেলে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়বে।

নবীনতর পূর্বতন