পুঁই শাকের উপকারিতা এবং এর অপকারিতা


পুঁই শাকের উপকারিতা

পুঁই শাকের উপকারিতা অনেক। পুঁইশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকে, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, দেহের বর্জ্য বের করতে সাহায্য করে। পুঁইশাকে থাকা ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি ত্বকের রোগজীবাণু দূর করে, শারীরিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে, সেই সঙ্গে চুল মজবুত করে।

পুঁই শাকের উপকারিতা

ডায়াবেটিস কমায়

পুঁই শাকে এক ধরণের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে, যার নাম লিপোইক অ্যাসিড। দেখা গেছে এই অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রক্তে শর্করার মাত্রা কমায় আর ইনসুলিনের ভারসাম্য বজায় রাখে। আরও প্রমাণিত হয়েছে যে এটি ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি আর অটোনমিক নিউরোপ্যাথি কমায়। অর্থাৎ বলাই যায় যে এই শাক ডায়াবেটিসের দিক থেকে আপনাকে নিশ্চিন্ত রাখতেই পারে।

ক্যানসার প্রতিরোধ করে

আর সব সবুজ সবজির মতো পুঁই শাকে রয়েছে ক্লোরোফিল। গবেষণায় দেখে গিয়েছে, এই ক্লোরোফিল কিন্তু কার্সিনোজেনিক প্রভাব আটকাতে খুব ভালো কাজ দেয়। আর আমরা সবাই জানি যে কার্সিনোজেনিকের প্রভাবেই ক্যানসার হয়। আর এই কার্সিনোজেনিক প্রভাব হয় খুব বেশি মাত্রায় কিছু গ্রিল করলে। আর এতে থাকা ফাইবার পাকস্থলী আর কোলন ক্যানসার প্রতিরোধ করে। তবে পুঁই শাক কিন্তু ক্যানসার দূর করতে বেশ সক্ষম।

অ্যাজমা আটকায়

একটি গবেষণা করা হয়েছিল ৬ থেকে ১৮ বছর বয়সী ৪৩৩ জনের মধ্যে যাদের অ্যাজমা আছে। আর তার সঙ্গে দেখা হয়েছিল ৫৩০ জন মতো শিশুদের যাদের অ্যাজমা নেই। দেখা গেছে, যাদের অ্যাজমা নেই তারা কোনও না কোনও ভাবে পুঁই শাক বেশি খান। আসলে পুঁই শাকে আছে বিটা ক্যারোটিন আর এই বিটা ক্যারোটিনই অ্যাজমা হতে দেয় না সহজে।

ব্লাড প্রেসার কমায়

পুঁই শাক কিন্তু পটাসিয়ামের একটি ভালো উৎস। আমরা জানি পটাশিয়াম ব্লাড প্রেসার কম করায়। পটাশিয়াম শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা ঠিক রাখে। তাই পুঁই শাক কম খাওয়া মানে শরীরে পটাশিয়াম কম আসা আর তার ফলে ব্লাড প্রেসারকে সঙ্গী করা।

হাড় শক্ত করে

আমাদের হাড় শক্ত করতে সাহায্য করে ভিটামিন কে। তাই ভিটামিন কে শরীরে কম প্রবেশ করা মানে হাড়ের মজবুতি কমে যাওয়া। পুঁই শাক ভিটামিন কে’র একটি খুব ভালো উৎস। ভিটামিন কে হাড়ের মেট্রিক্স প্রোটিন উন্নত করে। ক্যালসিয়াম ধারণ ক্ষমতা বাড়ায়। পাশাপাশি, ইউরিনে ক্যালসিয়ামের মাত্রাও কম করে। হাড়ের শক্তি বাড়ানোর জন্য তাই পুঁই শাক খান।

স্বাস্থ্যকর চুল আর ত্বকের জন্য

পুঁই শাকে আছে ভিটামিন এ, যা আমাদের ত্বকের আর স্ক্যাল্পের তেল নিঃসরণকে নিয়ন্ত্রণ করে। ময়েশ্চার ধরে রাখে। অতিরিক্ত তেল বা সিবাম নিঃসরণ হলে ব্রণ হয়। পুঁই শাক যেহেতু এই নিঃসরণ কমায় তাই ব্রণ হয় না। ত্বকের কোষ কোলাজিনের জন্য যে ভিটামিন সি এতো দরকারি, সেই ভিটামিন সি’র উৎস এই পুঁই শাক।

হজমের ক্ষমতা বাড়ায়

আমাদের বাঙালিদের মধ্যে গ্যাস বা অম্বলের মতো সমস্যা তো লেগেই থাকে। কিন্তু পুঁই শাক এই সমস্যা থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারে। এটি হজম ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে আর যেহেতু পুঁই শাকে ফাইবার থাকে তাই কোষ্ঠকাঠিন্য হতে দেয় না। শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করে দেয়। আর যেহেতু খাবার ভালো করে হজম হয় তাই বদহজমের সমস্যা হয় না।

শিশুদের বৃদ্ধিতে

বাড়ন্ত বয়সে শিশুদের যদি নিয়মিত পুঁই শাক খাওয়ানো যায় তাহলে তাদের বৃদ্ধি ভালো হয়। শিশুরা তাদের বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন, মিনারেল, প্রোটিন সবই এই এক পুঁই শাক থেকে পেতে পারে। তাই বাচ্চাদের ছোট থেকেই পুঁই শাক খাওয়ানো অভ্যেস করাতে হবে।

চোখ ভালো রাখে

চোখ আমাদের শরীরের অত্যন্ত সুক্ষ্ম একটি অঙ্গ। এর আলাদা করে যত্ন নেওয়া খুবই দরকার। পুঁই শাক কিন্তু চোখ ভালো রাখতেও বেশ কার্যকরী। পুঁই শাকে আছে বিটা ক্যারোটিন, লুটেইন আর এই সব উপাদান চোখের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে খুবই দরকারী। লুটেইন থাকে ম্যাকুলায় যেটি রেটিনার একটি অংশ আর এটি অতিরিক্ত আলোর প্রভাব থেকে চোখকে ভালো রাখে। মেক্যুলার ডিজেনারেশনের থেকেও চোখকে রক্ষা করে।

এনার্জি বাড়ায়

আজকের দিনে অনেক কাজ করতে হবে আর তার জন্য দরকার এনার্জি। পুঁই শাক কিন্তু ভালো ভাবে এনার্জি বাড়ায়। পুঁই শাকে থাকা ম্যাগনেসিয়াম এই এনার্জি বাড়াতে সাহায্য করে। পুঁই শাক ফোলেটের একটি ভালো উৎস যা খাবারকে এনার্জিতে রূপান্তরিত করে। তাছাড়া পুঁই হল ন্যাচারাল অ্যালকালাইন যা সারাদিন আমাদের এনার্জেটিক রাখে।

পুঁই শাকের অপকারিতা 

পুঁইশাক অক্সালেট সমৃদ্ধ একটি খাবার এটি গ্রহণ করলে শরীরে তরল পদার্থে অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যায়। এর ফলে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তার মধ্যে একটি সমস্যা হচ্ছে পুঁইশাক কিডনি রোগীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। পুইশাকে পিউরিন নামক উপাদান রয়েছে যা অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে কিডনিতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়াও যাদের কিডনি রোগ রয়েছে তারা অবশ্যই পুঁইশাক খাওয়ার পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত ।পুঁইশাকের এই অক্সালেট ও পুউরিন নামক পদার্থ গেঁটেবাত বা বাত ব্যথা রোগীদের জন্য মারাত্বক। আমরা সকলেই জানি ,ইউরিক এসিড বাড়াতে সাহায্য করে পিউরিন। আর এই পিউরিন পুঁইশাকে  ভরপুর মাত্রায় পাওয়া যায়। আপনি যদি না জেনেবুঝে ভরপুর মাত্রায় পুই শাক খেতে থাকেন। তাহলে শরীরে পিউরিনের পরিমাণ বাড়বে। পিউরিনের পরিমাণ বাড়লে ইউরিক অ্যাসিড বাড়বে। 

ইউরিক অ্যাসিড শুধুমাত্র আপনার গেটেবাত বা বাতের সমস্যাকে বাড়াবে তাই নয় পাশাপাশি আপনার কিডনিকে ড্যামেজ ও ধ্বংস করে দেয়ার জন্য দায়ী। তাই যাদের গেঁটেবাত বা গাটের সমস্যা রয়েছে তারা পুঁইশাক খাবেন না। আর যদি খেতেই হয় তাহলে খুবই সীমিত মাত্রায় খাবেন। পুই শাকের অক্সালেট পিত্ত রোগীদের জন্য ভালো নয়। এটি পিত্ত রোগীদের জন্য নানারকম সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এমনকি পিত্তে পাথরের জন্য দায়ী। তাই যাদের পিত্তথলিতে পাথর আছে বা পিত্তের কোন সমস্যায় ভুগছেন তারা পুই শাক খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে একবার কথা বলুন। আর আপনি যদি পিত্তথলির পাথরের সমস্যা না ভুগতে চান তাহলে পুঁইশাক অবশ্যই সীমিত মাত্রায় খেতে হবে। নাহলে অতিরিক্ত মাত্রায় পুইশাক খেতে খেতে একসময় এটি আপনার কিডনি সমস্যা, পীত্বথলির  সমস্যা এবং ইউরিক এসিডের সমস্যা বাড়িয়ে তুলতে পারে। 

Next Post Previous Post