লেবুর রসের কিছু অসাধারণ উপকারিতা যা গবেষণায় প্রমাণিত

লেবুর রসের উপকারিতা

লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ফাইবার এবং বিভিন্ন উপকারী উদ্ভিদ যৌগ রয়েছে। এই উপকারি যৌগ পুষ্টিগুলি আমাদের বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারের জন্য কার্যকর। লেবুর রস ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে এবং আপনার হৃদরোগ, রক্তশূন্যতা, কিডনিতে পাথর, হজম সংক্রান্ত সমস্যা এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে।

লেবুর রসের উপকারিতা

লেবুর রস মিশ্রিত পানি পানীয় হিসেবে চমৎকার। কেবল স্বাদে নয়, গুণেও। বিশেষ করে ভারী খাবার গ্রহণের সময় পানীয় হিসেবে কোলা বা অন্য কিছুর বদলে লেবুপানিই সবচেয়ে ভালো। বিজ্ঞানীরা বলছেন, লেবুর রস মিশ্রিত পানি পাকস্থলী ও অন্ত্রের অন্যান্য অংশ থেকে পাকরস তৈরি ত্বরান্বিত করে। ভারী খাবারের সঙ্গে লেবুপানি পান করলে গ্যাস কম হবে, পেট ফাঁপবে কম। এ ছাড়া এটি ডাইউরেটিক ও ল্যাক্সেটিভ হিসেবেও কাজ করে। অর্থাৎ প্রস্রাব ও মল পরিষ্কার রাখে।

লেবুতে আছে প্রচুর ভিটামিন সি, যা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও উদ্দীপনা জোগায়। এ ছাড়া এর ফ্ল্যাভনয়েড নামের উপাদান যকৃতে চর্বি ও ইনসুলিন রেসিস্ট্যান্স কমায়, রক্তের চর্বি, শর্করা বা ওজন কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। খুব ভালো উপকার পাওয়া যাবে, যদি আপনি হালকা গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে চিনি ছাড়াই পান করেন। 

এটি পেটের গ্যাস যেমন সরিয়ে দেবে, তেমনি দেহের তাপমাত্রা বা থার্মোজেনেসিস সামান্য বাড়িয়ে অতিরিক্ত ক্যালরিটুকু পুড়িয়ে ফেলতে সাহায্য করবে। তবে প্রতিদিন লেবুপানি আপনার দাঁতের এনামেলের জন্য ক্ষতিকর। এ ধরনের পানীয় তাই হয় স্ট্র-এর সাহায্যে পান করুন, অথবা পান করার পর কুলি করে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমানো

ভিটামিন সি সংবহনতন্ত্রের রোগ, স্ট্রোকের ঝুঁকি এবং রক্তচাপ কমাতে পারে। লেবু ভিটামিন সি এর একটি ভাল উৎস। বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি লেবুর রসে প্রায় ১৮.৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি’র পরিমাণ দৈনিক ৬৫ থেকে ৯০ মিলিগ্রাম।

ওজন কমাতে

গবেষণায় দেখা গেছে, লেবুতে পাওয়া যায় পলিফেনল অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। ইঁদুরের ওপর করা পরীক্ষায় দেখা গেছে- এই উপাদানটি স্থূলতা প্রতিরোধ করে ও অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস করে।

কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ

কেউ কেউ কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে করার জন্য প্রতিদিন সকালে লেবু পানি পান করেন। ঘুম থেকে উঠলে উষ্ণ লেবু পানি পান করা পাচনতন্ত্রকে সচল রাখতে সাহায্য করতে পারে। প্রাচীণ আয়ুর্বেদিক শাস্ত্র বলে- লেবুর টক স্বাদ শরীরের অগ্নিকে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করে, যা খাবার আরও সহজে হজম করতে সহায়তা করে এবং ‘টক্সিন’ জমা হওয়া রোধ করতে সাহায্য করে।

ডায়াবেটিস রোধ

ইঁদুরের ওপর করা গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট যৌগগুলো রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ইনসুলিনের ভারসাম্য বজায় রাখে যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত প্রয়োজন। তবে এই বিষয়ে এখনও বিস্তারিত গবেষণা প্রয়োজন।

ত্বক ভাল রাখা

লেবুতে প্রাপ্ত ভিটামিন সি ত্বকের বলিরেখা, বার্ধক্যজনিত শুষ্ক ত্বক এবং সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির প্রভাব কমাতে সাহায্য করতে পারে। ত্বক যদি আর্দ্রতা হারিয়ে শুষ্ক হয়, তাহলে বলিরেখার প্রবণতা দেখা দেয়। সকালে এক গ্লাস লেবুপানি এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে।

মুখের গন্ধ হ্রাস

আপনি কি কখনও রসুনের গন্ধ বা অন্য কোনও তীব্র গন্ধ থেকে মুক্তি পেতে হাতে লেবু ঘষেছেন? রসুন, পিঁয়াজ বা মাছের মতো তীব্র গন্ধযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধের ক্ষেত্রেও একই প্রতিকার প্রযোজ্য হতে পারে। খাবারের পরে এবং সকালে প্রথমে এক গ্লাস লেবু পানি পান করে নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ এড়ানো যেতে পারে। তাছাড়া লেবু লালাগ্রন্থিকে উদ্দীপিত করে। ফলে মুখগহ্বর শুষ্ক হয় না ও ব্যাক্টেরিয়ার দ্বারা সৃষ্ট নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধর আশঙ্কা কমে।

কিডনির পাথর প্রতিরোধ

লেবুতে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড কিডনিতে পাথর প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। সাইট্রেট, সাইট্রিক অ্যাসিডের একটি উপাদান, যা প্রস্রাবের অম্লত্ব হ্রাস করে এবং এমনকি ছোট পাথর ভেঙে ফেলতেও সহায়তা করতে পারে। সেই সঙ্গে পাথর প্রতিরোধ বা ফ্লাশ করার জন্য প্রয়োজনীয় পানিও পাওয়া যায়।

Next Post Previous Post