মেয়েদের ওজন কামানোর উপায়গুলোর মধ্যে নির্দিষ্ট পরিমাণে ঘুম, পরিমিত খাওয়া, সবসময় হাসি-খুশি থাকা, শরীরের যত্ন নেওয়া এবং কিছু ব্যায়াম করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। চেহারা অতিরিক্ত ভারী হয়ে গেলে মেয়েদের সমস্যার শেষ নেই। বন্ধুদের কাছে কিংবা রাস্তাঘাটে হাসির খোরাক হতে হয়।
অতিরিক্ত ওজন মানেই শুধু শারীরিক ভার বহনে বাড়তি ঝামেলা নয়। অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, শারীরিকভাবে ফিট মেয়েদের তুলনায় মোটা মেয়েদের অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা ৬৬ ভাগ বেশি। মেয়েদের অতিরিক্ত ওজনের কারণে শারীরিক-মানসিক সমস্যা, হরমোনজনিত ইত্যাদি নানারকমের সমস্যা দেখা দেয়।
মেয়েদের দ্রুত ওজন কমানোর উপায়
খাওয়া
- মিষ্টি জাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকুন
মিষ্টি জাতীয় খাবারগুলো শরীর ইন্সুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ইন্সুলিন হল শরীরে চর্বি সংরক্ষণ করার প্রধান হরমোন। দেহে ইনসুলিন বেড়ে গেলে হজম প্রক্রিয়া ধীর গতিতে হয়।
- প্রোটিন ও সবজি বেশি খান
দিনের প্রতিবার খাবারে প্রোটিন, ফ্যাট এবং অল্প কার্বোহাইড্রেড যুক্ত সবজি রাখুন। এগুলো আপনাকে সুস্থ, সবল রাখার পাশাপাশি ওজন কমাতে সাহায্য করবে। মাংস, মাছ, সামুদ্রিক খাবার, ডিম, দুধ এ সব খাবারে প্রোটিন থাকে। নিয়মিত এ সব খাবার খান।
অল্প কার্বোহাইড্রেড যুক্ত সবজিগুলোর মধ্যে ব্রোকলি, ফুলকপি, পালংশাক, বাঁধাকপি, শিম, লেটুস, শসা, গাজর, ইত্যাদি সবজি বেশি বেশি খাবেন।
- প্রোটিন এবং ক্যালরি হিসেব করে খান
আপনি যদি কোন নির্দিষ্ট ওজন কমানোর খাদ্য তালিকা অনুসরণ করেন অথবা মিষ্টি জাতীয় এবং কার্বস জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলেন, তাহলে এটা না করলেও চলবে। তবে এটা করলে আপনি ওজন কমানোর প্রতি মনোযোগ রাখতে পারবেন। বাসায় ওজন মাপার যন্ত্র কিনে ফেলুন এবং সপ্তাহে দুইবার মাপুন। এটাও মনোযোগ ধরে রাখতে আপনাকে সহায়তা করবে। দৈনিক আপনার কত ক্যালরি খেতে হবে ইন্টারনেটে এটা হিসেব করার অনেক মাপকযন্ত্র পাবেন। তবে আপনার প্রধান লক্ষ্য রাখুন দিনে ৩০-৫০ গ্রামের বেশি কার্বহাইড্রেড গ্রহণ করবেন না।
- না খেয়ে থাকবেন না
ডায়েট মানেই অনেকেই মনে করেন না খেলেই বোধহয় ওজন কমে যাবে। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। না খেয়ে থাকলে ওজন কমবে না বরং অসুস্থ হয়ে যাবেন। তাই দিনে ৩-৪ বার খেতে হবে। তবে পেটা ভরে খাওয়া যাবে না। আর পরিমাণ মতো জল খেতে হবে।
- সকালে বেশি এবং রাতে কম খান
২০১২ সালে তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে- যারা সকালের তুলনায় রাতে অল্প খায় তাদের ওজন বাড়ার হার অনেক কম। আমরা ঠিক উল্টো করি, তাই না? অনেকে আবার সকালটি না খেয়েই কাটিয়ে দেই। এটা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। সারাদিনের ক্যালরির ৫০ ভাগ সকালের খাবারে খেতে হবে, ৩৬ ভাগ দুপুরে বাকি ১৪ ভাগ রাতে খেতে হবে। এটা আপনার দেহের ইনসুলিনের মাত্রা কমিয়ে দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করবে।
ঘুম
ঘুম মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এটা শরীর, মন, অনুভূতিকে প্রভাবিত করে। সারাদিনে খাওয়া খাবারের পুষ্টিগুণগুলো ঘুমের মধ্যে দেহের প্রয়োজনীয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে গিয়ে তাদের কর্মক্ষম করে। তাই একজন পূর্ণবয়স্ক নারীর দিনে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। ঘুম কম হলে শরীর খারাপ হয়, মন খারাপ থাকে, মাথাব্যাথা হতে পারে, কাজে অনিচ্ছা জাগে, নানা দুশ্চিন্তা এসে ভর করে। এগুলো মেয়েদের ওজন কমানোর জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
ব্যায়াম
ঘরে বসে বা আশেপাশে খোলা মাঠেও ব্যায়াম করতে পারেন। বাইরে হাঁটতে যেতে পারেন এবং ঘরে স্কিপিং করতে পারেন। নিয়মিত এগুলো করলেই ওজন কমতে বাধ্য।
কোন সময় কি খাবেন
ভোর সকালের করণীয়
সকালে ঘুম থেকে উঠে দাঁত ব্রাশ সেরে নিয়ে 40 থেকে 50 মিনিট হাটাহাটি করবেন। সকালবেলা হাঁটাহাঁটি করলে আপনার ওজন এবং পেটের মেদ দ্রুত কমে যাবে এবং হজম শক্তি বাড়বে, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হবে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।
ভোর সকালের নাস্তা
হাঁটাহাঁটির পর একগ্লাস লেবুর ও মধুর পানি খাবেন। এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে 1 চা চামচ মধু এবং একটি লেবুর অর্ধেক অংশ নিয়ে সঠিকভাবে মিশিয়ে নিয়ে পান করবেন। লেবুতে যদি এসিডিটি থাকে তাহলে লেবুর রস কমিয়ে নেবেন। অথবা খালি পেটে না খেয়ে হালকা কিছু খেয়ে তারপর খাবেন। প্রতিদিন সকালে লেবু মধুর পানি পান করলে আপনার শরীরের অতিরিক্ত ওজন দ্রুত কমতে থাকবে, সেইসাথে এই পানীয়টি আপনার ত্বক পরিষ্কার করবে, ব্রণ ওঠা রোধ করবে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করবে।
সকালের খাবার
সকালের নাস্তায় মাঝারি সাইজের গমের আটার রুটি খাবেন। রুটির সাথে এক কাপ রান্না করার সবজি খাবেন অথবা এক কাপ রান্না করা বুটের ডাল খাবেন। ডিম খাবেন একটা। একটা কুসুম ছাড়া সিদ্ধ ডিম খাবেন। আধা কাপ টক দই খাবেন। টক দই পেটের চর্বি কমাতে বিশেষ উপকারী খাবার। মেদ কমানোর পাশাপাশি এটি শরীরের ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং ভিটামিন ডি এর যোগান দেয়। ভিটামিন ডি দাঁত এবং হাড়কে শক্তিশালী করে।
মধ্য সকালের নাস্তা
25 গ্রাম পরিমাণ ভাজা কলাই খাবেন। কলাইতে শর্করা এবং ফ্যাটের পরিমাণ খুবই কম থাকে এবং প্রোটিনের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। তাই ওজন কমাতে এটি বেশ কার্যকরী একটি খামার। এক কাপ পরিমান মৌসুমি সবজির সালাদ খাবেন। অথবা দেড়শ থেকে দুইশ গ্রাম ওজনের একটি কাঁচা শসা খাবেন। সালাদে ক্যালরির পরিমাণ নেই বললেই চলে। এই খাবার আপনার পেট ভরাবে ঠিকই কিন্তু কোন ক্যালোরি দিবেনা। যার ফলে অতিরিক্ত ওজন কমবে এবং শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
দুপুরের খাবার
দুপুরের খাবারে ভাত খাবেন এক কাপ। ভাতের সাথে শাক খাবেন 1 কাপ। 1 কাপ রান্না করা সবুজ অথবা রঙিন পাতাযুক্ত শাক খাবেন। এর সাথে খাবেন সবজিসহ রান্না করা একটা বড় সাইজের মাছের টুকরা। এখানে সবজির পরিমাণ হবে তিন সার্ভিং অর্থাৎ দেড় কাপ এবং মাছের টুকরা ওজন হবে 120 গ্রামের মতো অথবা সবজিসহ রান্না করা ৪ থেকে 5 টুকরা মাংস খাবেন। এখানে মাংসের পরিমাণ হবে 120 গ্রামের মতো। সেই সাথে আরও খাবেন আধাকাপ পরিমাণ এর সবজির সালাদ এবং এক টুকরা লেবু।
বিকেলের নাস্তা
বিকেলের নাস্তায় সিজনাল ফল খাবেন 2 সার্ভিং, 100 থেকে 150 গ্রাম এর মত। আপনার আশেপাশেই ঋতুভেদে যে ফল পাওয়া যায় সেই ফল খাবেন। তবে খেয়াল রাখবেন আপনার ফলের তালিকার যেন তিনভাগের দুইভাগ টকজাতীয় ফল থাকে। বিকেলের নাস্তায় এক কাপ গ্রিন টিও খেতে পারেন। তবে সম্ভব হলে খাবেন না হলে খাবেন না।
রাতের খাবার
রাতের খাবারের রুটি খাবেন একটা একটা মাঝারি সাইজের গমের আটার রুটি খাবেন রুটির সাথে সবজি রান্না করা দুই থেকে তিন টুকরা মাংস খাবেন। অথবা সবজিসহ রান্না করা এক কাপ ছোট মাছের তরকারি খাবেন। অথবা এক কাপ নিরামিষ তরকারি খাবেন।