মুখের ছোট ছোট ব্রণ দূর করার উপায়

মুখের ছোট ছোট ব্রণ দূর করার উপায়

মুখ পরিষ্কার করার পরে ত্বকে আলতোভাবে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। লোমকূপ আবদ্ধ হওয়া এড়াতে তেল বিহীন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উপকারী। ত্বক পরিচর্যার ধাপ নিয়মিত মেনে চলা: ত্বকের ধরন বুঝে ফেইস ওয়াশ, টোনার, ময়েশ্চারাইজার, সানস্ক্রিন ও সিরাম এবং এসেনশল তেল ব্যবহার করতে হবে।

মুখের ছোট ছোট ব্রণ দূর করার উপায়

  • ওমেগা ফ্যাটি এসিড যুক্ত খাবার যেমন বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছ খেতে হবে। কারণ সামুদ্রিক মাছে বিদ্যমান ফ্যাটি এসিড অ্যাকনি সমস্যা সমাধানে কার্যকর।
  • ভিটাক্যারেটিন যুক্ত খাবার যেমন পেপে গাজর খেতে হবে। কারণ এ জাতীয় খাবার ব্রণের দাগ দূর করে।
  • ম্যাগনেশিয়াম যুক্ত খাবার যেমন লাল চাল, লাল আটা, বাদাম ইত্যাদি খেতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। পাশাপাশি তরমুজ, শসা খেতে হবে কারণ শসা ও তরমুজে প্রচুর পরিমাণে থাকে।
  • ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার টমেটো ও কমলা খেতে হবে এগুলো ব্রণের দাগ ও মুখের উজ্জলতা বৃদ্ধি করে থাকে। তাছাড়া গ্রিণ টি ও ভিনেগার ও এক্ষেত্রে খুবই কার্যকর।

মুখে ছোট ছোট ব্রণ কেন হয়?

আমাদের দেহে সেরাসিয়াস নামক গ্রন্থি থাকে। হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে সেরাসিয়াস গ্রন্থির নালির মুখ বন্ধ হয়ে যায়, তখন সেরাস নামক তৈলাক্ত পদার্থের চলাচলে বিঘ্নতা ঘটে। ফলে সেটি ত্বকের মধ্যে ফুলে ওঠে। তখন প্রোপাইনি ব্যক্টেরিয়া ও একিনস নামক জীবাণু তৈলাক্ত পদার্থকে ভেঙে দিয়ে ফ্যাটি এসিড উৎপ্নন্ন করে। আর তখন আমাদের ত্বকে প্রদাহ সৃষ্টি হয় একারণে আমরা ব্রণের মধ্যে ব্যাথা অনুভব করে থাকি।

মুখের ছোট ছোট ব্রণ হওয়ার কারণ

  • বয়সন্ধিকালে টেস্টোস্টেরন ও অ্যান্ডোজেন হরমোনের বৃদ্ধি ও বিভিন্ন হরমোনের ক্রমহ্রাস ঘটতে থাকে। হরমোনের তারতম্য হওয়ার ফলে মুখের ছোট ছোট ব্রণ সমস্যা হয়ে থাকে।
  • স্টরয়েড জাতীয় খাবার খাওয়া ও স্টরয়েড জাতীয় বিভিন্ন ঔষধ সেবন করার ফলে হরমোন দেখা দেয়। এ সকল ঔষধের পার্শ্বপতিক্রিয়া মুখের ছোট ছোট ব্রণ জন্য দায়ী।
  • জিনগত ও বংশগত কারণে হরমোন সমস্যা দেখা দেয়। বাবা মায়ের ব্রণ সমস্যা থাকলে পরবর্তীতে সন্তান্দের হয়ে থাকে।
  • মুখমন্ডলে বিভিন্ন নিম্নমানের প্রসাধনী সামগ্রী ব্যবহার ফলে ব্রণ দেখা দিয়ে থাকে। মহিলা এ ধরনের সামগ্রী ব্যবহার করে ব্রণ সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে।
  • ভাজাপোড়া ও তৈলাক্ত খাবার ও ব্রণের জন্য দায়ী। এসব খাবার ত্বকের তৈলাক্ততা বৃদ্ধি করে এবং মুখের ছোট ছোট ব্রণ সমস্যা বাড়াতে পারে।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হওয়ার ফলে এবং হতাশা দুশ্চিন্তা বেশি করার ফলেও অনেক সময় মুখের ছোট ছোট ব্রণ হয়ে থাকে।
  • তৈলাক্ত ক্রিম ও ফেইশওয়াশ ব্যবহার এ ধরনের মুখের ছোট ছোট ব্রণ জন্য দায়ী।
  • তাছাড়া জন্মনিয়ন্ত্রণ ও বিভিন্ন ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও গর্ভাবস্থার জন্য হালকা অ্যাকনি সমস্যা দেখা দেয়।
  • নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার না করলে ত্বকে ধুলোবালি ও বিভিন্ন জীবাণু দ্বারা সংক্রমন ঘটলে এ ধরণের সমস্যা হয়ে থাকে।
  • ত্বকের তৈলাক্ত বেশি হয়ে থাকলে ব্রণ বেশি হয়ে থাকে।
  • অতিরিক্ত ট্রান্সপারেন্ড জাতীয় খাবার পিম্পল সমস্যার জন্য দায়ী।

ব্রণ সমস্যা  প্রতিকারে  কি কি করণীয়?

  • নিয়মিত ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধৌত করা কিন্তু বেশি পরিমাণে মুখ ধুয়া যাবে না কারণ মুখ বেশি ধুলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে।
  • স্যাসিলিক ও গ্লাইকোলিক এসিড সমৃদ্ধ ফেইশ ওয়াশ ব্যবহার করতে হবে।
  • টকজাতীয় আচার খাওয়া যাবে না এক্ষেত্রে মিষ্টিজাতীয় আচার খাওয়া যাবে।
  • সুগারজাতীয় ট্রানপারেণ্ড সমৃদ্ধ খাবার এবং মশলা ও ঝাল যুক্ত খাবার কম খেতে হবে।
  • ফাস্টফুড, জাংক ফুড, বেশি তেল যুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে। স্বাস্থ্যকর খাবার বেশি  পরিমাণে খেতে হবে।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে এবং দুশ্চিন্তা, মানসিক অবসাদ হতাশা থেকে দূরে থাকতে হবে।
  • ত্বকে ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা ব্যবহার করা। ত্রিফলা অর্থাৎ তিনটি ফলের সমষ্টি আমলকি, হরিতকি ও বিভিতকি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে একটানা তিন মাস খাওয়া যেতে পারে।
  • ব্রণ সমস্যা বেশি হয়ে থাকলে অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • ব্রণ হলে সেখানে হাত লাগানো ও সেটা খুটানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • ত্বকের জন্য ক্ষতিকর কসমেটিকস ও প্রসাধনী ব্যবহার করা যাবে না।
  • তৈলাক্ত ফেইশওয়াশ ও তেল মুখে ব্যবহার করা যাবে না।
  • তাছাড়া গোলাপ জল দিয়ে মুখ ধৌত করা যেতে পারে।

ব্রণের চিকিৎসা ও ঔষধ

ব্রণের চিকিৎসায় সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে লেজার ট্রিটমেন্ট। যাদের এ সমস্যা গুরুতর তাদের জন্য লেজার চিকিৎসা খুব ভালো সমাধান। তাছাড়া হরমোন চিকিৎসা ও বেশ কর্যকর। সাধারণত বয়স বাড়ার সাথে সাথে ব্রণ সমস্যা কমে যেতে থাকে।

হরমোন চিকিৎসায় বিভিন্ন ধরণের ঔষধ ব্যবহৃত হয়ে থাকে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বেনজাইল পার-অক্সাইড, রেটিনয়েড, স্যালিসাইলিক এসিড, অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম। চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত এসব ঔষধ ব্যবহার করবেন না কারণ আপনার স্কিনের শুষ্কতা ও তৈলাক্ততার ধরন বিবেচনা করে ঔষধ নির্বাচন করেন। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যাতীত ও বিভিন্ন হারবাল ঔষধ ক্র‍য় থেকে বিরত থাকবেন।

পরিশেষ, এটি ৯০% লোকের একটি স্বাভাবিক সমস্যা। একটি নির্দিষ্ট সময় পর বয়স বাড়ার সাথে সাথে এ সমস্যা কমে যায়। এটি নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে পর্যাপ্ত ঘুম ও উপরোক্ত খাদ্যাভ্যাস ও কিছু নিয়ম মেনে চলার মাধ্যমে এ থেকে সহজেই পরিত্রান পাওয়া সম্ভব।

Next Post Previous Post