পেটের গ্যাস কমানোর উপায় (প্রাকৃতিক ভাবে)

পেটের গ্যাস কমানোর উপায়

আমাদের সবার কাছেই সবচেয়ে পরিচিত একটি সমস্যা হচ্ছে গ্যাস্ট্রিক বা গ্যাসের সমস্যা। দৈনন্দিন জীবনে খাবারের সামান্য অনিয়ম করলেই অনেকের মুখোমুখি হতে হয় এ সমস্যার। আর এটি হতে হতে একসময়ে বড় আকার ধারণ করে সৃষ্টি করতে পারে আলসারও।

খাওয়ার সময় বা তরল কোনো কিছু পান করার সময় আমাদের শরীরে অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন প্রবেশ করে। আবার আমাদের পরিপাকতন্ত্রে খাদ্য হজম হওয়ার সময় হাইড্রোজেন, মিথেন বা কার্বন-ডাই অক্সাইডের মতো গ্যাস নির্গত হয়ে পেটে জমা হয়। আর এগুলোর কারণেই সৃষ্টি হয় গ্যাস্ট্রিকের।

আবার কিছু উচ্চ ফাইবারযুক্ত ও আঁশযুক্ত খাবার এবং শাকসবজি খেলে সেগুলোর সবটা আমাদের পাকস্থলী হজম করতে পারে না। এর কারণেও পেটে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয়ে থাকে। কিন্তু এ সমস্যার সমাধান আপনি নিজেই করতে পারেন ঘরেই এবং সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়েই।

পেটের গ্যাস কমানোর উপায় 

ব্যায়াম করা

ব্যায়াম করলে শরীর ভালো থাকে এটি আমরা সবাই জানি। কিন্তু এটি আপনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সমাধানেও অনেক কার্যকরী তা হয়তো অনেকেই জানেন না। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা এড়াতে খাওয়ার পর হাঁটার অভ্যাস করুন। এ ছাড়া দড়ি লাফ, দৌড় বা হাঁটা গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা কমাতেও অনেক কার্যকরী।

পানি পান করা

গ্যাসের সমস্যা সমাধানের অনেক বেশি পরিচিত একটি সমাধান হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা। আর এটি করলে তা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমানোর পাশাপাশি আরও অনেক রোগ থেকে মুক্তি দিতেও সহায়তা করবে এটি। এ জন্য নিয়মিত প্রতিদিন অন্তত ছয় থেকে আট গ্লাস পানি পান করতে হবে।

আপেল সিডার ভিনেগার

গ্যাসের সমস্যা দূর করতে অনেকেই আপেল সিডার ভিনেগার খেয়ে থাকেন। আর এটি কার্যকরীও অনেক। এ জন্য খাওয়ার আগে পানি বা চায়ের সঙ্গে এক টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে পান করুন, তা হলেই পাবেন উপকার। এটি নিয়মিত দিনে তিনবার পান করলে অনেক ভালো ফল মেলে।

দারুচিনি

গ্যাসের সমস্যা কমাতে অনেক কার্যকর হচ্ছে দারুচিনি। এ ছাড়া এটি পেটের ব্যথা কমাতেও অনেক ভালো কাজ করে। দারুচিনি পানিতে ফুটিয়ে সেই পানি কুসুম গরম অবস্থায় খেতে পারেন। অথবা চায়ে বা দুধে দারুচিনির গুঁড়া মিশিয়ে পান করতে পারেন। এতেই পাবেন উপকার।

লেবু

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সমাধান করতে লেবুপানি বা লেবু চা পান করলে অনেক ভালো ফল পাওয়া যায়। এর সঙ্গে সামান্য পরিমাণ লবণ ও জিরা গুঁড়া মিশিয়ে খেতে পারেন।

পুদিনাপাতা

পুদিনাপাতা গ্যাসের সমস্যা সমাধানে অনেক বেশি কার্যকরী। এর পাশাপাশি এটি আপনার বমি ভাবও দূর করতে পারে। কিছু পরিমাণে পুদিনাপাতা মুখে নিয়ে ভালো করে চিবালেই কমে যাবে গ্যাসের সমস্যা।

আদা

পেটের গ্যাস সমস্যা সমাধানের জন্য অনেক ভালো প্রাকৃতিক উপাদান হচ্ছে আদা। আদা দিয়ে ফোটানো পানি বা চায়ে আদা খেতে পারেন। আরও ভালো ফল পেতে এর সঙ্গে লেবুর রস বা মধু মিশিয়ে নিতে পারেন। এটি আপনার গ্যাসের সমস্যা দূর করার পাশাপাশি বদহজমও দূর করতে সাহায্য করবে।

শসা  

শসা পেট ঠাণ্ডা রাখতে অনেক বেশি কার্যকরী খাদ্য। এতে রয়েছে ফ্লেভানয়েড ও অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা পেটে গ্যাসের উদ্রেক কমায়।

দই  

দই আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এতে করে দ্রুত খাবার হজম হয়, ফলে পেটে গ্যাস হওয়ার ঝামেলা দূর হয়।

পেঁপে  

পেঁপেতে রয়েছে পাপায়া নামক এনজাইম যা হজমশক্তি বাড়ায়। নিয়মিত পেঁপে খাওয়ার অভ্যাস করলেও গ্যাসের সমস্যা কমে।

কলা ও কমলা  

কলা ও কমলা পাকস্থলির অতিরিক্ত সোডিয়াম দূর করতে সহায়তা করে। এতে করে গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এ ছাড়াও কলার সলুবল ফাইবারের কারণে কলা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ক্ষমতা রাখে। সারাদিনে অন্তত দুটি কলা খান। পেট পরিষ্কার রাখতে কলার জুড়ি মেলা ভার।

ঠাণ্ডা দুধ  

পাকস্থলির গ্যাসট্রিক এসিডকে নিয়ন্ত্রণ করে অ্যাসিডিটি থেকে মুক্তি দেয় ঠাণ্ডা দুধ। এক গ্লাস ঠাণ্ডা দুধ পান করলে অ্যাসিডিটি দূরে থাকে।

দারুচিনি  

হজমের জন্য খুবই ভালো। এক গ্লাস পানিতে আধ চামচ দারুচিনির গুঁড়ো দিয়ে ফুটিয়ে দিনে ২ থেকে ৩ বার খেলে গ্যাস দূরে থাকবে।

জিরা  

জিরা পেটের গ্যাস, বমি, পায়খানা, রক্তবিকার প্রভৃতিতে অত্যন্ত ফলপ্রদ। জ্বর হলে ৫০ গ্রাম জিরা আখের গুড়ের মধ্যে ভালো করে মিশিয়ে ১০ গ্রাম করে পাঁচটি বড়ি তৈরি করতে হবে। দিনে তিনবার এর একটি করে বড়ি খেলে ঘাম দিয়ে জ্বর সেরে যাবে।

লবঙ্গ  

২/৩টি লবঙ্গ মুখে দিয়ে চুষলে একদিকে বুক জ্বালা, বমিবমিভাব, গ্যাস দূর হয়। সঙ্গে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়।

এলাচ  

লবঙ্গের মতো এলাচ গুঁড়ো খেলে অম্বল দূরে থাকে।

মৌরির পানি  

মৌরি ভিজিয়ে সেই পানি খেলে গ্যাস থাকে না।

এ ছাড়াও খাবারে সরষে যোগ করুন: সরষে গ্যাস সারাতে করতে সাহায্য করে। বিভিন্ন খাবারের সাথে সরষে যোগ করা হয় যাতে সেইসব খাবার পেটে গ্যাস সৃষ্টি করতে না পারে। নজর রাখতে হবে নিজের খাওয়া-দাওয়ার প্রতি। জেনে নিতে হবে কোনটি খাওয়া উচিত হবে কোনটি হবে না।

Next Post Previous Post