দাঁতের কালো দাগ দূর করার উপায়
দাঁত সৌন্দর্যের একটি অংশ। সুন্দর দাঁত মানেই সুন্দর হাসি। আর এই সুন্দর দাঁত কে না চায়। কিন্তু আমাদের কিছু বদ অভ্যাসের কারণে সুন্দর দাঁত পরিণত হয় অসুন্দর ও নোংরাতে। মাড়ি থেকে রক্ত পরা থেকে শুরু করে, দাঁত কালচে হয়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যায় ভুগতে হয়।
দাঁতের কালো দাগ দূর করার উপায়
ধূমপান
ধূমপান দাঁতকে কালো করতে পারে। যারা সিগারেট খান তাদের ঠোঁট এবং মাড়ির কালোভাবের সমস্যাও হতে পারে। এই ধূমপানের আসক্তি হাসির সৌন্দর্য নষ্ট করতে পারে। কখনো কখনো পুরো কালো হওয়ার পরিবর্তে দাঁতে কয়েকটি গাঢ় দাগ দেখা যায়। এগুলো মুখের ক্যান্সারের প্রথম লক্ষণও হতে পারে। তাই যদি এমন কোনো চিহ্ন দেখেন তবে অবিলম্বে যত্নবান হন।
বেশি পরিমাণে মেলানিন জমে থাকলে
মেলানিন হল এক ধরণের উপাদান যা ত্বককে প্রাকৃতিক করে তোলে এবং যা ত্বকের সুরকে গভীর করে। সুতরাং আপনার ত্বক যদি কালো হয় তবে আপনার দাঁত গোলাপী নয়, হালকা কালো হয়। তবে দাঁতে যদি কেবল কয়েকটি কালো দাগ দেখা দেয় তবে আপনার অবশ্যই ডাক্তার দেখাতে হবে। কারণ এটি স্বাভাবিক রোগ নয়।
কিছু ওষুধ ব্যবহার করে
গবেষণা পরামর্শ দেয় যে, কিছু ওষুধ যেমন- অ্যান্টি-ডিপ্রেশনস, ম্যালেরিয়ার ওষুধ ও অ্যান্টিবায়োটিকগুলো দাঁতকে কালো করে দেয়। যদি দাঁতে কালো দাগ দেখতে পান এবং আপনি এরকম কোনো ওষুধ খাচ্ছেন যা আপনার দাঁত কালো করে দিচ্ছে, তবে ডাক্তারকে এ সম্পর্কে বলা উচিত। আর সঠিক পরামর্শ নেয়া উচিত।
জিঙ্গিভাইটিসের কারণে
দাঁতের একটি বিশেষ রোগ রয়েছে, যাকে অ্যালসারেটিভ জিঙ্গিভাইটিস বলা হয়। এটি এক ধরনের সংক্রমণ, যার কারণে মাড়ির ব্যথা, জ্বর এবং দুর্গন্ধের সমস্যা হতে পারে। এই সংক্রমণের কারণে মাড়ির টিস্যু মারা যেতে পারে। যার কারণে তাদের রঙ কালো হতে পারে। আপনার যদি জিঞ্জিভাইটিসের সমস্যা হয় তবে এটি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিত্সা করা খুব জরুরি। অন্যথায় এটি দাঁতকে চিরকালের জন্য কালো করে তুলতে পারে।
লবণ
দাঁত পরিষ্কারের জন্য লবণ বেশ পরিচিত। লেবুর খোসায় এক চিমটি লবণ দিয়ে তা দাঁতে ঘষুন, এতে দাঁতের দাগ দূর হয়ে যাবে। লেবুতে ভিটামিন সি রয়েছে এবং লবণ ময়লা পরিষ্কার করে।
বেকিং সোডা
দাঁতের দাগ দূর করতে বেকিং সোডা বেশ কার্যকরী। এক চা চামচ বেকিং সোডার সঙ্গে একটি পাতিলেবুর অর্ধেকটার রস মেশান। কিছুক্ষণ পরেই দেখবেন মিশ্রণটির আকার ঘন তরলের মতো হয়েছে। এবার এই তরল আঙুলে করে তুলে দাঁতের উপরে শুধু লাগিয়ে দিন, ঘষার প্রয়োজন নেই। মিনিট তিনেক পরে কুলকুচি করে মুখ ধুয়ে ফেলুন, দাঁতের দাগ দূর হবে।
হলুদ
হলুদের সঙ্গে সরিষার তেল এবং লবণ মিশিয়ে তা ব্রাশের মতো দাঁতে ঘষলে দাঁত পরিষ্কার হয়। দাঁতের দাগ দূর করার জন্য এই পদ্ধতি বেছে নিতে পারেন।
পোড়া কাঠকয়লা
আগে অনেকেই দাঁত পরিষ্কারের কাজে পোড়া কাঠকয়লা ব্যবহার করতেন। এই পদ্ধতি কাজে লাগাতে পারেন আপনিও। পোড়া কাঠকয়লা বা ঘুঁটের ছাই নিয়ে ভালো করে হাতে পিষে নিজের আঙ্গুলের সাহায্যে দাঁতে ঘষুন। দাঁত পরিষ্কার হবে।
গাজর
দাঁতের দাগ দূর করতে সাহায্য করে গাজর। কারণ এতে উপস্থিত ফাইবার দাঁত পুরোপুরি পরিষ্কার করে দেয়। এটি দাঁতের কোণার ময়লা দ্রুত দূর করতে সহায়তা করে। দাঁত পরিষ্কার রাখতে নিয়মিত গাজর খাওয়ার অভ্যাস করুন।।
লবণ ও সরিষার তেল
লবণের মধ্যে ২-৩ ফোঁটা সরিষার তেল মিশিয়েও দাঁত পরিষ্কার করতে পারেন, এতে আপনার দাঁত ঝকঝক করবে।
প্রতিকার
১. প্রতিদিন সকালের নাস্তার পর, এবং রাত্রে ঘুমাবার আগে দাঁত ব্রাশ করুন। দিনে মাত্র একবার দাঁতব্রাশ করলে তা অবশ্যই রাত্রে ঘুমাবার আগে। দেড় থেকে দুমিনিট দাঁত ব্রাশ করা শ্রেয়, এর বেশি বা কম নয়।
২. ফ্লস দিয়ে দাঁতের ফাঁকার মধ্যে জমে থাকা ময়লা পরিস্কার করতে পারেন। যেকোনো মিষ্টি জাতীয় খাবার, চকলেট, চুইংগাম, কেক, ফাস্টফুড খাবার পর অবশ্যই পানি দিয়ে ভালো ভাবে কুলকুচি করবেন।
৩. মাউথওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন, তবে টানা ব্যবহার করবেন না, ৪/৫ দিন ব্যবহারের পর আবার ৪/৫ দিন ব্যবহার বাদ দিন। অতিরিক্ত ফ্লুরাইড ব্যবহার করে এমন টুথপেষ্ট লম্বা সময় ব্যবহার করবেন না, এতে আপনার দাঁতে সাদা দাগ পড়াসহ ভেঙে যেতে পারে।
৪. সঠিক পদ্ধতিতে দাঁত ব্রাশ করবার নিয়মটি আপনার দাঁতের ডাক্তারের কাছ থেকে ভালোভাবে শিখে নিন। দাঁতে সমস্যা থাকুক চাই না থাকুক, বছরে অন্তত ২/১ বার দন্ত চিকিৎসককে দেখানো উচিত।