কাঁচা হলুদ দিয়ে দুধ খাওয়ার উপকারিতা

কাঁচা হলুদ দিয়ে দুধ খাওয়ার উপকারিতা

কাঁচা হলুদ দিয়ে দুধ খাওয়ার উপকারিতা অনেক। কারণ এর অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ভাইরাল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য, শরীরকে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। সর্দি-কাশি ও ফ্লু থেকে বাঁচতে অনেক ডাক্তার প্রতিদিন এক গ্লাস গরম দুধে এক চা চামচ হলুদ মেশানোর পরামর্শ দেন। হলুদে থাকা কারকিউমিন ব্যথা কমাতে, জয়েন্টের কার্যকারিতা উন্নত করতে, অত্যন্ত কার্যকর।

কাঁচা হলুদ দিয়ে দুধ খাওয়ার উপকারিতা

অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ

হলুধ দুধে কারকিউমিন থাকে যেটি হলুদে থাকা একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। আর এটির কারণে তা আপনার কোষের ক্ষতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে ও শরীরকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। এ ছাড়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্টপূর্ণ খাবারগুলো আপনার সংক্রমণ ও রোগের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে।

জয়েন্টের ব্যথা কমায়

হলুদ দুধে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য থাকে। আর এ কারণে এটি অস্টিওআর্থারাইটিস ও রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস থেকে জয়েন্টের ব্যথা কমাতে সহায়তা করতে পারে।

মস্তিষ্কের কার্যকরিতা উন্নত করে

হলুধ দুধে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্যেও অনেক উপকারি। এতে থাকা কারকিউমিন মস্তিষ্ক থেকে প্রাপ্ত নিউরোট্রফিক ফ্যাক্টর (বিডিএনএফ) এর মাত্রা বাড়াতে পারে। আর এ কারণে এটি আপনার মস্তিষ্ককে নতুন সংযোগ তৈরি করতে সাহায্য করে এবং মস্তিষ্কের কোষের বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।

মেজাজ ভালো রাখে

হলুদ দুধ মস্তিষ্কের উন্নতি করে মেজাজ ভালো রাখতেও অনেক উপকারী। এতে থাকা কারকিউমিন নিউরোট্রফিক ফ্যাক্টর (বিডিএনএফ) এর মাত্রা বাড়াতে পারে বলে তা বিষন্নতার লক্ষণ হ্রাস করে বলে মিলেছে গবেষণায়।

হৃদরোগে উপকারী

সারা বিশ্বেই এখন অন্যতম একটি মৃত্যুর কারণ হয়ে উঠেছে হৃদরোগ। আর হলুদ দুধ আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করতে পারে। এতে হলুদ মেশানোর কারণে তাতে থাকা কারকিউমিন আপনার রক্তনালীর আস্তরণের কার্যকারিতা উন্নত করতে পারে যা এন্ডোথেলিয়াল ফাংশন হিসাবেও পরিচিত। আর সঠিক এন্ডোথেলিয়াল ফাংশন হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে

হলুদ দুধ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তুলতে দুর্দান্ত সহায়ক। এর অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ভাইরাল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য, শরীরকে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। সর্দি-কাশি ও ফ্লু থেকে বাঁচতে অনেক ডাক্তার প্রতিদিন এক গ্লাস গরম দুধে এক চা চামচ হলুদ মেশানোর পরামর্শ দেন।

হাড় ভালো রাখে 

হলুদে থাকা কারকিউমিন ব্যথা কমাতে, জয়েন্টের কার্যকারিতা উন্নত করতে, অত্যন্ত কার্যকর। এটি হাড়ের টিস্যুগুলোকে রক্ষা করে এবং হাড়ের ক্ষয় রোধ করে। তাছাড়া, দুধ ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, প্রোটিন, ভিটামিন-কে এবং ভিটামিন-ডি এর দুর্দান্ত উৎস, যা হাড়কে শক্তিশালী করে তোলে এবং সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। তাই দুধ পান করলে ফ্র্যাকচার এবং অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।

কোষের ক্ষতির বিরুদ্ধে লড়াই

হলুদ দুধ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ একটি পানীয়। হলুদে কারকিউমিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বর্তমান। তাছাড়া দুধও শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। এটি কোষের যে কোনো ধরনের ক্ষতির বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং শরীরকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করতেও সহায়তা করে। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বিভিন্ন রোগ ও সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতেও সহায়তা করে।

রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি

হলুদ দুধ রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করতে অত্যন্ত সহায়ক। এটি লিম্ফ্যাটিক সিস্টেম এবং রক্তনালী পরিষ্কার করে। তাই, হলুদ দুধ রক্ত পরিশোধক হিসেবেও কাজ করে।

হজমের সমস্যা দূর করে

হলুদের দুধে আন্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য বর্তমান, যা বিভিন্ন ধরনের হজমের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। গ্যাস, পেট ফুলে যাওয়া, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ইনফেকশন, ডায়রিয়া এবং পেটের আলসারের মতো বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধ করতে হলুদ দুধ অত্যন্ত কার্যকরী।

প্রজনন ক্ষমতা উন্নত করে 

হলুদের দুধে অ্যান্টি-স্প্যাসমোডিক বৈশিষ্ট্যও বর্তমান, যা মাসিক চক্রের সময় হওয়া ব্যথা দূর করতে সহায়তা করে। এটি মাসিক চক্রকে স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রেও অত্যন্ত সহায়ক। নারীদের হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, এন্ডোমেট্রিওসিস, লিউকোরিয়া অথবা ফাইব্রয়েডের সমস্যা দূর করতে এবং প্রজনন স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে, হলুদ দুধ দুর্দান্ত কার্যকর।

ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই

গবেষণায় দেখা গেছে, হলুদে থাকা কারকিউমিন ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করে, ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে। হলুদ দুধ ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতিদিন পান করলে, এটি ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি বন্ধ করতেও সহায়তা করে।

হলুদ-দুধ তৈরির উপায়

অনেকেই হলুদ-দুধ বানানোর সময় একটি পাত্রে দুধের সঙ্গে হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে গরম করে পান করেন। কিন্তু এভাবে হলুদ-দুধ তৈরি করা হলে তাতে পূর্ণ পুষ্টি পাওয়া যায় না। ইনস্টাগ্রামে এক পোস্টে এমনটাই জানিয়েছেন মুনমুন গানেরিওয়াল নামের একজন পুষ্টিবিদ। একটি ভিডিও পোস্ট করে তিনি হলুদ-দুধ তৈরির সঠিক উপায় সম্পর্কে জানিয়েছেন-

একটি পাত্র চুলায় বসান, তাতে কিছুটা ঘি দিন। এবার এতে হলুদের গুঁড়া দিন। অল্প আঁচে কয়েক সেকেন্ড রাখুন। এরপর এতে এক চিমটি গোলমরিচ, জায়ফল গুঁড়া এবং দারুচিনি গুঁড়া মিশিয়ে নিন। গ্যাস বন্ধ করে এক কাপ গরম দুধ যোগ করুন এবং স্বাদ অনুযায়ী চিনি দিয়ে পান করুন।

পুষ্টিবিদ মুনমুন গানেরিওয়ালের মতে, হলুদের গুঁড়া কখনোই হলুদের মতো কার্যকরী নয়, কারণ বাজারে পাওয়া হলুদের গুঁড়া ভেজাল হতে পারে। হলুদ-দুধে ঘি ব্যবহার করলে হলুদের সক্রিয় যৌগগুলো ঘিতে ভালোভাবে শোষিত হয়। সেই দুধ সম্পূর্ণ পুষ্টিকর হয়ে ওঠে। হলুদ-দুধে গোলমরিচ যোগ করা হলে হলুদে পাওয়া কারকিউমিনের প্রভাব বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।

হেলথ লাইনের প্রতিবেদনে হলুদ-দুধ তৈরির আরেকটি উপায় দেখা গেছে। এটিও স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। হলুদ-দুধ তৈরির জন্য যেসব উপকরণ লাগবে- ১/২ ইঞ্চি আদা কুচি করে কাটা, ১/২ টেবিল চামচ হলুদের গুঁড়া অথবা ১ ইঞ্চি হলুদ টুকরো, ১ কাপ দুধ, ১ টেবিল চামচ মধু।

একটি পাত্রে মধু ব্যতীত বাকি উপকরণগুলো প্রায় ২০ মিনিট চুলায় অল্প আঁচে ফুটান। এরপর একটি কাপের মধ্যে ঢেলে ১৫ মিনিট পর তাতে মধু দিয়ে পান করুন স্বাস্থ্যকর হলুদ-দুধ।

Next Post Previous Post