কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা

কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা

কাঁচা হলুদ হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। কাচা হলুদ বদ হজম ও বুক জ্বালা প্রতিরোধ করতে পারে। কাঁচা হলুদ বাওয়েল সিনড্রোমের মতো উপসর্গ থেকে মুক্তি দিতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে কাচা হলুদ এর ব্যাবহার পেটের আলসার ও জ্বালা নিরাময়েও সাহায্য করতে পারে। 

কাঁচা হলুদের উপকারিতা

ডায়াবেটিস কমায় 

একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত সকালে উঠে কাঁচা হলুদ খেলে দেহের অন্দরে এমন কিছু উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যার প্রভাবে ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার সুযোগই পায় না।  

ক্ষত সারায় 

কাঁচা হলুদে উপস্থিত কার্কিউমিন এবং আরও নানা সব অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান যে কোনো ধরনের ক্ষতের যন্ত্রণা কমায়। এটা আঘাত সারাতেও দারুণভাবে কাজ করে। এ কারণেই তো ছোট বাচ্চাদের নিয়মিত কাঁচা হলুদ খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। 

এছাড়া ক্ষতস্থানে অল্প পরিমাণে হলুদ বেঁটে লাগিয়ে দিলেও কিন্তু সমান উপকার পাওয়া যায়। 

দেহের অন্দরে ইনফ্লেমেশনের মাত্রা কমায় 

দেহের অন্দরে প্রদাহের মাত্রা বাড়তে শুরু করলে শরীরে প্রতিটি অঙ্গের কর্মক্ষমতা কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে নানান রোগ। তাই তো নিয়মিত হলুদ খাওয়া উচিত। কারণ এই প্রাকৃতিক উপাদানটিতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, যা প্রদাহ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

মাথা যন্ত্রণা সারায় 

এবার থেকে মাথা যন্ত্রণা হলেই এক কাপ হলুদ মেশানো দুধ খেয়ে নেবেন। দেখবেন কষ্ট কমেগেছে। হলুদের অন্দরে থাকা কার্কিউমিন এবং অ্যান্টি ইনফ্লেমেটারি উপাদান শরীরের অন্দরে প্রদাহ কমায়। ফলে মাথা যন্ত্রণা কমতে সময় লাগে না। 

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে 

ওয়েদার পরিবর্তনের সময় আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পরে। এই কারণেই এই সময় নিয়মিত এক গ্লাস দুধে কয়েক চামচ হলুদ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। আসলে এই পানীয়টিতে উপস্থিত একাধিক উপকারি উপাদান, ইমিউনিটিকে মারাত্মক বাড়িয়ে দেয়। ফলে কোনও রোগই ধারে কাছে আসতে পারে না। 

ওজন নিয়ন্ত্রণ করে 

বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত হলুদ খাওয়া শুরু করলে শরীরে বিশেষ কিছু উপাদানের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। এর ফলে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে। আর একবার মেটাবলিজম রেট বেড়ে গেলে স্বাভাবিকভাবেই ওজন হ্রাসের প্রক্রিয়াও ত্বরান্বিত হয়।  

হলুদে কার্কিউমিন নামে একটি উপাদান থাকে, যা শরীরে উপস্থিত ফ্যাট সেলেদের গলানোর মধ্যে দিয়ে অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেলতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। 

শরীর থেকে টক্সিক উপাদান বের করে 

শরীর ডিটক্সিফাই করতে হলুদ বিশেষ ভূমিকা পালন করে।  এ প্রকৃতিক উপাদানটির মধ্যে থাকা কার্কিউমিন, রক্তে উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিক উপাদান বের করে দেয়। ফলে ব্লাড ভেসেলের ক্ষতির আশঙ্কা হ্রাস পায়। 

লিভারে ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় 

লিভারকে চাঙ্গা এবং কর্মক্ষম রাখতে হলুদের কোনো বিকল্প নেই। কারণ এর মধ্যে থাকা কার্কিউমিন নামক উপাদানটি লিভারের কর্মক্ষমতা এতটা বাড়িয়ে দেয় যে কোনও ধরনের লিভারের রোগই ধারে কাছে আসতে পারে না। এমনকি ফ্যটি লিভারের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও কমে। 

হাঁচি-কাশি কমায় 

হলুদে উপস্থিত অ্যান্টি-ভাইরাল এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রপাটিজ  নানাবিধ সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমায়। এর মধ্যে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রপাটিজ রেসপিরেটারি ট্রাক্ট ইনফেকশন এবং সর্দি-কাশির প্রকোপ কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এ কারণেই বছরের এই একটা সময় বাচ্চাদের নিয়মিত হলুদ খাওয়াতে পরামর্শ দেয়া হয়।  বিশেষত রাতে ঘুমতে যাওয়ার আগে। 

পিরিয়ডের কষ্ট দূর হয়

মাসের এই বিশেষ সময়ে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে যদি অল্প করে হলুদ খেয়ে নেয়া যায়, তাহলে কিন্তু দারুণ উপকার মেলে। কারণ এই প্রাকৃতিক উপাদানটিতে উপস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান পিরিয়োড সংক্রান্ত কষ্ট কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায়

নিয়মিত হলুদ মেশানো দুধ খেলে ত্বকের অন্দরে থাকা টক্সিক উপাদান বেরিয়ে যায়। সেই সঙ্গে কোলাজেনের উৎপাদন বেড়ে যায়। ফলে ত্বক এত মাত্রায় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে যে বলি রেখা কমতে শুরু করে। 

হজম ক্ষমতা বাড়ে 

একাধিক স্টাডিতে দেখা গেছে নিয়মিত হলুদ খাওয়া শুরু করলে হজমে সহায়ক পাচক রসের ক্ষরণ বেড়ে যায়। ফলে বদহজমের আশঙ্কা যেমন কমে। সেই সঙ্গে গ্যাস-অম্বল এবং অ্যাসিড রিফ্লাক্সের মতো সমস্যা কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। 

ব্রণ কমায়

হলুদ মিশ্রিত দুধ পানে ব্রণ, অ্যাকনে এবং কালো ছোপের মতো সমস্যাও কমতে শুরু করে। এক কথায় শীতকালেও যদি ত্বকের সৌন্দর্য ধরে রাখতে চান, তাহলে আজ থেকেই হলুদ দুধ খাওয়া শুরু করুন।  বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে অ্যাকজিমার মতো ত্বকের রোগের চিকিৎসাতেও হল দুধ বেশ কাজে আসে। 

কাঁচা হলুদের অপকারিতা

কাঁচা হলুদ পছন্দসই নিরাপদ যখন মুখ দ্বারা নেওয়া হয় বা 8 মাস পর্যন্ত যথাযথভাবে ত্বকে প্রয়োগ করা হয়। কাঁচা হলুদ সম্ভাব্য নিরাপদ যখন এটি স্বল্পমেয়াদে এনিমা বা মাউথওয়াশ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। হলুদ সাধারণত উল্লেখযোগ্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না; যাইহোক, কিছু লোক পেট খারাপ, বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা, বা ডায়রিয়া অনুভব করতে পারে।

এক প্রতিবেদনে, একজন ব্যক্তি যিনি খুব বেশি পরিমাণে কাঁচা হলুদ গ্রহণ করেন, প্রতিদিন 1500 মিলিগ্রামের বেশি, তিনি বিপজ্জনক হার্টের ছন্দ অনুভব করেন। যাইহোক, এটা স্পষ্ট নয় যে কাঁচা হলুদ এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার প্রকৃত কারণ ছিল কিনা। যতক্ষণ না জানা যায় ততক্ষণ কাঁচা হলুদ বেশি মাত্রায় গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন।

Next Post Previous Post