Benefits of Ashwagandha


অশ্বগন্ধা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারি। কেননা অশ্বগন্ধায় রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের দারুণ সব উপাদান যা আমাদের শরীরকে তারাতাড়ি বার্ধক্য হতে দেয় না। তাছাড়া ত্বকের জন্য বেশ উপকারী অশ্বগন্ধা। অশ্বগন্ধা চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে এবং চুলকে উজ্জ্বল রাখতেও সাহায্য করে। আমাদের আজকের এই আলোচনায় অশ্বগন্ধা সম্পর্কে বিস্তারিত সব তথ্য উঠে আসবে।

অশ্বগন্ধার উপকারিতা 

অশ্বগন্ধার অনেক ধরনের উপকার থাকার কারণ হলো অশ্বগন্ধায় একধরনের ফাইটোকেমিক্যাল থাকে যা বিভিন্ন গবেষণার রিপোর্টে এটি উঠে এসেছে। আবার এটাও শোনা জায় যে সঠিক পরিমাণে অশ্বগন্ধা ক্যান্সারের ক্ষেত্রেও বেশ কার্যকরী। 

অশ্বগন্ধা কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে 

আয়ুর্বেদ বিশ্বাস অনুযায়ী এটি বলা চলে যে, অশ্বগন্ধা শরীরের খারাপ কলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে পেশির শক্তি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

অশ্বগন্ধা অনিদ্রা দূর করতে পারে 

যাদের ঘুম নিয়ে অনেক সমস্যা হয়। নিয়মিত ভালো ঘুম হয় না। দীর্ঘ দিন ধরে অনিদ্রায় আছেন তাদের জন্য অশ্বগন্ধা হতে পারে ভালো প্রতিষেধক। অশ্বগন্ধা শরীরের ক্লান্তি দূর করে স্নায়ুকে আরাম প্রদান করে। আর স্নায়ু যখন আরামে থাকবে তখন আপনার ঘুমও অনেক ভালো হবে। 

অশ্বগন্ধা যৌন ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে 

বহুকাল আগে থেকেই ছেলেদের যৌন সমস্যা দূর করতে অশ্বগন্ধার ব্যবহার হয়ে আসছে। এখন এটি প্রমাণিত যে, অশ্বগন্ধা শরীরের টেস্টোস্টেরন ও প্রোজেস্টেনের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পারে। ফলে যৌন মিলনের ইচ্ছা অনেক বেড়ে যায়। বেশ কিছু গবেষণা থেকে জানা যায় যে, এটি কামশক্তি ও বীর্যের ঘনত্ব ও গুণগত মান বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। 

অশ্বগন্ধা ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে 

অশ্বগন্ধার পাতা ও মূলের নির্যাসে উপস্থিত থাকে ফাইটোকেমিক্যালস, যা টিউমারের কোষকে ধ্বংস করে এবং সেই কোষে রক্ত সরবরাহ বন্ধ করতে সাহায্য করে। যার ফলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। আর যাদের কেমোথেরাপি নিতে হয়, তারা যদি অশ্বগন্ধা নিয়মিত খান তাহলে তাদের জীবন যাপনের মানের উন্নতি ঘটবে। 

অশ্বগন্ধা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে 

অশ্বগন্ধার মূলে ও পাতায় অ্যান্টি-ডায়াবেটিক উপাদান থাকে। অশ্বগন্ধার পাতার কোষে যে ফ্ল্যাভোনয়েডস থাকে তা একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের শরীরে ইনসুলিনের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে। তাছাড়া ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরে লিপিডের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে অশ্বগন্ধা। 

অশ্বগন্ধা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে 

অশ্বগন্ধায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে। আর আমরা জানি যে, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।


অশ্বগন্ধা থাইরয়েডের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে 

মানুষের শরীরের থাইরক্সিনের পরিমাণ বহুগুণ বাড়িয়ে দেয় অশ্বগন্ধা। যাদের শরীরে থাইরয়েড হরমোনের পরিমাণ কম তারা নিয়মিত অশ্বগন্ধা খেতে পারেন। তাহলে আপনার থাইরয়েডের সমস্যা দূর হয়ে যাবে। 

অশ্বগন্ধা চোখের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে 

নিয়মিত অশ্বগন্ধার পাতা খেলে আপনার চোখের ছোট ছোট সমস্যা দূর হয়ে যাবে বলে নিশ্চিত করেছে বিভিন্ন গবেষণার রিপোর্ট।

অশ্বগন্ধা আর্থ্রাইটিস সারাতে সাহায্য করে 

অশ্বগন্ধার গুঁড়ো নিয়মিত খেলে যাদের আর্থ্রাইটিস আছে তাদের অনেক উপকার হবে। অশ্বগন্ধার গুঁড়ো আর্থ্রাইটিসের ব্যথা কমাতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

অশ্বগন্ধা স্মৃতি শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে 

যাদের সহজে কিছু মনে থাকে না। তাদের জন্য অশ্বগন্ধা খুবই কার্যকরী। আবার যাদের অ্যালজাইমারাস রোগ আছে তাদের জন্যও অশ্বগন্ধা বেশ উপকারী। 

অশ্বগন্ধা পেশী মজবুত করতে সাহায্য করে 

অশ্বগন্ধা পেশী মজবুত করতে সাহায্য করে এটি বিভিন্ন গবেষণায় এখন প্রমাণিত। তাছাড়া যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন তাদের পেশিতে মাঝে মাঝে চাপের সৃষ্টি হয়। আর এই চাপ সারাতেও অশ্বগন্ধা দারুণ কাজ করে। 

অশ্বগন্ধা ইনফেকশন থেকে রক্ষা পেতেও সাহায্য করে 

অশ্বগন্ধার মধ্যে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান থাকার জন্য এটি শরীরের নানা ধরনের ইনফেকশনকে প্রতিরোধ করে। তাই যাদের অতি সহজে যে কোনো রোগে ইনফেকশন হয়ে যায় তারা নিয়মিত অশ্বগন্ধা খেয়ে যাবেন। 


অশ্বগন্ধা হার্টের জন্য ভালো 

বিভিন্ন গবেষণার রিপোর্টে এটি উঠে এসেছে যে, যারা নিয়মিত অশ্বগন্ধার পাতা বা মূল খেয়ে থাকেন তারা হার্টের সমস্যায় খুব একটা ভুগেন না। 

অশ্বগন্ধা শরীরের ওজন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে 

অশ্বগন্ধার মূলের গুঁড়ো ওজন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তবে এর কোন প্রতিষ্টিত প্রমাণ পাওয়া যায় নি। তবে খেয়ে দেখতে পারেন। 

অশ্বগন্ধা অবসাদ কাটাতে সাহায্য করে 

অশ্বগন্ধার নির্যাসে রয়েছে অ্যাড্যাপটোজেন। যা শরীরের অবসাদ কাটাতে সাহায্য করে ও মনের উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে। 

অশ্বগন্ধা ত্বকের ইনফেকশন ঠিক করতে সাহায্য করে 

অশ্বগন্ধার পাতায় অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান আছে। যা আমাদের ত্বকের ইনফেকশনকে কমিয়ে ত্বককে আরও মসৃণ করতে সাহায্য করে। 

অশ্বগন্ধা বার্ধ্যকের ছাপ দূর করতে সাহায্য করে 

যারা বার্ধক্যকে আড়ালে রাখতে চান তাদের জন্য অশ্বগন্ধা খুবই কার্যকরী। আয়ুর্বেদ বিশ্বাস অনুযায়ী, অশ্বগন্ধা গাছের নির্যাস বার্ধক্যকে আড়ালে রাখে। 

অশ্বগন্ধা ক্ষত সারাতে সাহায্য করে 

অশ্বগন্ধার মধ্যে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান থাকার জন্য এটি শরীরের ক্ষত সারাতে সাহায্য করে। 

অশ্বগন্ধা কর্টিসল লেভেল কমাতে সাহায্য করে 

আমাদের রক্তে কর্টিসলের পরিমাণ কম বেশি হওয়ার প্রধান কারণ হলো রক্তে অ্যাডরিনালিন গ্ল্যান্ডের সমস্যার কারণে এমন হয়ে থাকে। তাই অশ্বগন্ধার নির্যাস নিয়মিত খেলে এই সমস্যা থেকে সহজে মুক্তি মিলে। 

অশ্বগন্ধা খুশকি কমাতে সাহায্য করে 

অশ্বগন্ধার গুঁড়ো দিয়ে যে তেল তৈরি করা হয়, তা খুশকির সাথে ফাইট করতে সক্ষম। তাই বেশির ভাগ খুশকি কমানোর শ্যাম্পুতে অশ্বগন্ধা ব্যবহার করা হয়। তাছাড়াও অকালে চুল পড়া রোধ করতেও অশ্বগন্ধার তেল অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। 

অশ্বগন্ধার পুষ্টিগুণ 

১০০ গ্রাম অশ্বগন্ধায় যে পরিমাণ পুষ্টি থাকেঃ
  • ক্যালোরিঃ ৪৫
  • টোটাল ফ্যাটঃ ০ গ্রাম
  • স্যাচুরেটেড ফ্যাটঃ ০ গ্রাম
  • ট্রান্স ফ্যাটঃ ০ গ্রাম
  • কোলেস্টেরলঃ ০ মিলিগ্রাম 
  • সোডিয়ামঃ ০ মিলিগ্রাম 
  • টোটাল কার্বোহাইড্রেটঃ ১০ গ্রাম
  • ডায়াটেরি ফাইবারঃ ০ গ্রাম 
  • টোটাল সুগারঃ ০ গ্রাম 
  • প্রোটিনঃ ১ গ্রাম
  • ক্যালসিয়ামঃ ৩২.৫ মিলিগ্রাম 
  • আয়রনঃ ০.৩০৬ মিলিগ্রাম 
  • পটাশিয়ামঃ ২৮২ মিলিগ্রাম 

অশ্বগন্ধা যেভাবে ব্যবহার করবেন? 

অশ্বগন্ধা ব্যবহারের সবচেয়ে ভালো উপায় হলো এর পাউডার তৈরি করে নিয়ে ব্যবহার করা। অশ্বগন্ধার পাতা বা মূল গুঁড়ো করে আপনি পাউডার বানাতে পারেন। তাছাড়া আপনি অশ্বগন্ধার তেল বানিয়ে ব্যবহার করতে পারেন এবং অশ্বগন্ধা দিয়ে শ্যাম্পু বানাতে পারবেন। 

অশ্বগন্ধার পাউডার যেভাবে বানাবেন?

অশ্বগন্ধার গাছের মূল সংগ্রহ করে তা ভালো করে রোদে শুকাতে হবে। ভালো ভাবে শুকানো হয়ে গেলে মিক্সার গ্রাইন্ডারে মিক্স করে নিতে হবে। তারপর এই পাউডার দুধ, ঘি বা মধুর সাথে মিশিয়ে খেতে পারবেন।

অশ্বগন্ধার অপকারিতা 

অশ্বগন্ধার অতি সামান্য কিছু অপকারিতা রয়েছে। তা নিচে আপনাদের কাছে তুলে ধরলাম। 

১. দীর্ঘদিন অশ্বগন্ধার পাউডার খাওয়া উচিত নয়। তার কারণ হলো, দীর্ঘদিন অশ্বগন্ধার পাউডার খেলে ডায়রিয়া, বমি ভাব, তাছাড়া গ্যাস্ট্রিক আলসার হতে পারে। 

২. অশ্বগন্ধা শরীরের শর্করা কমিয়ে দিতে পারে। 

৩. গর্ভবতী মহিলাদের জন্য অশ্বগন্ধা খুবই ক্ষতিকর হতে পারে। অশ্বগন্ধা খাওয়ার ফলে গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভপাত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। 

৪. বেশি অশ্বগন্ধার পাউডার খেলে রক্ত পাতলা হয়ে যেতে পারে। 

নবীনতর পূর্বতন