মধুর উপকারিতা, পুষ্টিগুণ, ব্যবহার, এবং অপকারিতা
মধু শব্দের সাথে আমার সবাই পরিচিত। তার কারণ হলো আমরা সকালেই এই কথাটি শুনে থাকি যে আমাদের জন্মের পর প্রথম যে খাবারটি আমাদের মুখে দেওয়া হয় তা হলো মধু। আর মধু শুধুমাত্র একটি উপকারী খাদ্য নয় এটি একটি ওষুধ ও বটে। চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে মধু আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির করতে পারে। তার কারণ হলো, মধুতে থাকা প্রচুর পরিমানে ভিটামিন, মিনারেল ও এনজাইমের মতো উপাদান যা আমাদের শরীরেরকে অনেক অসুখ বিসুখ থেকে বাঁচায়। আজকের নিবন্ধনে আমরা মধুর উপকারীতা, পুষ্টিগুন, খাওয়ার নিয়ম, এবং কিছু অপকারিতা নিয়ে আলোচনা করবো।
মধুর উপকারিতা
মধু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
মধু আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আস্তে আস্তে শক্তিশালি করে তুলে। আমাদের শরীরের ভিতরে এবং বাহিরের যাতে কোন রকমের ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ না করতে পারে সেই রকম প্রতিরোধ বলয় তৈরি করে মধু। মধুর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান শরীরের মধ্যে একধরনের প্রতিরোধকারী ব্যবস্থার তৈরি করে। যা দেহের অনেক রকম সংক্রমণ থেকে দেহকে রক্ষা করে।
মধু ওজন কমাতে সাহায্য করে
মধু ওজন কমাতে দারুণ ভুমিকা পালন করে। কারণ মধু নিয়মিত খেলে আপনার পাকস্থলীতে বাড়তি গ্লুকোজ তৈরি হবে। আর এই গ্লুকোজ মস্তিষ্কের সুগার লেবেল বাড়িয়ে দেবে। যার ফলে মেদ কমানোর হরমোন আপনার শরীর থেকে নিঃসরণ হওয়া শুরু করবে। যার ফলাফল সরুপ আপনার ওজন কমে যাবে।
মধু অনিদ্রা দূর করতে পারে
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা দীর্ঘদিন ধরে অনিদ্রায় ভুগছেন। তাদের জন্য মধু হতে পারে এক আদর্শ খাবার। আপনি যদি প্রতিদিন রাতে মধু খান তাহলে আপনার রাতে গভীর ঘুম হবে।
মধু কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
মধু কোষ্ঠকাঠিন্য রোগীদের জন্যও একটি ভালো খাবার। কারণ মধুতে রয়েছে ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স। আর এই ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে নিয়ামক ভূমিকা পালন করে।
মধু ডাইরিয়া থেকে মুক্তি দিতে পারে
মধু ডায়রিয়া রোগীদের জন্য ভালো। যাদের ঘন ঘন ডায়রিয়া, পেটের সমস্যা হয় কিংবা আমাশা লেগেই তাকে তারা প্রতিদিন সকালে মধু খান।
মধু হজমের সমস্যা দূর করতে পারে
আমরা জানি যে, মধুতে প্রচুর পরিমানে শর্করা রয়েছে যা সহজেই হজম হয়। তার কারণ হলো, মধুতে যে ডেক্সট্রিন থাকে, তা আমাদের রক্তে সরাসরি প্রবেশ করে তাৎক্ষণিকভাবে কাজ করা শুরু করে দেয়। তাই বলা যায় মধু হজম জনিত রোগীদের জন্য ভালো খাবার।
মধু মুখের অরুচি দূর করে
আমরা অনেকেই আছি যে, খাবার খেতে অনেক ভালো লাগে কিন্তু মুখের অরুচির জন্য খেতে পারি না। তাদের জন্য মধু অনেক উপকারি খাবার। নিয়মিত কিছু দিন মধু খেয়ে দেখুন আপনার মুখের রুচি ঠিকই ফিরে আসবে।
মধু শক্তি প্রদায়ী হিসেবে কাজ করে
মধু আমাদের শরীরের শক্তি প্রদায়ীর জন্য একটি ভালো খাদ্য। শরীরের তাপ ও শক্তির ভালো উৎস। মধু শরীরের তাপ ও শক্তি ঠিক রেখে শরীরকে চাঙ্গা রাখে।
মধু রক্তশূন্যতা থেকে মুক্তি দেয়
মধু আমাদের রক্তের হিমোগ্লোবিন গঠনে সহায়তা করে থাকে। যার ফলে এটি রক্তশূন্যতায় বেশ ফলদায়ক। তার কারণ হলো মধুতে থাকা কপার ও লৌহ।
আরও নানা রকমের ভূমিকা পালন করে মধু যেমনঃ
- মধু শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে
- মধু যৌন দুর্বলতা কমায়
- মধু মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য রক্ষায় কাজ করে
- মধু পাকস্থলীর সুস্থতায় কাজ করে
- মধু শরীরের তাপ উৎপাদন করতে পারে
- মধু দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে কাজ করে
- মধু গলার স্বর ঠিক রাখে
- মধু তারুণ্য বজায় রাখতে কাজ করে
- মধু হাড় ও দাঁত গঠনে ভূমিকা রাখে
- মধু আমাশয় ও পেটের পীড়া নিয়ন্ত্রণে নিয়ামক ভূমিকা পালন করে
- মধু হাঁপানি রোধে কাজ করে
- মধু উচ্চ রক্তচাপ কমায়
- মধু রক্ত পরিষ্কারক হিসেবে কাজ করে
- মধু রক্ত উৎপাদনে সহযোগিতা করে
- মধু হৃদরোগ জন্য ভালো
মধুর পুষ্টিগুন
১০০ গ্রাম মধুর মধ্যে রয়েছেঃ
- ক্যালরিঃ ৩০৪
- টোটাল ফ্যাটঃ ০ গ্রাম
- স্যাচুরেটেড ফ্যাটঃ ০ গ্রাম
- কোলেস্টেরলঃ ০ মিলিগ্রাম
- সোডিয়ামঃ ৪ মিলিগ্রাম
- পটাশিয়ামঃ ৫২ মিলিগ্রাম
- টোটাল কার্বোহাইড্রেটঃ ৪২ গ্রাম
- ডাইটেরি ফাইবারঃ ০.২ গ্রাম
- সুগারঃ ০.৩ গ্রাম
- প্রোটিনঃ ০.৩ গ্রাম
- ভিটামিন সিঃ ০% (ডেইলি ভেলু DV)
- আইরনঃ ২% DV
- ভিটামিন বি-৬ঃ ০% DV
- ম্যাগনেশিয়ামঃ ০% DV
- ক্যালসিয়ামঃ ০% DV
- ভিটামিন ডিঃ ০% DV
- কবোলামিনঃ ০% DV
মধু খাওয়ার নিয়ম
শীতকাল আসলেই অনেকের মধ্যে শ্বাসকষ্ট ও ঠান্ডা, কাশি বেড়ে যায়। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে আপনাকে গরম পানিতে মধু মিশিয়ে পান করতে হবে।
তবে একটা বিষয় ভালো ভাবে খেয়াল রাখবেন যেন পানি অতিরিক্ত গরম হয়ে না যায়। তার কারণ হলো ৪২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের উপরে যদি পানি গরম থাকে, তাহলে মধুর গুন-গুন পরিবর্তন হয়ে তা বিষাক্ত হয়ে যেতে পারে। আপনি যখন গরম পানি অথবা চায়ের মধ্যে মধু মিশিয়ে পান করবেন তখন অবশ্যই পানির তাপমাত্রাটি চেক করে নিবেন।
আবার অনেকেই আছেন যারা সকালে ঘুম থেকে উঠেই গরম পানিতে মধু মিশিয়ে পান করতে পছন্দ করেন। তাদের বেলায় সুবিধা হলো, তারা এই কাজ করার ফলে শরীরকে সতেজ রাখতে পাড়ছেন এবং শরীর থেকে টক্সিন বের করতে পাড়ছেন। তবে আপনি এটি খেয়াল রাখুন যেন পানি হালকা গরম থাকে।
আবার যাদের ওজন বেশি তারা লেবুর রসের সাথে মধু মিশিয়ে পান করতে পারেন। এক্ষেত্রে অনেক উপকার পাবেন। প্রতিদিন সকালে এই ভাবে পান করে গেলে আপনাদের শরীর থেকে টক্সিন বের হয়ে যাবে এবং আপনার ওজন কমে যাবে।
মধুর অপকারিতা
প্রতেকটা খাবারের যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি রয়েছে কিছু অপকারিতাও। মধু তার থেকে বাদ যায় নি। আপনি মধু খেতে পারবেন কিন্তু পরিমাণ মতো। কারণ অতিরিক্ত মধু খেলে আপনার শরীরের মধ্যে অস্থিরতা বা জ্বালা পোড়া করতে পারে। তাই পরিমান মতো মধু খান এবং সঠিক নিয়মে মধু খান।