কালোজিরার উপকারিতা, পুষ্টিগুণ, ব্যবহার, এবং অপকারিতা

 

Benefits of black cumin

কালোজিরাকে আমরা সর্ব রোগের ঔষধ বলে চিনে থাকি। আমাদের একটু ঠান্ডা লাগলে আমরা কালোজিরা খেয়ে থাকি। আবার কালোজিরার বীজ থেকে তেল তৈরি হয়, যাতে আছে ফসফেট, আয়রন এবং ফসফরাস। এছাড়াও কালোজিরা আমাদের শরীরকে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে। কালোজিরা স্মৃতি শক্তি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হৃদরোগ জনিত  সমস্যার আশঙ্কা কমায়। ত্বকের স্বাস্থ্যকে ভালো করে এবং মাংস পেশির ব্যথা কমাতেও সাহায্য করে কালোজিরার তেল।

কালোজিরা শুধুমাত্র ছোট ছোট দানাই কেবল নয়। এর রয়েছে হাজারো উপকারিতা। সেই প্রাচীনকাল থেকেই কালোজিরা মানবদেহের বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক ও প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে আসছে। শুধু এটাই শেষ নয়, কালোজিরা চুলপড়া, মাথাব্যথা, অনিদ্রা, মাথা ঝিমঝিম করা, ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষা করা, অবসন্নতা ও দুর্বলতা থেকে মুক্তি দিতে পারে।

তাছাড়া কালোজিরা অলসতা কাটায়। খাবারে রুচি বৃদ্ধি করে। মস্তিষ্ককে আরও উর্বর বনায়। তাছাড়া যারা গোপন শক্তি বৃদ্ধি করতে চান কিন্তু বুঝতে পারছেন না কি খেলে গোপন শক্তি বৃদ্ধি পাবে, তাদের জন্য প্রতিদিন এক চামচ কালোজিরা খাওয়াই যথেষ্ট। কারণ কালোজিরা গোপন শক্তি বাড়াতে দারুণ কাজ করে থাকে। আজকের এই আলোচনায় আমরা আপনাদের সাথে কালোজিরার সমস্ত উপকারী দিক তুলে ধরবো।

কালোজিরার উপকারিতা

কালোজিরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

কলোজিরা নিয়মিত খাওয়ার ফলে আস্তে আস্তে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। নিয়মিত কালোজিরা খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রতঙ্গ সতেজ থাকে। যে কোনো রোগ জীবাণুর বিরুদ্ধে কালোজিরা একটা প্রতিরোধ বলয় তৈরি করে। এই প্রতিরোধ বলয়েই শরীরের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

কালোজিরা মাথাব্যথা দূর করতে সাহায্য করে

মাথাব্যথা কমাতে কালোজিরা দারুণ কাজ করে থাকে। তাই যখনি মাথাব্যথা করবে তখুনি কালোজিরার তেল মাথায় লাগিয়ে নিন। অথবা খালিপেটে এক চা চামচ কালোজিরার তেল খেয়ে নিলেও মাথাব্যথা কমে যাবে।

কালোজিরা যৌন দুর্বলতা দূর করে

কালোজিরা গুঁড়ো করে অলিভ অয়েলের সাথে ৫০ গ্রাম হেলেঞ্চার রস মিশিয়ে তার সাথে ২০০ গ্রাম খাঁটি মধু একসঙ্গে মিশিয়ে সকালে খাবারের পর এক চামচ করে খান। এভাবে কিছুদিন খেলে আপনার যৌন দুর্বলতা দূর হয়ে যাবে। এবং আপনার যৌন শক্তি বৃদ্ধি পাবে।

কালোজিরা চুলপড়া বন্ধের জন্য কাজ করে

কালোজিরার তেল দিয়ে চুলপড়া বন্ধের জন্য আপনাকে প্রথমে মাথার সবগুলো চুল লেবু দিয়ে ভালোভাবে ঘসে নিতে হবে। তারপর ১৫ মিনিট পরে শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন। তারপর চুল শুকানোর পরে ভালো করে কালোজিরার তেল মাথায় মালিশ করুন। এভাবে ১৫ থেকে ২০ দিন করার পর দেখবেন আপনার চুল পড়া বন্ধ হয়ে যাবে।

কালোজিরা কফ বা হাঁপানি প্রতিরোধ করতে পারে

যখনি আপনার কফ বা হাঁপানি জনিত সমস্যা দেখা দিবে তখুনি আপনি বুকে ও পিঠে কালোজিরার তেল মালিশ করে নিবেন। তাতে কফ ও হাঁপানির সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।

কালোজিরা স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে পারে

কালোজিরা স্মৃতি শক্তি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আপনি এক চামচ মধুতে অল্প পরিমাণে কালোজিরা দিয়ে খেয়ে ফেলুন। এভাবে প্রতিদিন খেতে থাকুন। একসময় দেখবেন আপনার স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি পাবে।

কালোজিরা অ্যাজমার উন্নতি ঘটায়

কালোজিরা অ্যাজমার জন্য বেশ উপকারী। অ্যাজমা প্রতিরোধের জন্য আপনাকে হালকা গরম পানিতে কালোজিরা দিয়ে টানা ৪৫ দিনের মতো খেতে হবে। তাহলে আপনার অ্যাজমার সমস্যার উন্নতি ঘটবে।

কালোজিরা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য কালোজিরার ভূমিকা অপরিসীম। আপনি যদি কালোজিরার গুঁড়ো করে তার সাথে ডালিমের খোসার গুঁড়ো মিশ্রণ করে কালোজিরার তেলের সাথে মিশিয়ে খান তাহলে আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

কালোজিরা হৃদরোগ প্রতিরোধে করতে পারে

হৃদরোগ প্রতিরোধ করার জন্য আপনাকে নিয়মিত কালোজিরা খেতে হবে। আপনি কালোজিরা চায়ের সঙ্গে নিয়মিত খেতে পারেন। তাছাড়া কালোজিরার তেল চায়ের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। এভাবে নিয়মিত খেলে আপনার হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

কালোজিরা অ্যাসিডিটি ও গ্যাস্টিক প্রতিরোধ করতে পারে

এক টেবিল চামচ কালোজিরার তেল এক কাপ দুধের সাথে মিশিয়ে দৈনিক তিনবার খেয়ে নিন। এভাবে ৫ থেকে ৭ দিন খান। ৭ দিন খাওয়ার পর নিজেই এর ফলাফল দেখতে পারবেন।

কালোজিরা চোখের সমস্যা দূর করতে পারে

রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে চোখের উভয় পাশে কালোজিরার তেল মালিশ করুন। ভুরুতেও হালকা করে তেল মালিশ করুন। এভাবে করার ফলে আপনার চোখের ছোট ছোট সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে তাছাড়া চোখের নিচের কালি দূর হয়ে যাবে। আপনি এক কাপ গাজরের রসের সাথে কালোজিরার তেল মিশিয়ে খেলেও চোখের জন্য দারুণ উপকার পাবেন।

কালোজিরা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে আপনাকে কালোজিরা গরম কিছুর সাথে খেতে হবে। যেমন গরম পানি বা গরম চায়ের সাথে মিশিয়ে কালোজিরা খেতে হবে। তাছাড়া গরম ভাতের সাথে কালোজিরা ভর্তা করে খেতে পারেন। তাহলে আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তাছাড়াও কালোজিরার তেল নিম ও রসুনের তেলের সাথে মিশিয়ে মাথায় মেখে নিতে পারেন। তাতেও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

কালোজিরা জ্বরের জন্য বেশ উপকারী

যখন জ্বর আসবে আপনার শরীরের মধ্যে তখনি আপনি কালোজিরার এক টেবিল চামচ তেল লেবুর রসের সাথে মিশিয়ে পান করুন। বেশ কয়েক বার পান করার পর দেখবেন আপনার শরীরের জ্বর স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসবে।

কালোজিরা সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে সাহায্য করে

কালোজিরার তেলের সাথে অলিভ অয়েলের তেল মিশিয়ে মুখে মেখে এক ঘন্টার মতো রেখে দিন। তারপর সাবান দিয়ে ভালো ভাবে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই কাজটি সপ্তাহে অন্তত দুই দিন করুন তাহলে দেখবেন আপনার মুখের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে।

কালোজিরা বাতের ব্যথা নিরাময় করতে পারে

অনেকেই বাতের ব্যথা নিয়ে অনেক ভুগে থাকেন। আপনার শরীরের যে জায়গাতে বাতের ব্যথা অনুভূত হয় আপনি ঠিক সেই জায়গাতে কালোজিরার তেল মালিশ করুন তাহলে আপনার বাতের ব্যথা কমাতে শুরু করবে।

কালোজিরা দাঁতের দারুণ উপকার করে

দাঁতকে শক্ত করার জন্য দই ও কালোজিরার মিশ্রণ করে প্রতিদিন অন্তত দুই বার দাঁতের মধ্যে ব্যবহার করুন। এতে দাঁতের শিরশিরে অনুভূতি ও রক্তপাত বন্ধ হয়ে যাবে।

কালোজিরা ওজন কমাতে সাহায্য করে

যারা সঠিক উপায়ে ওজন কমাতে চান, তাদের জন্য কালোজিরা হতে পারে আদর্শ মাধ্যম। আপনি হালকা গরম পানিতে মধু ও লেবুর রসের একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। তাতে কালোজিরার গুঁড়ো দিন। কালোজিরার গুঁড়ো দেওয়ার পর ভালো করে মিশ্রণটি নারা দিন এবং তা খেয়ে ফেলুন। এই প্রদ্ধতিতে কালোজিরা খেলে আশা করা যায় আপনার ওজন কমে যাবে।

কালোজিরার পুষ্টিগুণ

১০০ গ্রাম কালোজিরার মধ্যে যে পুষ্টিগুণ রয়েছেঃ

  • ম্যাঙ্গানিজঃ ৮.৫৩ মিলিগ্রাম
  • কপারঃ ২.৬ মিলিগ্রাম 
  • আয়রনঃ ৯.৭ মিলিগ্রাম 
  • টোটাল ফ্যাটঃ ৩১.১৬ গ্রাম
  • ফসফরাসঃ ৫৪৩ মিলিগ্রাম 
  • ম্যাগনেসিয়ামঃ ২৬৫ মিলিগ্রাম 
  • ক্যালসিয়ামঃ ৫৭০ মিলিগ্রাম 
  • জিংকঃ ৬.২৩ মিলিগ্রাম

কালোজিরার অপকারিতা

কালোজিরার উপকারিতাই বেশি। এর তেমন কোনো অপকারিতার কথা আমরা শুনি না। তবে কালোজিরার অপকারিতা নিয়ে কয়েকটি কথা বলা যায়। আর তা হলো গর্ভাবস্থায় ও দুই বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের কালোজিরার তেল খাওয়ানো উচিত না। তবে বাহ্যিক ভাবে ব্যবহার করতে পারবেন।

Next Post Previous Post