থানকুনি পাতার উপকারিতা, পুষ্টিগুণ ও অপকারিতা

 

থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

থানকুনি পাতার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। তেতো স্বাদের এই পাতা আমাদের শরীরের জন্য অসংখ্য উপকার বয়ে আনে। মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াতেও এই পাতা বাটা খুবই উপকারী। চলুন আমরা জেনে নেই থানকুনি পাতার উপকারিতা, পুষ্টিগুণ ও এর অপকারিতা। 

থানকুনি পাতার উপকারিতা

ক্ষত সারাতে কাজ করে 

শরীরের কোথাও কেটে গেলে রক্তপাত থামাতে ব্যবহার করতে পারেন থানকুনি পাতা। থানকুনি পাতা বেটে আক্রান্ত স্থানে লাগালে ব্যথা কম হবে আর রক্ত পড়াও বন্ধ হয়ে যাবে। এমনকী ক্ষত থেকে সংক্রমণের আশঙ্কাও থাকে না।

শরীরে রক্ত প্রবাহ ঠিক থাকে

অনেকের থ্রম্বোসিসের সমস্যা থাকে। এছাড়াও অনেকের দেহেই অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণে রক্তপ্রবাহে সমস্যা হয়। থানকুনি পাতার রস খেলে রক্ত শুদ্ধ থাকে। ফলে শরীরের প্রতি কোশে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পৌঁছে যায়। ফলে অনেক সমস্যা দূর হয়।

শরীরে জ্বালাপোড়া দূর করে

থানকুনি পাতার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটারি উপাদান। যার ফলে খুব তাড়াতাড়ি জ্বালা, যন্ত্রণা কমে যায়। এছাড়াও ক্লান্তি ভাব দূর হয়। সেই সঙ্গে অনেক রকম ইনফেকশন থেকেও দূরে রাখে।

অলসার দূর করে

পেটের যে কোনো রোগে থানকুনি পাতা ভীষণ উপকারী। আমাশয় থেকে আলসার সেরে যায় এই পাতার গুণেই। আর নিয়মিত থানকুনি পাতা খেলে হজমের সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে।

মানসিক অবসাদ দূর করে

মানসিক অবসাদে ভুগলে তা দূর করার জন্য খুব ভালো থানকুনি পাতার রস। থানকুনি স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে মানসিক চাপ আর অস্থিরতা দুই কমে। এর ফলে অ্যাংজাইটির আশঙ্কাও কমে যায়।

মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ে

নিয়মিত থানকুনি পাতা খাওয়া শুরু করলে শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পেন্টাসাক্লিক ট্রিটারপেনস নামের একটি উপাদানের মাত্রা বাড়তে শুরু করে, যে কারণে ব্রেনসেল ভালোভাবে কাজ করতে পারে। স্মৃতিশক্তির উন্নতি তো ঘটেই, সেই সঙ্গে বুদ্ধির ধারও বাড়ে চোখে পড়ার মতো।

ঘুম ভালো হয়

ঘুম না আসার সমস্যা রয়েছে অনেকেরই। আপনারও এমন সমস্যা থাকলে খেতে পারেন থানকুনি পাতা ভেজানো পানি। এতে স্নায়ু শিথিল হবে। ঘুম আসবেই।

চুল পড়ার হার কমে

নানা সময়ে হওয়া বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে সপ্তাহে ২-৩ বার থানকুনি পাতা খেলে স্কাল্পের ভেতরে পুষ্টির ঘাটতি দূর হয়। ফলে চুল পড়ার মাত্রা কমতে শুরু করে। চুল পড়ার হার কমাতে আরেকভাবেও থানকুনি পাতাকে কাজে লাগাতে পারেন। কীভাবে? পরিমাণ মতো থানকুনি পাতা নিয়ে তা থেঁতো করে নিতে হবে। তারপর তার সঙ্গে পরিমাণ মতো তুলসি পাতা এবং আমলা মিশিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। সবশেষে পেস্টটা চুলে লাগিয়ে নিয়ে কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। ১০ মিনিট পরে ভাল করে ধুয়ে ফেলতে হবে চুলটা। প্রসঙ্গত, সপ্তাহে কম করে ২ বার এইভাবে চুলের পরিচর্যা করলেই দেখবেন কেল্লা ফতে!

টক্সিক উপাদানেরা শরীর থেকে বেরিয়ে যায়

নানাভাবে সারা দিন ধরে একাধিক ক্ষতিকর টক্সিন আমাদের শরীরে, রক্তে প্রবেশ করে। এইসব বিষেদের যদি সময় থাকতে থাকতে শরীর থেকে বের করে দেওয়া না যায়, তাহলে কিন্তু বেজায় বিপদ! আর এই কাজটি করে থাকে থানকুনি পাতা। কীভাবে করে? এক্ষেত্রে প্রতিদিন সকালে অল্প পরিমাণ থানকুনি পাতার রসের সঙ্গে ১ চামচ মধু মিশিয়ে খেলে রক্তে উপস্থিত ক্ষতিকর উপাদানগুলি বেরিয়ে যায়। ফলে একাধিক রোগ দূরে থাকতে বাধ্য হয়।

হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে

থানকুনি পাতা হজম ক্ষমতারও উন্নতি হবে। কারণ একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে থানকুনি পাতায় উপস্থিত একাধিক উপকারি উপাদান হজমে সহায়ক অ্যাসিডের ক্ষরণ যাতে টিক মতো হয় সেদিকে খেয়াল রাখে। ফলে বদ-হজম এবং গ্যাস-অম্বলের মতো সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে না।

ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়

থানকুনি পাতায় উপস্থিত অ্যামাইনো অ্যাসিড, বিটা ক্যারোটিন, ফ্য়াটি অ্যাসিড এবং ফাইটোকেমিকাল ত্বকের অন্দরে পুষ্টির ঘাটতি দূর করার পাশাপাশি বলিরেখা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই স্কিনের ঔজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে কম বয়সে ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও কমে।

আমাশয়ের মতো সমস্যা দূর হয়

এক্ষেত্রে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিয়ম করে থানকুনি পাতা খেতে হবে। এমনটা টানা ৭ দিন যদি করতে পারেন, তাহলেই কেল্লাফতে! এই ধরনের সমস্যা কমাতে আরেকভাবেও থানকুনি পাতাকে কাজে লাগাতে পারেন। প্রথমে পরিমাণ মতো থানকুনি পাতা বেটে নিন। তারপর সেই রসের সঙ্গে অল্প করে চিনি মেশান। এই মিশ্রনটি দু চামচ করে, দিনে দুবার খেলেই দেখবেন কষ্ট কমে যাবে।

পেটের রোগের চিকিৎসায় কাজে আসে

অল্প পরিমাণ আম গাছের ছালের সঙ্গে ১ টা আনারসের পাতা, হলুদের রস এবং পরিমাণ মতো থানকুনি পাতা ভাল করে মিশিয়ে ভাল করে বেটে নিন। এই মিশ্রনটি নিয়মিত খেলে অল্প দিনেই যে কোনও ধরনের পেটের অসুখ সেরে যায়। সেই সঙ্গে ক্রিমির প্রকোপও কমে।

কাশির প্রকোপ কমে

২ চামচ থানকুনি পাতার রসের সঙ্গে অল্প করে চিনি মিশিয়ে খেলে সঙ্গে সঙ্গে কাশি কমে যায়। আর যদি এক সপ্তাহ খেতে পারেন, তাহলে তো কথাই নেই। সেক্ষেত্রে কাশির কোনও চিহ্নই থাকবে না।

জ্বরের প্রকোপ কমে

সিজন চেঞ্জের সময় যারা প্রায়শই জ্বরের ধাক্কায় কাবু হয়ে পারেন, তাদের তো থানকুনি পাতা খাওয়া মাস্ট! কারণ আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে যে জ্বরের সময় ১ চামচ থানকুনি এবং ১ চামচ শিউলি পাতার রস মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেলে অল্প সময়েই জ্বর সেরা যায়। সেই সঙ্গে শারীরিক দুর্বলতাও কমে।

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হয়

 অসময়ে খাওয়ার কারণে ফেঁসেছেন গ্যাস্ট্রিকের জালে? নো প্রবেলম! থানকুনি পাতা কিনে আনুন বাজার থেকে। তাহলেই দেখবেন সমস্যা একেবারে হাতের মধ্যে চলে আসবে। আসলে এক্ষেত্রে একটা ঘরোয়া চিকিৎসা দারুন কাজে আসে। কী সেই চিকিৎসা? হাফ লিটার দুধে ২৫০ গ্রাম মিশ্রি এবং অল্প পরিমাণে থানকুনি পাতার রস মিশিয়ে একটা মিশ্রন তৈরি করে ফেলুন। তারপর সেই মিশ্রন থেকে অল্প অল্প করে নিয়ে প্রতিদিন সকালে খাওয়া শুরু করুন। এমনটা এক সপ্তাহ করলেই দেখবেন উপকার মিলবে।

১০০ গ্রাম থানকুনি পাতার পুষ্টিগুণ 

  • ক্যালসিয়াম: 171 মিলিগ্রাম 
  • আয়রন: 5.6 মিলিগ্রাম 
  • পটাসিয়াম: 391 মিলিগ্রাম 
  • ভিটামিন এ: 442 মাইক্রোগ্রাম 
  • ভিটামিন সি: 48.5 মিলিগ্রাম 
  • ভিটামিন B2: 0.19 মিলিগ্রাম 

থানকুনি পাতার অপকারিতা

কোনো খাদ্যই প্রয়োজনের বেশি খেতে নেই। অতিরিক্ত কোন খাবার খাওয়ার ফলে নানা ধরণের বিপত্তির দেখা মেলে। থানকুনি পাতায় তার ব্যতিক্রম নেই। অতিরিক্ত থানকুনি পাতা খেলে পেটের পীড়া বেড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। 

প্রয়োজনের তুলনায় অত্যাধিক থানকুনি পাতা খাওয়ার ফলে আপনার মাথা ঘুরার মতো নানা ধরণের সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিভিন্ন ধরণের খোস পাচড়ার কিংবা এলার্জি জনিত  সমস্যা দেখা দিতে পারে।

যারা লিভারের নানা ধরণের রোগে আক্রান্ত রয়েছেন, তাদের কোনভাবেই থানকুনি পাতা খাওয়া উচিত নয়। থাককুনি পাতা খাওয়ার ফলে তারা নানা ধরণের সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে। যারা বিভিন্ন ধরণের অপারেশনের রোগী রয়েছেন তাদের থানকুনি পাতা না খাওয়া উচিত।

Next Post Previous Post