সজনে গাছের পাতাকে বলা হয় অলৌকিক পাতা। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে পুষ্টিকর হার্ব। গবেষকরা সজনে পাতাকে বলে থাকেন, নিউট্রিশন্স সুপার ফুড। সজনে পাতা এনিমিয়াকে দূর করে। শাকের তুলনায় পঁচিশ গুন বেশি আয়রন রয়েছে এতে। কলা থেকে তিন গুন বেশি পটাশিয়াম রয়েছে। শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে সজনে পাতা দারুণ উপযোগী। 

এছাড়া আমাদের শরীরে এন্টি জিংক হিসেবে কাজ করে এ পাতা। পাশাপাশি হার্ট ভালো রাখে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। এটি রক্তে সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে। কোলেস্টেরলের লেভেল কমিয়ে, হজম শক্তি বৃদ্ধি করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ডায়ারিয়া, কলেরা, আমাশয়, কোলাইটিস এবং জন্ডিসের সময় ব্যাপক কার্যকরী সজনে পাতা। কাঁচা পাতার রস আরও বেশি উপকারী শরীরের জন্য। এছাড়াও শত বছর ধরে প্রায় তিনশরও বেশি রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

সজনে পাতার উপকারিতা 
  • শরীরে রক্তের পরিমান কমে গেলে পানি দিয়ে সজনেডাঁটা সেদ্ধ করে তার ক্বাথ এবং ডাঁটা চিবিয়ে খেলে রক্তল্পতা দূর হয়। তবে বেশ কিছুদিন নিয়মিত খাওয়া দরকার।
  • খাবার লবন অর্থাৎ ‘সোডিয়াম ক্লোরাইড’ ব্ল্যাড প্রেসার রোগীদের জন্য খুবই ক্ষতিকর। অপরদিকে, ‘পটাশিয়াম লবন’ কোন ক্ষতি করেনা। সাজনে ডাঁটাতে সোডিয়াম ক্লোরাইড নেই বললেই চলে। কাজেই এতে ব্ল্যাড প্রেসার নিয়ন্ত্রিত থাকে।
  • সাজনে ডাঁটা এবং ফুল ভাজা বা তরকারী খেলে জল ও গুটি এ দু’ধরনের বসন্তে আক্রান্ত হবার কোন সম্ভাবনা থাকেনা।
  • আয়ুর্বেদ মতে , সজিনার শিকড় কষায় ও উত্তেজক।
  • মূলের ছাল নাশক, হজম বৃদ্ধিকারক এবং হৃদপিন্ড ও রক্ত চলাচলের শক্তিবর্ধক হিসাবে কাজ করে।
  • মূলের ছালের জলীয় নির্যাস স্নায়ুবিদ দূর্বলতা, তলপেটের ব্যাথা ও হিস্টিরিয়া চিকিৎসার উপকারি।
  • সাজিনার ফলের নির্যাস যকৃৎ ও প্লীহার অসুখে ধনুষ্টংকার ও প্যারালাইসিসে উপকারী।
  • সাজিনার বিচির তেল বাত রোগের চিকিৎসায় মালিশ হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
  • সাজিনার মূলের রস দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে মূত্র প্রবৃত্তি হয়। এর রস হাপানি নিবারক ও মূত্রকারক।
  • সাজিনার ডাঁটা কৃমিনাশক ও জ্বরনাশক বলে দেশীয় ডাক্তাররা পক্ষাঘাত রোগে প্রয়োগ করেন। এর আঠা গর্ভস্রাবকারক।
  • সাজিনার আঠা দুধে বেটে কপালে লাগালে মাথাধরা আরাম হয় এবং উপদংশজনিত বাগিতে প্রদান করা হয়।
  • কৃমিনাশক হিসাবেও সাজনার ব্যবহার অতীব গুরুত্বপূর্ণ। মূল ও ছালের রস নিয়মিত ৩/৪ দিন খেলে শরীর কৃমি মুক্ত হয়ে যায়।
  • এটি রক্ত সংবহণতন্ত্রের ক্ষমতাও বাড়ায়। সাজনার কচি পাতার রস নিয়মিত ব্যবধানে খেলে রক্তের উচ্চচাপ ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে য়ায়। মায়ানমারের চিকিৎসকদের মতে, সাজিনার পাকা পাতার টাটকা রস দুবেলা আহারের ঠিক পূর্বে ২/৩ চামচ করে খেলে এক সপ্তাহের মধ্যে কমে যাবে। তবে যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা এটি ব্যবহার করবেননা।
  • সাজিনার শিকরের ক্বাথ ঘুৎড়িকাশি, হাঁপানি, গেটে বাত, কটি বেদনা ও সাধারণ বাত রোগে দুধের সাথে ব্যবহার হয়।
  • সাজিনার পাতা বেটে রসুন, হরিদ্রা, লবন ও গোলমরিচ সহ খেলে কুকুরের বিষ্ট নষ্ট হয় এবং দুষ্টস্থানে প্রলেপ দিলে ৫/৬ দিনে ফুলা কমে যায় ও জ্বরে আরাম হয়।
  • এর ছালের রস গুড়ের সাথে পান করলে শিরঃপীড়া আরাম হয়।
  • ২৫০ গ্রাম পাতার রস ১৫ গ্রাম সৈন্ধব লবনের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করলে বহূমুখে আরাম হয়।
  • সাজিনা পাতা রেধে খেলে ইনফ্লুয়েঞ্জার জ্বর ও যন্ত্রনাদায়ক সর্দিতে আরাম হয়।
  • সাজিনার শেকর, লেবুর রস এবং জলফলের মিশ্রন পেটফাঁপা নিবারক ও উত্তেজক।
  • এর ছালের রস গুড়ের সাথে পান করলে শিরঃপীড়া আরাম হয়।
  • এর মূলের ছালের প্রলেদে দাদ কমে। তবে প্রতিদিন ব্যবহার করা উচিত নয়।
  • শ্লেষ্মাঘটিত কারনে দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে পাতার ক্বাথ মুখে ধারন করলে ফুলা কমে যায়।
  • অপুষ্টি হলো অন্ধত্বের অন্যতম কারন। অন্ধত্ব নিবারনে প্রচুর Indian royal commonwealth society for blind –এ ভিটামিন সমৃদ্ধ সজনে পাতা খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
  • সজনে পাতার ছালের বড়ি অম্ল রোগে বিশেষ উপকারী। সজনে ছালের শাঁস, জঙ্গী হরিতকরি দানা ও যোয়ান আলাদা করে বেটে সমপরিমান একত্রে মিশিয়ে কুলের বিচির আকারে ছোট ছোট বড়ি তৈরী করে রোদে শুকাবেন। এগুলো বাটার সময় পানি না দিয়ে লেবুর রস দিবেন। কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে রাতে ঘুমের আগে গরম পানি দিয়ে একটি করে বড়ি খাবেন। এতে অম্ল রোগের উপকার পাবেন। কোষ্ঠকাঠিন্য না থাকলে ঠান্ডা পানি ব্যবহার করবেন।
  • শরীরের কোন অঙ্গ মচকালে বা থেতলালে আদা ও সজনে ছাল বাটা প্রলেপ দিলে উপশম হয়।
  • হিক্কা হতে থাকলে ২/৪ ফোটা করে সজনে পাতার রস দুধের সাথে মিশিয়ে ২/৩ বার খাবেন।  
21 গ্রাম সজনের পাতার পুষ্টি
  • প্রোটিন: 2 গ্রাম
  • ভিটামিন B6: RDA এর 19% (recommended daily amount)
  • ভিটামিন সি: RDA এর 12%
  • আয়রন: RDA এর 11%
  • Riboflavin (B2): RDA এর 11%
  • ভিটামিন এ (বিটা-ক্যারোটিন থেকে): RDA এর 9%
  • ম্যাগনেসিয়াম: RDA এর 8%
ত্বকে সজনের পাতা ব্যবহারে যত উপকার 
  • সজনের তেল এবং সজনে পাতার গুঁড়ো ত্বকের বলিরেখা, ক্ষত , ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি,  কুঁচকানো ভাব, বলিরেখা ও বিভিন্ন দাগ ছোপ দূর করে। 
  • সজনের তেল ঠোঁটের যত্নে ব্যবহার করতে পারেন। এ তেল ঠোঁটের আর্দ্রতা বজায় রাখে।
  • ত্বকের বলিরেখা, দাগ ছোপ এবং অন্যান্য সমস্যা দূর করে। ফলে আমাদের ত্বকের রঙ উজ্জ্বল হয়।  
  • সজনের তেলে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকায় এটা ব্যবহার করলে ব্রণর সমস্যা দূর হয়। তবে ব্যবহারের আগে একজন ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া অবশ্যই প্রয়োজন।
  • টক্সিনের ফলেই ত্বকে ব্রণ এবং বিভিন্ন দাগ ছোপের সমস্যা দেখা যায়। সজনের গুঁড়ো কিংবা সজনের বীজ গ্রহণ করলে রক্ত পরিশ্রুত হয় যার ফলে ত্বক পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যকর হয়।  
  • সজনে ত্বকের বিভিন্ন ছিদ্র বন্ধ করতে সাহায্য করে। এটা ত্বকের প্রয়োজনীয় কলিজেন প্রোটিন উৎপাদনে সাহায্য করে যা ছিদ্র বন্ধ হতে সাহায্য করে।   
ত্বকে যেভাবে ব্যবহার করবেন

২ আধ টেবিল চামচ সজনে পাতা গুঁড়ো করে  সঙ্গে এক টেবিল চামচ মধু, এক টেবিল চামচ গোলাপ জল এবং আধ টেবিল চামচ লেবুর রস যোগ করুন।  ঘনত্ব বুঝে প্রয়োজনে পানি  যোগ করুন। ঘন এবং মসৃণ পেস্ট তৈরি করুন।   সকালে এটা মুখে লাগিয়ে ১০ মিনিট রেখে দিন। তারপর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ত্বক উজ্জ্বল, নরম ও মসৃণ হবে।  
নবীনতর পূর্বতন