লেবুর উপকারিতা, পুষ্টিগুণ ও অপকারিতা
লেবুর উপকারিতা
লেবু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেহেতু লেবু ভিটামিন সি এর উৎস, তাই এটি আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ডাক্তাররা বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার সময় ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খেতে বলেন। যেন আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
এছাড়াও গবেষকরা বলেছেন ভিটামিন সি শ্বেত রক্তকণিকা কোষ কে উদ্দীপ্ত করে। এছাড়াও ভিটামিন সি লিউকোসাইট কে রক্ষা করে। লিউকোসাইট আপনার শরীরে বহিরাগত রোগ-জীবাণুকে ধ্বংস করে দেয়।
লেবু হার্ট কে সুস্থ রাখে
লেবুতে রয়েছে ফলিক এসিড। যা স্ট্রোকের সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। গবেষকরা হার্টের রোগীদের উপরে একটি গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেছেন। যেখানে ফলিক অ্যাসিড সেবনকারীরা স্ট্রোকের ঝুঁকি থেকে অনেকটাই মুক্ত থেকেছেন। কিন্তু যারা ফলিক এসিড সেবন করে নি তারা স্ট্রোকের ঝুঁকিতে ছিলেন। লেবুতে উপস্থিত এন্টি অক্সিডেন্ট আপনাকে কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা থেকে দূরে রাখবে।
লেবু খারাপ কোলেস্টেরল কমায়
লেবুর উপকারিতার কারনে আমাদের শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল কমে যায়। আমাদের শরীরে দুই ধরনের কোলেস্টরেল থাকে। একটি ভালো কোলেস্টরেল যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় উপাদান। অন্যটি খারাপ কোলেস্টরেল যা আমাদের বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকির দিকে ঠেলে নিয়ে যায়।
লেবু আমাদের শরীরের খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। একটি গবেষণায় কিছু পুরুষ ও মহিলাদের একমাস নিয়মিত ভিটামিন সি খেতে দেওয়া হয়। একমাস পরে তাদের খারাপ কোলেস্টরেল এর মাত্রা ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কমে যায়।
কিডনির পাথর সমস্যা দূর করতে লেবু
লেবুতে প্রচুর পরিমাণে সাইট্রিক এসিড থাকে। সাইট্রিক এসিড কিডনিতে পাথর সৃষ্টি হতে বাধা দেয়। এটি শুধুমাত্র পাথর সৃষ্টি হতে বাধা দেয় না বরং ছোট ছোট পাথর গুলিকে ভেঙ্গে ফেলে।
ক্যান্সারের সমস্যায় লেবুর ব্যবহার
এশিয়ান প্যাসিফিক জার্নাল অব ক্যানসার প্রিভেনশন ফাউন্ডেশনের প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে স্তন ক্যান্সারের কোষ গুলোতে লেবুর রস প্রয়োগ করলে উপকার পাওয়া যায়। লেবুর এন্টি অক্সিডেন্ট উপাদান টি ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে বলে জানান গবেষকরা।
গর্ভাবস্থার স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে লেবু
গর্ভাবস্থার লেবুর উপকারিতা অনেক। লেবু গর্ভাবস্থায় আপনার স্বাস্থ্য কে সুস্থ রাখবে। এটি আপনার ও আপনার অনাগত শিশুর জন্য ভালো একটি বিষয়।গর্ভাবস্থায় আপনি নিয়মিত নির্দিষ্ট পরিমাণে লেবু খেতে পারেন।
ওজন কমাতে লেবু
ওজন কমাতে লেবুর ভূমিকা অপরিসীম। ওজন কমানোর জন্য আপনি প্রতিদিন সকালে ও রাতে গরম পানিতে লেবু সিদ্ধ করে খেতে পারেন। এটি দ্রুত আপনার চর্বি কমাতে সাহায্য করবে।
লিভারের রোগে লেবুর ভূমিকা
লিভারের রোগ দূর করতেও লেবুর ভূমিকা রয়েছে। লেবু ক্ষতিগ্রস্ত লিভারকে সুস্থ করতে সাহায্য করে। লেবু লিভার সম্পর্কিত লোকগুলোর ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করেন। লিভারের অ্যালকোহল জনিত সমস্যা দূরীকরণে লেবু সাহায্য করে।
মাথা ঠান্ডা রাখতে লেবু
এই গ্রীষ্মের প্রচন্ড তাপমাত্রায় মাথা গরম হয় স্বাভাবিক। এই সমস্যা দূর করতে আপনি আপনার মাথায় সরাসরি লেবুর রস প্রয়োগ করতে পারেন। এর ফলে সূর্যের তাপে আপনার মাথা বেশি উত্তপ্ত হবে না।
ভাঙ্গা ও ক্ষতিগ্রস্ত নখ ঠিক করতে লেবু
আপনার ভাঙ্গা ও ক্ষতিগ্রস্ত নিয়োগ করতে আপনি লেবু ব্যবহার করতে পারেন। অলিভ অয়েলের সাথে লেবুর রস মিশিয়ে তার ভিতরে নখ ঢুকিয়ে রাখুন। আপনি আপনার সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন।
ঠোঁটের সমস্যায় লেবু
আপনি আপনার ঠোঁটের সমস্যায় লেবু ব্যাবহার করতে পারেন। শীতকালে আপনার ঠোঁটে লেবুর রস মাখিয়ে ঘুমালে আপনার ঠোঁট ফাটবে না।
বয়স জনিত দাগে লেবু
আপনার মুখে বয়সের রেখা বা দাগ দূর করার জন্য লেবুর রস ব্যবহার করতে পারেন। দাগের উপরে লেবুর রস লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন তারপর ধুয়ে ফেলুন। এটি খুবই কার্যকর একটি পদ্ধতি।
দাঁতের দাগে লেবু
আপনার দাঁতের উপরের দাগ পড়ে গেছে। চিন্তা করার কিছুই নেই। বেকিং সোডার সাথে লেবুর রস মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই পেজ দিয়ে দাঁত মাজলে আপনার দাঁতের দাগ উঠে যাবে।
ত্বক কোমল করতে লেবু
আপনার ত্বককে কোমল করতে লেবুর রস ব্যবহার করতে পারেন। আপনার ত্বক রুক্ষ হলে ডাবের পানির সাথে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে আপনার ত্বকে লাগান। দেখবেন আপনার ত্বক আবার কোমল ও সুন্দর হয়ে গেছে।
শরীরের ক্ষত সারাতে লেবু
আপনার শরীরের যে কোনো ক্ষত সারাতে ভিটামিন সি এর ভূমিকা রয়েছে। তাই শরীরে কোনো ক্ষত থাকলে আপনি লেবু খেতে পারেন। এর ফলে আপনার ক্ষতস্থান আরো দ্রুত হিল হবে।
হাঁপানি রোধে লেবু
যদি আপনি হাঁপানি আক্রান্ত মানুষ হয়ে থাকেন এবং আপনি চাচ্ছেন বিষয়টা যতটুকু সম্ভব নিয়ন্ত্রণে রাখতে তবে অবশ্যই আপনার বেশি পরিমাণে ভিটামিন সি এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান বেশি বেশি সেবন করা উচিত। যারা শ্বাসকষ্টে অথবা হাইপারসেনসিটিভিটিতে ভুগছেন তাদের জন্য ভিটামিন সি একটি কার্যকরী পুষ্টি উপাদান।আর লেবু হচ্ছে উচ্চ ভিটামিন সি যুক্ত ফল।
১০০ গ্রাম লেবুর পুষ্টিগুণ
- ক্যালোরি: ২৯
- পানি: ৮৯%
- প্রোটিন: ১.১ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট: ৯.৩ গ্রাম
- চিনি: ২.৫ গ্রাম
- ফাইবার: ২.৪ গ্রাম
- চর্বি: ০.৩ গ্রাম
লেবুর অপকারিতা
লেবুর রস এসিড সমৃদ্ধ, কিছু প্রতিবেদনে পরামর্শ দেয়া হয়েছে যে অতিরিক্ত লেবু পানি খাওয়ার ফলে দাঁতের এনামেল ক্ষয় হয়ে যেতে পারে ।যদিও লেবু পানি পান করার সুবিধা অনেক বেশি, তবে অতিরিক্ত সেবনে কিছু অসুবিধা রয়েছে এখন আপনাদেরকে কিছু অসুবিধার কথা জানাবো আশা করছি ব্যাপারগুলি আপনাদেরকে কোন না কোন ভাবে উপকৃত করবে।
দাঁতের এনামেল ক্ষয় হয়ে যাওয়া
বেশ কিছু গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যারা অতিরিক্ত পরিমাণে লেবু পানি সেবন করেন তাদের দাঁতের এনামেল এবং ডেন্টিং ক্ষয় হয়। এবং হাইপারসেনসিটিভিটি অনুভব হতে পারে। লেবু অতিরিক্ত এসিড সমৃদ্ধ হওয়ায় অন্যান্য কোমল পানীয়র মত অতিরিক্ত লেবুর রস সেবন করার ফলে দাঁতের ক্ষয়রোগ সৃষ্টি হতে পারে। দাঁত ভালো রাখতে লেবুর পানি খাওয়ার পরে ব্রাশ করে ফেলা ভালো। দাঁত ভালো রাখতে অবশ্যই দৈনিক দু’বার ব্রাশ এবং ফ্লসিং করা উচিত।
ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে
কিছু মানুষ বিশ্বাস করেন এক গ্লাস কুসুম গরম পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়ার ফলে বহুমূত্র রোগের সমস্যা হতে পারে, তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন এমন কোনো গবেষণা নেই যা প্রমাণ করে অতিরিক্ত লেবু রস আমাদেরকে ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা ফেলতে পারে। আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণে লেবুর রস ব্যবহার করেন এবং আপনার এই অভিজ্ঞতা হয়, তবে আপনাকে বুঝতে হবে এটি লেবুর রসের কারণে নয় বরং পানিজাতীয় অন্য কোনো সমস্যার কারণেও হতে পারে ।তবে একটি বিষয় মানা হয় যে লেবুর মত এসিড জাতীয় ফল প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার কারণ হতে পারে,যদি আপনি বহুমূত্র অথবা প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার সমস্যায় ভুগে থাকেন বিষয়টি পরীক্ষা করার জন্য এক সপ্তাহ লেবুর রস গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে পারেন অথবা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।
মাইগ্রেনের সমস্যা হতে পারে
কিছু কিছু মানুষের জন্য লেবুর পানি সেবন করা তাদের মাইগ্রেনের সমস্যার কারণ হতে পারে। গবেষণা অনুসারে আপনি যদি মাইগ্রেনের সমস্যায় ভুগে থাকেন তবে বেশি লেবু পানি খাওয়া থেকে বিরত থাকাই আপনার জন্য ভালো,হয়তোবা এটি আপনার মাইগ্রেনের সমস্যা সৃষ্টির কারণ হতে পারে অথবা আপনার মাইগ্রেনের সমস্যা ফিরিয়ে আনতে পারে।