আনারসের উপকারিতা, পুষ্টিগুণ এবং অপকারিতা

 

আনারসের উপকারিতা

আনারস অত্যন্ত রসালো ও সুস্বাদু ফল। আনারসের প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও ক্যালোরি থাকার কারণে এটি আমাদের শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে। আনারসে অতিরিক্ত ফ্যাট একদম নেই।  এটি কোলেস্ট্রল ও ফ্যাট মুক্ত একটি ফল। যার কারণে আনারস আমাদের ওজন কমাতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে। আনারসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা উচ্চমাত্রার পানিতে দ্রবণীয় এছাড়া আনারসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে যা আমাদের শরীরে রক্তের কোষগুলোকে নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় রাখতে সহায়তা করে। ফলে ক্যানসারের মতো দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে আমাদেরকে দূরে রাখে।

আনারসের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান আমাদের শরীরে কৃমি উৎপাত বন্ধ হতে কার্যকরীভাবে ভূমিকা রাখে। তাই যাদের শরীরে কৃমির সমস্যা দেখা যায় তারা সকাল বেলা খালি পেটে আনারসের রস খেতে পারেন। এটা আপনার কৃমির উৎপাত বন্ধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আনারসের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকার কারণে এটি আমাদের শরীরের হাড়ের কাঠিন্যতা বজায় রাখতে কাজ করে। তাই সুস্থ সবল দেহের অধিকারী হতে হলে অবশ্যই আপনাকে আনারস খেতে হবে।

আনারসের উপকারিতা


পুষ্টির অভাব পূরণে  


পুষ্টিগুণে ভরপুর ফলের নাম আনারস। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ফসফরাস রয়েছে। এসব অপরিহার্য উপাদান আমাদের দেহের পুষ্টির অভাব পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

হজমশক্তিকে উন্নত করতে


আমাদের হজমশক্তি বৃদ্ধি করতেও আনারসের জুড়ি নেই। আনারসে ব্রোমেলিন নামক এনজাইম থাকে যা হজমশক্তিকে উন্নত করতে সাহায্য করে। তাই বদহজম বা হজমজনিত যে কোনো সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আনারস খাওয়া যেতে পারে।

ভাইরাসজনিত ঠাণ্ডা ও কাশি প্রতিরোধে

আনারসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকায় তা ভাইরাসজনিত ঠাণ্ডা ও কাশি প্রতিরোধে ভুমিকা রাখে। তাছাড়া  জ্বর ও জন্ডিস প্রতিরোধে আনারস বেশ উপকারী। এছাড়া নাক দিয়ে পানি পড়া, গলাব্যথা এবং ব্রংকাইটিসের বিকল্প ওষুধ হিসাবে আনারসের রস খেতে পারেন।

শরীরের ওজন কমাতে সহায়তা

আনারসে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ থাকে। এছাড়া এতে কোন ফ্যাট না থাকায় পরিমিত পরিমানে আনারস খেলে বা আনারসের জুস পান করলে তা শরীরের ওজন কমাতে সহায়ক হতে পারে। আনারস তাই আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণের পথ্য হতে পারে। দেহে রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয় এই ফল। ফলে শিরা-ধমনির মধ্য দিয়ে সারা শরীরে সঠিকভাবে রক্ত প্রবাহিত হতে পারে।

দাঁত ও মাড়ি সুরক্ষায়

আনারসে ক্যালসিয়াম  থাকায় তা দাঁতের সুরক্ষায় কাজ করে। নিয়মিত আনারস খেলে দাঁতে জীবাণুর সংক্রমণ কম হয় ফলে দাঁত ঠিক থাকে। এছাড়া মাড়ির যে কোনো সমস্যা সমাধান করতে আনারস বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

চোখের যত্নে আনারস

আনারস চোখের রেটিনা নষ্ট হয়ে ধীরে ধীরে অন্ধ হয়ে যাওয়া রোগ “ম্যাক্যুলার ডিগ্রেডেশন”রোগটি হওয়া থেকে আমাদের রক্ষা করে। আনারসে রয়েছে বেটা ক্যারোটিন। প্রতিদিন আনারস খেলে এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। ফলে সুস্থ থাকে আমাদের চোখ।

ত্বকের যত্নে আনারস


আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি থাকে যা আমাদের শক্তির যোগান দেয়। এতে থাকা প্রোটিন ত্বকের মৃত কোষ দূর করে, ত্বককে কুঁচকে যাওয়া থেকে বাঁচায়। এছাড়া দেহের তৈলাক্ত ত্বক, ব্রণসহ সব রূপলাবণ্যে আনারসের যথেষ্ট কদর রয়েছে।

হাড়ের সমস্যাজনিত রোগ প্রতিরোধ

আনারসে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে যা হাড়ের গঠনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া এতে থাকা ম্যাঙ্গানিজ হাড়কে করে তোলে মজবুত। তাই খাবার তালিকায় পরিমিত পরিমাণ আনারস রাখলে হাড়ের সমস্যাজনিত যে কোনও রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।

ক্রিমিনাশক হিসেবে

ক্রিমিনাশক হিসেবে আনারসের রস ভালো কাজ করে। নিয়মিত আনারসের রস খেলে কয়েকদিনের মধ্যেই কৃমির উৎপাত বন্ধ হয়ে যায়। কৃমি দূর করতে সকালবেলায় ঘুম থেকে জেগে খালি পেটে আনারস খাওয়া উচিত।

ক্যান্সার প্রতিরোধী

ফ্রি-রেডিকেল বা মুক্ত মুলক মানবদেহের কোষের উপর বিরূপ ক্রিয়ার সৃষ্টি করে ফলে ক্যান্সার এবং হৃদরোগের মত মারাত্মক রোগ দেখা দিতে পারে। দেশী আনারসে আছে উচ্চ মাত্রায় পানিতে দ্রবনীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন-সি এবং পানিতে দ্রবনীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা দেহকে ফ্রি-রেডিকেল বা (মুক্ত মুলক) থেকে সুরক্ষা প্রদান করে। ফলে ক্যান্সার এবং হৃদরোগের মত মারাত্মক রোগ দেহে বাসা বাঁধতে বাধাগ্রস্থ হয়।

রক্ত জমাটে বাধা দেয়

দেহে রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয় এই ফল। ফলে শিরা-ধমনির (রক্তবাহী নালি) দেয়ালে রক্ত না জমার জন্য সারা শরীরে সঠিকভাবে রক্ত যেতে পারে। হৃৎপিণ্ড আমাদের শরীরে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে। আনারস রক্ত পরিষ্কার করে হৃৎপিণ্ডকে কাজ করতে সাহায্য করে।

আনারসের ঔষধি গুনাগুণ
  • আনারস খাওয়ার ফলে অনেক নারী ও পুরুষের দেহে অ্যালার্জী দেখা দিতে পারে। আনারস খাওয়ার ফলে অ্যালার্জীর উপসর্গ হল ঠোঁট ফুলে যাওয়া ও গলায় সুরসুরি বোধ হওয়া।তাই আনারস খাওয়ার আগে তা কেটে লবণ পানি দিয়ে ধুয়ে নেয়া উচিত। এভাবে ধুয়ে নিয়ে খেলে কোন সমস্যা হওয়ার সম্ভবনা থাকেনা।
  • আনারসের কারণে নারীদের গর্ভপাত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। গর্ভাবস্থায় থাকলে নারীদের আনারস খেতে বারণ করা হয়। তাছাড়া গর্ভাবস্থার পরে চাইলে আনারস খেতে পারেন কিন্তু শরীরের অবস্থা বুঝে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে। 
  • যখন আপনি আনারস খাবেন তখন এটি আপনার গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল নালীর কাছে পৌঁছানোর পর এটি অ্যালকোহলে পরিনত হয়। এবং এই কারণে মানুষের দেহে বাতের ব্যথা শুরু হতে পারে। তাই যে সকল মানুষের দেহে বাতের ব্যথা আছে কিংবা সন্দেহ করা হচ্ছে বাত হতে পারে তাদের আনারস না খাওয়াটাই ভালো।
  • আনারসে আছে অনেক বেশি পরিমানে প্রাকৃতিক চিনি। আনারসের ২ টি চিনি উপাদান সুক্রোজ এবং ফ্রুক্টোজ যা ডায়বেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু দেহের ক্ষতি, এটি খাওয়ার উপর নির্ভর করে। এবং আনারসের মধ্যে অতিরিক্ত চিনি আমাদের দেহে রক্তের চিনির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তাই আনারস বেশি না খেয়ে সপ্তাহে ২ দিন খেতে পারেন।
  • আনারসে আছে ব্রমিলেইন যা দিয়ে ওষুধ বানানো হয়ে থাকে এবং কোন রোগীর প্রয়োজন পরলে তাকে তা দেয়া হয়ে থাকে। তাছাড়া আপনি যদি কোন কারণে অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিকনভালসেন্ট ব্যবহার করে থাকেন তাহলে আনারস খেতে ডাক্তাররা নিষেধ করে থাকেন। কারণ এতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
  • অনেকেই কাঁচা আনারস ব্যবহার করে থাকেন জুস বানানোর জন্য কিন্তু এটি দেহের জন্য ক্ষতিকর এবং খুব বিষাক্ত। এবং মাঝে মাঝে কাঁচা আনারস খাওয়ার কারণে বমির প্রবণতা দেখা দেয়।
  • কাঁচা আনারসে আছে অনেক বেশি পরিমানে এসিডিটি যা আমদের মুখের ভিতর ও গলায় শ্লেষ্মা তৈরি করে। এবং ফলটি খাওয়ার পর মাঝে মাঝে অনেকের পেটে ব্যথাও হতে পারে।
  • রক্ত তরল করার জন্য যে ওষুধ বানানো হয় তাতে আনারস ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই ফল দেহে রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়াতে বাঁধা প্রদান করে থাকে।
  • ব্রমিলেইন আনারসের একটি উপাদান যা আমদের দেহের প্রোটিনের পরিমাণ নষ্ট করাতে দায়ী থাকে। এবং এই ফল দেহে ডার্মাটাইটিস ও অ্যালার্জী সংক্রামন করে।
  • আনারস আমাদের দাঁতের জন্য ক্ষতিকর। যাদের দাতে কেভিটিস ও জিংজাইভেটিভস এর সমস্যা আছে তাদের আনারস না খাওয়াই ভালো।
১৬৫ গ্রাম আনারস পুষ্টি
  • ক্যালোরি: ৮২.৫
  • চর্বি: ০.২ গ্রাম
  • সোডিয়াম: ১.৭ মিলিগ্রাম
  • কার্বোহাইড্রেট: ২২ গ্রাম
  • ফাইবার: ২.৩ গ্রাম
  • চিনি: ১৬.৩ গ্রাম
  • প্রোটিন: ০.৯ গ্রাম
  • ভিটামিন সি: ৭৯ মিলিগ্রাম
আনারসের অপকারিতা
  • আনারসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা থাকলেও এটি সবার জন্য ঠিক স্যুট করে না। অনেকেরই আনারস এলার্জির সমস্যা যেমন বিভিন্ন ধরনের চুলকানি, ফুস্কুরি ইত্যাদি হতে পারে।
  • আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমানে প্রাকৃতিক চিনি যা ডায়বেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। আনারসের মধ্যে অতিরিক্ত চিনি আমাদের দেহে রক্তের চিনির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তাই ডায়াবেটিস রোগীরা আনারস বেশি না খেয়ে সপ্তাহে ২ দিন খেতে পারেন।
  • আনারস একটি এসিডিক ফল। তাই খালি পেটে ফলটি খেলে পেটে প্রচন্ড ব্যথার তৈরী হতে পারে। আনারস আর দুধ এক সাথে খাওয়া যায় না, এটি একটি কুসংষ্কার। এখন পর্যন্ত আনারস এবং দুধের মাঝে এমন কোন রাসায়নিক বিক্রিয়া খুঁজে পাওয়া যায়নি যার ফলে এদেরকে এক সাথে খেলে সেটা মানুষের জীবনহানি করবে। বর্তমানে অনেক খাবারেই দুধ ও আনারস একসাথে মেশানো হয় এবং সারা বিশ্বেই তা খাওয়া হয়। কোন গ্যাস্ট্রিকের রোগী যদি খালিপেটে আনারসের সাথে দুধ খায় তাহলে তাঁর পেটে প্রচন্ড ব্যথার "ফুড ট্যাবু" এর উদ্ভব হতে পারে।    
  • রক্ত তরল করার জন্য যে ওষুধ বানানো হয় তাতে আনারস ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই ফল দেহে রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়াতে বাঁধা প্রদান করে থাকে। তাই যাদের আনারস খেলে এ সকল সমস্যায় ভুগেন তারা অবশ্যই আনারস থেকে দূরে থাকবেন। 
Next Post Previous Post