কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা এবং এর পুষ্টিগুণ

 

কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা
কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা অনেক। এই ডিমের মধ্যে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, এনজাইম এবং এমাইনো এসিড এমনভাবে বিন্যাসিত যে এই ডিম শরীরের সব ধরণের পুষ্টির অভাব পুরণ করে শরীরের কর্মদক্ষতা বাড়িয়ে দেয়। কোয়েলের ডিমে ভিটামিন বি-১ এর পরিমান মুরগীর ডিম থেকে ছয়গুণ বেশী, আয়রন ও ফসফরাস পাঁচ গুণ বেশী, ভিটামিন বি-২ পনেরো গুণ বেশী।

কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা

রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

কোয়েল পাখির ডিম শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কাজ করার পাশাপাশি রক্ত থেকে ক্ষতিকর ও টক্সিন উপাদান বের করতেও উপকারী ভূমিকা পালন করে। এতে করে সাধারণ শারীরিক সমস্যা দেখা দেওয়ার হার কমে যায় অনেকখানি।

বাড়ায় হিমোগ্লোবিনের মাত্রা

কোয়েল পাখির ডিমে উচ্চমাত্রার আয়রন থাকার ফলে এই খাদ্য উপাদানটি রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে কাজ করে। যাদের রক্তস্বল্পতার সমস্যা বা অ্যানিমিয়া আছে, নিয়মিত কোয়েল পাখির ডিম গ্রহণে তারা উপকার পাবেন।

তীক্ষ্ণ করে দৃষ্টিশক্তি

ছোট এই ডিমে থাকা ভিটামিন-এ ম্যাকুলার ডিজেনারেশন প্রতিরোধে কাজ করে। যা দৃষ্টিশক্তিকে ভালো রাখতে অনেক বড় ভূমিকা পালন করে।

রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখে

কোয়েলের ডিমে থাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পটাশিয়াম। এই মিনারেলটি আর্টারি ও রক্তনালীকার চাপ কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করে এবং উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দেওয়া হতে প্রতিরোধ করে।

সুস্থ রাখে হৃদযন্ত্র

কোয়েল পাখির ডিমের ফ্যাটে রয়েছে ৬০ শতাংশ HDL (High density lipoprotein), যাকে উপকারী কোলেস্টেরল হিসেবে বলা হয়। এই উপাদানটি হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে ও তার ক্রিয়ায় কোন ধরনের বাধা প্রদান না করার জন্যে কাজ করে। তবে কোলেস্টেরলজনিত সমস্যা থাকলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে কোয়েলের ডিম গ্রহণ করতে হবে।

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমাতে কাজ করে

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার ঘরোয়া সমাধান হিসেবে কোয়েল পাখির ডিম খুব ভালো কাজ করবে। কোয়েলের ডিমে থাকা শক্তিশালি অ্যালকালাইন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখতে কাজ করে এবং খাদ্য ভালোভাবে হজম ও শোষণে ভূমিকা রাখে।

কমায় প্রদাহ ও অ্যালার্জির সমস্যা

এই ডিমে থাকে ওভোমিউকয়েড (Ovomucoid) নামক বিশেষ এক ধরনের প্রোটিন। যা প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অ্যালার্জিক উপাদান হিসেবে কাজ করে এবং শরীরের প্রদাহ ও অ্যালার্জির প্রাদুর্ভাবকে কমাতে ভূমিকা পালন করে।

কম কোলেস্টেরল

মুরগির ডিমের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় কোয়েল ডিমে কোলেস্টেরল ১.৪% আর  মুরগির ডিমে ৪% এবং প্রোটিনের পরিমান মুরগির ডিম থেকে প্রায় শতকরা ৭ ভাগ বেশী।

কর্মদক্ষতা

এই ডিমের  মধ্যে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, এনজাইম এবং এমাইনো এসিড এমনভাবে বিন্যাসিত যে এই ডিম শরীরের সব ধরণের পুষ্টির অভাব পুরণ করে শরীরের কর্মদক্ষতা বাড়িয়ে দেয়।

শিশুদের জন্য কোয়েল পাখির ডিম

বাচ্চাদের মানসিক, শারীরিক এবং বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটাতে সহায়তা করে থাকে কোয়েলের ডিম। দুর্বল বাচ্চা থেকে বৃদ্ধরা প্রতিদিন তিন চারটা করে কোয়েলের ডিম খেতে পারেন।

পাকস্থলির সমস্যা

চীনারা কোয়েলের ডিমকে টিবি, অ্যাজমা, এবং ডায়াবেটিস রোগের পথ্য হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন।

কিডনি ও লিভারের সমস্যা

কিডনি ও লিভারের সমস্যা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে কোয়েলের ডিম।

কোয়েল পাখির ডিমের পুষ্টিগুণ

প্রথমেই মাথায় রাখা দরকার কোয়েলের ডিম খুবই ছোট। একটি কোয়েল পাখির ডিম বড়জোর ৯ গ্রাম ওজনের হয়ে থাকে। যেখানে একটি মুরগির ডিম ৫০ গ্রাম পর্যন্ত হয়। তাই পরিমাণের দিক দিয়ে ৫টি কোয়েলের ডিম একটি মুরগির ডিমের সমপর্যায়ের হয়ে থাকে। আসুন জেনে নিই একটি কোয়েলের ডিমে কতটা পুষ্টি উপাদান থাকে।
  • ক্যালরিঃ ১৪
  • ফ্যাটঃ ১ গ্রাম
  • ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডঃ ৪ মিলিগ্রাম
  • ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিডঃ ৮৪ মিলিগ্রাম
  • প্রোটিনঃ ১.২ গ্রাম
  • কোলেস্টেরলঃ ৭৬ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন এঃ ১%
  • রিবোফ্লাভিনঃ ৪%
  • ভিটামিন বি১২ঃ  ২%
  • প্যানথোনিক এসিডঃ ২%
  • আয়রনঃ ২%
  • সেলেনিয়ামঃ ৪%
  • ফসসরাসঃ ২%
একটা ব্যাপার লক্ষণীয় যে, কোয়েলের ডিমে তার আকারের তুলনায় অনেক বেশি আমিষ পাওয়া যায়। একটি কোয়েল পাখির ডিম থেকে প্রাপ্ত ক্যালরির এক-তৃতীয়াংশই আসে আমিষ থেকে!  ক্ষুদ্রাকৃতির এ ডিমগুলো ভিটামিন ও খণিজ লবণে পরিপূর্ণও বটে। পরিমাণে কম মনে হলেও সমপরিমাণ মুরগির ডিমের তুলনায় তা অনেক বেশি। উদাহরণস্বরূপ, ৫টি কোয়েলের ডিমে আমাদের দৈনিক চাহিদার ২০ শতাংশ রিবোফ্লাভিন ও ১০ শতাংশ ভিটামিন বি১২ এর চাহিদা পূরণ হয়ে যায়।

তবে এতসব ইতিবাচক দিকের পাশাপাশি আছে দুটি নেতিবাচক দিক, যা আগ্রাহ্য করার উপায় নেই। কোয়েলের ডিমে থাকে বেশ উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল। একটি ছোট কোয়েলের ডিমে থাকে ৭৫ মিলিগ্রাম পর্যন্ত কোলেস্টেরল, যা আমাদের দৈনিক চাহিদার প্রায় ২৫ শতাংশ! সাধারণ সুস্থ মানুষদের ক্ষেত্রে খুব একটা অসুবিধা সৃষ্টি না করলেও যাদের কোলেস্টেরল লেভেল ইতোমধ্যেই অনেক বেশি, তাদের কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার আগে দু'বার ভাবতে হবে। তবে এ ডিমে প্রয়োজনীয় ওমেগা ফ্যাটি এসিডও বিদ্যমান, যা শরীরের পক্ষে বেশ উপকারী।

Next Post Previous Post