ডাবের পানির উপকারিতা, পুষ্টিগুণ এবং অপকারিতা

 

ডাবের পানির উপকারিতা
ডাবের পানির উপকারিতা অনেক। কারণ ডাবের পানি তাৎক্ষণিকভাবে শরীরে প্রশান্তি দেয়। শরীরে পানির অভাব পূরণ করতে ও খনিজ পদার্থের ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, ডাবের পানিতে যথেষ্ট পরিমাণে ম্যাগনেশিয়াম পাওয়া যায়, যা ইনসুলিনেরর কার্যকারিতা বাড়ায়। ফলে এটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাই ডায়াবেটিসের রোগীরা ডাবের পানি খেতে পারবেন। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ডাবের পানি কিডনিতে পাথর প্রতিরোধে সাহায্য করে।

ডাবের পানির উপকারিতা

ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে  

ডাবের পানি হলো প্রকৃতিক টোনার, যা ত্বককে সংক্রমণ থেকে বাঁচানোর পাশাপাশি সার্বিকবাবে স্কিনের ঔজ্জ্বলতা বাড়াতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে ব্রণর প্রকোপ কমাতেও এই প্রাকৃতিক উপাদানটি সাহায্য করে থাকে।

ওজন কমবে

ডাবের পানি উপস্থিত বেশ কিছু উপকারি এনজাইম হজম ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি মেটাবলিজমের উন্নতিতেও সাহায্য করে থাকে। ফলে খাবার খাওয়া মাত্র তা এত ভালো ভাবে হজম হয়ে যায় যে শরীরের অন্দরে হজম না হওয়া খাবার মেদ হিসেবে জমার সুযোগই পায় না। ফলে ওজন কমতে শুরু করে। ডাবের পানি শরীরে লবনের মাত্রা ঠিক রাখে। ফলে ওয়াটার রিটেনশন বেড়ে গিয়ে ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কাও হ্রাস পায়।

ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকবে

ডাবের পানি উপস্থিত ভিটামিন সি, পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে থাকে। সম্প্রতি ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান মেডিকেল জানার্লে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে পটাশিয়াম শরীরে লবনের ভারসাম্য ঠিক রাখার মধ্যে দিয়ে ব্লাড প্রেসারকে স্বাভাবিক রাখে। তাই যাদের পরিবারে এই মারণ রোগটির ইতিহাস রয়েছে, তাদের নিয়মিত ডাবের পানি খাওয়া উচিত। একই নিয়ম যদি রক্তচাপে ভোগা রোগীরাও মেনে চলেন, তাহলেও দারুণ উপকার মেলে।

ব্লাড সুগারকে বেঁধে রাখবে  

২০১২ সালে হওয়া জার্নাল ফুড অ্যান্ড ফাংশন স্টাডিসে দেখা গিয়েছিল ডাবের পানিতে থাকা অ্যামাইনো অ্যাসিড এবং ডায়াটারি ফাইবার ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হবে  

রাইবোফ্লবিন, নিয়াসিন, থিয়ামিন এবং পাইরিডোক্সিনের মতো উপকারি উপদানে ভরপুর ডাবের পানি প্রতিদিন পান করলে শরীরের অন্দরের শক্তি এতটা বৃদ্ধি পায় যে জীবাণুরা কোনওভাবেই ক্ষতি করার সুযোগ পায় না। সেই সঙ্গে ডাবের পানিতে উপস্থিত অ্যান্টি-ভাইরাল এবং অ্যান্টি-ব্য়াকটেরিয়াল প্রপাটিজ নানাবিধ সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

শরীরে পানির ঘাটতি দূর হবে  

ডাবের পানি শরীরের অন্দরে প্রবেশ করা মাত্র পানির ঘাটতি মিটতে শুরু করে। সেই সঙ্গে এতে উপস্থিত ইলেকট্রোলাইট কম্পোজিশান ডায়ারিয়া, বমি এবং অতিরিক্ত ঘামের পর শরীরে ভিতরে খনিজের ঘাটতি মেটাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই কারণেই তো গরমকালে ডাবকে রোজের সঙ্গী করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।

হার্টের টনিক

শরীরে বাজে কোলেস্টেরল বা এল ডি এল-এর পরিমাণ কমিয়ে হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে ডাবের পানির কোনো বিকল্প হয় না বললেই চলে। শুধু তাই নয়, দেহে ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়িয়ে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা কমাতেও ডাবের পানি বিশেষ ভূমিকা নিয়ে থাকে।

মাথা যন্ত্রণা দূরে থাকবে  

ডিহাইড্রেশনের কারণে মাথা যন্ত্রণা বা মাইগ্রেনর অ্যাটাক হওয়ার মতো ঘটনা ঘটলে দ্রুত এক গ্লাস ডাবের পানি খেয়ে নেবেন। এমনটা করলে দেখবেন নিমেষে কষ্ট কমে যাবে। আসলে এই প্রকৃতিক উপাদানটিতে উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম, এই ধরনের শারীরিক সমস্যার চিকিৎসায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

শরীরের বয়স কমবে

খাতায় কলমে বয়স বাড়লেও শরীরের বয়স কি ধরে রাখতে চান? তাহলে আজ থেকেই ডাবের পানি খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার পাবেন। আসলে ডাবের পানি রয়েছে সাইটোকিনিস নামে নামে একটি অ্যান্টি-এজিং উপাদান, যা শরীরের উপর বয়সের ছাপ পরতে দেয় না। সেই সঙ্গে ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

কিডনি ফাংশনের উন্নতি ঘটবে
 

প্রচুর মাত্রায় পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম থাকার কারণে ডাবের পানি কিডনির কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে শরীরে উপস্থিত টক্সিন উপাদানদের ইউরিনের সঙ্গে বের করে দিয়ে নানাবিধ জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমায়।

স্ট্রেস কমবে

বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে ডাবের পানি উপস্থিত ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম শরীরের অন্দের প্রবেশ করার পর একদিকে যেমন স্ট্রেস কমায়, তেমনি পেশীর সচলতা বৃদ্ধিতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এখানেই শেষ নয়, ডাবের পানিতে থাকা ক্যালসিয়াম দাঁত এবং হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতিতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

হাড়কে মজবুত করবে

হাড়কে মজবুত রাখার জন্য দরকার ক্যালসিয়াম সহ আরো অনেক পুষ্টিগুণ। ডাবের পানিতে যে ক্যালসিয়াম আছে তা হাড়ের জন্য একটি অতি প্রয়োজনীয় উপাদান। এবং আছে ম্যাগনেসিয়াম, যা হাড়কে ভালো রাখতে সাহায্য করে।

গর্ভাবস্থায় ডাবের পানির উপকারিতা

ডাবের জলে লৌরিক অ্যাসিড সামগ্রী অ্যান্টিভাইরাস উৎপাদনে সহায়তা করে এবং ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়াকে হত্যা করে । কম চিনি বহন করায় গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায় । ডাবের জল শরীরকে হাইড্রেটেড করে যা ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায় এবং এর ফলে গর্ভধারণের সময় হওয়া স্ট্রেচ মার্কগুলি হ্রাস করে ।

কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে

কোষ্ঠকাঠিন্য গর্ভাবস্থায় একটি প্রচলিত সমস্যা। গর্ভাবস্থায় প্রোজেসটেরন হরমোন বেড়ে যাওয়ার কারণে এবং আয়রন সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার কারণে সাধারণত এ সমস্যা হয়। এ সময় আঁশসমৃদ্ধ ডাবের পানি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমাতে কাজ করে।

বুক জ্বালাপোড়া কমায়

কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো বুক জ্বালাপোড়া গর্ভাবস্থায় খুব প্রচলিত একটি সমস্যা। ডাবের পানি এ সমস্যা অনেকটা কমাতে সাহায্য করে। ডাবের পানি পান এসিডের মাত্রাকে কমায়। এতে হজমের সমস্যা ও বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা প্রতিরোধ হয়।

কর্মক্ষম রাখে

গর্ভাবস্থায় নিজেকে কর্মক্ষম রাখতে ডাবের পানি উপকারী। এর মধ্যে থাকা ইলেকট্রোলাইট উপাদানের কারণে কর্মক্ষমতা বাড়ে।

পানিশূন্যতা কমায়

গর্ভাবস্থায় পানিশূন্যতার সমস্যা দেখা দেয়। আপনি সহজেই পানিশূন্যতা প্রতিরোধ করতে পারেন ডাবের পানির মাধ্যমে।

পটাশিয়াম

ডাবের পানির মধ্যে পটাশিয়াম রয়েছে। এটি শরীরের ইলেকট্রোলাইটিক ভারসাম্য ঠিকঠাক রাখে। এটি গর্ভাবস্থায় লেগ ক্রাম্প এবং শরীরে পানি আসা প্রতিরোধ করে।

ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম

ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম দুটো উপাদান ডাবের পানি থেকে পাওয়া যায়। এ দুই উপাদান গর্ভাবস্থাকে স্বাস্থ্যকর রাখতে সাহায্য করে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে

নিয়মিত ডাবের পানি পান রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। কারণ, এতে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। এ ছাড়া ডাবের পানি মূত্রনালির সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।

ডাবের পানি পানে যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেন    
  • খুব বেশি ডাবের পানি পান করবেন না। দিনে দুই গ্লাসই যথেষ্ট।
  • আপনার ট্রি নাট অ্যালার্জি থাকলে ডাবের পানির পানের ক্ষেত্রেও অ্যালার্জি হতে পারে। তাই এড়িয়ে যাওয়াটাই ভালো হবে।
  • আপনার গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস থাকলে অথবা আগে থেকেই ডায়াবেটিস হলে ডাবের পানি কম পান করুন।
২৪৫ গ্রাম ডাবের পানির পুষ্টিগুণ
  • ক্যালোরি: ৪৪
  • চর্বি: ০ গ্রাম
  • সোডিয়াম: ৬৪ মিলিগ্রাম
  • কার্বোহাইড্রেট: ১০.৪ গ্রাম
  • ফাইবার: ০ গ্রাম
  • চিনি: ৯.৬ গ্রাম
  • প্রোটিন: ০.৫ গ্রাম
  • ভিটামিন সি: ২৪.৩ মিলিগ্রাম
  • পটাসিয়াম: ৪০৪ মিলিগ্রাম
ডাবের পানির অপকারিতা

অতিরিক্ত ডাবের পানি পান করার অভ্যাসে শরীরে অতিরিক্ত পটাশিয়াম জমার সুযোগ পায়। যা কিডনি ও হৃদপিণ্ড দুটোই অকার্যকর করে দিতে পারে। চিকিৎসকরা বলছেন, এই অবস্থায় রোগীর মুত্যু অনিবার্য হতে পারে। তাই যাদের দেহে প্রচুর পটাশিয়াম আছে এবং বের হয় না, তাদের ডাবের পানি পান করা ঠিক নয়।

Next Post Previous Post