পুদিনা পাতার উপকারিতা, পুষ্টিগুণ এবং অপকারিতা

 

পুদিনা পাতার উপকারিতা
পুদিনা পাতার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। পুদিনাপাতা ত্বক, চুল ও শরীর—তিনটির জন্যই খুব উপকারী। ঔষধি হিসেবে এই পাতার বহুল ব্যবহার প্রাচীনকাল থেকেই। যা অনেকের অজানা। বহু বিজ্ঞানীদের দাবি, পুদিনা পাতা ক্যান্সার প্রতিরোধের ক্ষমতা রাখে। পুদিনা পাতার পেরিলেল অ্যালকোহল যা ফাইটো নিউট্রিয়েন্টসের একটি উপাদান দেহে ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধিতে বাধা প্রদান করে।
পুদিনা পাতার উপকারিতা

শরীরকে ঠান্ডা করে

আমাদের দেশে বছরের বেশিরভাগ সময়েই থাকে গরম। এমনকী বর্ষাকালে বৃষ্টি থাকলেও পাশাপাশি থাকে ভ্যাপসা গরম। গরম থেকে বাঁচতে এবং শরীর ঠান্ডা করতে আপনাকে সাহায্য করতে পারে পুদিনা পাতা। পুদিনার রস গরম সংক্রান্ত অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারে। পুদিনা পাতার রস পান করলে শরীরে এক ধরনের ঠান্ডা অনুভূতি তৈরি হয়। ক্লান্তি দূর করে ফিরে আসে সতেজভাব।

ত্বক ভালো রাখে

ত্বক ভালো রাখার জন্য সবচেয়ে কার্যকরী হলো প্রাকৃতিক বিভিন্ন উপাদান। এর মধ্যে অন্যতম হলো পুদিনা পাতা। পুদিনা পাতার রয়েছে অ্যান্টিইনফ্লমেটরি বৈশিষ্ট্য। এই গুণের কারণে এটি খুব সহজে ত্বক ভালো রাখতে পারে। তাই ত্বকের যত্নে নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারেন পুদিনা পাতা। বিভিন্ন ফেসপ্যাকের সঙ্গে মিশিয়ে নিতে পারেন পুদিনা পাতার রস। পাশাপাশি এটি যোগ করুন খাবারের তালিকায়। নিয়মিত পুদিনা পাতা খেলে এবং ব্যবহার করলে দ্রুতই সুন্দর ত্বকের মালিক।

পেটের স্বাস্থ্য ভালো রাখে

বর্তমানে পেটের সমস্যায় ভুগছেন এমন মানুষের সংখ্যা কম নয়। এর জন্য বেশি দায়ী হলো আমাদের খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার ধরন। পেটের সমস্যা চলতে থাকলে তা পরবর্তীতে আরও বড় অসুখের কারণ হতে পারে। তাই পেটের সমস্যা থেকে দূরে থাকতে হবে। নিয়মিত পুদিনা পাতার রস খেলে তা আপনার পেটের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কাজ করবে। তাই পেটের বিভিন্ন সমস্যা থেকে বাঁচতে পুদিনা পাতা রাখুন খাবারের তালিকায়।

হজম সমস্যা দূর করে

গ্যাস্ট্রিক, পেট ফুলে থাকা ও বদহজমের মতো সমস্যা দূর করতে অনেক কার্যকরী পুদিনা পাতা। এ ছাড়া ক্যান্সারের জন্য মোথেরাপি গ্রহণকারীদের বমিভাব কমাতেও অনেক কার্যকরী এটি। পশুর গবেষণায় দেখা গেছে যে, পুদিনা পাচনতন্ত্রকে শিথিল করে এবং ব্যথা কমাতে পারে। আর এটি মসৃণ পেশিগুলোকে সংকুচিত হতে বাধা দেয়, যা আপনার অন্ত্রের স্প্যামগুলি উপশম করতে পারে।

টেনশন, মাথাব্যথা ও মাইগ্রেনের সমস্যা কমায়

টেনশন, মাথাব্যথা ও মাইগ্রেনের সমস্যা দূর করতে অনেক উপকারী হতে পারে পুদিনা। পেপারমিন্ট তেল বা পুদিনা তেলের মেন্থল রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করে এবং শীতলতা প্রদান করে ব্যথা কমাতে সহায়তা করে। মাইগ্রেনের ৩৫ জন রোগীর ওপরে করা একটি র্যান্ডমাইজড ক্লিনিকাল স্টাডিতে দেখা গেছে যে, পিপারমিন্ট তেল কপালে এবং গলায় প্রয়োগ করায় প্লেসবো অয়েলের তুলনায় দুই ঘণ্টা আগে ব্যথা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।

নিঃশ্বাস সতেজ করে

পুদিনায় থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি মুখের জীবাণুগুলোকে হত্যা করতে সহায়তা করে। আর দাঁতের প্লেক তৈরি করে যা আপনার শ্বাসকে উন্নত করতে পারে। এ কারণে পুদিনা বিভিন্ন টুথপেস্ট, মাউথওয়াস, চুইংগামে ব্যবহার করা হয়।

সাইনাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে

পুদিনায় এন্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিভাইরাল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই কারণে পুদিনা চা বিভিন্ন সংক্রমণ, সাধারণ ঠাণ্ডর এবং অ্যালার্জির কারণে জমে থাকা সাইনাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।

ক্লান্তি কমায়

পুদিনা আপনার শক্তিকে উন্নত করে এবং ক্লান্তি কমাতে পারে। গবেষণা দেখা যায়, পুদিনায় থাকা প্রাকৃতিক যৌগগুলো শক্তি বৃদ্ধির ওপর উপকারী প্রভাব ফেলতে পারে।

মাসিকের ব্যথা কমাতে সহায়তা করে

পুদিনা মাসিকের ব্যথা কম অনুভব করতে সহায়তা করতে পারে। মাসিকের বেদনাদায়ক সময়সীমার ১২৭ নারীর একটি গবেষণায় দেখা যায় যে, পুদিনার এক্সট্র্যাক্ট ক্যাপসুলগুলো ব্যথার তীব্রতা এবং সময়কাল কমাতে নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ড্রাগের মতো কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত হয়।

ভালো ঘুম হতে সহায়তা করে

পুদিনা একটি ক্যাফেইনমুক্ত উপাদান। আর এটি পেশি শিথিল করতে অনেক সহায়তা করতে পারে। এ কারণে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পুদিনা খেলে তা আপনার ভালো ঘুমে সহায়তা করতে পারে।

মৌসমি অ্যলার্জির সমস্যা দূর করতে পারে

পুদিনায় থাকা রোসমারিনিক অ্যাসিড অ্যালার্জিজনিত বিভিন্ন সমস্যা যেমন, নাক দিয়ে পানি পড়া, চোখ চুলকানো এবং হাঁপানিতে উপকারী হিসেবে কাজ করে। ইঁদুরের একটি গবেষণায় দেখা যায় যে, পেপারমিন্ট নির্যাস এলার্জি উপসর্গ কমিয়ে দেয়।

মাথা ব্যথা কমায়  

কিছু গবেষণা দেখা গেছে, পুদিনা পাতার তেল মাইগ্রেনের মাথাব্যথার ব্যথা কমাতে পারে। এটি অন্যান্য উপসর্গ যেমন হালকা সংবেদনশীলতা, বমি বমি ভাব এবং বমি কমাতে পারে। গবেষণা বলছে, কপালে হালকা করে পুদিনার তেল ম্যাসাজ করলে মাথাব্যথা দূর হয়।

সাইনাসের সমস্যা কমায় 

পুদিনায় থাকা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান সর্দি এবং জমে থাকা কফ পরিস্কার করতে ভূমিকা রাখে। ফলে সাইনাসের রোগীরা সহজে শ্বাস নিতে পারেন।

শক্তি বাড়ায়  

পুদিনার তেলের গন্ধ ঘুম ভালো হতে সাহায্য করে। আর ঘুম ভালো হলে শরীরে শক্তি বাড়ে।

দাঁত ও মাঢ়ির সুরক্ষায়

মুখের দুর্গন্ধ দূর করার কাজে পুদিনা পাতা আদর্শ উপাদান। এর নির্যাস সমৃদ্ধ ‘মাউথওয়াশ’মুখের ভেতরের জীবাণু ধ্বংস করে, সুস্থ রাখে দাঁত ও মাঢ়ি।

স্মৃতিশক্তি বাড়ায় 

মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়াতে পুদিনা পাতার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে বলে দাবি করেন বিশেষজ্ঞরা। নিয়মিত এই পাতা খেলে স্মৃতিশক্তি বাড়ে।

মৌসুমি রোগের চিকিৎসায়  

ঠান্ডা, সর্দিজ্বর, নাক বন্ধ ইত্যাদি সমস্যার সমাধানে পুদিনা পাতা অত্যন্ত উপকারী এবং কার্যকর। প্রায় সকল ‘ভেপর রাব’,‘ইনহেলার’য়েই থাকে এর নির্যাস। পাশাপাশি কাশি কমাতে এবং গলার অস্বস্তি সারাতেও পুদিনা পাতা কার্যকর।

পুদিনা পাতার পুষ্টিগুণ 

পুুদিনা পাতায় আছে ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ভিটামিন কে, ভিটামিন এ, ফোলেট, ক্যালসিয়াম, ক্যারোটিন, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম। 

এক টেবিল চামচ পুদিনা পাতায় আছে:

  • ক্যালোরি: ৩
  • প্রোটিন: ০ গ্রাম
  • চর্বি: ০ গ্রাম
  • কার্বোহাইড্রেট: ০ গ্রাম
  • ফাইবার: ১ গ্রামের কম
  • চিনি: ০ গ্রাম

পুদিনা পাতার অপকারিতা 

পুদিনা পাতার তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই কিন্তু অধিক মত্রায় গ্রহণে যৌন জীবনের জন্য এটি মোটেও ভালো নয়। এটি শরীরে যৌন উদ্দীপনা সৃষ্টিকারী হরমোন টেসটোসটের মাত্রা কমিয়ে দেয়। যা শরীরকে ঠাণ্ডা করে দেয় এবং যৌন আগ্রহ কমিয়ে দেয়। তবে আরো ভালো গবেষণার প্রয়োজন। 

Next Post Previous Post